খুবই গুরুত্বপূর্ণ ১২টি ছোট আমল যেগুলো আমরা চলাফেরার মাঝে পড়তে পারি । তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীর -এর ফযীলত !!
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে,«سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ».(সুব্হানাল্লা-হি ওয়াবিহামদিহী)‘আমি আল্লাহর প্রশংসা পবিত্রতা ঘোষণা করছি’, তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে।”বুখারী ৭/১৬৮, নং ৬৪০৫মুসলিম ৪/২০৭১, নং ২৬৯১
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত বাণীটি ১০ বার বলবে,«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ».(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” এটা তার জন্য এমন হবে যেন সে ইসমাঈলের সন্তানদের চারজনকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করল।”বুখারী ৭/৬৭ নং ৬৪০৪মুসলিম, তার শব্দে ৪/২০৭১ নং ২৬৯৩
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা যবানে সহজ, মীযানের পাল্লায় ভারী এবং করুণাময় আল্লাহ্র নিকট অতি প্রিয়। আর তা হচ্ছে,«سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ».(সুব্হানাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুব্হানাল্লা-হিল ‘আযীম)।‘আল্লাহ্র প্রশংসাসহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি। মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি’।”বুখারী ৭/১৬৮, নং ৬৪০৪মুসলিম ৪/২০৭২, নং ২৬৯৪।
(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার— সূর্য যা কিছুর উপর উদিত হয় তার চেয়ে এগুলো বলা আমার কাছে অধিক প্রিয়।”মুসলিম, ৪/২০৭২, নং ২৬৯৫।
(৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার সওয়াব অর্জন করতে অপারগ?” তাঁর সাথীদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করে বলল, আমাদের কেউ কী করে এক হাজার সওয়াব অর্জন করতে পারে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, তার জন্য এক হাজার সওয়াব লেখা হবে অথবা তার এক হাজার পাপ মুছে ফেলা হবে।”মুসলিম ৪/২০৭৩, নং ২৬৯৮।
(৬) “যে ব্যক্তি বলবে,« سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ ».(সুব্হানাল্লা-হিল ‘আযীম ওয়াবিহামদিহী)।‘মহান আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি’— তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে।”তিরমিযী ৫/১১, নং ৩৪৬৪;হাকেম-১/৫০১ এবং এটাকে সহীহ বলেছেন। আর ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত হয়েছেন। দেখুন, সহীহুল জামে‘ ৫/৫৩১; সহীহুত তিরমিযী ৩/১৬০।
(৭) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ওহে আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস! আমি কি জান্নাতের এক রত্নভাণ্ডার সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব না?” আমি বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, “তুমি বল,«لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».(লা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ)।“আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।”বুখারী, ফাতহুল বারীসহ ১১/২১৩, নং ৪২০৬মুসলিম ৪/২০৭৬, নং ২৭০৪।
(৮) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্র নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি, তার যে কোনটি দিয়েই শুরু করাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। আর তা হলো,«سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ».(সুবহানাল্লা-হি ওয়ালহাম্দু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার)।“আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়।”মুসলিম ৩/১৬৮৫, নং ২১৩৭।
(৯) এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমাকে একটি কালেমা শিক্ষা দিন যা আমি বলব। তখন রাসূল বললেন, “বল,«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيراً، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيراً، سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ العَالَمِينَ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ»(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, আল্লা-হু আকবার কাবীরান, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি কাসীরান, সুবহা-নাল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন, লা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হিল ‘আযীযিল হাকীম।)“একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, অতীব বড়। আল্লাহ্র অনেক-অজস্র প্রশংসা। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান। প্রবল পরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।”তখন বেদুঈন বলল, এগুলো তো আমার রবের জন্য; আমার জন্য কী? তিনি বললেন: “বল,«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِي».(আল্লা-হুম্মাগফির লী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুক্বনী)“হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে হেদায়াত দিন এবং আমাকে রিযিক দিন।”মুসলিম ৪/২০৭২, নং ২৬৯৬আবূ দাউদ বর্ণনা করেন, ১/২২০, নং ৮৩২:
(১০) “কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত শিক্ষা দিতেন। অতঃপর এসব কথা দিয়ে দো‘আ করার আদেশ দিতেন,«اللَّهُمَّ اغْفِرِ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي».(আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়ারযুক্বনী)।“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে আপনি হেদায়াত দিন, আমাকে নিরাপদ রাখুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন।”মুসলিম ৪/২০৭৩; নং ৩৬৯৭। মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, “এগুলো তোমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাত সবকিছুর সমন্বয় ঘটাবে।”
(১১) “সর্বশ্রেষ্ঠ দো‘আ হল,«الْحَمْدُ لِلَّهِ»(আলহামদু লিল্লাহ)“সকল প্রশংসা আল্লাহরই”। আর সর্বোত্তম যিক্র হল,«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ»(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”[তিরমিযী ৫/৪৬২, নং ৩৩৮৩ইবন মাজাহ্ ২/১২৪৯, নং ৩৮০০আল-হাকিম, ১/৫০৩সহীহুল জামে‘ ১/৩৬২।
(১২) “‘আল-বাকিয়াতুস সালিহাত’ তথা চিরস্থায়ী নেক আমল হচ্ছে,«سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».(সুবহা-নাল্লা-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হি)““আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।”মুসনাদে আহমাদ নং ৫১৩মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১/২৯৭আস-সুনানুল কুবরা, নং ১০৬১৭