তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড

৳ 347

তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড
লেখক : ইমাম মালেক বিন আনাস রহ.
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: হাদিস
Description

তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড

তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: হাদিস
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলিকেশন্স

তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড

(হাদীস্ত্র : ১১১১-১৮৯১)

ইমাম মালিক বিন আনাস (রা)

(৯৩-১৭৯ হি.)

তাওহীদ পাবলিকেশন্স-এর অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ কর্তৃক

অনূদিত ও সম্পাদিত

প্রকাশনায়

তাওহীদ পাবলিকেশন্স

ঢাকা-বাংলাদেশ

প্রকাশকের কথা

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার নিমিত্তে, যিনি মানুষের হিদায়াতের জন্য দু’ প্রকারের ওহী প্রেরণ করেছেন। যার হিফাযতের দায়িত্বও তিনি নিয়েছেন। যেমন : মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আমি যিক্র (ওহী মাতলু ও ওহী গায়র মাতলু) অবতীর্ণ করেছি আর তার হিফাযত আমিই করব।” (সূরার আল-হিজর ১৫ : ৯)

অনেকেই যিক্র দ্বারা শুধু ওহীয়ে মাতলু-আল-কুরআনকেই উদ্দেশ্য করে থাকেন। কিন্তু সকল মুফাসসির এ ব্যাপারে একমত যে, যিক্র দ্বারা উভয়ই বোঝানো হয়েছে। অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, “রাসূল নিজ প্রবৃত্তি হতে কোনো কথা বলেন না, তাঁর উক্তি কেবল ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রেরিত হয়।” (সূরার আন-নাজম ৫৩: তাওহীদ পাবলিকেশন্স-এর বহু দিনের চিন্তার প্রতিফলন অবশেষে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বাস্তবায়িত হলো, আল-হামদু লিল্লাহ। ইয়াইইয়া আল-লায়সীর বর্ণনাকৃত প্রসিদ্ধ নুসখা অনুসরণে তাওহীদ পাবলিকেশন্সের মুওয়াত্তা মালিক গ্রন্থটির অনুবাদ ও তাহকীকের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, যা ইয়াহইয়া আল-লায়সীর পুত্র উবায়দুল্লাহর সূত্রে বর্ণিত। পাবলিকেশন্সের অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ এটিকে গতানুগতিক ধারার চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে সুবিজ্ঞ পাঠক মহলের করকমলে তুলে ধরার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। দেশে-বিদেশে অবস্থিত গবেষকগণ তাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে কোন স্তরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন; পাঠকবৃন্দ এ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করলে সহজেই অনুমান করতে পারবেন। বিশেষ করে হাদীয়ের সনদ, তাখরীজ, রাবীর জারাহ তাদীল সম্পর্কিত প্রামাণিক আলোচনা, পরিসংখ্যান, সর্বোপরি আরবী বর্ণমালার নতুন উচ্চারণ নীতিমালা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এ গ্রন্থের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদাভাবে উল্লেখ করে পাঠকমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, শায়খ মুহাম্মাদ বিন আবদুল খাবীর (গোদাগাড়ী), শায়খ ওজাইর রহমান বিন শিহাবুদ্দীন সুন্নী ও শায়খ মুহাম্মাদ আল-আমীন বিন ইউসুফ [হাফিযাহুমুল্লাহ] অক্লান্ত পরিশ্রম করে এটিকে চূড়ান্ত রূপদানের ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তাছাড়া এ বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে যারা প্রেরণা যুগিয়েছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের সকলকে উত্তম জাযা’ দিন । আমীন!

