জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
লেখক : আবুল মুনযীর খলীল বিন ইবরাহিম আমীন
প্রকাশনী : তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয় : ইসলামী চিকিৎসা,ঈমান ও আক্বীদা
পৃষ্ঠা : ২৮৮, কভার : হার্ড কাভার
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলকিশেন্স
পবিত্র কুরআনের দ্বারা রোগের চিকিৎসার অনুশীলন কিছু সময়কালের জন্য পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং অতি অল্প সংখ্যক বিদ্বানের নিকট ছাড়া এতটাই অজানা হয়ে পড়েছিল যে, লোকেরা যাদুকর আর ভবিষ্যদ্বক্তাদের ছাড়া অন্য কোন কিছুর কথা জানত না। হাতুড়ে বৈদ্যের পণ্যদ্রব্য আর প্রতারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠল। তখন আবার প্রয়োজন হয়ে পড়লো এধরণের ব্যাপারে কুরআনের চিকিৎসাকে আবার ফিরিয়ে আনা। অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে । এর মধ্যে খালীল বিন ইবরাহীম আমীন যিনি এই বিষয়ে তত্ত্বীয়ভাবে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। আল্লাহ্ উনার হাত দিয়ে অনেক লোককে আরোগ্য দান করেছেন। তিনি অনেক ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন যা রোগী আর কুরআনী চিকিৎসার অনুশীলনকারী উভয়ের জন্য উপকারী।
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
কুরআন ও হাদীসের আলোকে প্রতিকার
মূল:
ড. আবুল মুনযীর খলীল বিন ইবরাহিম আমীন
মূল সম্পাদনা: ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বা-লী
অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ কর্তৃক অনূদিত ও সম্পাদিত
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
প্রকাশনায়
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা-বাংলাদেশ
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
সূচীপত্র
বিষয়:
- প্রারম্ভিকা
- ভূমিকা
অধ্যায়: ১
- জিনের সংজ্ঞা
- জিন ও শয়তান প্রসঙ্গে মানুষের তাওহীদ সংক্রান্ত বিশ্বাস
- জিনের অস্তিত্বের প্রমাণ
- জিন সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যা বলা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ
- মানুষের উপরে জিনদের কিছু ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব রয়েছে:
- পাগলামি ও মৃগী রোগ জিন দ্বারা সংঘটিত হয়:
- জিন দ্বারা সংঘটিত রোগ ও ক্ষতির ধরণ: যেসব কারণে মানুষ জিনকে ভয় পায়:
- জিন সম্পর্কে মানুষের অযৌক্তিক ভয়ের চিকিৎসা
- বাড়ি থেকে কিভাবে জিন বিতাড়িত করা যায়?
- যেসব কারণে জিনরা মানুষের ওপর প্রভাব খাটাতে পারে
- জিন ভর করার লক্ষণ
- কুরআনিক নিরাময় ব্যবস্থার অনুশীলনকারী সম্পর্কিত বর্ণনা ও শর্তাবলী
- কিভাবে অসুস্থতা সনাক্ত করা হয়?
- যেসব আয়াত জিনকে শাস্তি দেয়
- ভারতীয় কস্টাস (সুগন্ধীযুক্ত বৃক্ষ) বৃক্ষের তৈরি নাকের ড্রপ
- ভারতীয় কস্টাসের তৈরি নাকের ড্রপ প্ৰয়োগ পদ্ধতি
- জিন যদি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে এবং আবার ফিরে আসে, তাহলে যে যে আয়াত পাঠ করতে হবে
- জিন ও মানুষের ভালোবাসার চিকিৎসা
- জিনের ক্ষতি এড়ানো এবং শয়তান থেকে রক্ষার দশটি উপায়
- চিকিৎসা পদ্ধতির সংশোধন
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
অধ্যায়: ২
- জাদুটোনা ও জাদুকর
- জাদুটোনার অস্তিত্বের প্রমাণ
- জাদুটোনা প্রসঙ্গে বিখ্যাত আলিমগণের মতামত
- জাদুটোনার প্রকারভেদ
- গ্রহ ও নক্ষত্রের জাদু
- যেসব শর্ত জাদুকরের জন্য অবশ্য পালনীয়
- জাদুকর সমাজে যা যা করেন
- জাদুকর যেভাবে জাদুটোনা করেন
- আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর জাদুটোনার প্রভাব
- জাদুটোনা সম্পর্কিত কার্যকর তথ্য
- নিম্নোক্ত প্রাকটিশনারদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন
- যেসব লক্ষণ দিয়ে জাদুকরকে চেনা যায়
- জাদুকরের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা
- জাদুটোনা থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
- জাদুটোনার চিকিৎসা
- জাদুটোনার চিকিৎসায় সোনামুখীর রস পান
- যেভাবে পানীয় তৈরি করবেন
- জাদুটোনার জন্য কাপিং (কাঁচপ্রয়োগে চিকিৎসা) থেরাপী
- কাপিংয়ের সময়
- যৌন অক্ষমতার চিকিৎসা
- ফারাওদের অভিশাপের রহস্য
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
অধ্যায়: ৩
- বদ নজর, হিংসা (হাসাদ): সুরক্ষা ও প্রতিকার
- বদ নজর
- কুনজর বাস্তব
- বদনজর ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য
- হিংসা (হাসাদ)
- হিংসাকারীর বৈশিষ্ট্য জানা যাতে তাকে এড়িয়ে চলা যায়
- হিংসুকের বৈশিষ্ট্যাবলী
- ইসলামের আলোকে হিংসার প্রতিকার
- কু-নজরে সৃষ্ট অসুস্থতার ধরন
- কুনজর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই একে বাতিল করা
- কুনজরে আক্রান্ত হওয়ার পরে এর প্রতিকার
- কিভাবে ধৌতকাজ সম্পন্ন করতে হবে?
- কাউকে ধৌত করতে বলা হলে সেটা তার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে
- রুকিয়া ও যিকিরের মাধ্যমে কুনজরের চিকিৎসা
- বদনজর ও হিংসা থেকে বাঁচার জন্য বহুল বিস্তৃত তিরস্কারযোগ্য
- বিদয়াতসমূহ
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
অধ্যায়: ৪
- মানসিক ও স্নায়বিক রোগ
- মতিবিভ্রম
- স্নায়ুরোগ
- শিশুদের স্নায়ুরোগ
- ইলেক্ট্রনিক গেমস ও শিশুদের স্নায়ুরোগ
- যেসব বৈশিষ্ট্য দিয়ে মেডিক্যাল এপিলেপসিকে আলাদা করা যায়
- স্নায়ুরোগের চিকিৎসা
- বিষণ্ণতা
- উদ্বেগ
- ভারসাম্যপূর্ণ আচরণের গুণাবলী
- ঈমানের পূর্ণাঙ্গতা অর্জনে সহায়ক গুণের তালিকা
- বড় গুনাহর তালিকা
- সাধারণ পরিভাষায় নিষিদ্ধ কাজের তালিকা
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
অধ্যায়: ৫
- মন্দ ও ধূর্ত অত্যাচারী শাসকের বিপরীতে শক্তিশালী সুরক্ষা
- সকাল ও বিকালে যিকির
- বিভিন্ন ধরনের যিকির
- ঘুমানোর সময় কী বলা উচিত
- রাতে যিনি ঘুমাতে পারেন না তিনি কী বলবে
- হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে কী বলা উচিত
- স্বপ্নে পছন্দনীয় অথবা অপছন্দনীয় জিনিস দেখলে কী বলা উচিত
- টয়লেটে প্রবেশের দোয়া
- খাওয়া ও পান করার আগে বিসমিল্লাহ বলা
- বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কী বলা উচিত
- কারো গৃহে প্রবেশের সময় কী বলা উচিত
- সহবাসের সময় যা বলতে হবে রাগান্বিত অবস্থায় কী করা উচিত
- সন্তানের সুরক্ষার জন্য দোয়া
- নিঃসঙ্গতার সময় যা বলতে হবে
- শয়তানের কারণে ভয় পেলে কী করা উচিত
- পোষা মোরগ, গাধা ও কুকুরের ডাক শুনলে কী বলা উচিত
- যদি কারো কাছে গুল জিন উপস্থিত হয় তখন তার কী বলা উচিত
- নতুন জায়গায় যাত্রাবিরতি করলে যা করা উচিত
- উপসংহার
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
প্রারম্ভিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তাঁর প্রশংসা করি এবং তাঁর সাহায্য, ক্ষমা ও হেদায়াত প্রার্থনা করি। আমাদের নফসের খারাবী হতে এবং আমাদের মন্দ কর্ম হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারেনা। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, কেউ তাকে পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই। নেই তাঁর কোন অশংীদার বা সহযোগী এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (সমাহার) তাঁর দাস ও প্রেরিত রাসূল ।
পবিত্র কুরআনের দ্বারা রোগের চিকিৎসার অনুশীলন কিছুকালের জন্য পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং অতি অল্প সংখ্যক বিদ্বানের নিকট ছাড়া এতটাই অজানা হয়ে পড়েছিল যে, লোকেরা যাদুকর আর ভবিষ্যদ্বক্তাদের ছাড়া অন্য কোন কিছুর কথা জানত না। হাতুড়ে বৈদ্যের পণ্যদ্রব্য আর প্রতারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠল। তখন সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছে করলেন যে, এ ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য কিছুসংখ্যক নিষ্ঠাবান দ্বায়ী (আল্লাহর পথের দিকে আহ্বানকারী) তৈরি হোক। এটার প্রচলনের মৃত্যুর পর তারা আবার এটাকে পুনর্জীবিত করলেন যারা কুরআন দ্বারা রোগের চিকিৎসা করতেন, তাদের চিকিৎসা আর তেলাওয়াতের জন্য কোন পারিশ্রমিক নিতেন না। তারা তাদের পারিশ্রমিক আশা করতেন একমাত্র আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারীর নিকট, কতই না মহান তিনি, কতই না উচ্চ মর্যাদাবান ।
এ সময় যাদুকরদের পণ্যদ্রব্য ও প্রতারণার বিলুপ্তি ঘটল। মানুষেরা ভাল ও মন্দের পার্থক্য করতে শুরু করল এবং তারা কুরআনী নিরাময় পদ্ধতির দিকে ফিরে আসল ।
শত শত রোগী যারা বহু বছর ধরে হাসপাতালে যেত তাদের চিকিৎসা করা হল ।
শত শত মানসিক রোগী যারা মাসের পর মাস মনঃচিকিৎসা নিকেতনে যেত তাদের চিকিৎসা করা হল ।
অসংখ্য রোগী যারা যাদুকর আর হাতুড়ে বৈদ্যের কাছে যেত তাদের চিকিৎসা করা হল ।
কত পরিবার দুঃখ ভোগের পর আনন্দের মুখ দেখল । কত দম্পতি বিচ্ছেদের পর আবার মিলিত হল ।
কত পাগল জ্ঞান ফিরে পেল ।
কত পুরুষত্বহীন বিবাহিত মানুষ সুন্দর জীবন-যাপনের ক্ষমতা লাভ করল।
কত শংকিত ও উৎকণ্ঠিত মানুষ আবার খুশি আর আনন্দ ফিরে পেল ।
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
এক্ষেত্রে প্রচণ্ড বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, কুরআনী চিকিৎসার এই নিষ্ঠাবান অনুশীলনকারীরা তাদের চিকিৎসার জন্য কোন পুরষ্কার বা ধন্যবাদের প্রত্যাশী নন। তারা চান একমাত্র নিজেদের জন্য খালেস দু’আ, আর চান তাদের দ্বীনী ভায়েদের ঈমান বাঁচাতে যেন তা যাদুকর আর · বৈদ্যদের দ্বারা কলুষিত না হয়। তারা চান যাদুকর আর ভবিষ্যদ্বক্তাদের দ্বারা মুসলিম মহিলাদের মান-সম্মান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় ।
এ চিকিৎসার জন্য তারা পুরষ্কার চান আল্লাহর নিকট। তেমনি মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান জানানোর জন্য এবং তাদের দাতব্য কাজের জন্য তারা পুরষ্কার চান তাঁরই কাছে ।
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাধনা করে যাচ্ছেন সেই নিষ্ঠাবান কর্মীদের প্রতি আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের কাজের যথাযোগ্য স্বীকৃতি প্রদান করছি। বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের নিকট দু’আ করি তিনি যেন তাদেরকে যাবতীয় অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেন এবং তাদের আমলকে নিষ্কলুষতার মুকুটে ভূষিত করেন।
অতঃপর এ বিষয়ে অনেক গ্রন্থ আর রচনা আসল, একটার পর একটা। কিন্তু কতকগুলো ক্ষেত্র আছে যা এ পর্যন্ত অনালোচিতই রয়ে গেল । কিন্তু প্রত্যেককেই সে দিকে চালিত করা হয় যে জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
আমাদের ভাই খালীল আল-ফুকা-ঈ আল্লাহ তাকে সম্মানিত করুন- জনৈক যুবা পুরুষ যিনি এ বিষয়ে তত্ত্বীয়ভাবে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। আল্লাহ তার হাত দিয়ে অনেক লোককে আরোগ্য দান করেছেন, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি তাকে প্রচুরভাবে পুরষ্কৃত করার জন্য ।
এখন তিনি এ বিষয়ে আমাকে একটি বই উপহার দিয়েছেন, তিনি এর শিরোনাম দিয়েছেন “আত্ তুরকুল হিসা-ন ফী আমরাদিল জান।” বা জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা।
আমি এটা পড়েছি, এটাকে সৃজনশীল পেয়েছি। এ বিষয়ের কতক ক্ষেত্রে তিনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। এটা রোগী আর কুরআনী চিকিৎসার অনুশীলনকারী উভয়ের জন্য উপকারী।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন তার কাজের জন্য তার জীবদ্দশায় তাকে কল্যাণ দান করেন এবং তার মৃত্যুর পর এটিকে তার জন্য পুণ্যের ভাণ্ডারে পরিণত করেন।
সর্বশেষে আমি তাকে আমার অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তাকে বলছি: এগিয়ে যাও। হে আবুল মুনদির, মুসলিমদের সেবা কর, তাদের রোগীদের চিকিৎসা কর, তাদের দুর্বলদের সাহায্য কর। তুমি খালেস দু’ লাভে উপকৃত হও আর তোমার শ্লোগান হোক:
আমি তার জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান একমাত্র বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছেই আছে।’
আশ-শু’আরা ২৬: ১০৯,
আমি তো সাধ্যমত সংশোধন করতে চাই, আমার কাজের সাফল্য তো আল্লাহ্ই পক্ষ হতে, আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি, আর তাঁর দিকেই মুখ করি । (সূরা -আল-হূদ ১১: ৮৮)
হে আল্লাহ! রহম ও শান্তি প্রেরণ কর উম্মী নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সঙ্গী সাথীদের উপর।
ওয়াহীদ বিন আবদুস সালাম বা-লী
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁরই কাছে সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি, তাঁরই কাছ থেকে কামনা করি দিকনির্দেশনা। আমাদের মন্দ প্রবৃত্তি ও কর্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁরই কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে কেউ বিপথে নিয়ে যেতে পারে না, এবং আল্লাহ যাকে বিপথে নিয়ে যান তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই, তাঁর কোনো অংশিদার বা সহযোগী নেই, এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল ।
হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর যেমনভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত । তোমরা মুসলিম না হয়ে কক্ষনো মরো না । [আল ইমরান ৩: ১০২]
হে মনুষ্য সমাজ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি হতে পয়দা করেছেন এবং তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সেই দু’জন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, য যাঁর নামে তোমরা পরস্পর পরস্পরের নিকট (হাক্কু) চেয়ে থাক এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি-বন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। [আন্-নিসা ৪: ১]
হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সরল সঠিক কথা বল । আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের আমলগুলোকে ত্রুটিমুক্ত করবেন আর তোমাদের পাপগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে সে সাফল্য লাভ করে- মহাসাফল্য [আল-আহযাব ৩৩:৭০-৭১]
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
‘সকল প্রশংসাই আল্লাহ্র যিনি সন্তান গ্রহণ করেন না, যাঁর শাসন- কর্তৃত্বে কোন অংশীদার নেই, দুর্দশাগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য যাঁর কোন অভিভাবকের প্রয়োজন হয় না। অতএব পূর্ণ শ্রেষ্ঠত্বে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর । [আল-ইসরা ১৭: ১১১]
তিনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই, সৃষ্টিকর্তা নেই, প্রভু নেই। তিনিই সার্বভৌম, তাঁর হাতে সবকিছুর কর্তৃত্ব এবং তাঁর কাছেই সবাইকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তিনি মহানিয়ন্ত্রক, যিনি তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে বশিভূত করেছেন তাঁর সকল সৃষ্টিকে। তিনি মর্যাদা ক্ষুণ্নকারী ও মর্যাদা দানকারী; তিনি যার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেন, তা কেউ পুনর্জীবিত করতে পারে না, আবার তিনি যাকে মর্যাদা দান করেন, কেউ তা ক্ষুণ্ণ করতে পারে না। তিনি যার জন্য ক্ষতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন তার জন্য কেউ উপকার করতে পারে না, আর তিনি যার উপকার করেন, তার কেউ ক্ষতি করতে পারে না। তিনি যার কাছ থেকে কেড়ে নেন, তাকে কেউ দিতে পারে না, আবার তিনি যাকে দান করেন, তার কাছ থেকে তা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। এমনকি সাত জান্নাত এবং সাত পৃথিবীর মানুষ, এবং এতে যা কিছু আছে সবাই মিলেও যদি আল্লাহ যাকে মর্যাদা দান করেছেন তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করে অথবা আল্লাহ যাকে সুবিধা দান করেছেন তার ক্ষতি করার অথবা আল্লাহ যাকে কিছু দিয়েছেন তার কাছ থেকে তা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে, তবু তারা তা কখনোই করতে সক্ষম হবে না ।
আল্লাহ তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইলে তিনি ছাড়া কেউ তা সরাতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ করতে চান, তবে তো সব কিছুই করার তাঁর ক্ষমতা রয়েছে । [আল-আনআম ৬: ১৭]
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো অংশীদার বা সহযোগী নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দাহ ও প্রেরিত রাসূল, সুসংবাদ ও সতর্কবার্তা আনয়নকারী, আল্লাহ যাকে সমগ্র বিশ্বজাহানের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করেছেন। তিনি সঠিকভাবে আল্লাহর বার্তা বহন করেছেন এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তিনি জিহাদ করেছেন, যাতে করে মহান সার্বভৌম ও সর্বজ্ঞ মহান আল্লাহতা’আলার কথা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি জমিনের বুকে তাওহীদের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, শিরক্রে ঝাণ্ডা ছিন্নভিন্ন করেছেন, নিভিয়ে দিয়েছেন এই শিরকের আগুন। তার, তাঁর পরিবার ও সাহাবীদের উপর এবং যারা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন তাদের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক ।
