আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ
আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ
মুসলিমদেরকে অবশ্যই যা জানতে হবে
মূল
‘আলী বিন নুফায়ী আল-উলাইয়ানী (রহঃ)
অনুবাদ
ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ মুজিবুর রহমান (রহঃ)
বি.এস.বি.ই. (প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা)
উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কা মুকাররামা হতে
আরবী ভাষা, দাওয়া ও আক্বীদাহ্ বিষয়ে সনদ প্রাপ্ত
আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ
অনুবাদকের আরয
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য এবং দরূদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ।
তা’বিজ সম্পর্কে হরেক রকমের বই পুস্তক বাজারে রয়েছে। ঐ সব বইয়ে তা’বিজের স্বপক্ষে কোনো সমর্থনযোগ্য বর্ণনা নেই, অথচ অনেক কিচ্ছা কাহিনীসহ অসংখ্য তা’বিজের বর্ণনা ও ফাযায়েলে ভরপুর। এই সব বই পড়ে যে কোন মানুষ বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, রোগ, যন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভের আশায় তাবিজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়। তা’বিজের ব্যবহার আজ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে উঠেছে ।
প্রখ্যাত গবেষক ডঃ আলী আল-উলাইয়ানী তাঁর “আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ” নামক পুস্তিকায় সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে তাবিজের গ্রহণযোগ্যতা পর্যালোচনা করেছেন । তা’বিজ ব্যবহার শরীয়ত সম্মত কিনা- এর পক্ষের ও বিপক্ষের দলীলসমূহ তিনি কুরআন ও ছহীহ হাদীসের আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করেছেন । এ আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ বইতে তিনি উভয় পক্ষের বক্তব্য পেশ করার পর এটা প্রমাণ করেছেন যে, তাবিজের যে রেওয়াজ বর্তমানে প্রচলিত আছে তার অধিকাংশই ছহীহ আক্বীদাহ্ পরিপন্থী এবং সরলপ্রান মুসলিমদেরকে তাদের অজ্ঞতার সুযোগে ভাল মন্দ, সুখ দুঃখ তথা বাঁচা মরার অবলম্বন হিসাবে বেছে নিতে প্ররোচিত / উদ্বুদ্ধ করছে এবং এর ফলে তারা নিজেদের অজান্তে বিদ’আত ও শিরকের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন : অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” (সূরা মায়িদা ৫ : ২৩ আয়াত)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : অর্থাৎ ‘যে তা’বিজ ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দিবেন না ।’
আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদেরকে শিরক থেকে মুক্ত রাখুন এবং তাঁর ক্রোধ ও জাহান্নামের আগুন থেকে হিফাজত করুন । আমাদের যাবতীয় প্রয়োজনে তাঁর সাহায্য কামনা করার ও মুছীবতের সময় একমাত্র তাঁর উপর নির্ভর করার যে নির্দেশনা কুর’আন মাজীদ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ্র মধ্যে রেখেছেন তা পরিপূর্ণ ভাবে গ্রহণ করার তাওফীক তিনি আমাদের সবাইকে দান করুন । আমীন !
অনুবাদক
আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ
লেখকের কথা
নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের, আমরা তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁরই নিকট গুনাহ হতে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁরই কাছে হিদায়েত প্রার্থনা করছি । তাঁরই নিকট আরও আশ্রয় চাচ্ছি আমাদের নফসের ও ‘আমলের খারাবী হতে । যাকে আল্লাহ পাক হিদায়াত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না, আর যে গোমরাহ হয় কেউ তাকে হিদায়াত করতে পারে না । এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই । তিনি এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই । আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল । অতএব, যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে না, তার মধ্যে ঈমান নেই । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন : অর্থাৎ “আর তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা কর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।” (সূরা মায়িদা ৫ : ২৩ আয়াত)
অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল ইয্যত বলেন ঃ অর্থাৎ “নিশ্চয়ই মু’মিনরা এরূপই হয় যে, যখন (তাদের সামনে) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় তখন তাদের অন্তরসমূহ ভীত হয়ে পড়ে, আর যখন তাদের সামনে তার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সেই আয়াতসমূহ তাদের ঈমানকে আরও বৃদ্ধি করে, আর তারা নিজেদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে ।” (সূরা আনফাল ৮:৩ আয়াত)
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা ঈমানের একটি শর্ত। আর আল্লাহ্র প্রতি সত্যিকার তাওয়াক্কুলের অর্থ এই যে, বান্দা এই বিশ্বাস রাখবে যে, সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, আল্লাহ যা চান তাই হয়, আর তিনি যা চান না তা হয় না । আর তিনিই একমাত্র কল্যাণ- অকল্যাণের মালিক, দেয়া না দেয়ার মালিক, আর একমাত্র আল্লাহর সাহায্যেই ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সৌভাগ্য হয় ।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাসকে (রাঃ) উদ্দেশ্য করে বলেন- অর্থাৎ “হে বৎস ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখাবো । যদি তুমি সেগুলো হিফাযত কর, তাহলে আল্লাহ তোমাকে হিফাযত করবেন । আল্লাহর হুকুম আহকামের হিফাযত কর, তাঁকে শিক্, কুফ্ থেকে মুক্ত রাখবে, তবেই একমাত্র সাহায্যকারী হিসাবে তাঁকে তোমার কাছে পাবে। আর যখন কোন কিছু যাচঞা করবে, আল্লাহর কাছে যাচঞা কর, আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, একমাত্র তাঁর কাছেই করবে। এবং জেনে রেখো- তোমার উপকার করার জন্য পৃথিবীর সকল মানুষ একত্রিত হলেও আল্লাহ তোমার জন্য তাক্বদীরে যে মঙ্গল লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোন প্রকার মঙ্গলই তারা করতে পারবেনা । আর যদি তারা তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে তাক্বদীরে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তোমার জন্য যে ক্ষতি লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত অন্য কোন ক্ষতিই তারা করতে পারবে না । কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, আর দফতর বন্ধ করে ফেলা হয়েছে।” (মুসনাদে আহমাদ, প্রথম খন্ড)
অতএব, মানুষের উদ্দেশ্য পূরণ হবার জন্য তাওয়াক্কুল সর্বোত্তম মাধ্যম । এবং তাওয়াক্কুলের কারণে বালা-মুছিবত দূর হয়ে যায়। তবে তাওয়াক্কুল পরিপূর্ণ হবার শর্ত হচ্ছে, মাধ্যমের প্রতি ঝুকে না পড়া । অর্থাৎ মাধ্যমের সাথে, অন্তরের সম্পর্ক ছিন্ন করা ।সুতরাং একজন পরিপূর্ন তাওয়াক্কুলকারী মু’মিনের অবস্থা হবে এই যে, তার অন্তর থাকবে আল্লাহর সাথে, তার শরীর থাকবে আসবাব অর্থাৎ মাধ্যমের সাথে ।
কারণ, মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর হিকমতের স্থান, তাঁর আদেশ এবং বিধান । আর তাওয়াক্কুলের সম্পর্ক আল্লাহর রুবূবিয়্যত তথা প্রভূত্ব এবং তাঁর বিচার ও তাঁর তাক্বদীরের সাথে। এ জন্যই তাওয়াক্কুল ব্যতীত মাধ্যমের সাহায্য গ্রহণ আল্লাহর দাসত্বে শামিল হয় না । অনুরূপভাবে, আল্লাহর দাসত্ব ছাড়া কোন তাওয়াক্কুল সঠিক হয় না । তাওয়াক্কুল যখন দুর্বল হয়, অন্তর তখন মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং স্রষ্টা থেকে গাফিল হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, গাফিলতি এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যে, প্রকৃত মাধ্যমের উপর ভরসা না করে, মানুষ কতকগুলি মনগড়া মাধ্যমকে ভরসার স্থল বানিয়ে নেয় । আর এটাই হচ্ছে আগেকার যুগে ও বর্তমান যুগে তা’বিজ ভক্তদের অবস্থা ।
যেহেতু যাদুকর, কুসংস্কারবাদী, সুফীবাদ, গণক চিকিৎসক এবং ঝাড়-ফুঁকের চিকিৎসার অভিযোগে অভিযুক্ত দাজ্জালের কারণে পৃথিবীর অনেক স্থানে তা’বিজের ব্যবহার প্রসার লাভ করেছে, সেহেতু তা’বিজের তত্ত্ব ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিশুদ্ধ ‘আক্বীদা দৃষ্টিতে তার হুকুম ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা সমীচীন মনে করছি।
আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ
সূচীপত্র
- ভূমিকা
- প্রথম পরিচ্ছেদ
- তাবিজের সংজ্ঞা
- তা’বিজ হারাম হওয়ার দলীলসমূহের বর্ণনা
- দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
- তা’বিজ ব্যবহার কি বড় শিরক, না ছোট শির্ক ?