এ কাজটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে মানুষ হিসেবে ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সুবিজ্ঞ পাঠকবৃন্দের প্রতি অনুরোধ, তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমাদেরকে অবিহত করুন। আমাদের এ নেকির কাজে আপনিও বিভিন্ন পরামর্শ ও মতামত দিয়ে অংশীদার হতে পারেন। ইন-শা-আল্লাহ আপনাদের সুপরামর্শ সুবিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রকাশনার ক্ষেত্রে তা পাথেয় হয়ে থাকবে।

সুবিজ্ঞ পাঠকবৃন্দের নিকট দুর্জা’র আবেদন রইল, যেন আপনাদের প্রিয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বুখারী ও ইবনু মাজাহর মতই অন্যান্য মৌলিক হাদীছগুলো যেমন আৰু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ যুগোপযোগী করে আরো সমৃদ্ধ আকারে প্রকাশ করতে পারে। আমাদের গবেষণা বিভাগ যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। ইন-শা-আল্লাহ অচিরেই এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে।

হে আল্লাহ! এ কাজটির ওয়াসীলায় তোমার নিকট এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য মাগফিরাত ও দয়া কামনা করছি। আল্লাহ তুমি আমাদের ক্ষমা করো এবং এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করো। আমীন!

বিনীত

মুহাম্মাদ ওয়ালিল্লাহ

পরিচালক, তাওহীদ পাবলিকেশন্স

আরবী ভাষার বাংলা প্রতিবর্ণায়ন 

বাংলা ভাষায় আরবী হরফগুলো মাখরাজসহ বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করা অত্যন্ত দুরূহ। আরবীকে বাংলায় উচ্চারণ করতে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিকৃত করা হয়, যা আরবী ভাষার জন্য অতিমাত্রায় দূষণীয়। কেননা,অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারণ বিকৃতির কারণে অর্থগত ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায় ।

আরবী হরফগুলোর বাংলা উচ্চারণ বিশুদ্ধভাবে করার প্রচেষ্টা নানাভাবে করা হয়েছে। কিন্তু আরবী ২৮টি বর্ণমালার প্রতিবর্ণ এ পর্যন্ত কেউ-ই পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করেননি। আল-হামদুলিল্লাহ! সম্ভবত আমরাই সর্বপ্রথম ২৮টি বর্ণমালাকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হলাম। একটু চেষ্টা ও খেয়াল করলেই এ উচ্চারণ রীতিমালা আয়ত্ত করে মোটামুটি শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারবেন বলেই আমাদের একান্ত বিশ্বাস।

আইন অক্ষরের পরে ইয়া সাকিন হলে সেক্ষেত্র ঈ লেখা হবে। ফাতহাহ বা যাবারের বাম পাশে ইয়া সাকিন হলে য় ব্যবহৃত হবে; যেমন লায়ষ এ। ওয়াও-এর উচ্চারণ ব-এর মতো হলে সেক্ষেত্রে উক্ত ব-এর উপর বিন্দু অর্থাৎ ব হবে। ফাতহাহ (যাবার)-এর বাম পাশে হামযাহ-তে যের হলে সেক্ষেত্রে য়ি ব্যবহৃত হবে। আইন  বর্ণ সাকিন হলে সেক্ষেত্রে  ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন  আ’মাশ। হামযাহ সাকিনের ক্ষেত্রে  ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন  মু’মিন। অনুরূপভাবে শেষাক্ষরে হামযাহ থাকলেও ওয়াকফের কারণে  ব্যবহার করা হয়েছে। খাড়া যাবার বা মাদ্দে আসলির ক্ষেত্রে আ-কার -এর উপরে খাড়া যাবার ব্যবহার করা হয়েছে।

ইমাম মালিক বিন আনাস (র:)

পরিচয় :

তিনি হলেন শায়খুল ইসলাম, হুজ্জাতুল উম্মাহ, ইমামু দারিল হিজরাহ মালিক বিন আনাস বিন আবী আমির বিন আমর ইবনুল হারিস আল-আসবাহী। হামীর অঞ্চলের আসবাহ্ এলাকার প্রতি সম্পর্কিত করে তাকে আযবাহী এবং মাদীনায় বসবাসের কারণে মাদানী বলা হয়। তাঁর কুনিয়াত হলো আবূ আবদুল্লাহ। তাঁর মাতার নাম আলিয়াহ বিনতু শারীক আল-আষদিয়াহ।’

জন্মগ্রহণ:

তিনি ৯৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।`

পরিবার :

