প্রাণ প্রিয় বন্ধুগণ,আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।আমরা অনেকেই দাওয়াতি কাজ করার প্রতি আগ্রহ পোষণ করি-আল হামদুলিল্লাহ। নি:সন্দেহে এটি প্রশংসনীয়। এই মনোভাব থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। এটি নবী-রাসূল, সাহাবি, তাবেঈ, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন, মুহাদ্দিসিন, মুফসসিরিন, ফুকাহা, মুজাহিদিন সহ যুগে যুগে পুণ্যবান ব্যক্তিবর্গ এবং দীনের দাঈদের পথ। ইসলামে এর মর্যাদা অপরিসীম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, দাওয়াহ ইলাল্লাহ এর মূলনীতি, বৈশিষ্ট্য ও সঠিক কর্মপন্থা সম্পর্কে না জানার কারণে বা সেগুলোর প্রতি লক্ষ না রাখার কারণে আমরা অনেকেই দাওয়াতের ময়দানে এসে সামান্য বিষয়ে অযৌক্তিক ও দলিল বিহীন তর্ক-বিতর্ক, আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার, উগ্রপন্থা, বিদ্বেষ পোষণ, অহঙ্কার প্রকাশ ইত্যাদি দ্বারা মহান এ পথকে পঙ্কিল ও কুলষিত করে ফেলি। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন)তাই আসুন, অতি সংক্ষেপে দাওয়াতের কয়েকটি মূলনীতি ও দিকনির্দেশনা জেনে নেই:◈ ১) সালাফে-সালেহীন (সাহবি ও তাবেঈনদের) মূলনীতির আলোকে দাওয়াত দিন।◈ ২) তাওহীদ ও সুন্নাহর দিকে আহবান করুন এবং শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার থেকে মানুষকে সাবধান করুন।◈ ৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করুন। ঐক্য বিরাট একটি শক্তি। অনৈক্য ও কোন্দল কাফেরদের সামনে মুসলিমদের ধ্বংসের পথকে সুগম করে দেয়।◈ ৪) শাখাগত মতো বিরোধপূর্ণ মাসাআলা-মসায়েলে পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে ভদ্রতার সাথে আলোচনা-পর্যালোচনা করুন। ঝগড়া, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ, যুদ্ধ ও মারামারি কখনোই কাম্য নয়।◈ ৫) মানুষকে আহবান করুন আল্লাহর দীনের দিকে। ব্যক্তি, দল, প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ কোন গোষ্ঠীর দিকে নয়। কারণ, ব্যক্তি, দল, প্রতিষ্ঠান একদিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আল্লাহর দিন কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে।◈ ৬) ইসলামের সৌন্দর্যময় দিকগুলো তুলে ধরুন।◈ ৭) সাহস নিয়ে সত্যের পথে থাকুন। সত্য বলতে অপারগ হলেও কখনো বাতিল কথা যেন মুখ থেকে বের না হয়।◈ ৮) ধৈর্য ধারণ করুন। দাওয়াহর কাজে ধৈর্য খুবই জরুরী।◈ ৯) কাফেরদের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। শরীয়তের মূলনীতির আলোকে দুনিয়াবি বিষয়ে কাফেরদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়া ইসলাম বিরোধী নয়। তবে তাদের বাতিল দীন নোংরামি ও অন্যান্য খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা ও মানুষকে সে সম্পর্কে সাবধান করা জরুরী।◈ ১০) ইসলামকে মানুষের নিকট সহজ ভাবে উপস্থাপন করুন। সহজতা,নম্রতা ও ভদ্রতা ইসলামের মহান শিক্ষা।রুক্ষ আচরণ, আক্রমানত্মক ভাষা প্রয়োগ, তিরস্কার বা হেয় প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ হয় না। বরং তাতে শুধু মনের ঝাল মিটানো হয়।◈ ১১) কথা বলা বা আমল করার পূর্বে জ্ঞানার্জন করতে হবে। কোন বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকলে কুরআন, সুন্নাহর যোগ্য আলেমদের শরণাপন্ন হতে হবে। শুধু বই পড়ে জ্ঞানার্জনের ঝুঁকি অনেক বেশী।।◈ ১২) খালুসিয়াত বা একনিষ্ঠ ভাবে দরদ ভরা বুকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে দাওয়াত দিন।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমলে সালেহ করার পাশাপাশি ইসলাম প্রচারের কাজে অবদান রাখার তাওফিক দান করুন এবং তা কবুল করে নিন। আমীন।মহান আল্লাহ সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী।▬▬▬▬◈◉◈▬▬▬▬গ্রন্থনায়:আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীলদাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
দওয়াতি কাজের কতিপয় মূলনীতি

30
Jan