বয়স বৃদ্ধির উপায়

৳ 85

বয়স বৃদ্ধির উপায় লেখক: ডক্টর শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আন-না‘য়ীম
অনুবাদ : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল মাদানী
সম্পাদনা : উমার ফারুক আব্দুল্লাহ

প্রকাশনায় : দারুল কারার পাবলিকেশন্স

পরিবেশনায় : তাওহীদ পাবলিকেশন্স

Description

বয়স বৃদ্ধির উপায়

মূল : ডক্টর শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আন-না‘য়ীম

অনুবাদ : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী

প্রকাশনায় : দারুল কারার পাবলিকেশন্স

পরিবেশনায় : তাওহীদ পাবলিকেশন্স

তৃতীয় সংস্করণ : এপ্রিল ২০২১

প্রচ্ছদ, অঙ্গসজ্জা ও মুদ্রণ : গ্রাফিকসেন্স

 

বয়স বৃদ্ধির উপায়

বয়স বৃদ্ধির উপায়


প্রকাশকের কথা

বয়স বৃদ্ধির উপায়

যাবতীয় গুণগান, প্রশংসা ও সিজদায়ে শুকর মহান আলস্নাহর জন্য, যিনি তাঁর অপার অনুগ্রহপাশে আবদ্ধ করে ‘‘বয়স বৃদ্ধির উপায়’’ নামক অতি মূল্যবান ও গুরম্নত্বপূর্ণ বইটি প্রকাশের তাওফীক প্রদান করলেন। ফালিলস্নাহিল হামদ।

দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক মানবতার মুক্তির দূত, নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মাদের উপর।

শ্রদ্ধেয় উসত্মাজ শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী নিজ অনূদিত ‘‘বয়স বৃদ্ধির উপায়’’ বইটি দারম্নল কারার পাবলিকেশন্স হতে প্রকাশ করার অনুমতি প্রদান করায় তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অতঃপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা বিভিন্নভাবে বইটি প্রকাশে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান করেছেন তাদেরও।

যথাসাধ্য চেষ্টার পরও মুদ্রণত্রম্নটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। সম্মানিত পাঠক সমীপে আবেদন, আমাদেরকে তা অবহিত করবেন; আমরা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের উদ্দ্যোগ নেব ইনশাআলস্নাহ।

বিনীত

প্রকাশক

বয়স বৃদ্ধির উপায়

সূচীপত্র

অনুবাদকের আবেদন
অভিমত ১০
ভূমিকা ১৩
প্রথম অধ্যায় ১৫
বিষয়ের গুরম্নত্ব ও তাৎপর্য : ১৫
একটি বড় সমস্যা ১৬
বয়স বাড়ার মর্মার্থ ১৭
বয়স বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করা জায়েজ আছে কি? ১৯
দ্বিতীয় অধ্যায় ২২
বয়স বৃদ্ধির আমলসমূহ : ২২
প্রথম পরিচ্ছেদ : ২২
উত্তম চরিত্রের দ্বারা বয়স বৃদ্ধি

[এতে ৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে]

