আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার

৳ 80

আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার
লেখক : মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
প্রকাশনী : হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ
বিষয় : ইসলামি বিধি-বিধান ও মাসআলা-মাসায়েল
পৃষ্ঠা : 102, কভার : পেপার ব্যাক

Description

আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার

আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার
লেখক : মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
প্রকাশনী : হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ
বিষয় : ইসলামি বিধি-বিধান ও মাসআলা-মাসায়েল
পৃষ্ঠা : 102, কভার : পেপার ব্যাক

 

আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার

(১১০ كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللهِ، (آل عمران

অনুবাদ : ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)।

অত্র আয়াতে শ্রেষ্ঠ জাতির প্রধান দু’টি বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ। এর পরেই বলা হয়েছে وَتُؤْمِنُونَ بِاللهِ এবং তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর উপরে। এখানে ঈমান আনার বিষয়টি পরে আনার কারণ হ’ল আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকারকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। এগুণটি সকল মানুষের মধ্যে কমবেশী আছে এবং সকলে এর মর্যাদা স্বীকার করে। কিন্তু অন্যেরা দুনিয়াবী স্বার্থের বশবর্তী হয়ে অনেক সময় একাজ থেকে বিরত থাকে। যেমন ঈমানের দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও ইহুদী-নাছারাগণ এ থেকে দূরে থাকত। আল্লাহ বলেন, كَانُوا لاَ يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوْهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُوْنَ ‘তারা যেসব মন্দ কাজ করত, তা থেকে পরস্পরকে নিষেধ করত না। তাদের এ কাজ ছিল অত্যন্ত গর্হিত’ (মায়েদাহ ৫/৭৯)। মুসলিম উম্মাহ যাতে এ কাজ থেকে বিরত না হয়, সেজন্য বিষয়টিতে জোর দেওয়ার জন্য প্রথমে আনা হয়েছে এবং ঈমান-এর বিষয়টি পরে আনা হয়েছে।

আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকারের সঙ্গে ঈমান আনার শর্তটি জুড়ে দেয়ার কারণ এই যে, অন্যেরা পার্থিব স্বার্থের অনুকূলে হ’লে একাজ করবে। কিন্তু বিপরীত হ’লে বা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে করবে না। যেটি ইহুদী-নাছারাদের স্বভাব। তাদের মধ্যে শরীফ বা উঁচু ঘরের কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি হতো না। নিম্নশ্রেণীর লোকদের কেউ অপরাধ করলে তার কঠোর শাস্তি হ’ত।[1] মুসলমানদের মধ্যেও যারা দুনিয়াদার ও কপট বিশ্বাসী-মুনাফিক তাদের চরিত্র ইহুদী-নাছারাদের ন্যায়। ফলে তারাও একাজ থেকে বিরত থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, اَلْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ ‘মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরস্পরে সমান। তারা অসৎকাজের নির্দেশ দেয় ও সৎকাজে নিষেধ করে’ (তওবা ৯/৬৭)। পক্ষান্তরে প্রকৃত মুমিনদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ ‘মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরে বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে নিষেধ করে’ (তওবা ৯/৭১)।

আলোচ্য আয়াতে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার-এর পরেই ঈমান-এর কথা বলার মাধ্যমে ইহুদী-নাছারা ও মুনাফিকদের স্বার্থদুষ্ট চরিত্রের বাইরে এসে প্রকৃত ঈমানের সাথে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ‘আমর বিল মা‘রূফ’-এর দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমেই কেবল ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ হওয়া সম্ভব, সেকথা বলে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, মানুষের বানোয়াট সংস্কার বা তাদের রচিত বিধান আমর বিল মা‘রূফ হিসাবে নির্ধারিত হবে না। বরং এর সঠিক মানদন্ড হবে ‘ঈমান’। অর্থাৎ আল্লাহ প্রেরিত সত্য বিধানই হ’ল মা‘রূফ ও মুনকারের প্রকৃত মানদন্ড। কেননা বান্দার প্রকৃত কল্যাণকামী হলেন আল্লাহ এবং তাঁর বিধানই বান্দার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কল্যাণের চাবিকাঠি। তাঁর আদেশ-নিষেধই হল প্রকৃত অর্থে মা‘রূফ ও মুনকার। ফলে শরী‘আত অনুমোদিত বিধানই হ’ল মা‘রূফ বা সৎকাজ এবং সেখানে নিষিদ্ধ বিষয় হ’ল মুনকার বা অসৎকাজ। মুসলিম উম্মাহকে শ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদায় আসীন হ’তে গেলে সেটাই মেনে চলতে হবে, সেকথাই বলে দেওয়া হয়েছে ‘তোমরা আল্লাহর উপরে ঈমান রাখবে’ একথা বলার মধ্যে। কেননা দুনিয়াবী স্বার্থের চাপে মুমিনরাও অনেক সময় প্রবৃত্তিরূপী শয়তানের তাবেদারী করে। যা তকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন থেকে নামিয়ে দেয়।

আল্লাহ বলেন, وَلْتَكُن مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা চাই, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং যারা সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। বস্ত্ততঃ তারাই হল সফলকাম’ (আলে ইমরান ৩/১০৪)। যাহহাক বলেন, এরা হলেন, উম্মতের উলামা ও মুজাহেদীনের দল। অর্থাৎ এরা হলেন বিশেষ দল, যারা উম্মতের ইলমী প্রতিরক্ষা এবং সমাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকেন। নইলে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার-এর দায়িত্ব আলেম-জাহিল নির্বিশেষে সকল মুমিনের উপর সমান। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ ‘তোমাদের যে কেউ মুনকার কিছু দেখবে, সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে। না পারলে যবান দিয়ে প্রতিবাদ করে, না পারলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান।[2] ‘এর পরে তার মধ্যে আর সরিষাদানা পরিমাণ ঈমানও থাকবে না’।[3]

خَيْرَ أُمَّةٍ বা ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ কথাটি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে? এ বিষয়ে বিদ্বানগণ কয়েকটি মত প্রকাশ করেছেন। যেমন- (১) আখেরাতের হিসাবে ‘শ্রেষ্ঠ উম্মত’ যা পূর্ব থেকেই লওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ। যেমন আল্লাহ বলেন, وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا ‘এভাবে আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি। যাতে তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হতে পার এবং রাসূলও তোমাদের উপর সাক্ষী হতে পারেন’ (বাক্বারাহ ২/১৪৩)। এই সাক্ষী হবে ক্বিয়ামতের দিন। আর সাক্ষী তিনিই হতে পারেন, যিনি নিরপেক্ষ, বিশ্বস্ত ও মর্যাদাবান। অর্থাৎ দুনিয়াতে যেমন শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে তোমরা অন্যান্য জাতির উপরে কল্যাণ ও মানবতার দৃষ্টান্ত হবে। ক্বিয়ামতের দিনেও তেমনি অন্যান্য সকল উম্মতের উপরে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন নূহ সহ অন্যান্য নবীদের ডাকা হবে এবং বলা হবে, তোমরা কি তোমাদের সম্প্রদায়ের কাছে তাওহীদের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছিলে? সকলে বলবেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তখন তাদের স্ব স্ব সম্প্রদায়কে ডাকবেন ও জিজ্ঞেস করবেন। কিন্তু তারা বলবে, না। তিনি আমাদেরকে দাওয়াত দেননি। তখন আল্লাহ নবীদের বলবেন, তোমাদের সাক্ষী কোথায়? তারা বলবেন, আমাদের সাক্ষী হলেন মুহাম্মাদ ও তাঁর উম্মতগণ। তখন তাদের ডাকা হবে এবং তারা বলবে, হ্যাঁ। নবীগণ স্ব স্ব কওমের নিকট দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন। বলা হবে, কিভাবে তোমরা এটা জানলে? তারা বলবে ‘আমাদের নিকট আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এসেছিলেন। অতঃপর তিনি আমাদের খবর দিয়েছেন যে, রাসূলগণ স্ব স্ব কওমের নিকট দাওয়াত পৌঁছেছেন’।[4]

শ্রেষ্ঠ জাতির বৈশিষ্ট্য :

প্রধান বৈশিষ্ট্য হ’ল ‘আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার’ যা উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এর আবশ্যকতা সর্বাবস্থায় সকলের জন্য প্রযোজ্য। যেমন হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) বলেন, إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الْمُنْكَرَ وَلاَ يُغَيِّرُونَهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابِهِ ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, যখন লোকেরা কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে অথচ তা পরিবর্তন করে না, সত্বর তাদের সকলের উপর আল্লাহ তাঁর শাস্তি ব্যাপকভাবে নামিয়ে দেন’।[5] হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ ‘যার হাতে আমার জীবন নিহিত তার কসম করে বলছি, অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। নইলে সত্বর আল্লাহ তার পক্ষ হতে তোমাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা দো‘আ করবে। কিন্তু তা আর কবুল করা হবে না’।[6]

আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার-এর মূল স্পিরিট হবে উপদেশ দেওয়া। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, الدِّينُ النَّصِيحَةُ ‘দ্বীন হ’ল উপদেশ’। ছাহাবীগণ বললেন, কাদের জন্য? জবাবে তিনি বললেন, لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিমদের নেতাদের জন্য ও সাধারণভাবে সকল মুসলিমের জন্য’।[7] নছীহত অর্থ পরিশুদ্ধ করা। পারিভাষিক অর্থ ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করার মাধ্যমে অন্যের কল্যাণ কামনা করা’ (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব)।

অত্র হাদীছে পুরা ইসলামকেই নছীহত হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে الْحَجُّ عَرَفَةُ ‘হজ্জ হ’ল আরাফা’।[8] অর্থাৎ হজ্জ অর্থই হ’ল ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা’। যেটি না হ’লে হজ্জ হয় না। অনুরূপভাবে এখানে নছীহতকেই দ্বীন বলা হয়েছে। যা না থাকলে দ্বীন থাকে না। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, মুসলমান মাত্রই পরস্পরের কল্যাণ কামনা করবে ও পরস্পরকে কল্যাণের উপদেশ দিবে। নইলে সে মুসলমানই নয়। এখানে ‘আল্লাহর জন্য নছীহত’ অর্থ তাঁর জন্য হৃদয়ে নিখাদ ভালোবাসা পোষণ করা এবং তাঁর সাথে অন্যকে শরীক না করা। ‘তাঁর কিতাবের জন্য নছীহত’ অর্থ কুরআন যে সরাসরি আল্লাহর কালাম এবং তা সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। এর পরিবর্তনকারী কেউ নেই। বরং সকল যুগে সকল মানুষের জন্য একমাত্র হেদায়াত গ্রন্থ, সে বিষয়ে হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন রাখা। ‘তাঁর রাসূলের জন্য নছীহত’ অর্থ হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) যে শেষনবী এবং তিনি নবীগণের সর্দার। তাঁর আনীত ইসলামী শরী‘আত অভ্রান্ত সত্য এবং তা মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ বিধান সম্বলিত, এ বিষয়ে হৃদয়ে খালেছ ঈমান পোষণ করা। ‘মুসলিমদের নেতাদের জন্য নছীহত’ অর্থ তাদের জন্য হৃদয়ে সর্বদা কল্যাণ কামনা করা’। তাদের প্রতি অনুগত থাকা, তাদেরকে সুপরামর্শ দেওয়া ও তাদের সকল কল্যাণ কাজে সহযোগিতা করা। সর্বোপরি তারা যাতে সর্বদা আল্লাহর পথে পরিচালিত হন, সেজন্য দো‘আ করা। ‘সাধারণ মুসলমানদের জন্য নছীহত’ অর্থ তাদের কল্যাণে সর্বদা অন্তরকে খোলা রাখা। তাদেরকে ইহকাল ও পরকালের মঙ্গলের পথ প্রদর্শন করা এবং সমাজে সর্বদা ঈমানী পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করা।

ইসলামের উপরোক্ত শান্তিময় আদর্শকে ধ্বংস করার জন্য শয়তান সর্বদা চেষ্টিত থাকে। সে সর্বদা মানুষকে অন্যায় কাজে উস্কে দেয়। আর সেজন্য আমর বিল মা‘রূফের সাথে নাহী ‘আনিল মুনকারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বস্ত্ততঃ নাহী ‘আনিল মুনকার ব্যতীত আমর বিল মা‘রূফ প্রতিষ্ঠা লাভ করে না। যেমন ত্বাগূতকে অস্বীকার করা ব্যতীত তাওহীদ হাছিল করা যায় না। ‘লা ইলাহা’ না বলা ব্যতীত ‘ইল্লাল্লাহ’ বলা যায় না। পাপের শাস্তি তাই সমাজে পুণ্যের পথ খুলে দেয়। পাপীর শাস্তি পাওয়াটা পাপীর জন্য যেমন ইহকালে ও পরকালে কল্যাণকর, তেমনি সমাজের জন্য মঙ্গলময়। একারণেই ইসলামী শরী‘আতে বিভিন্ন অপরাধের জন্য বিভিন্ন দন্ডবিধি নির্ধারিত হয়েছে। যা প্রকৃত অর্থে সমাজের জন্য রহমত স্বরূপ। যে সমাজে ইসলামী দন্ডবিধি যথাযথভাবে চালু থাকে, সে সমাজে শান্তি ও অগ্রগতি অব্যাহত ও ক্রমবর্ধমান থাকে।

বস্ত্ততঃ প্রাথমিক যুগে ইসলামী বিজয়ের মূল চালিকাশক্তি ছিল আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকারের আক্ষরিক বাস্তবায়ন। যেমন প্রথম খলীফা হযরত আবূবকর (রাঃ)-এর খেলাফত কালে তৎকালীন খিষ্টান পরাশক্তি রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সে যুগের সর্বাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী ক্ষুদ্র ও সাধারণ অস্ত্রের অধিকারী মুসলিম বাহিনীর কাছে বারবার কেন পরাজিত হচ্ছে তার কারণ খুঁজে বের করার জন্য ১৩ হিজরীতে সংঘটিত আজনাদাইন যুদ্ধের এক পর্যায়ে তারা মুসলিম শিবিরে একজন বিশ্বস্ত গুপ্তচর প্রেরণ করেন। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান শেষে ফিরে গিয়ে তিনি রিপোর্ট দেন যে, ‘তারা রাতের বেলায় ইবাদতগুযার ও দিনের বেলায় ঘোড় সওয়ার। আল্লাহর কসম! যদি তাদের শাসকপুত্র চুরি করে, তাহ’লে তারা তার হাত কেটে দেয়। আর যদি যেনা করে তাহ’লে তাকে প্রস্তরাঘাতে মাথা ফাটিয়ে হত্যা করে’। একথা শুনে রোমক সেনাপতি বলে ওঠেন, আল্লাহর কসম! যদি তোমার কথা সত্য হয়, তাহলে ভূগর্ভ আমাদের জন্য উত্তম হবে ভূপৃষ্ঠের চাইতে’। অর্থাৎ আমাদের মরে যাওয়াই উত্তম হবে। পরবর্তীতে ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ১৬ হিজরীতে পরাজিত রোম সম্রাট গুপ্তচর মারফত একই ধরনের রিপোর্ট পেয়ে বলেছিলেন, যদি তুমি আমাকে সত্য বলে থাক, তাহলে মুসলমানরা আমার দু’পায়ের নীচের সিংহাসনটারও মালিক হয়ে যাবে’।[9] তাঁর একথা সত্য হয়েছিল এবং হযরত ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফত কালে রোমক ও পারসিক সাম্রাজ্য পুরাপুরিভাবে ইসলামী খেলাফতের অধীনস্ত হয়েছিল।

ইহুদী-খ্রিষ্টানদের কাছেও আল্লাহর কিতাব তাওরাত-ইনজীল ছিল। সেখানে দন্ডবিধি সমূহ ছিল। কিন্তু তারা সেগুলি মানত না বা সকলের প্রতি সমভাবে প্রয়োগ করত না। তারা নিজেরা দন্ডবিধি তৈরী করেছিল এবং তা শ্রেণী স্বার্থে ব্যবহার করত। এতে সমাজ অনৈতিকতায় ভরে গিয়েছিল। ফলে বস্ত্তবাদী শক্তিতে অতুলনীয় হওয়া সত্ত্বেও ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান মুসলিম বাহিনীর হাতে তারা পর্যুদস্ত হয়েছিল। আজও পৃথিবীর সব দেশে আইন আছে, বিচার আছে, দন্ডবিধি আছে। কিন্তু সবই নিজেদের মনগড়া ও তার বাস্তবায়ন হয় শ্রেণীস্বার্থে। ফলে আধুনিক সমাজ ফেলে আসা জাহেলী সমাজের চাইতে নিকৃষ্ট সমাজে পরিণত হয়েছে। ইসলামের বরকত পেয়েও মানুষ তা দূরে ঠেলে দেয়ায় নিজেরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছে। এভাবে মানুষ ক্রমে ক্বিয়ামতের চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে।

আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার-এর গুরুদায়িত্ব সকল মুসলিমের উপর ন্যস্ত। যা তারা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে দূরদর্শিতার সাথে পালন করবেন। যার সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হল মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ। যারা ইসলামের দন্ডবিধি সমূহ বাস্তবায়ন করবে। না করলে তারা কবীরা গোনাহগার হবে এবং ইহকালে ও পরকালে আল্লাহর কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

দায়িত্বশীল সরকার যদি দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ইসলামী দন্ডবিধি বাস্তবায়ন না করে, তাহ’লে সে সমাজের অবস্থা কেমন হবে, সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِىْ حُدُوْدِ اللهِ وَالْوَاقِعِ فِيْهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوْا سَفِيْنَةً، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِىْ أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِىْ أَعْلاَهَا، فَكَانَ الَّذِىْ فِىْ أَسْفَلِهَا يَمُرُّوْنَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِيْنَ فِىْ أَعْلاَهَا، فَتَأَذَّوْا بِهِ، فَأَخَذَ فَأْسًا، فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِيْنَةِ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوْا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْ بِى، وَلاَ بُدَّ لِىْ مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوْا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ، وَإِنْ تَرَكُوْهُ أَهْلَكُوْهُ وَأَهْلَكُوْا أَنْفُسَهُمْ- ‘আল্লাহর দন্ড সমূহ বাস্তবায়নে অলসতাকারী এবং অপরাধী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত ঐ লোকদের মত, যারা একটি জাহাযে আরোহণের জন্য লটারী করল। তাতে কেউ উপরে ও কেউ নীচতলায় বসল। নীচতলার যাত্রীরা উপরতলায় পানি নিতে আসে। তাতে তারা কষ্ট বোধ করে। তখন নীচতলার একজন কুড়াল দিয়ে পাটাতন কাটতে শুরু করল। উপরতলার লোকেরা এসে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলল, উপরে পানি আনতে গেলে তোমরা কষ্ট বোধ কর। অথচ পানি আমাদের লাগবেই। এ সময় যদি উপরতলার লোকেরা তার হাত ধরে, তাহলে সে বাঁচল তারাও বাঁচল। আর যদি তাকে এভাবে ছেড়ে দেয়, তাহ’লে তারা তাকে ধ্বংস করল এবং নিজেরাও ধ্বংস হল’।[10]

এতে বুঝা যায় যে, নাহী ‘আনিল মুনকার ব্যতীত আমর বিল মা‘রূফ যথার্থভাবে কার্যকর হয় না। তবে দন্ডবিধি বাস্তবায়ন ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে আমর বিল মা‘রূফ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে প্রযুক্ত হবে। যেমন-

(১) মন্দকে ভাল দ্বারা প্রতিরোধ করা :

আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلاَ السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ- وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ ‘ভাল ও মন্দ সমান নয়। তুমি ভাল দ্বারা মন্দকে প্রতিরোধ কর। ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত হয়ে যাবে’। ‘এগুণের অধিকারী কেবল তারাই হতে পারে যারা ধৈর্য ধারণ করে। আর এ চরিত্র কেবল তারাই লাভ করে যারা মহা সৌভাগ্যবান’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩৪-৩৫)।

(২) প্রজ্ঞাপূর্ণ আচরণ ও সুন্দর উপদেশ দেওয়া :

আল্লাহ বলেন, ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রভুর পথে আহবান কর প্রজ্ঞা দ্বারা ও সুন্দর উপদেশ দ্বারা…’ (নাহল ১৬/১২৫)।

শায়খুল ইসলাম আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মানুষ তিন ধরনের। এক- যারা হক স্বীকার করে ও তার অনুসরণ করে। এরা হ’ল প্রজ্ঞাবান মানুষ। দুই- যারা হক স্বীকার করে। কিন্তু তার উপর আমল করে না। এদেরকে উপদেশ দিতে হয়। যাতে তারা নেক আমল করে। তিন- যারা হক স্বীকার করে না। এদের সঙ্গে উত্তম পন্থায় বিতর্ক কর।[11] যেমন উক্ত আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেন, وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ‘এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়’ (নাহল ১৬/১২৫)।

(৩) দূরদর্শিতার সাথে একাকী বা সংঘবদ্ধভাবে আদেশ বা নিষেধ করা :

যেমন আল্লাহ বলেন, قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘বল এটাই আমার পথ। ডাকি আমি ও আমার অনুসারীগণ আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)। অত্র আয়াতে দূরদর্শিতার সাথে সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর পথে দাওয়াত দানের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে।

কথা বা কাজের ফলাফল কি হতে পারে, সেটা না বুঝে কাউকে কোন আদেশ বা নিষেধ করা যাবে না। এজন্য দূরদর্শিতা অবশ্য প্রয়োজন। মানুষ সাধারণতঃ নগদটা নিয়েই ভাবে, ফলাফল নিয়ে ভাবে কম। অথচ জ্ঞানীগণ ফলাফলের দিকে বেশী দৃষ্টি দেন। তারা আবেগকে বিবেক ও শরী‘আত দ্বারা দমনে সক্ষম হন। তাই তাদের হাতে সমাজ উপকৃত হয় ও কল্যাণপ্রাপ্ত হয়। সমাজ পরিবর্তনে ব্যক্তি উদ্যোগ মুখ্য হলেও তার অনুসারীদের মাধ্যমে তা ত্বরান্বিত হয়। তাই একই আক্বীদা-বিশ্বাসের অনুসারী দলের সহযোগিতায় দূরদর্শিতার সাথে সমাজ সংস্কারের দায়িত্ব পালন করা আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার-এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অত্র আয়াতে এজন্য দূরদর্শী আমীরের অধীনে জামা‘আত গঠনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এককভাবে ও জামা‘আতবদ্ধভাবে এই সংস্কার প্রচেষ্টা সর্বদা অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالاً وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ ‘তোমরা আল্লাহর পথে বের হও একাকী হও বা দলবদ্ধভাবে হও এবং তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে’ (তওবা ৯/৪১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَغَدْوَةٌ فِى سَبِيلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল বা একটি সন্ধ্যা সমগ্র পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছুর চাইতে উত্তম’।[12] তিনি বলেন, يَدُ اللهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ ‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত থাকে’।[13] তিনি বলেন, فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ ‘তোমার উপর জামা‘আত অপরিহার্য। কেননা বিচ্ছিন্ন বকরীকেই নেকড়ে বাঘ ধরে খায়’।[14] তিনি আরও বলেন, وَمَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللهِ تَعَالَى ‘জামা‘আত যত বড় হবে, ততই সেটি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হবে’।[15] নিঃসন্দেহে পারস্পরিক নিঃস্বার্থ মহববতপূর্ণ জামা‘আতই প্রকৃত শক্তি। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এ শক্তি খুবই প্রয়োজন। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْمُؤْمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ ‘শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট উত্তম ও অধিকতর প্রিয় দুর্বল মুমিনের চাইতে’।[16] অতএব ঐক্যবদ্ধ বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সর্বদা হকপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী থাকতে হবে। নইলে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার বাস্তবায়িত হওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।

(৪) লক্ষ্যে স্থির থাকা :

আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার’-এর লক্ষ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। আল্লাহ বলেন, فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত কর তাঁর প্রতি খালেছ আনুগত্য সহকারে (যুমার ৩৯/২)। এক্ষণে আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে যদি অন্যের সন্তুষ্টিলাভ যুক্ত হয়ে যায়, তাহ’লে যাবতীয় কর্মপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। সাময়িকভাবে কেউ দুনিয়া হাছিল করলেও চূড়ান্ত বিচারে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আখেরাতে সে জান্নাত থেকে মাহরূম হবে। দেখা গেছে, ইতিহাসে বহু ধর্মীয় আন্দোলন বিপুল শক্তি নিয়ে উত্থিত হয়েছে। কিন্তু অবশেষে দুনিয়াবী স্বার্থের চোরাবালিতে পড়ে নিমেষে হারিয়ে গেছে। অথচ নবীগণ মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার সময় পরিষ্কার ভাবে বলে দিতেন, وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না। আমার পুরস্কার তো জগত সমূহের প্রতিপালকের নিকটেই রয়েছে’ (শো‘আরা ২৬/১০৯ প্রভৃতি)।

(৫) যথাযোগ্য ইলমের অধিকারী হওয়া :

আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ‘ইলমের অধিকারীগণই কেবল আল্লাহকে ভয় করে (ফাত্বির ৩৫/২৮)। জ্ঞানী-মূর্খ সবাই আল্লাহকে ভয় করে। কিন্তু এখানে জ্ঞানীগণ বলতে ‘যথার্থ জ্ঞানীগণ’ বুঝানো হয়েছে। যারা ইসলামী শরী‘আতের যথার্থ মর্ম বুঝেন ও সে অনুযায়ী পরিচালিত হন। নইলে কুরআনের অর্থ জানা সত্ত্বেও মর্ম না বুঝার কারণে অনেকে পথভ্রষ্ট হন ও অন্যকে পথভ্রষ্ট করেন। যেমন (১) আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বললেন, قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ ‘তুমি বল আমি তোমাদের মত একজন মানুষ বৈ কিছু নই’ (কাহফ ১৮/১১০)। কিন্তু আমরা বুঝলাম মুহাম্মাদ (ছাঃ) একজন নূর ছিলেন, মানুষ নন। (২) আল্লাহ বললেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ‘তাঁর তুলনীয় কিছুই নেই। তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন’ (শূরা ৪২/১১)। কিন্তু আমরা বুঝলাম, আল্লাহ নিরাকার ও শূন্য সত্তা। (৩) আল্লাহ বলেন, أَفَمَنْ يَخْلُقُ كَمَنْ لاَ يَخْلُقُ أَفَلاَ تَذَكَّرُونَ ‘যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মত যে সৃষ্টি করে না? এরপরেও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (নাহল ১৬/১৭)। অথচ আমরা বুঝলাম, সকল সৃষ্টিই স্রষ্টার অংশবিশেষ। অতএব ‘যত কল্লা তত আল্লা’। আল্লাহর নামে যিকর করলেই হয়ে যাবে ‘ফানা ফিল্লাহ’। (৪) আল্লাহ বললেন, الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ‘রহমান তাঁর আরশে সমুন্নীত’ (ত্বোয়াহা ২০/৫)। কিন্তু আমরা বুঝলাম, আল্লাহর আরশ মুমিনের কলবের মধ্যে রয়েছে। যিকরের মাধ্যমে কলবকে জাগিয়ে তুললেই আল্লাহকে পাওয়া যাবে। তিনি আরশে নন, বরং সর্বত্র বিরাজমান। অথচ সঠিক অর্থ হ’ল এই যে, আল্লাহর সত্তা স্বীয় আরশে সমুন্নীত। কিন্তু তাঁর ইলম ও কুদরত তথা জ্ঞান ও শক্তি সর্বত্র বিরাজিত।

(৫) আমরা মাইকে ওয়ায করছি। কিন্তু মাইকে আযান ও ছালাত নিষেধ করছি। (৬) পানি পাওয়া সত্ত্বেও ঢেলা-কুলুখ নিচ্ছি ও লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট বলে হাদীছ জানা সত্ত্বেও ৪০ কদম হাঁটছি। (৭) আল্লাহ বলেন, ‘মৃত্যুর পর তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন ২৩/১০০)। কিন্তু আমরা বুঝলাম রাসূল (ছাঃ) ও পীর-মাশায়েখগণ কবরে জীবিত আছেন এবং তারা ভক্তদের ডাকে সাড়া দেন। ফলে কবরে গিয়ে নযর-নেয়াযের পাহাড় জমাচ্ছি। যদিও আমার প্রতিবেশী না খেয়ে মরছে (৮) মূর্তিপূজাকে শিরক বলছি। অথচ কবরপূজাকে লালন করছি। (৯) ইসলামে অবিশ্বাসীকে ‘কাফের’ বলছি। অথচ ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি বা দলকে নির্দ্বিধায় সমর্থন দিচ্ছি। (১০) জিহাদের জন্য জীবন দিতে প্রস্ত্তত, কিন্তু কোথায় কখন কার বিরুদ্ধে কিভাবে জিহাদ করতে হবে, সেটা জানি না। ফলে এমনিতেই বস্ত্তবাদী নেতাদের হীন স্বার্থের বলি হচ্ছে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ। সাথে সাথে চরমপন্থী ধর্মনেতাদের অদূরদর্শিতার শিকার হচ্ছে অগণিত মুসলিম।

(১১) রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল’। ‘নিয়ত’ অর্থ মনের সংকল্প। যা ব্যতীত কোন কাজই হয় না। অথচ আমরা বুঝলাম ছালাতের শুরুতে নিয়ত অর্থাৎ ‘নাওয়াইতু ‘আন..’ না পড়লে ছালাত হবে না। এতে অনেকে নিয়ত ভুল হবার ভয়ে ছালাতই পড়ে না। (১২) ছহীহ বুখারীর দরস দেই, অথচ ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছালাত পড়ি না। কেউ পড়লে তাকে গালি দেই। এমনকি মসজিদ থেকে বের করে দেই। অনেক জায়গায় শাস্তিস্বরূপ তাকে দিয়ে মসজিদ ধুয়ে নেওয়া হয়। অনেকে চাকুরীচ্যুতি ও সামাজিক বয়কটের শিকার হন। অনেককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। (১৩) ‘ওয়াক্তের পূর্বে ফরয ছালাত হয় না’ এটা জানা কথা। কিন্তু সফরে যে সেটা হয়, সেটা অনেকে জানেন না। আর জানলেও তা মাযহাবের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যান। কেউ পড়তে চাইলে তার দিকে তেড়ে আসেন। (১৪) ‘সরকারের বিরুদ্ধে হক কথা বলা বড় জিহাদ’ এটা সবাই জানি। কিন্তু খুশীতে ও নাখুশীতে সরকারের আনুগত্য করা এবং বিদ্রোহ না করা যে শরী‘আতের হুকুম, এটা আমরা বেমালুম ভুলে যাই।

সরকারের ভুল ধরিয়ে দেওয়া, সুপরামর্শ দেওয়া অথবা প্রতিবাদ করাই জনগণের দায়িত্ব। এর পরেও সরকার অন্যায় যবরদস্তি করলে তারা মহাপাপী হবে ও আখেরাতে জাহান্নামী হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা শাসকদের কথা শোন ও মান্য কর। কেননা তাদের দায়িত্ব তাদের এবং তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের।[17]

(৬) সর্বদা মধ্যপন্থী হওয়া :

একজন মুসলিম-এর এটিই হ’ল সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের ক্ষেত্রে এই চরিত্র বজায় রাখাই হ’ল সবচাইতে যরূরী। আল্লাহ বলেন, ‘এভাবে আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি। যাতে তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হতে পার এবং রাসূলও তোমাদের উপর সাক্ষী হতে পারেন’ (বাক্বারাহ ২/১৪৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, بَشِّرُوا وَلاَ تُنَفِّرُوا، يَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا، فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا তোমরা সুসংবাদ দাও, তাড়িয়ে দিয়োনা। সহজ করো, কঠিন করো না। সৎকর্ম কর ও মধ্যপন্থী হও’।[18] মানুষ যখন চরমপন্থী হয়, তখন সে হঠকারী হয়। ঐ অবস্থায় সে মধ্যপন্থা থেকে বিচ্যুত হয়। ফলে সে স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। একইভাবে মানুষ যখন শৈথিল্যবাদী হয়, তখন সে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যবোধ হারিয়ে ফেলে। ফলে সমাজে অন্যায় প্রবল হয়। অতএব দু’টিই পরিত্যাজ্য। যেকোন পর্যায়ের নেতা ও দায়িত্বশীলের জন্য মধ্যপন্থী হওয়ার গুণ থাকা অপরিহার্য।

আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকারের দায়িত্বশীল ধর্মনেতা ও সমাজনেতারা যখনই বাড়াবাড়ি করেন, তখনই সমাজে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। বিগত দিনে ইহুদী নেতাদের মধ্যে এ দোষটি ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। নবীযুগেও মদীনার ইহুদীদের মধ্যে এই মন্দ চরিত্র অব্যাহত ছিল। ফলে সন্ধিচুক্তি করা সত্ত্বেও তারা সর্বদা তা লংঘন করত এবং ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি করত। সেকারণ আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُوا فِي دِيْنِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلاَ تَتَّبِعُوا أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّوا كَثِيْرًا وَضَلُّوا عَنْ سَوَاءِ السَّبِيْلِ ‘তুমি বল, হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীনের মধ্যে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি কর না এবং ঐসব লোকদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, যারা অতীতে পথভ্রষ্ট হয়েছিল ও বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং এখন তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে’ (মায়েদাহ ৫/৭৭)।

বস্ত্ততঃ ইসলামের বরকত পেয়েও মুসলিম উম্মাহ ইহুদী-নাছারাদের রীতি-নীতির অনুসারী হয়েছে এবং জীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক হয়েছে এবং উভয়পক্ষ সাধ্যমত বাড়াবাড়ি করছে। সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকায় তাদের বাড়াবাড়িতেই দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে বেশী। অথচ তাদেরই সহনশীল হওয়ার প্রয়োজন ছিল সর্বাধিক। অতএব সামাজিক শান্তির জন্য সকলকে সর্বদা মধ্যপন্থী হওয়া অতীব যরূরী।

(৭) সহজ পথ বেছে নেওয়া :

যখনই কোন নির্দেশ দেওয়া হবে, তখন দু’টির মধ্যে সহজটি বলা হবে। যাতে শ্রোতা সেটা মানতে আগ্রহী হয়। আল্লাহ বলেন, يُرِيدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটি চান, তিনি কঠিন করতে চান না’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ ، وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلاَّ غَلَبَهُ ‘নিশ্চয়ই এই দ্বীন সহজ। যদি কেউ দ্বীনে কঠোরতা আরোপ করে, তাহ’লে তা তাকে পরাভূত করবে (অর্থাৎ সে দ্বীন পালনে ব্যর্থ হবে)’।[19] যেমন ধরুন, (ক) আপনি সফরে বা কর্মস্থলে বের হয়েছেন। বের হবার আগে ওযূ করে মোযা পরে বের হলেন। পরে ওযূ করার সময় আর মোযা খুলে পা ধোয়ার প্রয়োজন নেই। এর জন্য চামড়ার মোযা খুঁজবার দরকার নেই। যেকোন মোযার উপর মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে। (খ) সুন্নাত পড়ায় অনেক নেকী। কিন্তু সফরে না পড়লেও চলবে। এমনকি ফরযও অর্ধেক। সেখানে ছালাতের ওয়াক্তেও আগপিছ করা চলে। যেমন এক্বামত দিয়ে যোহরের দু’রাক‘আত পড়লেন। পরে আবার এক্বামত দিয়ে আছরের দু’রাক‘আত পড়লেন। এতে আছর এগিয়ে যোহরের সাথে অথবা যোহর পিছিয়ে আছরের সাথে পড়া যায়। একইভাবে মাগরিব ও এশা। আপনার সুবিধামত একটা বেছে নিবেন। (গ) ‘কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণরূপে ওযূ করা’ অত্যন্ত নেকীর কাজ। এতে আল্লাহর নিকট মুমিনের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রচন্ড শীতে বরফের ন্যায় ঠান্ডা পানি। তাতে ওযূ করলে আপনার অসুখ বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনি ওযূ না করে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করুন। ভাববেন না যে, আপনার নেকী কম হ’ল। না এটাই ইসলামের দেখানো সহজ পথ। এ পথেই নেকী বেশী পাবেন। কেননা আপনি সুন্নাত অনুসরণ করেছেন। আবেগ তাড়িত হননি।

(ঘ) একজন মুছল্লী নিয়মিতভাবে হুঁকা-তামাক-সিগারেট অথবা পান-জর্দ্দায় আসক্ত। তামাক হারাম জেনেও তিনি ছাড়েন না। আপনি তাকে বলুন তামাকবিহীন পানের মশলা খেতে। দেখবেন আস্তে আস্তে পান-জর্দ্দা খাওয়াই বাদ হয়ে যাবে। এতে একদিকে হারাম ও অন্যদিকে বাজে খরচের পাপ থেকে উনি বেঁচে যাবেন। কিন্তু আপনি যদি তাকে প্রথমেই ‘হারামখোর’ বলেন, তাহ’লে উনিতো ওটা ছাড়বেনই না। বরং আরও বেশী করে খাবেন ও আপনার সঙ্গ ত্যাগ করবেন। এমনকি আপনার ছিদ্রান্বেষণে ও গীবত-তোহমতে রত হবেন। (ঙ) একজন ক্লীনশেভ, বেশরা, নেশাখোর অথবা কবরপূজারী যুবককে আপনি দ্বীনের দাওয়াত দিবেন। আপনি তাকে বলুন, হে যুবক! আল্লাহকে ভয় কর। তিনিই তোমার ও আমার সৃষ্টিকর্তা। আমাদেরকে অবশ্যই তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে ও জীবনের সকল কৃতকর্মের জবাবদিহি করতে হবে। তিনি সর্বদা আমাদের সকল কথা শোনেন ও সকল কর্ম দেখেন। এসো আমরা তাঁকে ডাকি। এসো ভাই পরকালে জাহান্নামে অগ্নিদগ্ধ হবার কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা করি ও আল্লাহর বিধান মেনে চলি। এভাবে তাকে দরদের সাথে দাওয়াত দিন। ‘ফাসেক’ বা ‘মুশরিক’ বলে প্রথমেই তাকে দূরে ঠেলে দিবেন না। সে খারাব ব্যবহার করলে ছবর করুন। হাসিমুখে কথা বলুন। তার হেদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। দেখবেন যুবকটি ফিরে আসবে। অতঃপর জানতে চাইবে তার করণীয় কি। আপনি তাকে প্রথমেই নেশা বা পূজা ছাড়তে বলবেন না। বরং তাকে আল্লাহ ও আখেরাত সম্পর্কে বলুন এবং ছালাতের দাওয়াত দিন। স্রেফ বিসমিল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ দিয়ে হ’লেও জামা‘আতের সাথে ছালাত পড়তে বলুন। দেখবেন একদিন সে কবরপূজা ছাড়বে, নেশা ছাড়বে ও দাড়ি ছেড়ে দিবে। তাতে তার সকল নেক আমলের নেকী আপনি পাবেন, সেও পাবে। আর যদি সে আপনার দাওয়াতে সাড়া না-ও দেয়, তথাপি আপনি কিন্তু দাওয়াতের পূর্ণ নেকী পেয়ে গেলেন। এভাবে লোকদের দু’টি পথের সহজটি বাৎলে দিন। আশা করি মানুষ আল্লাহর পথে ফিরে আসবে এবং শয়তানকে পরিত্যাগ করবে।

এক বেদুঈন এসে মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পেশাব করল। মুছল্লীরা ক্ষেপে গেল। রাসূল (ছাঃ) তাদের নিষেধ করলেন ও এক বালতি পানি এনে তাতে ঢেলে দিতে বললেন। অতঃপর লোকটিকে কাছে ডেকে বললেন, إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لاَ تَصْلُحُ لِشَىْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَلاَ الْقَذَرِ إِنَّمَا هِىَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالصَّلاَةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ ‘দেখ এটি মসজিদ। এসব পবিত্র স্থানে পেশাব করা ও একে অপবিত্র করা ঠিক নয়। এগুলি তো কেবল আল্লাহর যিকর, ছালাত ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত’। অতঃপর তিনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বললেন, فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ، وَلَمْ تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ ‘তোমরা তো প্রেরিত হয়েছ সহজকারী হিসাবে, কঠিনকারী হিসাবে নও’।[20]

(৮) দু’টি বিপদের মধ্যে হালকাটি গ্রহণ করা :

ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের সময় এ বিষয়টি গভীরভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, যাকে আমি উপদেশ দিচ্ছি, তার অবস্থানটা কি? এমন মানুষও আছেন যিনি ইসলাম ছাড়তে প্রস্ত্তত, কিন্তু বাপ-দাদার রেওয়াজ ছাড়তে রাযী নন। এমতাবস্থায় তাকে রেওয়াজ পালনের স্বাধীনতা দিন এবং ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝার উপদেশ দিন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, যদি তোমার সম্প্রদায় অল্প কিছু দিন পূর্বে কুফর ছেড়ে না আসত, তাহলে আমি কা‘বা গৃহ ভেঙ্গে ইবরাহীমী ভিতের উপর পুনঃস্থাপন করতাম।[21] কিন্তু তিনি ভাঙ্গেননি। কেননা তাতে ওরা হয়ত বাপ-দাদার রেওয়াজের মহববতে ইসলাম ছেড়ে চলে যেত। বলা বাহুল্য আজও রাসূল (ছাঃ)-এর সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। এখানে কা‘বা সংস্কারের চাইতে রাসূল (ছাঃ) কুরায়েশদের ঈমানকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

(৯) আমল পরিবর্তনের চাইতে আক্বীদা পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দেওয়া :

ছোট-খাট বিষয় নিয়ে যিদ ও হঠকারিতাবশে সমাজে এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনে বড় বড় অঘটন ঘটে যায়। যার ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক। যেমন জাপানের জনগণের উন্নতি-অগ্রগতির সাথে আমেরিকার জনগণের কোন স্বার্থ জড়িত ছিল না। কিন্তু স্রেফ বিশ্ব মোড়ল হওয়ার আত্মম্ভরিতায় তারা সেখানে এটমবোমা নিক্ষেপ করল। যাতে কয়েক লাখ বনু আদম নিমেষে শেষ হয়ে গেল এবং শেষ হয়ে গেল বছরের পর বছর ধরে গড়ে তোলা সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যসমূহ। একইভাবে তারা সম্প্রতি ঘটালো ইরাকে ও আফগানিস্তানে। আমেরিকার নেতাদের আক্বীদা যদি এটা হ’ত যে, এই দুষ্কৃতির জন্য তাদেরকে পরকালে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে এবং জাহান্নামের আগুনে জীবন্ত জ্বলতে হবে, তাহ’লে নিশ্চয়ই তারা এমন অপকর্ম করতে পারত না। সেকারণ ইসলাম মানুষের আক্বীদা পরিবর্তনকে সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

ত্বায়েফের দুর্ধর্ষ ছাক্বীফ গোত্র মদীনায় এল ইসলাম কবুল করার জন্য। তারা বায়‘আত করল এই শর্তে যে তারা যাকাত দিবে না এবং জিহাদ করবে না। রাসূল (ছাঃ) তাদের এই শর্ত মেনে নিয়ে তাদের বায়‘আত নিলেন। অতঃপর বললেন, سَيَتَصَدَّقُونَ وَيُجَاهِدُونَ إِذَا أَسْلَمُوا ‘তারা যখন ইসলাম কবুল করেছে, তখন সত্বর তারা যাকাত দিবে এবং জিহাদ করবে’।[22]

মুসলিম সমাজে বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে হৈ-চৈ মারামারি লেগেই আছে। এ কারণে তারা নানা মাযহাব ও তরীকায় বিভক্ত একটা দুর্বল উম্মতে পরিণত হয়েছে। মাযহাবী হঠকারিতা ও আত্মকলহের ফলে বাগদাদের আববাসীয় খেলাফত ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভেদ ও দলাদলি অব্যাহত রয়েছে। অথচ যদি আল্লাহভীতি ও আখেরাতে জবাবদিহিতার আক্বীদা দৃঢ় থাকত এবং ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী শরী‘আত ব্যাখ্যা করা হ’ত, তাহলে সবই দূর হয়ে যেত।

ধরুন আপনি এক স্থানে গেলেন। আপনি ছহীহ তরীকায় ছালাত আদায় করলেন। নাভীর নীচে হাত বাঁধলেন না, রাফ‘উল ইয়াদায়েন ছাড়লেন না বা ছালাত শেষে দলবদ্ধ মুনাজাত করলেন না। মুছল্লীরা আপনার দিকে তেড়ে এল। আপনি নরম ভাষায় বলুন, ভাই আমি মুসলমান। আমি আপনাদের সাথে ছালাত আদায় করেছি। মসজিদে প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে পেশাব করা সত্ত্বেও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মরু বেদুঈনকে মসজিদ থেকে বের করে দেননি। আপনারা আমার দু’টো কথা শুনুন। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে উম্মতকে অছিয়ত করে বলে গেছেন, تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا مَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ‘আমি তোমাদের কাছে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা অাঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হ’ল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ’।[23] তিনি আমাদেরকে কুরআন-হাদীছ মানতে বলে গেছেন। অন্যকিছু বলে যাননি। এক্ষণে আপনারা হাদীছগ্রন্থ খুলে দেখুন। সেখানে থাকলে তা মানুন, না থাকলে ছাড়ুন। আপনাদের এলাকায় অনেক বিজ্ঞ আলেম আছেন, তাঁরাই যথেষ্ট এ বিষয়ে ফায়ছালা দেওয়ার জন্য। আমি নিজে থেকে কিছুই বলব না।

এভাবে যখনই আপনি তাদের আক্বীদাকে মাযহাবী গন্ডী থেকে সরিয়ে ছহীহ হাদীছমুখী করে দিবেন, তখনই দেখবেন তাদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে এবং তারা স্বেচ্ছায় ছহীহ-শুদ্ধ আমল শুরু করে দিবে। কিছু আলেম ও পীর-মাশায়েখ তাদেরকে মাযহাব ও তরীকার দোহাই দিবে। কিন্তু জান্নাতপিয়াসী মানুষ মধু-মক্ষিকার মত ছুটে আসবে ছহীহ হাদীছের পানে। আল্লাহ সহায় থাকলে তাদের কেউ ঠেকাতে পারবে না। এভাবেই আপনার আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার কার্যকর হবে। যা বহু পথহারা মানুষকে সরল পথের সন্ধান দিবে। যাদের সমস্ত নেকী আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে। অথচ তাদের স্ব স্ব নেকীতে কোন কমতি করা হবে না।

(১০) বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করা :

আমর বিল মা‘রূফ বা সমাজ সংস্কারের পথ হ’ল নবীগণের পথ। এ পথে বিপদাপদ প্রতি মুহূর্তের সাথী। এপথ আদৌ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। জনগণের দেয়া শত নির্যাতনে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং এর প্রতিদান আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। প্রথম রাসূল নূহ (আঃ) ও শেষ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। হেন কোন নির্যাতন নেই যা তাঁদের উপর করা হয়নি। বারবার স্মরণ করবেন তায়েফের তরুণদের প্রস্তরাঘাতে জর্জরিত ও বিতাড়িত রাসূলের সেই রক্তাক্ত দেহখানার কথা। তায়েফের সীমানা পেরিয়ে এসে বিশ্রামরত রাসূলের সামনে জিব্রীল যখন সাথী মালাকুল জিবালকে নিয়ে এলেন এবং তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

أَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِى رَبُّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِى بِأَمْرِكَ، إِنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمُ الأَخْشَبَيْنِ-

‘আমি পাহাড়ের দায়িত্বশীল ফেরেশতা। আপনার প্রতিপালক আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন যেন আপনি আমাকে নির্দেশ দেন। অতএব যদি আপনি চান, তাহ’লে আমি (আবু কুবাইস ও তার সম্মুখের কু‘আইক্বি‘আন নামক) মক্কার বড় দুই পাহাড়কে ওদের উপর চাপা দিয়ে ওদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেব। জবাবে রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন,بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا ‘বরং আমি আশা করি আল্লাহ তাদের ঔরস থেকে এমন সব সন্তান বের করে আনবেন যারা স্রেফ আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না’।[24] পরবর্তীতে ওহোদের যুদ্ধে মাথায় শিরস্ত্রাণের লৌহনাল প্রবেশ করা ও দাঁত ভাঙ্গা রাসূল (ছাঃ) মুখের রক্তস্রোত মুছছেন আর বলছেন, كَيْفَ يُفْلِحُ قَوْمٌ شَجُّوا نَبِيَّهُمْ وَكَسَرُوا رَبَاعِيَتَهُ ‘ঐ জাতি কিভাবে সফলকাম হবে, যারা তাদের নবীর মাথা যখম করেছে ও তার দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছে?[25] পরে যালিমরা যুদ্ধ শেষে মক্কায় চলে গেল।

হ্যাঁ এটাই হ’ল সত্যসেবীদের চরিত্র। তারা প্রতিশোধ নেন না। বরং তাদের পক্ষে প্রতিশোধ নেন আল্লাহ। যুগে যুগে এটাই রীতি হয়ে আছে। আজও যারা নবীগণের তরীকায় সমাজ পরিবর্তন চান, তাদেরকেও একই পথ অবলম্বন করতে হবে। মিথ্যাশ্রয়ীদের হামলা-মামলা এবং সকল প্রকার শত্রুতা ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করা ও আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করাই হবে তাদের একমাত্র কর্তব্য। আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। কেননা তিনি বলেন, وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘আর আমার উপর দায়িত্ব হ’ল বিশ্বাসীদের সাহায্য করা’ (রূম ৩০/৪৭)।

যেমন বিপদাপন্ন রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوْا عَلَى مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوْا حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا ‘নিশ্চয়ই তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা মিথ্যার অপবাদগ্রস্ত এবং নির্যাতিত হওয়ার পরেও ধৈর্যধারণ করেছিল। যে পর্যন্ত না আমাদের সাহায্য পৌছে যায়’ (আন‘আম ৬/৩৪)। তিনি আরও বলেন, فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلاَ تَسْتَعْجِلْ لَهُمْ ‘অতএব তুমি ধৈর্যধারণ কর, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল (ইতিপূর্বে) দৃঢ়চিত্ত রাসূলগণ। আর তুমি তাদের (অর্থাৎ শত্রুদের বিরুদ্ধে বদদো‘আ করার) জন্য ব্যস্ত হয়ো না’ (আহক্বাফ ৪৬/৩৫)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ধৈর্যশীল মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ ‘মুমিনের ব্যাপারটি বড়ই বিস্ময়কর। তার সমস্ত বিষয়টিই কল্যাণময়। মুমিন ব্যতীত আর কারু জন্য এরূপ নেই। যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে,

তখন সে শুকরিয়া আদায় করে। ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যখন তাকে অকল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে ছবর করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়’।[26]

(১১) সমাজ সংস্কারে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা :

যেমন নূহ (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, قَالَ رَبِّ إِنِّيْ دَعَوْتُ قَوْمِيْ لَيْلاً وَنَهَارًا- … ثُمَّ إِنِّيْ دَعَوْتُهُمْ جِهَارًا- ثُمَّ إِنِّيْ أَعْلَنْتُ لَهُمْ وَأَسْرَرْتُ لَهُمْ إِسْرَارًا- فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ‘সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি’। … ‘অতঃপর আমি তাদেরকে আহবান করেছি উচ্চ স্বরে’। ‘অতঃপর আমি তাদের প্রকাশ্যে ও গোপনে উপদেশ দিয়েছি’। ‘আমি বলেছি তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল’ (নূহ ৭১/৫, ৮-১০)। বস্ত্ততঃ প্রত্যেক নবীই নিঃস্বার্থ ও নিরলসভাবে দাওয়াত দিয়েছেন। আর তাদের প্রচেষ্টাতেই পৃথিবীতে সৎ ও দ্বীনদার মানুষের আধিক্য রয়েছে। কিন্তু যখন অসৎ লোকের সংখ্যা ব্যাপক হবে এবং প্রকৃত তাওহীদপন্থী একজন লোকও অবশিষ্ট থাকবে না, তখন পৃথিবী চূড়ান্ত ধ্বংসের সম্মুখীন হবে এবং ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।

আল্লাহ আমাদের সকলকে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন- আমীন!

অবসর কোথা কোথায় শ্রান্তি

এখনও যে কাজ রয়েছে বাকী

তাওহীদ আজও পূর্ণ কিরণ

দিক-দিগন্তে দেয়নি আঁকি।

[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬১০।

[2]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৭।

[3]. মুসলিম হা/৫০, মিশকাত হা/১৫৭।

[4]. আহমাদ হা/১১৫৭৫; ইবনু মাজাহ হা/৪২৮৪; ছহীহাহ হা/২৪৪৮; বুখারী হা/৪৪৮৭; মিশকাত হা/৫৫৫৩।

[5]. ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৪২।

[6]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৪০।

[7]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৬।

[8]. আবূদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৭১৪।

[9]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৭/৭, ৫৪।

[10]. বুখারী, মিশকাত হা/৫১৩৮।

[11]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/৪৫।

[12]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৭৯২।

[13]. নাসাঈ হা/৪০২০; তিরমিযী হা/২১৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০৬৫; মিশকাত হা/১৭৩।

[14]. আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৭।

[15]. আবুদাঊদ হা/৫৫৪; নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৬।

[16]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮।

[17]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৭৩।

[18]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৭২২, ১২৪৬।

[19]. বুখারী, মিশকাত হা/১২৪৬।

[20]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১-৯২ ‘নাপাকীসমূহ পবিত্রকরণ’ অনুচ্ছেদ।

[21]. মুসলিম হা/১৩৩৩, তিরমিযী হা/৮৭৫।

[22]. আবূদাঊদ হা/৩০২৫, সনদ ছহীহ।

[23]. মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৮৬।

[24]. বুখারী হা/৩২৩১, মুসলিম হা/১৭৯৫, মিশকাত হা/৫৮৪৮।

[25]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৪৯।

[26]. মুসলিম হা/২৯৯৯; মিশকাত হা/৫২৯৭।

 

-প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

 

আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার

আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার

আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার

Reviews (0)

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “আমর বিল মা’রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping cart
Facebook Twitter Instagram YouTube WhatsApp WhatsApp

Sign in

No account yet?