দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে
(অমুসলিম ও মুসলিম দেশে)
দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
ড. মুহাম্মদ মুয্যাম্মিল আলী
সম্পাদনায়
ড. আ. ন. ম. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
লেখক পরিচিতি
ড. মুহাম্মদ মুয্যাম্মিল আলী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার আল-হাদীস এণ্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি আনুমানিক ১লা মার্চ ১৯৬৩ সনে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মারহুম মো. আব্দুল জলীল ও মাতার নাম মারহুমা ফুলজান বিবি। তাঁর পিতামহ ছিলেন ভারত উপমহাদেশের বিশিষ্ট হাদীসবেত্তা মাওলানা নজীর হুসেন দেহলভী ( বিশিষ্ট ছাত্র মারহুম মাওলানা মুহাম্মদ তাহির সিলহেটী। তিনি নিজ দাদা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাঁশবাড়ি তাহিরিয়্যাহ মাদ্রাসায় দাখিল ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর ঐতিহ্যবাহী গাছবাড়ি জামি‘উল ‘উলূম আলীয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাখিল, আলিম ও ফাযিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সনে ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা-ই-আলীয়া, ঢাকা থেকে কামিল মুহাদ্দিস পরীক্ষায় ১ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৯ সনে অহীর অবতরণ স্থানে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা থেকে ইসলামী শরী‘আর উপর লিসান্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯০ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ থেকে এম. এ পরীক্ষায় ১ম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
চাকুরী জীবনে তিনি সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর জেদ্দাস্থ হাইয়াতুল ইগাছাতিল ইসলামিয়্যাহ-এর অধীনে কিছুদিন দা’য়ী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ সনে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষা শিক্ষা ইনষ্টিটিউটে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সনে বর্তমান কর্মস্থলে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। উক্ত বিভাগের অধীনে ‘বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে শির্ক ও বিদ’আত: একটি সমীক্ষা’ শিরোনামে আরবী ভাষায় একটি অভিসন্ধর্ভ রচনা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। ইতোমধ্যে তাঁর বেশকিছু গবেষণামূলক প্রবন্ধ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি জার্ণালসহ অন্যান্য মাসিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখাসমূহ মৌলিক ও গবেষণামূলক হওয়ায় জ্ঞানপিপাসু পাঠক মহলে তাঁর লেখার প্রতি বেশ আগ্রহ ও চাহিদা রয়েছে।
দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
প্রকাশকের কথা
মানব জাতির জন্য আল্লাহ তা’আলার মনোনীত দীন হচ্ছে ইসলাম। এ দীন প্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে কোনো বিতর্ক না করে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের মধ্যে তা প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে তিনি আমাদের আদেশ করেছেন। এ আদেশ পালনের জন্য তিনি প্রণয়ন করেছেন তাঁর উপাসনার বিধান। এ বিধানের সম্পর্ক রয়েছে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সরকারের সাথে। তারা যদি তাদের সাথে সম্পর্কিত উপাসনাদি যথাসাধ্য পালন করে, তা হলে তাদের মধ্যে এ দীন প্রতিষ্ঠিত হবে। এ দীন যাতে সবাই তাদের ব্যক্তি জীবনে গ্রহণ ও পালন করতে পারে, সে জন্য হিকমাত, সুন্দর উপদেশ ও উত্তম বিতর্কের মাধ্যমে জনগণকে সে দীনের পথে আহ্বান করার ব্যাপারে আমাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তা করতে যেয়ে সাধারণ জনগণ বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বিরোধিতা বা জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হলে ধৈর্যের চরম পরিচয় দিতে বলা হয়েছে। দা‘ওয়াতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পন্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এভাবে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যেতে নির্দেশ করা হয়েছে। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পারলে প্রয়োজনে কোথাও হিজরত করতেও নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহর সুন্নাত হচ্ছে, দীনকে কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার কাজে নিয়োজিত হওয়ার পূর্বে সে দেশের আমজনতার পাশাপাশি সেখানকার ছাত্রজনতা, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, বিচারক, আইনবিদ, আমলা, সামরিক বাহিনী ও ব্যবসায়ীসহ সকল পেশা ও শ্রেণীর অধিকাংশ জনগণের ব্যক্তি পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠাকারী প্রচুর পরিমাণ লোক তৈরী করতে হবে। ব্যক্তিদের পরিমাণ বিচার করেই ধীরে ধীরে সমাজ ও রাষ্ট্রে তা প্রতিষ্ঠার কাজে পরিকল্পনা মোতাবেক ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে। কোনো প্রকার তড়িঘড়ি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বর্তমানে যারা দীন প্রতিষ্ঠার নামে রাজনীতি করেন তাদের চিন্তা ও বাস্তব কর্ম দেখে মনে হয় যে, ‘দীন প্রতিষ্ঠা কর’ বলে আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদেরকে তাঁর সুন্নাত ছাড়াই তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করার আদেশ করেছেন। আর সে জন্যই তারা ব্যক্তি পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠাকারী প্রচুর পরিমাণ লোক তৈরী না করেই শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করে দীনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করার কাজে নিয়োজিত হয়েছেন! ব্যক্তি তৈরীর চেয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জনই তাদের কাছে সকল ফরযের বড় ফরয হয়ে দাঁড়িয়েছে! আর এ ফরয্ পালন করতে যেয়ে তারা ক্ষমতাসীনদের দমন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এর মুকাবেলায় সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় না দিয়ে হরতাল ও অবরোধের মাধ্যমে নিজের ও অন্যের সম্পদ ও জীবন ধ্বংসের ক্ষেত্র তৈরী করছেন। অনেকে আবার আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আত্মঘাতি বোমা নিয়ে বিরোধীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বিরোধীদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে অনেকে রাজপথে নিজের জীবনটুকুও বিলিয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রে দীন প্রতিষ্ঠার নামে দীনের কর্মীদের এ ধরনের রাজনীতি ও কর্ম করার সাথে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে দীন প্রতিষ্ঠায় রাসূলুলাহ (স)-এর কর্মপদ্ধতির কতটুকু সামঞ্জস্য রয়েছে- তা জানার ব্যাপারে দীর্ঘ দিন থেকে দেশের অসংখ্য মানুষের অন্তরে অনেক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। জনগণের এ আগ্রহের দিক বিবেচনা করেই লেখকের দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয় গ্রন্থখানা রচিত হয়েছে। তৃতীয় সংস্করণে লেখক এ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আরো বেশ কিছু তথ্যের সংযোজন করায় বইখানা অতীতের চেয়ে আরো অধিক তথ্যবহুল ও সমৃদ্ধ হয়েছে। এ জন্য সম্মানিত লেখককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এর পাশাপাশি এ দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয় বইখানা প্রকাশের কাজে তাওফীক প্রদান করার জন্য আমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। সাথে সাথে কামনা করছি, তিনি যেন এ বইখানা কবূল ও মঞ্জুর করেন এবং জনগণকে তা পাঠ করে সত্য অনুধাবন ও গ্রহণ করার তৌফিক দেন। আর বইখানাকে লেখক, প্রকাশক, বাজারজাতকারী, পাঠক ও অন্যান্যদের পরকালীন মুক্তির মাধ্যম করেন। আমীন!
প্রকাশক
দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
সূচীপত্র
বিষয়:
- পূর্বকথা
- প্রথম অধ্যায়: দীন ও ইকামাতে দীন
- দীন শব্দের আভিধানিক অর্থ
- ‘দীন’ শব্দের পরিভাষিক অর্থ
- আল্লাহর মনোনীত দীন বা বিধানের নাম
- মানব জাতির সূচনালগ্ন থেকেই এ দীনের সূচনা
- মানুষের জন্য এ দীন ব্যতীত অপর কোনো দীন গ্রহণযোগ্য নয়
- দীনের মৌলিক বিধিবিধান
- দীন প্রতিষ্ঠার অর্থ
- ‘দীন প্রতিষ্ঠা কর’ বলে আল্লাহ তা’আলা যাদের সম্বোদন করেছেন?
- দীন ও রাষ্ট্র উভয়ের সমষ্টির নাম ইসলাম
- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার একটি পবিত্র আমানত
- আল্লাহর শর‘য়ী ইচ্ছানুযায়ী যারা এ আমানত পাওয়ার যোগ্য
- রাসূলুল্লাহ (স)-এর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ
- দীন প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ তা’আলার প্রণীত বিধান
- ব্যক্তি গঠন আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জনের মধ্যে বড় ফরয কোনটি?
- ব্যক্তি পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ প্রদত্ত কর্মসূচী
- প্রথম কর্মসূচী: বিশুদ্ধ ঈমান গঠন
- দ্বিতীয় কর্মসূচী: রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সুন্নাত অনুসারে আমল করা
- রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর প্রতিনিধিদের বৈশিষ্ট্য
- তৃতীয় কর্মসূচী: পরস্পরকে দীনের প্রতি দা‘ওয়াত প্রদান করা
- সাধ্যানুযায়ী জনগণকে দা’ওয়াত প্রদান করা
- দা’ওয়াত প্রদানে স্বজনদের অগ্রাধিকার প্রদান করা
- দাওয়াতের অন্যতম উদ্দেশ্য জনগণকে সুসংবাদ দান ও সতর্ক করা।
- মানুষ কর্তৃক দীন গ্রহণে আল্লাহর শর’য়ী ইচ্ছা
- মানুষের ঈমান ও আমলের ব্যাপারে আল্লাহর কাওনী ইচ্ছা
- মানুষের ঈমান ও আমল সম্পর্কে আল্লাহর আগাম অবগতি
- কারো ঈমান আনা বা না আনার জন্য আল্লাহর কাওনী ইচ্ছা দায়ী নয়
- আল্লাহর কাওনী ও শরয়ী ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য
- দীন গ্রহণ করার ব্যাপারে আল্লাহর সহযোগিতা
- দীন গ্রহণের ব্যাপারে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা
- অমুসলিমদের হেদায়তের জন্য দু’আ করা
- দীনের দা’ওয়াত পার্থিব যে কোনো উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হবে
- ক্ষমতাসীনদেরকে হিকমাতের সাথে দা’ওয়াত প্রদান করা
- ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় বহাল রাখার প্রস্তাব করা
- পার্শ্ববর্তী দেশের জনগণের মাঝে দীনের দা’ওয়াত প্রদান করা
- মুসলমানের পক্ষে দীন পালন কি ঐচ্ছিক?
- ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলাম
- চতুর্থ করণীয়: পরস্পরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ প্রদান করা
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক কেন?
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠায় সরকারের করণীয়
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত দীন রক্ষায় সরকারের করণীয়
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার মধ্যে পার্থক্য
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন কায়েমের প্রাথমিক পরিবেশ কখন তৈরী হবে?
- দ্বিতীয় অধ্যায়
- অমুসলিম দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠা
- দীন প্রতিষ্ঠায় আলাহর পথে জিহাদ
- যুদ্ধ নয় দা‘ওয়াতই সমাজ ও রাষ্ট্রে দীন প্রতিষ্ঠার একক উপায়
- দীন প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধের অনুমোদন না থাকার কারণ
- দীন রক্ষা ও তা কায়েমের লক্ষ্যে প্রয়োজনে হিজরত
- শান্তিপূর্ণ পন্থায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার আনুষঙ্গিক শর্তসমূহ
- প্রথম শর্ত: কর্মিদের পরিপূর্ণভাবে দীনের মধ্যে প্রবেশ করা
- দ্বিতীয় শর্ত: কর্মিদের এক নেতা ও এক জামা’আতের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হওয়া
- ইমাম বা নেতা মনোনয়নের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় কিছু গুণাবলী
- তৃতীয় শর্ত: সৎকর্মের আদেশ এবং অসৎকর্ম থেকে বারণ করা
- অন্যায় কর্ম থেকে বারণ করার স্তরসমূহ
- চতুর্থ শর্ত: কোনো শত্রুকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা
- পঞ্চম শর্ত: জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হওয়া
- দীন কায়েম ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন কায়েমের জন্য বিকল্প পন্থা অবলম্বন
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠায় শান্তিপূর্ণ গণবিপ্লব
- প্রচলিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ
- রাজনৈতিক দল গঠন
- দীন কায়েমের উদ্দেশ্যে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ
- নির্বাচনী ইশতেহার
- নির্বাচনে অংশ গ্রহণে বাধার সম্মুখীন হলে করণীয় সরকার গঠন
- দীনকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত রাখার লক্ষ্যে প্রণীত বিধান
- যে সব কারণে ইসলাম সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমোদন প্রদান করে
- প্রথম কারণ: শত্রু কর্তৃক সমর শক্তি প্রয়োগ করা
- দ্বিতীয় কারণ: শত্রু কর্তৃক চুক্তি লঙ্ঘন করা
- তৃতীয় কারণ: শত্রু কর্তৃক আগ্রাসী হামলার আশঙ্কা করা
- চতুর্থ কারণ: শত্রু কর্তৃক মুসলমানদের শত্রুদের সাহায্য করা
- পঞ্চম কারণ: দাওয়াতী কর্মে বাধা প্রদান করা
- ষষ্ঠ কারণ: অভ্যন্তরীন বিদ্রোহ দমনে যুদ্ধ করা
- গোপনে কোনো শত্রুকে হত্যা করা
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন কায়েমের পূর্বে বিরোদীদের উপর হামলা করা
- তৃতীয় অধ্যায়
- মুসলিম দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠা
- কোনো কুফ্রী কাজের জন্য কাউকে কাফির বলা যায় কি?