২২
প্রথম অনুচ্ছেদ : ২৩
আত্মীয়তা সম্পর্ক মজবুত রাখা ২৩
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ : ২৫
সৎ ও উত্তম চরিত্র ২৫
তৃতীয় অনুচ্ছেদ : ২৭
পড়শী ও প্রতিবেশীর প্রতি ইহসান ২৭
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ২৯
অধিক সওয়াবের আমল দ্বারা বয়স বৃদ্ধিকরণ ২৯
প্রথম পন্থা ৩০
অধিক সওয়াবের আমলসমূহের প্রতি অনুরাগী হওয়া  [১০টি অনুচ্ছেদ] ৩০
প্রথম অনুচ্ছেদ : সলাত ৩০
১. হারামাইন শারীফাইনে বেশি বেশি সলাত আদায় করা ৩০
২. মসজিদে জামাতের সাথে সলাত আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া ৩২
৩. বাড়িতে নফল সলাত আদায় করা ৩৪
৪. জুমার সলাতের কিছু আদব অনুসরণ করা ৩৬
৫. চাশতের সলাতের সংরÿণ ৩৭
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ : হজ্ব ও উমরা ৪০
১. সম্ভবপর নিজের মাল দ্বারা প্রতি বছর কিছু মানুষকে হজ্ব পালন করান ৪০
২. ইশরাকের সলাত ৪২
৩. বিভিন্ন মসজিদের আলোচনা ও শিÿণীয় ক্লাসগুলোতে উপস্থিত হওয়া ৪৩
৪. রমজান মাসে উমরা পালন করা ৪৪
৫. মসজিদে ফরজ সলাত সমূহ আদায় করা ৪৬
৬. কুবা মসজিদে সলাত আদায় করা ৪৮
তৃতীয় অনুচ্ছেদ : ৫০
মুয়াজ্জিন হন অথবা মুয়াজ্জিন যা বলে তার প্রতিধ্বনি করম্নন ৫০
চতুর্থ অনুচ্ছেদ : সিয়াম (রোজা) ৫৫
১. নির্দিষ্ট দিনের রোজা ৫৫
২. রোজাদারদের ইফতারি করানো ৫৮
পঞ্চম অনুচ্ছেদ : ৫৯
লাইলাতুল কদরের কিয়াম ৫৯
ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ : জিহাদ ফী সাবীলিলস্নাহ ৬১
সপ্তম অনুচ্ছেদ : ৬৩
যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের সৎ আমল ৬৩
এ দশ দিনে যে সকল কার্যাদি করা মুসত্মাহাব ৬৫
অষ্টম অনুচ্ছেদ : ৬৭
কুরআন করীমের কিছু সূরা বারবার পাঠ করা ৬৭
নবম অনুচ্ছেদ : অধিক সওয়াবের যিকির ৭১
প্রথম প্রকার : অধিক সওয়াবের তাসবীহ্ ৭১
দ্বিতীয় প্রকার : অধিক সওয়াবের   ইসিত্মগফার (ÿমা চাওয়া) ৭৫
দশম অনুচ্ছেদ : মানুষের প্রয়োজন মিটানো ৭৯
তৃতীয় পরিচ্ছেদ : দ্বিতীয় পন্থা ৮৮
মৃত্যুর পরে যে সকল আমলের সওয়াব জারি থাকে তা দ্বারা বয়স বৃদ্ধিকরণ [৪টি অনুচ্ছেদ রয়েছে] ৮৮
প্রথম অনুচ্ছেদ : প্রহরী অবস্থায় মৃত্যু ৯০
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ : সদকা জারিয়া তথা প্রবহমান দান-খয়রাত ৯৩
তৃতীয় পনুচ্ছেদ : সৎ সমত্মান তরবিয়াত (প্রতিপালন) করা ৯৮
চতুর্থ অনুচ্ছেদ : মানুষকে জ্ঞান দান করা ১০১
১. জ্ঞানের প্রচার-প্রসার ও বই-পুসত্মক প্রনয়ণ ১০১
২.আলস্নাহ তা‘আলার দিকে আহবান ১০২
চতুর্থ পরিচ্ছেদ : ১০৬
সময়কে কাজে লাগিয়ে বয়স বৃদ্ধিকরণ ১০৬
সময়কে কাজে লাগানোর গুরম্নত্ব ১০৬
তওবার জন্য দ্রম্নত অগ্রসর হন ১১১
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের তওবা ১১২
আপনার জীবনের বৈধ কার্যাদিকে মূল্যায়ন করম্নন ১১৪
তৃতীয় অধ্যায় ১১৬
আপনার বর্ধিত বয়সকে হেফাজত করার উপায় ১১৬
প্রথমত : নেকি ধ্বংসকারী কার্যাদি থেকে সাবধান ১১৭
দ্বিতীয়ত : অহঙ্কার ও বড়াই হতে সাবধান ১১৯
তৃতীয়ত : হক্কুল ‘ইবাদ তথা মানুষের হকে জুলুম করা থেকে সাবধান ১২৫
চতুর্থত : প্রবহমান পাপ থেকে সাবধান ১২৭
মূল কথা ১২৯
উপসংহার ১৩০
এ বইটি ১৩২

 

