আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ মানুষটাও দিনের একটা সময়ে এসে চিন্তা করে “সব ছেড়ে দেয়া উচিত”..
পার্টিতে গা ভাসিয়ে দেয়া মেয়েটাও মাঝে মাঝে বান্ধবীকে বলে “আর কত? ভাল হওয়া দরকার রে”..
আড্ডাবাজি কিংবা গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে বেড়ানো ছেলেটার মন কখনো কখনো বলে উঠে “এসবে শান্তি নেই”..
এই উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন দুনিয়ার তুচ্ছতা জানা, হারামকে মন থেকে ঘৃণা করা, পাপ থেকে তাওবাহ করা। তাই ফিরে আসুন শান্তির স্রস্টার পথে, গ্রহণ করুন তাঁর ভালোবাসা। তাওবার গুরুত্ব, তাওবার পদ্ধতি, তাওবা নিয়ে পূর্ববর্তী নেককারদের নসিহত, ইত্যাদি নিয়ে এই আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু! বইটি রচিত।
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
আমি তো তাওবাহ করতে চাই
কিন্তু!
(তাওবাহ সংক্রান্ত ২৩টি জটিল প্রশ্নের সমাধান সম্বলিত)
মূল :
মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজজিদ
অনুবাদ:
মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
সূচীপত্র
- ভূমিকা
- পেশ কালাম
- পাপকে হালকা মনে করার ভয়াবহতা
- তাওবার শর্তাবলী ও তার পরিপূরকসমূহ মহান তাওবাহ
- তাওবাহ আগের পাপ ক্ষমা করে দেয়
- আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন?
- একশ’ ঘাতকের তাওবাহ
- পাপ করে ফেললে কী করব?
- পাপীরা আমাকে তাড়া করে ফিরছে
- তারা আমাকে হুমকি দিচ্ছে
- আমার পাপ আমার জীবনকে প্রভাবিত করছে
- স্বীকার করা কি জরুরী
- তাওবাহকারীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাতাওয়া
- তাওবাহ্র ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি লক্ষ্য করুন
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহ্ । যিনি দয়াময়। তাওবাহ কবুলকারী। সঠিক পথের প্রদর্শক। পাপ ক্ষমাকারী। তাওবাহ কবুলকারী। কঠোর শাস্তিদানকারী। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি এক। তাঁর কোন অংশীদার নেই। তিনি মালিক ও দাতা । আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল । আল্লাহ্ তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সহাবীগণের প্রতি দয়া ও অফুরন্ত শান্তি বর্ষণ করুন ।
তাওবাহ সম্পর্কিত এ আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু! পুস্তিকাটি পড়লাম। এটি একটি অত্যন্ত মূল্যবান ও উপকারী পুস্তিকা । লেখক এতে তাওবার শর্তাবলী, প্রমাণপঞ্জী, তাওবাকারীদের অবস্থা এবং তাওবাহ ওয়াজিবকারী অনেক পাপ সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন । তাই প্রত্যেক পাপীকে- আমাদের প্রত্যেককেও- এ সকল শিক্ষা মেনে চলার উপদেশ দিচ্ছি। দ্রুত নির্ভেজাল তাওবাহ করার উপদেশ দিচ্ছি। তাওবাহকারী যেন মনে রাখে যে, তার মহান প্রভু বান্দাদের তাওবাহ কবুল করেন । গোনাহ খাতা মাফ করে দেন। সে যেন তার প্রভুর রহমত আশা করে। তার মধ্যে যেন এ আস্থা থাকে যে, আল্লাহ্ তায়ালা তাকে ‘আমাল করার তাওফীক দিবেন। তাকে তার প্রভুর পথে সর্বদা চলতে সাহায্য করবেন। পাপ ও পাপীদের থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবেন ।
আল্লাহ্ সকলকে প্রতিটি ভাল কাজের তাওফীক দিন। আমাদের লেখক ভাইকে সওয়াব দিন। এর দ্বারা মুসলমানদের উপকার করুন। মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সহচরবৃন্দের প্রতি আল্লাহ দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন ।
১১/০৭/১৪১০ হিঃ
বিনীত
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল জাবরীন
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
পেশ কালাম
সকল প্রশংসা আল্লাহ্ । আমরা তাঁর প্রশংসা করি । তাঁর নিকট সাহায্য চাই । আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত করেন তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে হেদায়াত করার কেউ নেই । আমি এই মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি এক। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল ।
আল্লাহ্ সকল ঈমানদারকে তাওবাহ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন :
অর্থ : ‘আর হে ঈমানদারগণ, তোমরা সবাই আল্লাহ্র নিকট তাওবাহ কর যাতে তোমরা প্ররিত্রাণ লাভ করতে পার।’ (সূরা নূর ৩১)
আল্লাহ্ বান্দাদের দু’ শ্রেণীতে ভাগ করেছেন : তাওবাহকারী ও যালেম । এখানে তৃতীয় কোন শ্রেণী নেই । আল্লাহ্ বলেছেন,
অর্থ : ‘আর যারা তাওবাহ করে না তারাই যালেম।’ (সূরা হুজুরাত ১১)
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
এ যুগের মানুষ আল্লাহ্র দীন থেকে দূরে সরে পড়েছে। পাপ এবং ফেতনা ফাসাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কেউ নেই যার ‘আমাল কিছু না কিছু পাপের ফলে দূষিত না হয়েছে। তবে আল্লাহ যাকে রক্ষা করেছেন তিনি ছাড়া ।
আল্লাহ্ তাঁর আলোককে অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন। তাই দেখা যাচ্ছে অনেকেই গাফলতি এবং ঘুমের ঘোর কাটিয়ে জেগে উঠেছে। আল্লাহ্র প্রতি কর্তব্যে তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি অনুভব করেছে । ত্রুটি ও তারা তাওবাহ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে পাপে অনুতপ্ত হয়েছে উঠেছে।
আরেক শ্রেণীর লোক দুর্ভাগ্য এবং সংকীর্ণ জীবনের কারণে অতিষ্ঠ। তারা আঁধার থেকে আলোর পথে বেরিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু এ মিছিলের এক শ্রেণীর পথে রয়েছে কিছু প্রতিবন্ধকতা- যাকে তারা তাওবার ক্ষেত্রে বাধা মনে করছে । এ সকল বাধার কিছুটা মানসিক আর কিছুটা বাস্তব ভিত্তিক ।
তাই আমি এ আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু! পুস্তিকাটি লিখেছি। আশা করি এটি এক্ষেত্রে সৃষ্ট সংশয় নিরসন করবে। বিধি-বিধানের বর্ণনা দিবে, শয়তানকে বিতাড়িত করবে এবং অস্পষ্টতাকে স্পষ্ট করে দিবে।আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু! এ পুস্তিকায় রয়েছে একটি ভূমিকা। এতে পাপকে তুচ্ছ মনে করার ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এরপর তাওবার শর্তাবলী, মানসিক চিকিৎসা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর দলিলের ভিত্তিতে তাওবাকারীদের ফতওয়া । বিদ্বানদের কথা এবং উপসংহার উল্লেখ করেছি।
আল্লাহর নিকট দু’আ করি তিনি যেন আমাকে ও আমার ভাইদের এর দ্বারা উপকৃত করেন। আমি তাদের নিকট থেকে শুধু নেক দু’আ অথবা সত্যিকার উপদেশ কামনা করি। আল্লাহ্ আমাদের সবার তাওবাহ কবুল করুন।
মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজজিদ আল খুবার
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
পাপকে হালকা মনে করার ভয়াবহতা
জেনে রাখুন- আপনার ও আমার প্রতি আল্লাহ্ দয়া বর্ষণ করুন- মহান আল্লাহ্ বান্দাদের নিখাদ মনে তাওবাহ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন:
ياَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوحًا
অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র নিকট নিখাদচিত্তে তাওবাহ কর।” (সূরা আত্-তাহরীম ৮)
সম্মানিত লেখক ফেরেশতাগণ কর্তৃক ‘আমালনামায়/লেখার পূর্বে আল্লাহ্ আমাদের তাওবার সুযোগ দিয়েছেন।
মহানাবী (স:) বলেছেন :
ان صاحب الشمال ليرفع القلم ست ساعات عن العبد المسلم
المخطىء، فان ندم واستغفر الله منها القاها والا كتبت واحدة.
বাম দিকের ফেরেশতা অবশ্যই ভুলকারী মুসলিম বান্দা হতে ছয় প্রহর (১) কলম উঠিয়ে রাখে। যদি সে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চায় তাহলে সে পাপটি ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তা না হলে একটি পাপ লিখে।(২) আরেকটি সুযোগ হল লেখার পরে এবং মরণকাল আসার আগে।
(১) প্রহর বলতে দিন অথবা রাতের সংক্ষিপ্ত সময় ।
(২) তাবারানী আল কাবীরে এবং বায়হাকী শুয়াবুল ঈমানে এটি বর্ণনা করেছেন । আল বাণী (রহঃ) এটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
আজকাল অনেক লোকের সমস্যা হল, তারা আল্লাহকে কোন মর্যাদা দেয় না। রাত দিন বিভিন্ন পাপে ডুবে তার নাফারমানী করে। এদের মধ্যে কিছু লোক পাপকে ছোট মনে করে। আপনি দেখবেন, তাদের কেউ কেউ সগীরা গোনাহকে (ছোট পাপ) তুচ্ছ মনে করে। যেমন তারা বলে, কামাষক্তি ছাড়া অন্য নারীদের দিকে তাকালে অথবা তাদের সাথে মুসাফা করলে কী ক্ষতি?
এরা ম্যাগাজিনে ও ধারাবাহিক নাটকে যে সকল নারীর দিকে তাকানো হারাম তাদের দেখে আনন্দ পায়। এমনকি তাদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে, এভাবে তাকানো হারাম তখন হাল্কাভাবে প্রশ্ন করে, এতে কী পরিমাণ পাপ আছে? এটি কি কাবীরাহ গোনাহ না সগীরাহ? এ বাস্তব অবস্থা জানার পর এটিকে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত দুটির সাথে তুলনা করুন :
অর্থ : আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় তোমরা এমন সব কাজ কর যা তোমাদের চোখে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। আমরা রসূলের যুগে ওগুলোকে ধ্বংসকারী কাজ হিসেবে গণ্য করতাম।
অর্থ : ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় মু’মিন তার পাপকে এমনভাবে দেখে যেন সে একটি পাহাড়ের নিচে আছে। ওটি তার উপর পড়ে যাওয়ার ভয়ে সে ভীত। অপরদিকে, পাপাচারী তার পাপকে এমন একটি মাছির মতো মনে করে যা তার নাকের ওপর দিকে উড়ে। তখন সে তার হাত দিয়ে এটি তাড়িয়ে দেয়। এরা কি রসূল হাদীসটিতে বর্ণিত ভয়াবহতাকে এখন পরিমাপ করতে পারবে?
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
অর্থ : তোমরা পাপকে তুচ্ছ মনে করা হতে সতর্ক থাকবে। কারণ, পাপকে তুচ্ছ মনে করাটা এমন এক সম্প্রদায়ের মতো যারা এক উপত্যকার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থান নিল। এরপর এ ব্যক্তি একটি বড়ি নিয়ে এল। ও ব্যক্তি একটি খড়ি নিয়ে এল। এমনকি তারা রুটি তৈরি করার জন্য অনেক বাড়ি বয়ে নিয়ে এল। যে পাপকে তুচ্ছ জ্ঞান করে তাকে যখন পাকড়াও করা হবে তখন এটি তাকে ধ্বংস করে ফেলবে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, পাপকে তুচ্ছ মনে করা থেকে সাবধান! কারণ, ওগুলো একত্র হয়ে পাপীকে ধ্বংস করে ফেলবে।
বিদ্বানগণ বলেছেন, সগীরাহ বা ছোট পাপের সাথে লজ্জার স্বল্পতা, লা-পরোয়া মানসিকতা এবং অবহেলায় আল্লাহকে ভয় না করার বিষয়টি জড়িত থাকে যেমনভাবে জড়িত থাকে কবীরাহ যা বড় পাপের সাথে। বরং এগুলো ছোট পাপকে বড় পাপে পরিণত করে। এ কারণেই বার বার করলে কোন পাপকে ছোট পাপ বলে গণ্য করা যায় না। তেমনিভাবে ইস্তিগফার করলে বা ক্ষমা চাইলে কাবীরাহ বা বড় পাপ মোচন হয়ে যায়।
আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
যার এ অবস্থা তার উদ্দেশ্যে আমাদের কথা হল :
নাফারমানীর ক্ষুদ্রতার দিকে তাকাবেন না, বরং যার নাফারমানী করলেন তাঁর দিকে তাকাবেন।
এতটুকু কথাতেই ইনশাআল্লাহ্ সত্যপরায়ণদের উপকার হবে যারা পাপের ভয়াবহতাকে অনুভব করতে পারেন। আর যারা গোমরাহা এবং বাতিল বা অন্তঃসারশূন্য কাজে অটল থাকে তারা এ থেকে উপকৃত হতে পারবে না।
এ কথামালা তাদের জন্য যারা আল্লাহ্ নিম্নোক্ত বাণীর উপর ঈমান এনেছেন :
অর্থ : “আমার বান্দাদের এই মর্মে সংবাদ দিন যে, আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়াময়।” (সূরা আল হিজর ৪৯)
আরো ঈমান এনেছেন এ কথার উপর:
অর্থ : “আর আমার শাস্তিই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আল হিজর ৫০) তাওবার শর্তাবলী ও তার পরিপূরকসমূহ তাওবাহ শব্দটি একটি মহান শব্দ। এর গভীর অর্থ রয়েছে অনেকেই যেমন মনে করে তেমন নয়। শুধু মুখে উচ্চারণ করল আর পাপের উপর অবিচল থাকল তা নয়।

আমি তো তাওবাহ করতে চাই কিন্তু!
Reviews
There are no reviews yet.