▬▬▬▬◐◑▬▬▬▬
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ব করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ
“অতঃপর রোজা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।” (সূরা বাকারা: ১৮৭)
রাত কাকে বলে? আরবি অভিধান বলছে,
الليل: (مصطلحات) بفتح فسكون مذكر وقد يؤنث جمع ليال ، من غروب الشمس إلى طلوع الفجر
“সূর্য অস্ত যাওয়া থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত সময়কালকে রাত বলে।” [almaany-অনলাইন আরবি অভিধান]
- আমরা কুরআনে নিশর্তভাবে একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনুসরণের নির্দেশ প্রাপ্ত (অন্য কারও নয়)। তার উপর কুরআন নাজিল হয়েছে আর তিনি বাস্তব জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে কুরআনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মৌখিক বহু হাদিসেও সূর্যাস্তের পর কাল বিলম্ব না করে ইফতার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
এখানে আমরা দেখব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখন ইফতার করতেন?
✪ আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَطُّ صَلَّى صَلَاةَ الْمَغْرِبِ حَتَّى يُفْطِرَ وَلَوْ على شربة من ماء»
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও মাগরিবের সালাত ইফতারের পূর্বে পড়তে দেখি নি, কমপক্ষে এক ঢোক পানি পান করে হলেও আগে ইফতার করতেন।” [সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৩৫০৪। শুয়া‘ইব আরনাবুত বলেন, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। আলবানি রহ. ‘তা‘লিকাতুল হাসান ‘আলা সহীহ ইবনে হিব্বান’ এ একে সহীহ বলেছেন।]
✪ তিনি আরও বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ عَلَى رُطَبَاتٍ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٌ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تُمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মাগরিবের) সালাত আদায়ের আগেই কিছু তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে কিছু শুকনা খেজুর দিয়ে ইফতার করে নিতেন। আর যদি শুকনা খেজুর না পেতেন তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।” [তিরমিযী, হাদিস নং ৬৯৬, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান গরীব। আবু দাউদ, ২৩৫৬, আলবানি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ। সহীহ ইবনে হিব্বান, ১৫৭৬। ইমাম হাকিম ও যাহাবী রহ. একে সহীহ বলেছেন।]
✪ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর আমল:
عن أبى رجاء قال: «كنت أشهد ابن عباس عند الفطر فى رمضان، فكان يوضع له طعامه، ثم يأمر مراقبا يراقب الشمس، فإذا قال: قد وجبت، قال: كلوا، ثم قال: كنا نفطر قبل الصلاة
◈◈ এখন প্রশ্ন হল: উমর রা. ও উসমান রা. কি মাগরিব সালাতের পরে ইফতার করতেন?
এ ব্যাপারে মুয়াত্তা মালিকে একটি মাওকুফ হাদিস পাওয়া যায় (মারফু নয়) কিন্তু তা মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে সনদগতভাবে জইফ বা দুর্বল।
নিম্নে মওকুফ হাদিসটি উল্লেখ পূর্বক এ বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের মতামত উল্লেখ করা হল:
হাদিস:
হুমায়দ ইবনে আবদুর রহমান (রহঃ) হইতে বর্ণিত, উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এবং উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) উভয়ে মাগরিবের নামায পড়তেন। এমন সময় তখন তারা রাত্রির অন্ধকার দেখতে পাইতেন। (আর তা হত) ইফতার করার পূর্বে। অতঃপর তারা (উভয়ে) ইফতার করতেন। আর তা হত রমজান মাসে। [মুয়াত্তা মালিক, অধ্যায়ঃ ১৮. সিয়াম, হাদিস নম্বরঃ ৬২৬]
এ সনদটি জঈফ।
এর বর্ণনা সূত্রে হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান সরাসরি উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর নিকট হাদিসে শুনেন নি বা তার সাথে দেখাও হয় নি।
আবু যুরআ বলেন, এমনকি উসমান রা. এর সাথেও তার দেখা হয় নি। অর্থাৎ এ মাওকুফ হাদিসের সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
বিস্তারিত:
في الموطأ برواية يحيى بن يحيى الليثي : وحدثني عن مالك ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمنِ :
أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ وعُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ، كَانَا يُصَلِّيَانِ الْمَغْرِبَ، حِينَ يَنْظُرَانِ إِلَى اللَّيْلِ الْأَسْوَدِ، قَبْلَ أَنْ يُفْطِرَا ، ثُمَّ يُفْطِرَانِ بَعْدَ الصَّلاَةِ ، وَذلِكَ فِي رَمَضَانَ
قلت : هذا الأثر فيه نظر ، لأن حميد لم يسمع من عمر قطعا ، ولم يسمع من عثمان فيما يغلب على ظننا .