বয়স বৃদ্ধির উপায়

অভিমত

ড. সালেহ সাদলান

[মূল বই হতে অনূদিত]

 

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.), তাঁর পরিবার ও সকল সাহাবাগণের প্রতি। অতঃপর লেখক মহোদয় ‘‘বয়স বৃদ্ধির উপায়’’ নামের বইটি আদি-অন্ত আমার প্রতি পেশ করেন। বইটিতে যা পেয়েছি তা হলো :

  1. ৩টি অধ্যায় ও সারসংক্ষক্ষপ এবং প্রতিটি অধ্যায়ে একাধিক পরিচ্ছেদ।
  2. বইটি তার বিষয়বস্তুতে উপকারী ও লাভজনক সমষ্টির সমাহার।
  3. বইটিতে উলেস্নখিত সকল দলিল হতে অনেক সওয়াবের প্রমাণ ও লেখক যে সমস্ত সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন, তার প্রতি পূর্বে কেউ পাঠক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি। তিনি মানুষের সাধারণ বয়স ও উৎপাদনীয় বয়সের মাঝে তুলনা করেছেন। মানুষ যখন ঐ সকল হাদীসের সওয়বের আশায় আমল করবে এবং তার জীবনকে সেগুলোর প্রতি অভ্যস্ত করাবে তখন তার বয়স দুই পন্থায় বৃদ্ধি পাবে :

(ক) প্রথম পন্থা : প্রকৃত বয়স বৃদ্ধি।

(খ) সৎ আমলসমূহ ও বেশি নেকির কার্যাদি দ্বারা উৎপাদনীয় বয়সের বৃদ্ধি।

এসব সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ম দৃষ্টি আকর্ষণ যা এই বইটির পাঠকের জন্য উচিত বিচক্ষণতার সঙ্গে বুঝা এবং তার মূল্যায়ন করা।

  1. বইটির বিষয়বস্তু সর্বশ্রেণীর মানুষের জন্য প্রয়োজন : বিদ্বান, ছাত্র-ছাত্রীর, তরুণ-তরুণী, প্রৌঢ়-বৃদ্ধ ও নারী-পুরুষ সবার।
  2. লেখক যে-সকল ফযিলতের আমল উলেস্নখ করেছেন তা অতি সহজসাধ্য। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন দু’টি জিনিসের যা করতে অনেক মানুষই অপারগ।

(এক) সৎ নিয়ত

(দুই) এ সকল সওয়াবের চিমত্মা-ভাবনা করা। আর তা হচ্ছে আমাদের চিমত্মা করা যে, কিভাবে অল্প সময়ে এসব সওয়াব অর্জন করা যায় যা, বয়সকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়।

পরিশেষে আল্লাহর নিকট আশা করি, এ বইটি দ্বারা লেখক, পাঠকসহ যাঁরা এর প্রচার ও প্রসারের কাজে অংশ গ্রহণ করবেন তাঁরা সকলে উপকৃত হয়। আবারো দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.), তাঁর পরিবার ও সকল সাহাবাগণের প্রতি।

ড. সালেহ ইবনে গানেম আস-সাদলান

রিয়াদ-ইমাম ইবনে সাউদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, শরিয়া বিভাগ।

শুক্রবার ০১/০১/১৪১৫ হি.

ভূমিকা

বয়স বৃদ্ধির উপায় বইটি সংক্ষিপ্ত আকারে বেশিরভাগ সৎ আমলসমূহের সমাহার, যার সওয়াব আপনার বর্ধিত বয়সের জন্য এক নতুন সংযোজন। (যা পাঠক মহোদয় দেখতে পাবেন)। এর দ্বারা আপনার নেকিসমূহের উৎপাদনীয় বয়স অংকের বয়সের চেয়ে বেশি দীর্ঘ হয়।

বইটি এক অণুবীক্ষণযন্ত্রের (Microscope) ন্যায় যা আমাদের দৃষ্টির জন্য প্রকাশ করে দেয় নতুন এক গুরুত্বপূর্ণ দিগন্ত। যাতে রয়েছে অনেকগুলো হাদীস  যা আমরা পড়ি কিন্তু না বুঝে ও চিমত্মা-ভাবনা না করে দ্রম্নত গতিতে চলে যাই।

 

বয়স বৃদ্ধির উপায় বইটিতে তিনটি অধ্যায় আছে :

প্রথম অধ্যায় : বয়স বৃদ্ধির গুরুত্ব ও তার মর্মার্থ।

দ্বিতীয় অধ্যায় : যে সকল আমল বয়স বৃদ্ধি করে।

এতে রয়েছে কিছু পরিচ্ছেদ :

প্রথম পরিচ্ছেদ : মহৎ চরিত্র ও গুণাবলি দ্বারা বয়স বৃদ্ধি।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : অধিক সওয়াবের আমলসমূহ দ্বারা বয়স বৃদ্ধি।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : মৃত্যুর পর যে সকল আমলের সওয়াব জারি থাকবে তা দ্বারা বয়স বৃদ্ধি।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : সময়কে বিনিয়োগ করে বয়স বৃদ্ধি।

তৃতীয় অধ্যায় : সৎ আমল দ্বারা উৎপাদনীয় বয়সের হেফাজত করার পদ্ধতি।

প্রথম অধ্যায়

বয়স বৃদ্ধির উপায় বিষয়টির গুরুত্ব ও তাৎপর্য :

আমাদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কী? আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য খানাপিনা নয়; কারণ পানাহার জীবজন্তু ও কাফেররাও করে।

আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী :

وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ

‘‘আর কাফেররা আনন্দ ও পানাহার করে যেমন-চতুষ্পদ জীবজন্তুরা পানাহার করে এবং তাদের ঠিকানা জাহান্নাম।’’ (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১২)

আমাদের অসিত্মত্বের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত করা এবং কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের অবাধ্যতা করা। বাণিজ্যিক ভাষায় এর অর্থ : মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ার আগে কি করে সম্ভবপর বড় অংকের নেকি উপার্জন করা য়ায়।

একজন মুসলিম তার জীবনের প্রতি আগ্রহী হবে বেঁচে থাকার জন্য নয় বরং সম্ভবপর বড় অংকের নেকি উপার্জনের জন্য। নবী (সা.) একজন মানুষের প্রশ্নের উত্তরে বলেন :

أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ ؟ قَالَ : ((مَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ)).

সর্বোত্তম মানুষ কে? তিনি (সা.) বলেন : ‘‘যে ব্যক্তির বয়স দীর্ঘ হয় এবং তার আমলও ভাল হয়।’’ (হাদীসটি সহীহ, সহীহুল জামে‘ হা. ৩২৯৭ )

 

একটি বড় সমস্যা :

একজন মুসলিম তার জীবনে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হয় তা হলো : জীবন একেবারে সীমিত। এতে একটি মুহূর্তও বাড়ানোর ক্ষমতা তার নেই। একজন মানুষের সারা জীবনের কার্যকর সময়ের মাঝারি বয়স ২০ বছরের বেশি পরিমাণ হয় না; কারণ উম্মতে মুহাম্মদীর মাঝারি বয়স ৬০ হতে ৭০ বছরের মধ্যে। প্রতিটি বনি আদম তার এক তৃতীয়াংশ বয়স ঘুমে কাটায়।

আর প্রায় ১৫ বছর তো সে নাবালক (শরিয়াতের আজ্ঞাপ্রাপ্তর বাইরে) থাকে। এ ছাড়া বয়সের কিছু অংশ সাধারণ ও জরুরি কাজে নিঃশেষ করে। অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, তার বয়সের শুধুমাত্র এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। এ জন্যে আবশ্যকীয় প্রয়োজন যে, এমন কিছু উপকরণ গ্রহণ করা যা এ অল্প বয়সের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।

বয়স বাড়ার মর্মার্থ :

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ((مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ)).

আনাস ইবনে মালেক (রহ.) বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি তার রিজিকে বৃদ্ধি এবং বয়সে বৃদ্ধি হওয়া পছন্দ করে, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখে।’’ (বুখারী হা. ৫৯৮৬ ও মুসলিম হা. ২৫৫৭)

বিদ্বানগণ বয়স বাড়ার অর্থ নিয়ে ৩টি মতামত প্রকাশ করেছেন :

  1. বয়স বাড়ে অর্থ বয়সে বরকত হয়; যার ফলে অল্প বয়সে এমন পরিমাণের কার্যাদি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়, যা অন্য কেউ অনেক লম্বা বয়সে করতে পারে না।
  2. প্রকৃতভাবেই বয়স বৃদ্ধি হয়।
  3. মৃত্যুর পর উত্তম স্মরণ করা।

বয়স বাড়ার তিনটি অর্থই গ্রহণ করতে কোন প্রকার বাধা-নিষেধ নেই; কারণ আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুকম্পা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। তিনি বড় অনুকম্পার অধিকারী।

এ মতামতের আলোকে আমাদের জন্যে যা আবশ্যকীয় তা হলো : আমাদের বয়স বৃদ্ধি করা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো; যাতে করে অধিক সংখ্যক নেকি অর্জন করতে পারি।

ড. কারযাবী (হা.) বলেন : আসলে একজন মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে সময় অতিবাহিত করে তা তার প্রকৃত বয়স নয়। বরং প্রকৃতি বয়স হলো আল্লাহর ব্যাংকে তার এ্যাকাউন্টে যে সকল উত্তম আমল ও মহৎ কার্যাদি জমা হয় তাই। আখেরাতের ব্যাংকে যার যত বেশি মূলধন হবে সেই ততো বেশি লাভবান। (মুসলিমের জীবনে সময় : পৃ-৫৫)

বয়স বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করা জায়েজ আছে কি?

বয়স বৃদ্ধির উপায় এ ব্যাপারে বিদ্বানগণ বিপরীতমুখী মত প্রকাশ করেছেন। আল্লামা মান্যবর শাইখ মুহাম্মদ ইবনে উছাইমীন (রহ.)-কে ‘‘আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবি করুক, তোমার দীর্ঘায়ু হোক’’ এ ধরনের দু‘আর বিধান জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণভাবে দীর্ঘজীবি বা দীর্ঘায়ুর দু‘আ করা ঠিক নয়; কারণ কখনো মানুষের দীর্ঘায়ু কল্যাণকর হয় আর কখনো অকল্যাণকর হয়। কারণ সবচেয়ে ঘৃণীত মানুষ ঐ ব্যক্তি, যার বয়স দীর্ঘ কিন্তু আমল মন্দ। অতএব, যদি দু‘আতে গিয়ে এমন বলে যে, ‘‘আল্লাহ তাঁর আনুগত্যে তোমার বয়স বৃদ্ধি করুন’’ ইত্যাদি তাহলে কোনি অসুবিধা নেই। আর নবী (সা.) তাঁর খাদেম আনাস (রা.)-এর বয়স বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করেছিলেন। যেমন : বয়স বৃদ্ধির উপায়

عَنْ قَتَادَةَ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا  قَالَ : قَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَسٌ خَادِمُكَ[وفي رواية للترمذي : ادْعُ اللهَ لَهُ] قَالَ : ((اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ)).

কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি আনাস (রা.)-কে বলতে শুনেছি : উম্মে সুলাইম (রা.) (আনাসের মা) নবী (সা.)-কে বলেন : আনাস আপনার খাদেম। (তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, তার জন্যে আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন।) নবী (সা.) বলেন : ‘‘হে আল্লাহ! তার মাল ও সমত্মানাদি বৃদ্ধি করুন এবং তাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দান করুন।’’ (বুখারী হা. ৬৩৩৪ ও তিরমিযী হা. ৩৮২৯)

অন্য বর্ণনায় আছে : বয়স বৃদ্ধির উপায়

((اَللّٰهُمَّ عَمِّرْهُ، وَأَكْثِرْ مَالَهُ، وَاغْفِرْ لَهُ)).

‘‘হে আল্লাহ! তাকে দীর্ঘজীবি করুন ও তার সম্পদ বৃদ্ধি করুন এবং তাকে ক্ষমা করুন।’’ (দালায়েলুন নুবুয়্যাহ, বাইহাকী ৬/৪০৩, হা. ২৪৫৩ )

দ্বিতীয় অধ্যায়

বয়স বৃদ্ধির আমলসমূহ বয়স বৃদ্ধির উপায়

প্রথম পরিচ্ছেদ :

উত্তম চরিত্রের দ্বারা বয়স বৃদ্ধি :

নবী (সা.) বয়স বাড়ানো সম্ভবের খবর দিয়েছেন। এটা কিছু উত্তম চরিত্র ও কাজের প্রতি লোভ করলেই সম্ভব। আর এগুলোর মূল বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ও লেনদেন। এ অধ্যায়ের মূল স্তম্ভ হলো :

عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهَا : ((إِنَّهُ مَنْ أُعْطِيَ حَظَّهُ مِنْ الرِّفْقِ فَقَدْ أُعْطِيَ حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَصِلَةُ الرَّحِمِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ وَحُسْنُ الْجِوَارِ يَعْمُرَانِ الدِّيَارَ وَيَزِيدَانِ فِي الْأَعْمَارِ)).

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী (সা.) তাঁকে বলেন : ‘‘যে ব্যক্তিকে কোমল-নরম আচরণ দান করা হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত সুখ ও প্রাচুর্য দেওয়া হয়েছে। আর আত্মীয়তা সম্পর্ক মজবুত রাখা এবং উত্তম চরিত্র ও প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার সমত্মানাদি এবং বয়স বৃদ্ধি করে।’’ (হাদীসটি সহীহ, সহীহ তারগীব তারহীব হা. ২৫২৪)

প্রথম অনুচ্ছেদ : বয়স বৃদ্ধির উপায় 

আত্মীয়তা সম্পর্ক মজবুত রাখা : বয়স বৃদ্ধির উপায়

আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ, যার প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর বান্দাদেরকে তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য কুরআনুল কারীমের ১৯টি আয়াতে আহবান জানিয়েছেন। আর আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারীকে অভিশাপ ও শাসিত্মর দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছেন ৩টি আয়াতে।

এ জন্য সালফে সালেহীনদের অন্যতম মহৎ গুণ ছিল যে, তাঁরা তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেন। যদিও সে যুগে যোগাযোগের মাধ্যম ও যানবাহন ছিল অতি কঠিন। আমাদের মধ্যে অনেককে দেখা যায় যে, সে তার বন্ধু-বান্ধবীর সাক্ষাৎ একাধিক বার করে, কিন্তু তার রুটিনে কোন আত্মীয়-স্বজনের সাথে মাসে একবার সাক্ষাতেরও স্থান নেই।

আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থেকে বিরত থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে, আমাদের সময়ের সুন্দর ও সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা না থাকা।

সুতরাং, যদি নিজের বয়সকে বাড়াতে চান তাহলে উচিত আত্মীয়তা সম্পর্ক গভীর করা। কারণ যে আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখবে, আল্লাহ তা‘য়ালা তার সাথে সম্পর্ক রাখবেন। আর যে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আল্লাহ তা‘য়ালাও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। নবী (সা.)-এর বাণী :

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ  أَنَّ رَسُولَ اللهِ  قَالَ : ((صِلَةُ الرَّحِمِ تَـزِيدُ فِي الْعُمُرِ)).

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘‘আত্মীয়তা সম্পর্ক বয়স বৃদ্ধি করে।’’ (শাইখ আলবানী (রহ.) সহীহ বলেছেন। সহীহুল জামে‘ হা. ৩৭৬৬)

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ :

বয়স বৃদ্ধির উপায়

সৎ ও উত্তম চরিত্র :

উত্তম চরিত্র এমন মহৎ এক গুণ যার দ্বারা মানুষ জবান ও অন্তরের আপদ-বিপদ থেকে নিজেকে পবিত্র করতে পারে এবং এহসানের স্তরে পৌঁছতে পারে।

আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) উত্তম চরিত্রের ব্যাখ্যায় বলেন : ‘‘প্রফুলস্ন চেহারা ও কল্যাণে নিয়োজিত এবং কষ্টদায়ক জিনিস থেকে বিরত থাকার নাম উত্তম চরিত্র।’’

বর্তমানে মুসলমানদের জন্য আসলেই দোষনীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, আজ তাদেরকে কাফেরদের চরিত্রের উপমা টেনে তিরস্কার করা হয়। অথচ মহানবী (সা.) আমাদের জন্য তাঁর প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন যে, ‘‘মহৎ চারিত্রিক গুণাবলী পূর্ণ করা’’।

বয়স বৃদ্ধির উপায়  রোজ কিয়ামতে মুমিনের পাপ ও নেকি ওজনের সময় মিজানে সবচেয়ে বেশি ভারি হবে তার উত্তম চরিত্র। বয়স বৃদ্ধির উপায়

বয়স বৃদ্ধির উপায়  অনেক সালফে সালেহীনের (সাহাবী ও তাবেঈগণ) জীবনীর দিকে একটু দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখুন! তাঁরা পরবর্তীদের জন্য অনুকরণযোগ্য কত চমৎকার ও আকর্ষণীয় মহৎ চরিত্রের উদাহরণ রেখে গিয়েছেন।! যার ফলে তাঁদের নেকিগুলো জারি রয়েছে এবং তার দ্বারা তাঁদের বয়স বৃদ্ধি হয়েছে। বয়স বৃদ্ধির উপায়

আর একবার নিজের দিকে দৃষ্টি নিক্ষক্ষপ করুন! আপনি কি আপনার পরবর্তীদের জন্য অনুকরণ ও অনুসরণের মত এমন কিছু প্রশংসনীয় চরিত্র এবং গৌরবময় কিছু নীতি ও অবস্থান ছেড়ে যাচ্ছেন?!

বয়স বৃদ্ধির উপায়  নিশ্চয়ই সুন্দর চরিত্র দ্বারা অলংকৃত ও ভূষিত হওয়া আপনার জীবনকে নবায়ন ও দীর্ঘজীবি করবে এবং নেকির পাল্লাকে ভারি করবে। উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন :

((مَا شَيْءٌ أَثْقَلُ فِي مِيزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ خُلُقٍ حَسَنٍ، وَإِنَّ اللّٰهَ لَيُبْغِضُ الْفَاحِشَ الْبَذِيءَ)).

‘‘রোজ কিয়ামতের দিন মুমিনের মিজানে উত্তম চরিত্রের চেয়ে আর কিছু ভারি জিনিস হবে না। আর আল্লাহ তা‘য়ালা নোংরা-অশস্নীলকে ঘৃণা করেন।’’ (শাইখ আলবানী (রহ.) সহীহ বলেছেন। সহীহুল জামে‘ হা. ৫৭২৬)

নবী (সা.) আরো বলেন : বয়স বৃদ্ধির উপায়

((إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ)).

বয়স বৃদ্ধির উপায়  ‘‘নিশ্চয় মুমিন ব্যক্তি তার উত্তম চরিত্রের দ্বারা দিনে রোজাদার ও রাত্রে নফল সলাত আদায়কারী ব্যক্তির মর্যদা লাভ করে।’’ (শাইখ আলবানী (রহ.) সহীহ বলেছেন। সহীহুল জামে‘ হা. ১৯৩২)

বয়স বৃদ্ধির উপায়

Reviews (2)

2 reviews for বয়স বৃদ্ধির উপায়

  1. Md Al Amin

    অতি চমৎকার একটি বই। এটি পড়লে বেশি বেশি সৎ আমল করার বাসনা জাগবেই ইনশাআল্লাহ।

  2. Md Al Amin

    অতি চমৎকার একটি বই।

Add a review

Your email address will not be published.

বয়স বৃদ্ধির উপায়
লেখক: ডক্টর শায়খ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আন-না‘য়ীম অনুবাদ : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল মাদানী সম্পাদনা : উমার ফারুক আব্দুল্লাহ প্রকাশনায় : দারুল কারার পাবলিকেশন্স পরিবেশনায় : তাওহীদ পাবলিকেশন্স গায়ের দাম: ১৩০ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২৮
Shopping cart
Facebook Twitter Instagram YouTube WhatsApp WhatsApp

Sign in

No account yet?