- পাপের কারণে কাউকে কাফির বলা খারিজীদের নীতি
- কাউকে কাফির বলার মূলনীতি
- কুফ্রী কর্মে লিপ্ত সরকার অপসারণে করণীয়
- কাফির বা কুফ্রী কর্মে লিপ্ত মুসলিম সরকার অপসারণে করণীয়
- মুসলিম দেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠায় করণীয়
- প্রথম করণীয়: নিজেদের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দীন প্রতিষ্ঠা করা
- দ্বিতীয় করণীয়: দাওয়াতী কর্ম যথারীতি চালিয়ে যাওয়া
- তৃতীয় করণীয়: এক নেতা ও এক দলের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হওয়া
- চতুর্থ করণীয়: সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে দা’ওয়াত প্রদান করা
- পঞ্চম করণীয়: দা‘ওয়াতী কাজের গতি প্রকৃতি বাড়িয়ে দেয়া একটি সতর্কীকরণ
- ষষ্ঠ করণীয়: রাজনৈতিক দল গঠন ও এর সদস্য পদ গ্রহণ করা ইসলামে রাজনীতি আছে কি?
- ইসলামী রাজনীতি বলতে কি বুঝায়?
- ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিম রাষ্ট্রপধানদের মূল পরিচয়
- ইসলামে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ প্রবর্তিত হওয়ার উদ্দেশ্য
- সাহাবা, তাবিঈ ও ইমামগণের রাজনীতি না করার কারণ
- ইসলামী দৃষ্টিতে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা গ্রহণ
- খিলাফতী শাসন বনাম রাজতান্ত্রিক শাসন
- রাজনৈতিক দল গঠনের শর‘য়ী বৈধতা
- সপ্তম করণীয়: কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন প্রদান করা
- সমর্থন প্রদত্ত দলের সরকারে শরীক হওয়া
- অনৈসলামিক দলের সরকারে শরীক হওয়ার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির কারণ
- সমর্থন প্রাপ্ত দল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে করণীয়
- অষ্টম করণীয়: সরকারের নিকট কয়েকটি আবেদন
- নবম করণীয়: নির্বাচনী ইশতেহার
- দশম করণীয়: জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠন
- ইসলামী সরকারকে সমর্থন দানে শর‘য়ী বাধ্যবাধকতা
- সংবিধান সংশোধন
- বিরোধী দল
- একাদশ করণীয়: সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হতে না পারলে করণীয়
- বর্তমানে কোথাও দীন কায়েমের ঘোষণা দেয়া যাবে কি?
- ইকামতে দীন ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা
- ইকামতে দীন: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ
- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন কায়েম না হলে করণীয়
- সরকারের অন্যায় কর্মের প্রতিবাদে করণীয়
- দীনের সাথে সম্পর্কিত কাজসমূহের প্রকার
- এ যুগে কি কখনও দীন কায়েম হবে বলে আশা করা যায়?
- নির্জন আবাস গ্রহণ
- উপসংহার
- গ্রন্থপঞ্জী
- লেখকের অন্যান্য বই
দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
পূর্বকথা:
সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য, যিনি এককভাবে তাঁর উপাসনার জন্য আমাদেরকে দীন দান করেছেন। দুরূদ ও সালাম শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু)-এর প্রতি, যিনি ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রে ও বিশ্বে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠায় আমাদের কী করণীয় রয়েছে, সে ব্যাপারে উত্তম আদর্শ রেখে গেছেন। অনুরূপভাবে দুরূদ ও সালাম রাসূল (স)-এর পরিবার পরিজন, তাঁর সাহাবী এবং যুগে যুগে যাঁরা এ দীন প্রতিষ্ঠায় রাসূল )-এর আদর্শ অনুযায়ী নিজেদের দায়িত্ব যথাসাধ্য পালন করে গেছেন। ত
মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি একাই এ জগত ও এর মধ্যকার মানুষসহ সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। এসব সৃষ্টি এবং তা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো শরীক ও সহায়ক নেই । এমনকি তা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর অনুমতি ব্যতীত কোনো ব্যাপারে কেউ কোনো কথা বলারও কেউ নেই। আমরা তাঁর সৃষ্টি হিসেবে তাঁর ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি ও স্রষ্টার সম্পর্ক রয়েছে। এ জগতে মানুষসহ তাঁর আরো যত সৃষ্টি রয়েছে, সবাইকেই তিনি তাঁর উপাসনার জন্য আদেশ ও নিষেধ সম্বলিত দীন বা বিধান দিয়েছেন। মানুষ ব্যতীত অন্যান্য