وهو مصادم للنصوص الشرعية الصحيحة الواردة في السنة النبوية من تعجيل الفطر .
قال الدكتور سليم الهلالي في ضعيف الموطأ ( ص 45 ) : موقوف ضعيف
قال: أبو زرعة لم يسمع حميد من أبي بكر ولا علي -رضي الله عنهما-، يقول: فعدمه من عمر وعثمان من باب أولى،
আর সহিহ ধরে নিলেও বলা যায়, তারা বিশেষ কোনও দরকারে বিলম্বে ইফতার করাকে জায়েজ প্রমাণের জন্য এমনটি করেছেন।
قال ملا علي القارئ في المشكاة : وأما ما صح أن عمر وعثمان رضي الله عنهما كانا برمضان يصليان المغرب حين ينظران إلى الليل الأسود ثم يفطران بعد الصلاة فهو لبيان جواز التأخير لئلا يظن وجوب التعجيل
এছাড়াও একাধিক জবাব আছে এ বিষয়ে।
সুতরাং আমাদের কর্তব্য, একান্ত কোন সমস্যা না থাকলে বিলম্ব না করা। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের সামনে অন্য কারও আমল বা মতামতকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় না করানো-সে যেই হোক না কেন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◐◑▬▬▬▬
“তোমাদের কেউ যখন আযান শুনবে তখন যদি তার হাতে খাদ্যের পাত্র থাকে, তাহলে খাবারের প্রয়োজন পুরন না করে যেন না রাখে”। এ হাদিসের ব্যাখ্যা:
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে,
إِذَا سَمِعَ أَحَدُكُمْ النِّدَاءَ وَالإِنَاءُ عَلَى يَدِهِ فَلا يَضَعْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ
“তোমাদের কেউ যখন আযান শুনবে তখন যদি তার হাতে খাদ্যের পাত্র থাকে, তাহলে খাবারের প্রয়োজন পুরন না করে যেন না রাখে”। (আহমাদ হা/১০২৫১ আবু দাউদ হা/২৩৫০, আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন)
এই হাদিসের অর্থ নিয়ে উলামাগণ বলেছেন, যদি নিশ্চিত থাক যে, সময়ের আগেই আজান দিয়েছে, তাহলে পানাহার শেষ না করে পাত্র হাত থেকে রাখবে না।
◍ এজন্য ইমাম নববী বলেন, “কেউ যদি ফজরের উদিত হওয়ার পর দেখে যে, তার মুখের মধ্যে খাদ্য রয়েছে, তবে সে যেন তা ফেলে দেয়, কিন্তু সে যদি ঐ খানা গিলে ফেলে তাহলে তার সিয়াম বাতিল হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, আবু হুরায়রার হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথম আজান। অর্থাৎ ঐ আজান শোনার পর পানাহার বন্ধ করো না। তোমার প্রয়োজন পুরন করা পর্যন্ত পানাহার করে না। তাহলে উভয় প্রকারের হাদীছের সাথে সামঞ্জস্য হয়।
◍ শায়খ বিন বায বলেছেন, “বর্তমান যুগে ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী আযান দেয়া হয়। সুতরাং আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে, এই ক্যালেন্ডারের সময় ফজর উদিত হওয়ার পূর্বে দেয়া হয়েছে, তাহলে পানাহার চালিয়ে যান। কিন্তু আপনার কাছে যদি সেই নিশ্চয়তা না থাকে, তাহলে দ্বীনের হেফাজতের স্বার্থে সতর্কতার জন্য এবং সন্দেহ থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে পানাহার বন্ধ করাই আবশ্যক। কেননা রাসূলুল্লাহ বলেন,
دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ
“যেখানে তোমার সন্দেহ হয়, তা বর্জন কর এবং যেখানে সন্দেহ নেই তা গ্রহণ করো।(তিরমিযী হা/২৫১৮)
◐ আরও পড়ুন: প্রশ্ন: সেহেরি কতক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া যায়?
https://www.facebook.com/Guidance2TheRightPath/posts/1197238620695681
▬▬▬▬◐◑▬▬▬▬
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব