তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

৳ 17

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

লেখক : ডক্টর শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আন-না‘য়ীম
অনুবাদ : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল মাদানী
সম্পাদনা : উমার ফারুক আব্দুল্লাহ

প্রকাশনায় : দারুল কারার পাবলিকেশন্স

পরিবেশনায় : তাওহীদ পাবলিকেশন্স

Description

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

লেখক : আব্দুল্লাহ আল মাহের

সম্পাদক : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী

প্রকাশনায় : দারুল কারার পাবলিকেশন্স

পরিবেশনায় : তাওহীদ পাবলিকেশন্স

প্রথম প্রকাশ : জুন ২০২১
প্রথম সংস্করণ : জুলাই ২০২১

প্রচ্ছদ, অঙ্গসজ্জা ও মুদ্রণ : গ্রাফিকসেন্স

দারুল কারার পাবলিকেশন্স

 ———

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

সূচিপত্র

তাওহীদ কী?…………………………………………….. ৬

তাওহীদের প্রকারভেদ……………………………………. ৬

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত………………………….. ৭

আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত…………………………….. ৯

আল্লাহর আরশে অবস্থান সম্পর্কে ইমামগণ…………….. ১৭

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান নন……………………………… ২০

আল্লাহ তা‘আলার চোখ………………………………….. ২৩

আল্লাহ তা‘আলার হাত…………………………………… ২৫

আল্লাহ তা‘আলার পা……………………………………. ৩২

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকীদা…………….. ৩৭

সম্মানিত ইমামগণের মতামত…………………………… ৪০

তাওহীদ কী?

তাওহীদ অর্থ : কোনো কিছুকে একক ও অদ্বিতীয় করা, যা একাধিক হবে না।

তাওহীদ হলো : আল্লাহ তা‘আলাকে তাঁর কাজে, নামে গুণাবলিতে ও বৈশিষ্ট্যে একক জানা, বিশ্বাস করা, মানা এবং বান্দার করণীয় ও বর্জনীয় সকল ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য করা।

 

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

তাওহীদের প্রকারভেদ

তাওহীদ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত-

(ক) তাওহীদুর রুবূবিয়াহ

(খ) তাওহীদুল উলূহিয়াহ এবং

(গ) তাওহীদুল আসমা ওয়া সিফাত।

সূরা ফাতেহার শুরুতেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এ প্রকার তাওহীদের বর্ণনা দিয়েছেন।[1]

কেউ উক্ত তিন প্রকার তাওহীদকে খালেস অমত্মরে গ্রহণ না করলে আল্লাহকে একমাত্র মা‘বূদ হিসাবে স্বীকার করতে পারে না। আর ঐ ব্যক্তি কখনোই আল্লাহর হেদায়াতও লাভ করতে পারে না।[2]

তিন ধরনের তাওহীদ এর মধ্যে ‘‘তাওহীদুল আসমা ওয়া সিফাত’’ নিয়ে আমাদের সমাজে নানা ভ্রামত্ম আকীদা রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

তাওহীদুল আসমা ওয়া সিফাত এর অর্থ-আল্লাহর নাম ও তাঁর গুণাবলীসমূহ এককভাবে তাঁর জন্যই সাব্যস্ত করা, অন্য কারো সাথে তুলনা না করা।

আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী আছে। তিনি নিরাকার নন। তিনি শুনেন, দেখেন এবং কথা বলেন। তাঁর হাত, পা, চেহারা ও চোখ ইত্যাদি সিফাত বা গুণাবলি আছে।[3] তবে তাঁর সাথে সৃষ্টির কোন কিছুই তুলনীয় নয়। বরং তিনি তাঁর মতো। আল্লাহ বলেন,

﴿لَيْسَ كَمِثْلِه# شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ﴾

‘‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’’।[4]

সুতরাং তাঁর সিফাতের সাথে কোন কিছুর তুলনা করা যাবে না। যেমন আল্লাহ নিজেই বলেছেন,

﴿فَلَا تَضْرِبُوْا لِلّٰهِ الْأَمْثَالَ﴾

‘‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কোন সাদৃশ্য বর্ণনা করো না’’।[5]

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত

তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন

আল্লাহ তাঁর পরিচয় দিয়ে বলেন,

﴿الرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ﴾

‘দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমুন্নত’।[6]

এ মর্মে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে অনেক দলীল রয়েছে।

রাসূল g-কে আল্লাহ তা‘আলা মি‘রাজে নিয়ে গিয়েছিলেন সপ্তম আসমানের উপরে এবং বার বার মূসা n-এর নিকট থেকে আল্লাহর কাছে যাওয়ার বিষয়টিও

প্রমাণ করে আল্লাহ আসমানের উপরে আরশে সমুন্নত।[7]

আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন-এর অর্থ হল, তাঁর শ্রবণ, দৃষ্টি, ইলম ও ÿমতা সর্বত্র পরিব্যাপ্ত।[8] রাসূল g, ছাহাবায়ে কেরাম j, তাবেঈনে ঈযামসহ সালাফী বিদ্বানগণ s যুগে যুগে এমনটিই বুঝেছেন।

আল্লাহর নাম ও গুণাবলী যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঐভাবে বিশ্বাস করতে হবে। কোন রূপক বা বিকৃত অর্থ গ্রহণ এবং কল্পিত ব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে না।[9]

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে اسْتَوٰى শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে স্থান বিশেষে বিভিন্ন প্রকার অর্থে। সংÿÿপ্তভাবে বলা যায়, তা তিনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

আরবী اسْتَوٰى শব্দটি পবিত্র কুরআনে যেখানে পূর্ণ ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে অর্থাৎ তার পরে على বা إلى কিছুই না আসে তখন তার অর্থ হবে, সম্পূর্ণ হওয়া বা পূর্ণতা লাভ করা। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা মূসা n সম্পর্কে বলেন-

﴿وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَاسْتَوَىٰ﴾

আর যখন মূসা যৌবনে পদার্পণ করলেন এবং পূর্ণতা লাভ করলেন।[10]

আরবী اسْتَوٰى শব্দটির সাথে যদি عَلٰى আসে তখন তার অর্থ হবে-উপরে হওয়া, আরোহণ করা। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা তার নিজের সম্পর্কে বলেন :

﴿ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ﴾

অর্থাৎ তারপর তিনি আরশের উপর উঠলেন।[11]

আর اسْتَوٰى শব্দটির সাথে যদি إِلٰى আসে তখন তার অর্থ হবে-ইচ্ছা করা, সংকল্প করা, মনোনিবেশ করা। আর সে অর্থই এ আয়াতে ব্যবহৃত।

﴿ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ﴾-এর অর্থ করা হবে-আকাশ সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন। তবে তাবেঈ মুজাহিদ r বলেন, এখানেও উপরে উঠার অর্থ হবে।

শেষোক্ত দু অবস্থায় اسْتَوَى শব্দটি যখন আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত হবে তখন তা তার একটি সিফাত বা গুণ হিসেবে গণ্য হবে। আর আল্লাহর জন্য সে সিফাত বা গুণ কোন প্রকার অপব্যাখ্যা, পরিবর্তন, সদৃশ নির্ধারণ ছাড়াই সাব্যস্ত করা ওয়াজিব।[12]

সালাফগণের কেউ কেউ এর তর্জমা করেছেন, অতঃপর আসমানের দিকে আরোহণ করেন।[13]

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত মহান আল্লাহর আসমানের উপর আরশে আরোহণ করা এবং বিশেষ বিশেষ সময়ে নিকটের আসমানে অবতরণ করা তাঁর গুণবিশেষ। কোন অপব্যাখ্যা ছাড়াই এর উপর ঐভাবেই ঈমান আনা আমাদের উপর ওয়াজিব, যেভাবে তা ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।[14]

আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর আছেন। উক্ত কথাটি আল-কুরআনের ৭টি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। সকল ইমামগণও এ বিষয়ে একমত।

দলিলগুলো নিম্নরূপ-

১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

الرَّحْمَٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ

তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমুন্নত হয়েছেন।[15]

২. আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ

ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ﴾

তিনিই ছয় দিনে আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমুন্নত হয়েছেন।[16]

৩. আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

﴿اَللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا

فِيْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ﴾

আল্লাহ; যিনি আকাশম-লী, পৃথিবী ও ওদের অমত্মর্বতী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন।[17]

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত

৪. আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র আরো বলেন,

﴿الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا

فِيْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ﴾

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত তিনি আকাশম-লী, পৃথিবী ও ওদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন।[18]

৫. আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

﴿إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ

فِيْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ﴾

নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন।[19]

৬. আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

﴿إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ

فِيْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ﴾

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন।[20]

৭. আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

﴿اَللهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ

ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ﴾

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়া আকাশম-লীকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন; তোমরা তা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হয়েছেন।[21]

[১]. সূরা ফাতেহা ১:১-৫

[২]. সূরা বাক্বারাহ ২:২৫৬

[৩]. সূরা নিসা ৪:১৬৪, সূরা মায়েদাহ ৫:৬৪, সূরা ক্বালাম ৬৮:৪২, সূরা ত্ব-হা. ২০:৩৯

[৪]. সূরা শূরা ৪২:১১

[৫]. সূরা নাহল ১৬:৭৪

[৬]. সূরা ত্বহা ২০:৫

[৭]. সহীহুল বুখারী ৩৮৮৭

[৮]. তাফসীর ইবনে কাসীর, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৫৬০

[৯]. ফাতাওয়া উসায়মীন ১/৮৩ পৃ.

[১০] [সূরা আল-কাসাস ২৮:১৪]

[১১]. সূরা আ’রাফ ৭:৫৪, সূরা ইউনুস ১০:৩, সূরা রা’দ ১৩:২, সূরা ফুরকান ২৫:৫৯, সূরা সাজদা ৩২:৪, সূরা হাদীদ ৫৭:৪

[১২]. তাফসীর যাকারিয়া, সূরা ত্বহা ৫ নাম্বার আয়াতের তাফসীর

[১৩]. সহীহুল বুখারী

[১৪]. তাফসীর আহসানুল বায়ান, সূরা ত্বহা ৫ নাম্বার আয়াতের তাফসীর

[১৫]. সূরা ত্বহা ২০:৫

[১৬]. সূরা হাদীদ ৫৭:৪

[১৭]. সূরা সিজদা ৩২:৪

[১৮]. সূরা ফুরকান ২৫:৫৯

[১৯]. সূরা আ‘রাফ ৭:৫৪

[২০]. সূরা ইউনুস ১০:৩

[২১]. সূরা রা‘দ ১৩:২

Reviews (0)

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত”

Your email address will not be published.

তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মাহের সম্পাদক : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল মাদানী প্রকাশনায় : দারুল কারার পাবলিকেশন্স পরিবেশনায় : তাওহীদ পাবলিকেশন্স গায়ের দাম: ২৫ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৪
Shopping cart
Facebook Twitter Instagram YouTube WhatsApp WhatsApp

Sign in

No account yet?