ইমাম মালিক শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে লালিতপালিত হন, যাদের হাদীস ও আস্ত্রার বর্ণনায় প্রসিদ্ধি ছিল। তাঁর পিতা আনাস বিন মালিক হাদীয়ের রাবী এবং তাবি’ তাবিঈন ছিলেন। তাঁর থেকে তাঁর সন্তান মালিক এবং ইবনু শিহাব হাদীস বর্ণনা করেন।

ইমাম মালিক-এর চার জন সন্তান : ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ, হাম্মাদাহ ও উম্মুল বাহা’ (ফাতিমাহ)। বলা হয়, ইয়াহইয়া ও ফাতিমাহ মুওয়াত্তা মুখস্থ করেছেন।

দৈহিক বিবরণ :

তিনি লম্বা ও বিশাল দেহের অধিকারী ছিলেন। মাথার আকৃতি ছিল বড় ও সুন্দর কেশবিশিষ্ট। মাথার চুল ও দাড়ির রং ছিল সাদা এবং দাড়ি ছিল লম্বা। মাথা টাকযুক্ত। তিনি গোঁফ চেঁছে ফেলতেন না । তার চোখ ছিল নীল বর্ণের ।

ঈসা বিন উমার বলেন : আমি মালিক-এর চেয়ে সাদা ও লাল বর্ণের উত্তম চেহারা আর দেখিনি। আর আমি তার চেয়ে অধিক সাদা পোশাক পরিধানকারী অন্য কাউকে দেখিনি ।

আবূ আসিম আন-নাবীল বলেন : আমি মালিক-এর চেয়ে উত্তম চেহারার মুহাদ্দিস আর দেখিনি।’

অধ্যবসায় :

ইমাম মালিক মাত্র দশ বছর বয়সে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। একুশ বছর বয়সে তিনি ফতোয়া প্রদানে নিযুক্ত হন। তার থেকে একটি দল হাদীয় বর্ণনা করেন, তখন তিনি ছিলেন একজন টগবগে যুবক। আৰু জা’ফর মানসুর- এর শাসনামলের শেষের দিকে ইমাম মালিকের নিকট থেকে জ্ঞানার্জনের জন্য দিক-দিগন্ত থেকে ছাত্ররা ছুটে আসে। হারুনুর রাশীদ-এর খেলাফাতকাল থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ছাত্ররা তাঁর কাছে ভিড় জমায়। ইমাম মালিক বিন আনাস বলেন : আমি [ইবনু উমার (র-এর আযাদকৃত গোলাম) নাফি’-এর কাছে আসতাম। আর আমি অল্পবয়স্ক বালক হওয়ায় আমার গোলাম-এর সঙ্গে আসতাম। নাফি’ তার আসন থেকে নেমে আমার সঙ্গে বসে আমাকে হাদীস শুনাতেন। তিনি ফজরের পর মসজিদে যেতেন। তখন তার কাছে তেমন কেউ আসত না। *

১. সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ লিয-যাহাবী, খণ্ড ৮, পৃ. ৪৮-৪৯

২. আল-ইনতিকা’ ফী ফাদায়িলুস সালাসাহ আল-আয়িম্মাহ আল-ফুকাহা’ লি ইবনু আবদুল বার, পৃ. ১০-১২

৩. ইতহাফুস সালিক, পাতা : ৬

৪. তারতীবুল মাদারিক : ১/১০৯, তামহীদ : ১/৮৭-৮৮

৫. সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ লিয-যাহাবী, খণ্ড ৮, পৃ. ৬৯

৬. প্রাগুক্ত পৃ. ৬৯

৭. প্রাগুক্ত পৃ. ৭০

৮. প্রাগুক্ত পৃ. ৫৫ ৯. প্রাগুক্ত পৃ. ১০৭

মালিক বিন আনাস জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে রাবীআহ বিন আবী আবদুর রহমান-এর মজলিসে বসতেন। অতঃপর তিনি রাবীআহ বিন আবী আবদুর রহমান-এর থেকে পৃথক হয়ে পাঠদান শুরু করেন। আর তাঁর মজলিস রাবীআহ বিন আবী আবদুর রহমান-এর ন্যায় অথবা তার চেয়ে বড় ছিল। তিনি আবূ আবদুর রহমান-এর সঙ্গে বাদশাহ- এর নিকট ফতোয়া প্রদান করতেন। ১০