- তৃতীয় পরিচচ্ছেদ
- কুরআন – হাদীছে তা’বিজ ব্যবহার করার হুকুম
- চতুর্থ পরিচ্ছেদ
- তা’বিজ ব্যবহারের অতীত ও বর্তমান
- পরিশিষ্ট
- আলোচনার ফলাফল
- সহায়ক উৎসনির্দেশ :
- হিয়াল আদ
- সালাত ত্যাগকারীর বিধান
আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ
ভূমিকা
তা’বিজের সংজ্ঞা
লেসান নামক অভিধানে বলা হয়েছে – তামীম অর্থ হচ্ছে তা’বিজ (রক্ষাকবচ)। শব্দটির একবচন তামীমা। আবু মনসুর বলেছেন, তামীম দ্বারা তা’বিজ বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য ব্যবহার করে থাকে । এমনিভাবে বলা যায় যে, বিষধর সাপ ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য যে পুতি জাতীয় তা’বিজ সুতায় গেঁথে গলায় বেঁধে দেয়া হয়, তাকেই তামায়েম কিংবা তামীমা অর্থাৎ তা’বিজ বলা হয় ৷
ইবনে জোনাই (রঃ) থেকে বর্ণিত, অনেকের মতে তা’বিজ হচ্ছে ঐ জিনিস, যা তাগায় বেঁধে লটকানো হয়। সা’আলব (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে- আরবরা বলে এর অর্থ হল- আমি শিশুর গলায় তাবিজ ঝুলিয়ে দিয়েছি । এক কথায় বলা যায় যে, মানুষের গলায় বা অন্যান্য অঙ্গে বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য যেসব তা’বিজ ধারণ করা হয়, সেগুলিকেই তামীমা বলা হয় ।
ইবনে বরী বলেন – কবি সালমা বিন খরশবের নিম্ন বর্ণিত কবিতায় “তামীমা” – এর অর্থই গৃহিত হয়েছে । কবি বলেন : অর্থাৎ ঝাড়- ফুঁক এবং তা’বিজ তুমারের মাধ্যমে নিশ্চিন্তে বিপদাপদ থেকে আশ্রয় গ্রহণ করবে। আর তার গলায় তা’বিজ বেঁধে দেবে। আবু মনসুর বলেছেন,এর একবচন হচ্ছে । আর তামীমা হল, দানা জাতীয় তা’বিজ । বেদুঈনরা বদ নজর থেকে হিফাযতে থাকার জন্য এ ধরণের তা’বিজ তাদের শিশুদের এবং তাদের সন্তানদের গলায় লটকিয়ে দিত । ইসলাম তাদের এরকম কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধারণা বাতিল করে দেয় ।
হাজলী তার নিম্ন বর্ণিত কবিতা থেকে এ অর্থই গ্রহণ করেছেন । তিনি বলেছেন : অর্থাৎ মৃত্যু যখন কারো প্রতি থাবা হানে, তখন তা’বিজ-তুমার দ্বারা কোন কাজই হয় না ।
অন্য এক জাহেলী কবি বলেছেন : অর্থাৎ – সে মৃত্যুবরণ করলে, মৃত্যুর পর মুজায়্যেনা (একটি গোত্রের নাম) তাকে মৃত্যু থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে সফল হবে না। সুতরাং, হে মুজায়্যেন ! তার উপর তা’বিজ ঝুলিয়ে দাও । আল্লামা ইবনে হাজর বলেন, হল এর বহুবচন । আর তা হচ্ছে তা’বিজ বা হাড় যা মাথায় লটকানো হয় । জাহেলী যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিল যে, তা’বিজ দ্বারা বিপদাপদ দূর হয়ে যায় ।
ইবনুল আছীর বলেছেন, শব্দটি বহুবচন, এর একবচন হল অর্থ – তা’বিজ। আরবরা শিশুদের গলায় তা’বিজ লটকাতো, যাতে বদ নজর না লাগে । ওটাই তাদের ‘আক্বীদাহ। অতঃপর ইসলাম তাদের এই ‘আক্বীদাকে ভ্রান্ত বলে ঘোষণা করেছে । ইবনে ‘উমরের (রাঃ) হাদীছে এসেছে – তুমি যে ‘আমল করেছ, আমি তার কোন পরোয়াই করি না (অর্থাৎ তার কোন মূল্যই নেই), যদি তুমি তা’বিজ লটকাও । অন্য এক হাদীছে এসেছে, যে তা’বিজ ব্যবহার করে, আল্লাহ তার কোন কিছুই পূর্ণ করবেন না । (কারণ সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তা’বিজের উপর ভরসা করেছে)। বস্তুতঃ আইয়ামে জাহেলিয়া তথা জাহেলী যুগে মানুষের ধারণা ছিল, তা’বিজ হচ্ছে রোগমুক্তি ও চিকিৎসার পরিপূর্ণতা। তা’বিজ ব্যবহার করা শিরকের অন্তর্ভূক্ত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, এতে লিখিত তাক্বদীরকে উপেক্ষা করার ইচ্ছা থাকে । এবং আল্লাহ একমাত্র তাক্বদীরের নিয়ন্ত্রণকারী, অথচ তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের মাধ্যমে ক্ষতি ও দুঃখ কষ্ট দূর করার চেষ্টা করা হয় । এর উপরোল্লিখিত আভিধানিক সংজ্ঞাসমূহ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তাবিজ দুই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় । প্রথমতঃ এ সমস্ত রোগ-ব্যাধি এবং বদ নজর থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যে, যা এখনো সংঘটিত হয়নি। শিশুর গলায়, ঘোড়ার ঘাড়ে এবং ঘর-বাড়ীতে যে সকল তা’বিজ ঝুলানো হয়, সেগুলিতে উক্ত উদ্দেশ্য স্পষ্ট। দ্বিতীয়তঃ যে বিপদাপদ এসে গেছে, তা থেকে উদ্ধার পাবার জন্য রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা যে তা’বিজ ব্যবহার করে, তার উদ্দেশ্যও স্পষ্ট । ইনশাআল্লাহ এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা সামনে আসছে।