কুরআন ও শরীয়াহ নির্দেশিত রুকইয়াহ্ মাধ্যমে অসুস্থতার চিকিৎসা করার উপায় ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। শুরুতে মানুষ এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি সাদরে গ্রহণ করেছিল, বিশেষ করে যারা অসুস্থ ছিল। অসুস্থতার এই কুরআনীক প্রতিকারের ব্যাপক বিস্তৃতি এবং দিন দিন এর প্রয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবির্ভাব ঘটেছে অনেক বইয়ের, রচিত হয়েছে অনেক প্রবন্ধ, যাতে বলা হয়েছে জিন সম্পর্কে। কারণ এটি এমন একটি ইস্যু যা শুধু অদৃশ্য জগতের কথা বলে-যা খুবই আগ্রহজনক ও কৌতুহল সৃষ্টিকারী বিষয়-মানুষও এসব বই সাদরে গ্রহণ করেছে, যার ফলে এই বইগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে; অনেক মানুষই ফিরে এসেছে এই কুরআনীক প্রতিকারের দিকে এবং মুসলিম দেশগুলোতে এই প্রতিকার পদ্ধতির ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিন্তু এ পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের অভিজ্ঞতার অভাব থাকার দরুন এই চিকিৎসা পদ্ধতির কিছু নেতিবাচক প্রভাবও তৈরি হয়েছে। যার ফলে এসব নেতিবাচক প্রভাব এবং এই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বেশ কিছু বই ও প্রবন্ধও রচিত হয়েছে (বিশেষ করে কুয়েতের কিছু প্রকাশনা)। এসব বই-প্রবন্ধে ভালো ও মন্দ, সত্য ও মিথ্যা উভয় ধরনের বিষয়ই উঠে এসেছে। এসব বিষয় এবং এর প্রয়োগকারীদের ব্যাপারে মানুষের মতামতেও পার্থক্য দেখা গেছে, প্রকৃতার্থে, যারা এসবের প্রশংসা করেছেন এবং যারা সমালোচনা করেছেন উভয়েরই পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি ও কারণ রয়েছে।
জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
কিন্তু নিরপেক্ষ মুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে?
নিরপেক্ষ মুসলিমগণের দৃষ্টিভঙ্গি হবে প্রশংসা ও সমালোচনার মধ্যবর্তী কোনো এক পথ অনুসরণ করা। একজন মুসলিম সত্যের পথই অনুসরণ করবেন, কারণ আমরা সত্যের উম্মাহ এবং আমাদের উপর সত্যেরই আদেশ করা হয়েছে। তিনি একটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করবেন, কারণ আমরা মধ্যমপন্থার জাতি । তাকে ন্যায়পরায়ণ ও পক্ষপাতহীন হতে হবে, কারণ আমরা হলাম ন্যায়পরায়ণ জাতি কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতটা উত্তেজিত না করে যে তোমরা ইনসাফ করা ত্যাগ করবে, সুবিচার কর, এটা তাক্বওয়ার নিকটবর্তী । [আল-মায়িদাহ ৫:৮]
সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হওয়ার জন্য আমরা বলব: কুরআন ও শরীয়াহ নির্দেশিত রুক্কুইয়ার মাধ্যমে অসুস্থতার চিকিৎসা করার উপায় হল নবীর এক মহান সুন্নাতেরই পুন:প্রচলন, যা একসময় পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। ইবনে কাইয়ুম এ চিকিৎসা পদ্ধতি ছেড়ে দেয়াকে এক প্রকারে কুরআনকে ছেড়ে দেয়ার মতো বিবেচনা করেছেন এবং বলেন: “যে ব্যক্তি কুরআন পরিত্যাগ করল, সে যেন অসুস্থতার প্রতিকার বা চিকিৎসাকে পরিত্যাগ করল এবং কুরআনের মাধ্যমে নিরাময় লাভ করার সুযোগ হাতছাড়া করল।”
পবিত্র কুরআনে নির্দেশিত পন্থায় রোগের চিকিৎসা একটি বাস্তবতা, শুধু অজ্ঞ ও ধুর্তরাই একে প্রত্যাখ্যান করে। অনেক মানুষই এই চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে উপকার লাভ করেছেন, এছাড়াও এমন অনেক রোগ রয়েছে যেগুলোর প্রতিকার বা নিরাময় আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাতি পন্থা ব্যতিত সম্ভব নয় । যারা কুরআনের এই নিরাময়কে অধ্যাত্মিক উপায়ে নিরাময় হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চান, তাদের আসলে জ্ঞানের বা বোঝার কমতি রয়েছে, কারণ কুরআন আত্মিক ও শারীরিক উভয় ধরনের নিরাময় প্রদান করে ।

জিন এবং জিনকেন্দ্রিক অসুস্থতা
Reviews
There are no reviews yet.