 শিক্ষকগণ :

মালিক বিন আনাস অনেক শায়খদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেন। নিম্নে কতিপয় শিক্ষকের নাম উল্লেখ

করা হলো :

১. নাফি’ [ইবনু উমার (র:)-এর আযাদকৃত গোলাম ] ২. সাঈদ আল-মাকবুরী

৩. আমির বিন আবদুল্লাহ ইবনুষ যুবায়র

৪. ইবনুল মুনকাদির

৫. যুহরী

৬. আবদুল্লাহ বিন দীনার

৭. ইসহাক বিন আবদুল্লাহ বিন আৰী তালহাহ

৮. আযাব সাখতিয়ানী

৯. রাবীআহ আর-রায়

১০. যায়দ বিন আসলাম

আকীদাহ :

১১. সালামাহ বিন দীনার আবূ হাযিম

১২. সুহায়ল বিন আবী খালিই

১৩. সালিহ বিন কায়সান

১৪. সাফওয়ান বিন সুলায়ম

১৫. আবুষ যিনাদ আবদুল্লাহ বিন যাকওয়ান

১৬. আবদুর রহমান ইবনুল কাসিম

১৭. আবদুর রহমান বিন আবী যা’যাত্মহ

১৮. আতা’ আল-খুরাসানী

১৯. আলকামাহ বিন আবী আলকামাহ

২০. মুহাম্মাদ বিন আবী বাকর বিন হাযম‍

১. ইমাম মালিক বলেন, “ঈমান কথা ও কাজের নাম এবং এর হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।

২. তিনি বলেন, কুরআন হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহর কালাম আল্লাহর থেকে। আল্লাহর কোনো কিছু সৃষ্ট নয়।

৩. তিনি বলেন, যে বলে কুরআন সৃষ্ট; তাকে মেরে বেদনার্ত করে দিতে হবে এবং তাওবা না করা অবধি জেলে আবদ্ধ রাখতে হবে।

৪. আল্লাহ আকাশে এবং তাঁর বিদ্যা সর্বব্যাপ্তি ।

৫. ইবনুল কাসিম বলেন, আবূ সামই, মালিককে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ আবদুল্লাহ! কিয়ামতের দিন কি আল্লাহ তাআলাকে দেখা যাবে? ইমাম মালিক বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

১৪) “কতক মুখ সেদিন উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।” (সূরাহ কিয়ামাহ ৭৫ : ২২-২৩) তিনি অন্য একদল লোকেদের বলেন, (3) “কক্ষনো না, তারা সেদিন তাদের প্রতিপালক থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে।” (সূরাহ মুতাফফিফীন ৮৩ : ১৫)

৬. মা’ন বিন ঈসা বলেন, আমি মালিককে বলতে শুনেছি, যারা রাসূল (স)-এর যাহাবীদের গালি দেয়, যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মধ্যে তাদের কোনো অংশ নেই। কেননা তা আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণীর ব্যক্তিদের জন্য বণ্টন করে দিয়েছেন । আল্লাহ তাআলা বলেন

১০. আল-ইনতিকা’ ফী ফার্দায়িলিস সালাঘাতিল আয়িম্মাতিল ফুকাহা’ লি ইবনু আবদুল বার্র,

১১. সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ লিয-যাহাবী, খণ্ড ৮,

১২. আল-ইনতিকা’ ফী ফাদায়িলিস সালাসাতিল আয়িম্মাতিল ফুকাহা’ লি ইবনু আবদুল বার্র,

১৩. হিলইয়া’তুল আওলিয়া’ লি আবী নুআয়ম আল-আসবাহী, খণ্ড ৬,

১৪. আল-ইনতিকা’ ফী ফার্দায়িলিস সালাঘাতিল আয়িম্মাতিল ফুকাহা’ লি ইবনু আবদুল বার্র,

