সকল প্রশংসা সর্ব শক্তিমান মহান আল্লাহ তা’আলার। সালাত ও সালাম বর্ষিত হােক আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীগণের উপর।
“আল হাযীমান্নাফসিয়্যাহ ইনদাল মুসলিমীন” বা মুসলিম উম্মাহর মানসিক | বিপর্যয় বইখানি প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, আল-মুনতাদা আল ইসলামীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ড. আব্দুল্লাহ খাতির (রহ.) এর দ্বিতীয় পুস্তক। মুলতঃ এটি একটি ভাষন, যা তিনি বৃটেনে প্রদান করেছিলেন।
অতীতে বহু যুগ ধরে লক্ষ্য করা গেছে যে, মুসলিম জাতি চিন্তা-চেতনায়, শক্তিসামর্থে ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ে এ বিপর্যয় আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই এ বিষয়টির আলােচনা খুবই গুরুত্বের দাবীদার।
আজকের মুসলিম জাতি প্রকাশ্যেই তাদের ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, তারা মুনাফিকীর জীবন বেছে নিয়েছে। তারা সত্যিকার মুসলিমদের সাথেও নয়, আবার পুরাপুরি ইসলামের শত্রুদের সাথেও নয়, বরং এর মাঝামাঝি একটা পথ ইখতিয়ার করেছে, যার চিন্তা-চেতনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য একেবারে অস্পষ্ট। তারা আজ দ্বীন ইসলামকে পূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের | চেষ্টা করেও কোন অগ্রগতি বা সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিণতিতে শুধু | পিছিয়ে পড়েছে। এটাই হল প্রকৃত বিপর্যয়। যে ব্যক্তি নিজের আদর্শকে আঁকড়ে ধরেছে, হােক তা সামাজিক আবহাওয়ার প্রতিকূল, তার আদর্শের পতাকা শত প্রতিবন্ধকতায়ও সমুন্নত রেখেছে। সেই পারে নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে | কুরবানী করতে, ত্যাগ স্বীকার করতে।
আর যে ব্যক্তি নিজের আদর্শে অটল নয়, সামাজিক আবহাওয়ায় যার আদর্শ | বারবার বদলে যায় সে কিছুই করতে পারেনা। পারে শুধু নিজের সাথে প্রতারণা। করতে। এটাও মানসিক বিপর্যয়। মহান রাব্বল আলামীন যেন এদের সম্পর্কেই বলেছেনঃ
এমন কিছু মানুষ আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করেছি, অথচ তারা বিশ্বাস স্থাপন করেনি। তারা আল্লাহ ও ঈমানদারদের ধােকা দিতে চায়। তারা শুধু নিজেদেরই প্রতারিত করে। কিন্তু তারা তা অনুধাবন করে না। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি। আল্লাহ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করে দেন। তাদের
জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। কারণ তারা মিথ্যাচারে লিপ্ত। (সুরা- আলবাকারা : | ৮-১০)।
যারা এ রকম দোটানায় ভােগে তারা কোন ভাল পন্থা বেছে নিতে সক্ষম হয় না। তাই তারা একটা বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তহীনতার জীবন যাপন করে। কারণ তাদের কাছে থাকে না সত্যের মাপকাঠি, যার মাধ্যমে সবকিছুকে সুসংগঠিত করতে পারে। আর | এটাই হচ্ছে জীবন পরিচালনায় উত্তম পন্থা নির্ধারণে প্রথম সিদ্ধান্ত। অতএব মুনাফিক, আরামপ্রিয় ও প্রতারকরা এমনভাবে কাজ করে যাতে তাদের সঠিক পরিচয় ফুটে না উঠে এবং যাতে তারা ঝামেলামুক্ত জীবন যাপন করতে পারে, যদিও তাতে ক্ষতিপূরণ | ও যথেষ্ট মূল্য দিতে হােক না কেন। তাদের মান সম্মান ও মানবাধিকার ছিনিয়ে নেয়া | হােক না কেন, তারপরও তারা ভােগ বিলাসিতায় ব্যস্ত থাকতে চায়। অতএব কোথায় তাদের জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত ও উত্তম পন্থা? ফলে তারা কখনাে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হতে পারে না। পারে না দৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে কিংবা প্রস্তুতি নিতে। আল্লাহ রাব্বল আলামীন বলেন ।
“আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত তাহলে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করত। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়। তাই তাদের নিবৃত্ত রাখলেন এবং বলা হল, বসা থাকা লােকদের সাথে তােমরা বসে থাক। (সূরা তাওবা : ৪৬)
তাদের আর একটি খাছলত হল, তারা ইসলামের নামে নিজেদের নামকরণ করতে চায়। তাদের পরিচয় বহন করে নিজেদের মুসলিম হিসাবে জাহির করে। আর এগুলাে করে নিজেদের স্বার্থের জন্য। একই সময় তারা মনের পাশবিক চাহিদা মিটায় এবং জুলুম-অত্যাচার ও দুর্নীতিগ্রস্ত জীবন পদ্ধতি অবলম্বন করে। ফলে তারা কোন সংকট সংঘর্ষের মুখােমুখী হবার সাহস ও সামর্থ হারিয়ে ফেলে। তখন তারা সঠিক পথ গ্রহণ করবে নাকি ভ্রান্ত পথ, এ নিয়ে মতদ্বৈততায় ভােগে। এটাও একটি মানসিক বিপর্যয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“যখন তারা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, আর যখন তারা নিভৃতে তাদের দলপতি ও দুষ্ট নেতাদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তােমাদের সাথেই আছি, আমরা তাে শুধু ঠাট্টা বিদ্রুপ ও প্রহসন করে থাকি।” (সূরা বাকারা : ২:১৪ আয়াত)।
আসলে এ ধরণের লােকেরা সবচেয়ে বেশী মানসিক বিপর্যয়ে ভােগে। আর এরাই যে কোন বিপদ-সংকটের মুখােমুখী হতে ভয় পায়। তারা আরও ভয় পায় সেগুলাে অবলােকন করতে, স্বীকার করতে, ভূমিকা নিতে এবং সুসংগঠিত করতে। এটি হচ্ছে আর একটি মানসিক বিপর্যয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
“আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর তাহলে তারা বলবে, আমরা তাে শুধু আলাপআলােচনা ও হাসি তামাশা করছিলাম। তুমি বলে দাও ? তাহলে কি তােমরা আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি হাসি তামাশা করছ? (সূরা তাওবা : ৬৫)।
লােকদের মাঝে সবচেয়ে বেশী মানসিক বিপর্যস্ত ঐ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্য ছাড়া | কাজ করে, কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পিত লক্ষ্য ছাড়া চেষ্টা করে। তবে ঐ ব্যাপক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে কোন শিক্ষনীয় নেই যা পরিশ্রমী ও অপরিশ্রমী এবং মুজাহিদ ও অমুজাহিদরা সমানভাবে করে থাকে। বরং ঐসব লক্ষ্য ও উদ্দেশের মাধ্যমে শিক্ষনীয় | রয়েছে যা এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অতএব যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এবং যারা বসে থাকে তাদের সকলের যদিও উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি | অর্জন ও তাঁর ইবাদত করা, কিন্তু মুজাহিদগণ তাদের জিহাদের মাধ্যমে প্রমাণ করেন | যে, দীন সম্পূর্ভভাবে আল্লাহর, যাতে কোন ফিতনা থাকবে না। ঐ ব্যক্তির চেয়ে | অধিক বিপর্যয় আর হতে পারে না যে ব্যক্তি কাজ করে ও জিহাদ করে- কিন্তু তা | এজন্য নয় যে, দীন সম্পূর্ণই আল্লাহর জন্য হােক, বরং দীনকে ধ্বংস করার জন্য এবং ফিতনা সৃষ্টির জন্য। আর এটাই সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে নস্যাৎ করে দেয়, যার কারণে সে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনা এবং উৎকৃষ্ট পন্থা নির্ণয় করতে সক্ষম নয়। এবং সে সংকটের মুখােমুখি হতে অক্ষম। অতএব এমন ব্যক্তির চেয়ে কঠিন মানসিক বিপর্যয়পূর্ণ আর কাউকে পাবেনা।
আজকের এ সময়ে এ ধরণের মানসিক বিপর্যয়ের শিকার মুসলিম উম্মাহ। আর | এ সকল বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার দিক নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন ড. আব্দুল্লাহ খাতির আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাকে তার এ মহান প্রচেষ্টার পুরস্কার | দান করুন। আমাদের সকলকে এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন।
Reviews
There are no reviews yet.