উল্লেখ্য যে, “বিষধর সাপ থেকে বাঁচার জন্য যে তা’বিজ নেয়া হয়, তাকে তামিমা বলে ।” এ ধরণের সংজ্ঞা দ্বারা নির্দিষ্ট অর্থ বুঝা গেলেও মূলতঃ তামিমা শুধু ওতেই সীমাবদ্ধ নয়। কারণ, আরবরা ; (দানা জাতীয় তা’বিজ) ব্যতীত অন্যান্য তা’বিজও ব্যবহার করত। যেমন, তারা খরগোশের হাড় তা’বিজ হিসেবে ব্যবহার করতো, আর এর দ্বারা তারা মনে করত, বদ নজর ও যাদু থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । এমনিভাবে ধনুকের ছিলাও তারা ধারণ করত । ইবনুল আছীর বলেন – তারা মনে করত যে, ধনুকের ছিলা সাথে রাখলে বদ নজর এবং বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । সুতরাং তাদেরকে এটা থেকে নিষেধ করা হয়েছে ।
যেমন হাদীছে এসেছে – ঘোড়ার ঘাড়ে লটকানো ধনুকের ছিলাসমূহ ছিড়ে ফেলার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন । মোদ্দা কথা, উপরোল্লিখিত উদ্দেশ্যদ্বয়ের জন্য যা কিছুই ব্যবহার হউক না কেন, সেটাই হচ্ছে তামিমা তথা তা’বিজ । সেটা ; হোক বা কাঠ জাতীয় বস্তু হউক । সেটা ঘাস বা পাতা হউক অথবা খনিজ জাতীয় পদার্থ হউক, অর্থাৎ তা’বিজ বস্তুটি যাই হউক না কেন, তা মন্দ থেকে হিফাযতে থাকার জন্য অথবা মন্দকে দূর করার জন্য ব্যবহার করা হলে এর অন্তর্ভূক্ত হবে, অর্থাৎ সেটা শির্ক হবে । কারণ বস্তুর সত্তা এবং উদ্দেশ্যটাই বিবেচ্য হয়, তার নাম যা’ই দেয়া হোক না কেন । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, মদের মূল কাজ হচ্ছে মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি আচ্ছন্ন করা । অতএব, যে সকল বস্তু পান বা ভক্ষণ করলে বুদ্ধি আচ্ছন্ন হয়ে যায়, সেগুলিই মদ । মদ হবার জন্য আঙ্গুর থেকে তৈরী হতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। আর তা’বিজরে ব্যাপারটিও তাই । এখানে কোন নির্দিষ্টতা নেই ।
আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ
প্রথম পরিচ্ছেদ
তা’বিজ হারাম হওয়ার দলীল সমূহ
প্রথমতঃ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন :
سَسْكَ اللهُ بِضُرٍ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ وَإِنْ
بخَيْرٍ فَهُوَ عَلى كلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ * (الأنعام : ١٧)
অর্থাৎ “আর যদি আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী আর কেউ নেই ; পক্ষান্তরে যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনিই তো সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।” (সূরা আন’আম ৬ : ১৭ আয়াত)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আরও বলেন :
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍ فَلا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِن يُرِدكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَّشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ
وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ * (يونس : ١٠٧)
অর্থাৎ “এবং আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে, তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই এবং আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই । তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন । তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা য়ূনুস ১০:১০৭ আয়াত)

আক্বীদার মানদন্ডে তাবিজ
Reviews
There are no reviews yet.