“(আর এ সম্পদ) সে-সব দরিদ্র মুহাজিরদের জন্য যাদেরকে তাদের বাড়িঘর ও সম্পত্তি-সম্পদ থেকে উৎখাত করা হয়েছে।” (সূরাহ হাশর ৫৯ : ৮)  “(আর এ সম্পদ তাদের জন্যও) যারা মুহাজিরদের আসার আগে থেকেই (মাদীনাহ) নগরীর বাসিন্দা ছিল আর ঈমান গ্রহণ করেছে।” (সুরাহ হাশর ৫৯ : ৯)

“(এ সম্পদ তাদের জন্যও) যারা অগ্রবর্তীদের পরে (ইসলামের ছায়াতলে) এসেছে। তারা বলে-‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আর আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করো, যারা ঈমানের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছে।” (সূরাহ হাশর ৫৯ : ১০) আর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ উক্ত তিন শ্রেণীর জন্য প্রযোজ্য ।

৭. জা’ফার বিন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমরা মালিক বিন আনাসের মজলিসে ছিলাম। এ সময় এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, হে আৰু আবদুল্লাহ। রহমান (আল্লাহ) তো আরশে সমুন্নত। । তিনি কীভাবে সমুন্নত? তার প্রশ্নে ইমাম মালিক এতটাই রাগান্বিত হলেন যে, আর কখনো এমন রাগান্বিত হননি। তিনি মাটির দিকে চোখ করলেন এবং তাঁর হাতে থাকা একটি ডাল দিয়ে মাটিতে আঁচড় কাটতে লাগলেন। রাগে তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝরতে লাগল। কিছুক্ষণ পর তিনি ডালটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মাথা তুললেন এবং বললেন,

“তাঁর সমুন্নত হওয়ার ধরন অবোধগম্য, তবে তাঁর সমুন্নত হওয়া অজ্ঞাত নয়, এ বিষয়ে ঈমান রাখা ওয়াজিব এবং এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন উত্থাপন করা বিদআত।’ আমার ধারণা তুমি একজন বিদআতী। তারপর তিনি তাকে বের করে দিতে আদেশ দিলেন। ফলে তাকে বের করে দেওয়া হলো।

ইমাম মালিক-সম্পর্কে আলিমদের প্রশংসা

১. সুফইয়ান বিন উইয়ায়নাহ বলেন : ইমাম মালিক-এর সামনে আমরা কী? আমরা মালিক-এর আষারগুলি অনুসরণ করতাম এবং শায়খদের প্রতি লক্ষ করতাম, যদি মালিক তার থেকে লিপিবদ্ধ করতেন, আমরাও তার থেকে লিপিবদ্ধ করতাম।

২. শাফিঈ বলেন, যদি মালিক ও ইবনু উইয়ায়নাহ না থাকতেন, তাহলে হিজায-এর জ্ঞান হারিয়ে যেত। ২০ রাবী’ বিন সুলায়মান বলেন, আমি শাফিঈকে বলতে শুনেছি, যদি তোমার কাছে মালিক থেকে কোনো হাদীষ আসে, তাহলে তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। আমি শাফিঈকে বলতে শুনেছি, যদি তোমার কাছে কোনো খবর আসে, তা হলে মালিককেই প্রাধান্য দিবে।

শাফিঈ বলেন, মালিক বিন আনাস আমার শিক্ষক, আমি তার থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছি।

৩. বুখারী বলেন, মালিক বিন আনাস-এর উপনাম হলো, আবু আবদুল্লাহ। তিনি ইমাম ছিলেন। তার কাছ থেকে ইয়াইইয়া বিন সাঈদ আনসারী হাদীস বর্ণনা করেছেন।

বুখারী বলেন, ইমাম মালিক, নাফি’ হতে ইবনু উমার-এর সানাদে যে-সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন, তার সবগুলোই সর্বাধিক সহীহ।

