Uncategorized

আলি রা. এর জিকির করা বা তাঁর দিকে তাকানো কি ইবাদত?!

151061752 1161060000980210 4929944656668682723 n

আলি রা. এর জিকির করা বা তাঁর দিকে তাকানো কি ইবাদত?!
▬▬▬▬◈◯◈▬▬▬▬
প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, “মাওলা আলি আলাইহিস সালাম এর জিকির করা ইবাদত।” এবং এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদিসটি দ্বারা দলিল পেশ করা হচ্ছে:
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ﺫﻜﺭ عَلِي عِبَادَةٌ
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আলী এর জিকির করা হল ইবাদত।” (দায়লামি, কানজুল উম্মাল, হা/ ২৮৯৪)
এ হাদিসটি কি সহিহ?
উত্তর:
এ হাদিসটি সহিহ নয় বরং মুহাদ্দিসগণ এটিকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে চিহ্নিত করেছেন। যেমন:
● ইমাম ইবনে কাসির রহ. বলেন, لا يصح “এ হাদিসটি সহিহ নয়।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/৩৭১)
● শাইখ আলবানি বলেন, موضوع “বানোয়াট।”
অনুরূপভাবে এ জাতীয় আরও একটি হাদিস বলা হয়। তা হল,
النظر إلى وجه علي عبادة
“আলি রা. এর চেহারার দিকে তাকানো ইবাদত।”
এটিও বানোয়াট হাদিস।
ইবনুল জাওযি (আল মাওযুআত ২/১২৬), ইবনে হাজার, যাহাবি (মিযানুল ইতিদাল ৩/২৩৬), সুয়ুতি, শাওকানি (আল ফাওয়ায়িদুল মাজমুআহ/৩৫৯) প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ এটিকে মওযু (বানোয়াট) হাদিস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
আমাদের অজানা নয় যে, আলি বিন আবি তালিব রা. একজন অত্যন্ত মর্যাদাবান সাহাবি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জামাতা, তার কলিজার টুকরা ফাতিমা রা. এর স্বামী এবং ইসলামের ৪র্থ মহান খলিফা। তার মর্যাদার ব্যাপারে বহু সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তাঁর নামের জিকির করা বা তার নাম জপা, তাকে মনে মনে স্বরণ করা, বিপদাপদে তার নাম ধরে ডাকা, সাহায্য চাওয়া এগুলো ইবাদত হওয়া তো দূরে থাক বরং তা আল্লাহর সাথে শিরকের নামান্তর। প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে তারা আলি রা. কে আল্লাহর আসনে আসীন করেছে।! নাউযুবিল্লাহ।
এসব ভ্রান্ত কথাবার্তা শিয়া-রাফেজি গোষ্ঠীর আলি রা. এর প্রতি ভক্তির ক্ষেত্রে অতিরঞ্জণ ছাড়া কিছু নয়। ওদের পুরোহিতরা এসব বানোয়াট ও মিথ্যা হাদিস বয়ান করে তাদের অজ্ঞ ভক্ত ও অনুসারীদের হৃদয়ে শিয়া মতবাদকে জিইয়ে রাখে।
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে শিয়াদের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
◍◍ জিকির হবে একমাত্র আল্লাহর; কোন নবী, রাসূল, সাহাবি, ওলি-আউলিয়া বা পীর-বুজুর্গের নয়:
কুরআন-হাদিসে অসংখ্য স্থানে আল্লাহ তাআলার জিকিরের নির্দেশ এসেছে। যেমন:
◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ
“আর তোমার রবের জিকির করো ভয়ভীতি ও কাকুতি-মিনতি সহকারে এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর অবহেলাকারীদের দলভুক্ত হয়ো না।” (সূরা আরাফ: ২০৫)
বিশিষ্ট তাবেঈ মুফাসসির মুজাহিদ এ আয়াতের তাফসিরে বলেন,
أمروا أن يذكروه في الصدور تضرعًا وخيفة
“মানুষকে ভয়ভীতি ও কাকুতি-মিনতি সহকারে মনে মনে তাঁর (আল্লাহর) জিকির করতে আদেশ করা হয়েছে।” (তাফসিরে ত্ববারি)
◈ তিনি আরও বলেন,
فَٱذْكُرُونِىٓ أَذْكُرْكُمْ وَٱشْكُرُوا۟ لِى وَلَا تَكْفُرُونِ.
” সুতরাং তোমরা আমার জিকির কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (সূরা বাকারা: ১৫২)
◈ তিনি আরও বলেন,
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّـهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّـهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।” (সূরা রা’দ: ২৮)
◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ، ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي ملإٍ، ذَكَرْتُهُ فِي مَلإٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ
“সুতরাং যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। আর যদি সে লোক-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি।” (সহিহ বুখারি/৭৪০৫; সহিহ মুসলিম/১৬৭৫)
এছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকাল, সন্ধ্যা, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর ও ঘুমানোর পূর্বে অসংখ্য দুআ, তাসবিহ ও জিকির শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআন তিলাওয়াতও অন্যতম শ্রেষ্ঠ জিকির।
সুতরাং উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে প্রমাণিত হল যে, জিকির করতে হবে একমাত্র আল্লাহর। তাঁর জিকির দ্বারাই অন্তরে প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং অর্জিত হয় অবারিত সওয়াব। পক্ষান্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আলী রা. বা তাঁর কোনও সাহাবী বা ওলি-আউলিয়া প্রমুখ কারো নামের জিকির করা জায়েজ নাই। যেমন: এভাবে বলা, ইয়া মুহাম্মাদ সা., ইয়া আলি, ইয়া ফাতেমা… এভাবে তাদের জিকির করা বা তাদের নাম জপা, বিপদ মুক্তির জন্য তাদেরকে স্বরণ করা, তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি সবই হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত।
তবে নবী, রাসূল, সাহাবি, তাবেঈ বা যুগে যুগে ইসলামের ইমাম, ফকিহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, দাঈ প্রমুখ মনিষীর জীবন চরিত, কার্যক্রম, ইসলাম ও মুসলিমের প্রতি তাদের অবদান, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শিক্ষণীয় দিকগুলো আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণায় কোন দোষ নেই।
আল্লাহর আমাদেরকে রক্ষা করুন ও দীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬◈◯◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *