Uncategorized

রহ., হাফি., দা. বা. ইত্যাদির অর্থ এবং এবং মানুষের নামের ​শেষে এগুলোর ব্যবহার পদ্ধতি​

155930639 1170563313363212 8577674396599006319 n

রহ., হাফি., দা. বা. ইত্যাদির অর্থ এবং এবং মানুষের নামের ​শেষে এগুলোর ব্যবহার পদ্ধতি​
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: রঃ/ র./ রহঃ/ রহ./ রহমাতুল্লাহি আলাইহ/রহিমাহুল্লাহ, হাফি./হাফিজাহুল্লাহ, দা. বা. ইত্যাদির অর্থ কি? এগুলো কখন কার নামের সাথে ব্যবহার করতে হয়?
আরেকটি প্রশ্ন হল, আমরা দেখি, আলেম-ওলামার মৃত্যুর পরে তাদের নাম শুনলে রহ./রাহমাতুল্লাহি আলাইহ বা রাহিমাহুল্লাহ বলা হয় বা তাদের নামের সাথে এমনটা লেখা হয়। কিন্তু সাধারণ কোনও মুসলিম মৃত্যুবরণ করলে তার উদ্দেশ্যেও কি এগুলো বলা যাবে?
উত্তর:
◉◉ রঃ/ র./ রহ. / রহঃ./ রাহমাতুল্লাহি আলাইহ/রাহিমাহুল্লাহ:
‘রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’ (তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) বা রাহিমাহুল্লাহ (আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন) [সংক্ষেপে রহ./রঃ/র. /রহ. /রহঃ]। এগুলো দুআর বাক্য। যে কোনও মুসলিম মারা গেলে এসব বাক্য দ্বারা তাদের প্রতি আল্লাহর রহমত অবর্তীণ হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দুআ করা শরিয়ত সম্মত।
এই দুআর বিষয়টি কেবল আলেম-উলামা বা দীনদার ও বুজুর্গ ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য নয় (যদিও আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষের এ বিষয়ে ভুল ধারণা আছে) বরং যে কোনও মুসলিমই এই দুআ পাওয়ার হকদার।
কারণ জীবিত ব্যক্তিগণ মৃতদের জন্য রহমত (দয়া), মাগফিরাত (ক্ষমা), কবরের আজাব থেকে মুক্তি, কবরের শান্তি, জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য দুআ করবে। কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং এ জন্য বিভিন্ন দুআ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা মৃত ব্যক্তিগত কবরে উপকৃত হয়। আর প্রতিটি মুসলিমই আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার মুখাপেক্ষী।
সুতরাং আলেম-উলামা, সাধারণ দীনদার, এমনকি গুনাহগার মুসলিমদের জন্যও রাহমাতুল্লাহ আলাইহ (তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) বা রহিমাহুল্লাহ (আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন) [সংক্ষেপে রহ./রঃ] এসব বাক্য দ্বারা দুআ করা জায়েজ।
তবে কেউ যদি এমন বড় গুনাহ করে যা তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়-যেমন: আল্লাহ, রাসূল, দীন ইসলামকে গালাগালি করা, পর্দা, সালাত ইত্যাদিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বা প্রকাশ্যে শিরকে লিপ্ত থাকে এবং তওবা না করেই মারা যায় তাহলে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত-মুরতাদ। তার জন্য কোন ধরণের দুআ করা জায়েজ নয়।
◈ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায. রহ. কে প্রশ্ন করা হয়, এক ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করেছে কিন্তু সে জীবদ্দশায় মদ, জিনা, মানুষ হত্যা-যা আল্লাহ হারাম করেছে-করতো। মৃত্যুর পর কি সে রহমতের দুআ পাওয়ার হকদার?
তিনি বলেন, “সে যদি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী ইমানদার মুসলিম হিসেবে সুপরিচিত থাকে কিন্তু তারপরও পাপাচারে আক্রান্ত থাকে তাহলে তার জন্য দুআ করতে বাধা নেই। আল্লাহ আমাদেরকে এবং মুসলিমদেরকে ক্ষমা করুন।
তার জন্য মাগফিরাত (ক্ষমা) ও রহমত (দয়া) এর দুআ করা যাবে। কারণ পাপাচার ইসলাম থেকে বের করে না। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতে মদ, জিনা বা এ জাতীয় গুনাহ ইসলাম থেকে বের করে না। কিন্তু সে হয় দুর্বল ইমানদার।।
আর যদি সে এমন কিছুতে পরিচিত থাকে যার তার কুফরির প্রমাণ বহন করে-যেমন: দীন-ইসলামকে গালি দেয়া, সালাত অস্বীকার করা, যাকাত ফরজ হওয়াকে অস্বীকার করা, দীনকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা ইত্যাদি তাহলে সে কাফের। তার জন্য দুআ করা যাবে না, তার জন্য রহমত কামনা করা যাবে না।
তবে যদি সুপরিচিত হয় যে, সে ইসলামকে ভালবাসতো, সে একজন নামাজি, তাওহিদ পন্থী মুসলিম, শিরক করতো না কিন্তু সে এসব নাপাক পাপাচারে আক্রান্ত ছিল তাহলে তার জন্য দুআ করা হবে। আর তার (ব্যক্তিগত গুনাহের) বিষয়টি থাকবে আল্লাহর উপর সমর্পিত।” [শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]
◉◉ হাফি./ হাফিযাহুল্লাহ অর্থ: আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন, আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন।
এটিও একটি দুআ। বিশেষত: আরব দেশে এ দুআটি সাধারণত: জীবিত লোকদের নামের পরে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। যে কোনও মুসলিমের ক্ষেত্রে এই দুআটি বলা যায়। তা কেবল আলেম-ওলামা বা সম্মানিত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট নয়।
উল্লেখ্য যে, রহমতের দুআ জীবিত ও মৃত্যু সবার জন্যই করা বৈধ। তবে দীনী মহলে একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে যে, মৃত লোকদের জন্য রাহিমাহুল্লাহ/রহ. আর জীবিত লোকদের জন্য হাফি./হাফিজাহুল্লাহ বলা। সুতরাং আমাদের উচিৎ, এ রীতি অনুসরণ করা।
◉◉ দা. বা. দ্বারা কী উদ্দেশ্য? এটা বলার বিধান কি?
দা. বা. অর্থ: ‘দামাত বারাকাতুহু’ [তার বরকত দীর্ঘস্থায়ী হোক]
সাধারণত: দেওবন্দি ও ব্রেলভী আকিদার লোকজন তাদের আকিদার জীবিত আলেম বা পীর-বুজুর্গ প্রমুখ এর নামের শেষে এ শব্দটি ব্যবহার করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি স্বত্বার মধ্যে বরকত থাকার বিশ্বাস রাখা শরিয়ত সম্মত নয়। এটি সুফিবাদী ও বিদআতি বিশ্বাস। সুতরাং কোন ব্যক্তির নামের শেষে দা. বা. (দামাত বারাকাতুহ) ব্যবহার করা ঠিক নয়।
পীর-বুজুর্গের ব্যাক্তি স্বত্তার মধ্যে বরকত থাকার বিশ্বাসের কারণে এসব সুফিরা তাদের পীরদের শরীর, তাদের ব্যবহৃত ঘটি, বাটি, জামা, জুতা ইত্যাদিকে বরকতময় মনে করে। এ বিশ্বাস থেকেই পীরের দেহের সাথে পাগড়ী লাগিয়ে সেই পাগড়ী ধরাকে বরকতময় মনে করে।
পৃথিবীতে মাত্র একজন মানুষের দেহ স্বত্তা বরকত মণ্ডিত । তিনি হলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার মাথার চুল, ব্যবহৃত পোশাক, জুতা-জামা, তাঁর শরীরের ঘাম, ওজুর ব্যবহৃত পানি সবই বরকতময়। এ ছাড়া কোনও সাহাবির দেহ স্বত্বাও বরকতময় নয়। সাহাবিগণ কখনো আবু বকর রা., উমর রা., উসমান, আলী সহ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত কোন সাহাবির প্রতিও এমন বিশ্বাস রাখতেন না। তবে কুরআন, হাদিস ও দীনের ইলম হল, বরকতময়।
সুতরাং বরকত লাভ করতে চাইলে কুরআন, হাদিস পড়া ও বিজ্ঞ আলেমদের নিকট দীনের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে বরকত লাভের আশা করতে হবে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Leave a Reply

Your email address will not be published.