৪. আবদুর রহমান বিন মাহদী বলেন, হাদীয়ের শুদ্ধতার ক্ষেত্রে ইমাম মালিক-এর উপর আমি কাউকে প্রাধান্য দিইনি ।

৫. ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-কাস্তান বলেন : মালিক বিন আনাস হাদীসের ক্ষেত্রে ইমাম

৬. আবূ দাউদ সুলায়মান ইবনুল আশআস আস-সিজিসতানী বলেন : আল্লাহ মালিক-এর প্রতি রহম করুন, তিনি ইমাম ছিলেন। আল্লাহ ইমাম শাফিঈ-এর প্রতি রহম করুন, তিনি ইমাম ছিলেন । আল্লাহ ইমাম আবূ হানীফাহ-এর প্রতি রহম করুন, তিনি ইমাম ছিলেন।

৭. আসাদ বিন ফারাত বলেন, যদি তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের ইচ্ছা করো, তাহলে তোমার জন্য আবশ্যক হলো, মালিক বিন আনাস।

৮. ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, মালিক বিন আনাস সৃষ্টির উপর আল্লাহর একটি হুজ্জাতস্বরূপ ।

ছাত্রগণ :

ইমাম মালিক থেকে অনেকেই শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ হলো :

১. মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফিঈ

২. ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-কাৰ্ত্তান

৩. আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক

৪. আবদুর রহমান বিন মাহদী

৫. আবদুর রহমান বিন কাসিম

৬. আশহাব বিন আবদুল আযীয

৭. ওয়াকী’ ইবনুল জারাহ

৮. আবদুল্লাহ বিন ওয়াহব

মজলিস :

১. মুহাম্মাদ বিন উমার ওয়াকিদী বলেন : ইমাম মালিক তার আসনে বসতেন। সমস্ত বাড়ির মেঝেতে গালিচা বিছিয়ে দিতেন, যাতে আগত কুরায়শ ও আনসার সকলেই বসতে পারে ।

তার মজলিস ছিল অত্যন্ত শান্তশিষ্ট ও গাম্ভীর্যপূর্ণ। তিনি অত্যন্ত গম্ভীর ও অভিজাত ছিলেন। মজলিসে কোনো প্রকার বেহুদা ও অপ্রয়োজনীয় কিছু হতো না। অপরিচিত কেউ দুএকটা হাদীস জিজ্ঞাসা করত। কখনও কখনও কাউকে পড়তে বলতেন। তার একজন লেখক ছিল, যে তার কিতাবসমূহ লিখত। তার নাম ছিল হাবীব। সে সবাইকে পড়ে শুনাত। তার গাম্ভীর্য ও সম্মানের কারণে কেউ তার কাছাকাছি বসত না, তার কিতাবের দিকে দৃষ্টি দিত না, জিজ্ঞাসা করত না। হাবীব পড়ে শুনাতে গিয়ে ভুল করলে তা শুধরে দিতেন। তবে এ ধরনের ভুল খুব কমই হতো ।

২. কুতায়বাহ বিন সাঈদ বলেন : আমরা মালিকের কাছে গেলে তিনি পরিপাটি হয়ে সুরমা ও আতর লাগিয়ে আমাদের কাছে আসতেন। খুব ভালো পোশাক পড়তেন। তারপর মজলিস শুরু করতেন। তিনি পাখা আনতে বলতেন, আর সবাইকে একটা একটা করে পাখা দিতেন।

৩. ইবনু আবী উওয়াস বলেন : ইমাম মালিক বিন আনাস যখন হাদীস বর্ণনা করার ইচ্ছা করতেন তখন উর্দূ করতেন, দাড়ি পরিপাটি করতেন এবং গাম্ভীর্য ও ভক্তি সহকারে আসনে বসতেন। অতঃপর হাদীস বর্ণনা করতেন।

তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড

তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড

Reviews (0)

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “তাহকীক মুওয়াত্তা মালিক ২য় খণ্ড”

Your email address will not be published.

Shopping cart
Facebook Twitter Instagram YouTube WhatsApp WhatsApp

Sign in

No account yet?