সকল সৃষ্টিই তাঁর সে আদেশ ও নিষেধ সম্বলিত দীন ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পালন করে চলেছে। সে কারণেই চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্রসহ সব কিছুই সৃষ্টির পর থেকে তাদের প্রতি আল্লাহর দেয়া নির্দেশ পালন করে চলেছে। মানুষকে তিনি তাঁর আদেশ ও নিষেধ সম্বলিত যে দীন দিয়েছেন, তা গ্রহণ ও পালন করার ব্যাপারে তিনি তাদেরকে সৃষ্টিগতভাবে স্বাধীনতা দিয়েছেন। তাদেরকে এ স্বাধীনতা দিয়ে থাকলেও তারা তা গ্রহণ ও পালন করুক— এটা তাঁর শর‘য়ী ইচ্ছা ও নির্দেশ। তারা যাতে তাদের বুদ্ধি ও বিবেককে কাজে লাগিয়ে তাঁর শর‘য়ী ইচ্ছা ও নির্দেশ গ্রহণ ও পালন করতে পারে, সে জন্য তিনি তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদান করেছেন। মানুষ যাতে অজ্ঞতা ও মুর্খতার কারণে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তাঁর দীন গ্রহণ করা থেকে বিমূখ না হয়, বা কখনও দীনের পথ থেকে বিচ্যুত হলেও যাতে পুনরায় তারা সে দীনে ফিরে আসতে পারে- সে জন্য তিনি তাদেরই মধ্য থেকে যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন বহু নাবী ও রাসূল। তাঁদের সাথে দিয়েছেন হেদায়তের অমীয় বাণী। তাঁদেরকে দেয়া সে সব বাণীর সম্মিলিত দা’ওয়াত হচ্ছে: তোমরা আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা কর, তা করতে যেয়ে তোমরা কোনো প্রকার মতভেদ বা বিচ্ছিন্নতা করো না ।
দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
আমরা মুসলিম আর অমুসলিম যে দেশেই বাস করি না কেন— এ দীন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত । এখন প্রশ্ন হলো:
এ দীনের অর্থ কী?
ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা প্রতিষ্ঠা বলতে কী বুঝায়?
এ জন্য আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে কী ব্যবস্থাপনা প্রদান করেছেন? কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং কিভাবে রক্ষা করা যায়?
এ জন্য ব্যক্তি, সমাজ ও সরকারের কী করণীয় রয়েছে?
সশস্ত্র জিহাদ কি কোনো রাষ্ট্রে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য করতে হবে, না শান্তিপূর্ণ পন্থায় কোনো রাষ্ট্রে তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তা রক্ষার জন্য করতে হবে?
কোনো রাষ্ট্রে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ দীনদার লোক তৈরী করে তাদের মাধ্যমে গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় ইসলামী সমাজ তৈরী করার জন্য সর্বাগ্রে প্রচেষ্টা চালানো ফর্য, না অল্প-বিস্তর লোক তৈরী করেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা সকল ফরযের বড় ফরয?
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্পণে আল্লাহ তা’আলার শরয়ী ইচ্ছা কী? তাঁর কাওনী ইচ্ছায় যারা তা লাভ করে থাকেন, সেটা তাদের জন্য পুরস্কার না পরীক্ষা?
অমুসলিম ও মুসলিম রাষ্ট্রে তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বশর্ত কী?
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তা প্রতিষ্ঠার পূর্বে এ জন্য ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে কোনো জঙ্গী (সশস্ত্র/ জিহাদী/ কিতাল পর্যায়ের) তৎপরতা প্রদর্শন করা যাবে কি?
যারা তা প্রদর্শন করেন বা করার পক্ষে মত পোষণ করেন, তারা কি সত্যের উপরে রয়েছেন?
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুদ্ধসমূহ কি দীন প্রতিষ্ঠার জন্য ছিল, না শান্তিপূর্ণ পন্থায় রাষ্ট্রে দীন প্রতিষ্ঠার পর তা রক্ষার জন্য ছিল?
এ সবই হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা। সংক্ষিপ্তাকারে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এ সব জিজ্ঞাসার সঠিক ও সুন্দর সমাধান প্রদানের লক্ষ্যেই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আলোচ্য বিষয়কে মোট তিনটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহর কাছে দু’আ করি তিনি যেন এ বিষয়টি সুন্দর ও সঠিকভাবে উপস্থাপনের তাওফীক দান করেন। আমীন!
লেখক

দীন প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের করণীয়
Reviews
There are no reviews yet.