মরণকে স্মরণ
প্রাণী মাত্রই মরবে। জন্ম ও মৃত্যু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দু’টির কোনটির ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। আল্লাহর হুকুমেই জন্ম হয়। আল্লাহর হুকুমেই মৃত্যু হয়। কখন হবে, কোথায় হবে, কিভাবে হবে, তা কারো জানা নেই। জীবনের সুইচ তাঁরই হাতে, যিনি জীবন দান করেছেন। অতঃপর জীবনদাতার সামনে হাযিরা দিয়ে জীবনের পূর্ণ হিসাব পেশ করতে হবে। হিসাব শেষে জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে ও সেখানেই চিরকাল শান্তিতে বাস করবে অথবা শাস্তি ভোগ করবে। বইটিতে যে সমস্ত বিষয়বস্তু আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো হলো: মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী কবরের অবস্থা মৃত্যু চিন্তা মানুষকে আল্লাহভীরু ও সৎকর্মশীল বানায় আল্লাহর দীদার কামনা আল্লাহকে দর্শন মৃত্যু কামনা নয় পরকালের পাথেয় সঞ্চয় সৎকর্মের উপর মৃত্যুবরণ মৃত্যুর চিন্তা আল্লাহভীরুতা আনয়ন করে ও ঈমান বৃদ্ধি করে জ্ঞানী মানুষদের কিছু উক্তি দ্রুত সৎকর্ম সম্পাদন ক্বিয়ামত দিবসে মানুষের অবস্থা।
মরণকে স্মরণ
সংকলনে:
আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ইসলামী গবেষক, লেখক, মুহাক্কিক আলিম ও দাঈ
তাওহীদ
পাবলিকেশন্স
প্রকাশনায়
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা-বাংলাদেশ
মরণকে স্মরণ
সূচীপত্র
বিষয়:
- ভূমিকা
- পার্থিব জীবনের উপমা
- মৃত্যু অবধারিত সত্য মৃত্যু অনিবার্য
- জীবন-মরণ আল্লাহর হাতে
- মরণের খবর অজানা
- মরণের প্রস্তুতি
- মরণকে স্মরণ
- আমরা মরণ থেকে উদাসীন কেন?
- যে চলে যায়, সে আর ফেরে না সত্বর তওবা
- মু’মিনের জন্য মরণই উত্তম
- বাঁচতে চাওয়া কি দূষণীয়?
- কাফের ও মুনাফিক মরণ থেকে নিস্তার চায়
- মহান আল্লাহর প্রতি ভয় ও সুধারণা
- চিন্তার বিষয়
- মরণের প্রস্তুতি স্বরূপ অসিয়ত
- ইসলামের অসিয়ত
- নিরাপত্তা লাভের দুআ
- কষ্টে ধৈর্যধারণ করার মাহাত্ম্য
- মৃত্যু-কামনা বৈধ নয়
- ভাল লোকের দীর্ঘায়ু অবশ্যই ভাল
- আত্মহত্যা
- মরণ নির্ধারিত সময়েই হবে
- নির্দিষ্ট ফিরিশ্তা জান কবজ করেন
- মৃত্যু-যন্ত্রণা
- মরণের পর জান কোথায় যায়?
- শেষ ভাল যার, সব ভাল তার
- শুভ মরণের লক্ষণ
- অশুভ মরণের লক্ষণ
- আসল ঘর
- অনিবার্য সফরের রিজার্ভেশন ফর্ম
মরণকে স্মরণ
ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على أشرف المرسلين، وعلى آله وصحبه
মেঘে মেঘে অনেক বেলা হল । বর্ণচোরা আমের মত নিজের বয়স বেড়ে হল প্রায় চুয়াল্লিশ। এর মাঝে কত উত্থান-পতন, কত জীবন-মরণ, কত সুখ-দুঃখের কাহিনী ঘটে গেছে আমার।
পেটের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এক সময় চব্বিশ দিন হাসপাতালে ভরতি থাকি। পরবর্তীতে বারো দিন ভরতি থেকে রিয়ায কিং সউদ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে গ্যল- ব্লাডার অপারেশনের মাধ্যমে সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাই ।
এক সময় আল-রাস শহরের ভিতরে কুয়াশার ন্যায় বৃষ্টির সময় গাড়িতে ড্রাইভারের পাশে বসেছিলাম। রাস্তার মাঝে এক ইলেক্ট্রিক-পোলে ধাক্কা মারলে আমার পায়ে আঘাত লাগে, মাথা ফেটে যায়, হাসপাতালে সিলাই হয় ।
আরো কতবার এক্সিডেন্টের মুখ থেকে বেঁচে গেছি । গাড়ি চালাতে গিয়েও মরণকে স্মরণ ক’রে সীট-বেল্ট বাঁধতে হয় সকলকে। প্লেনে বসেও মরণকে স্মরণ ক’রে সীট-বেল্ট বাঁধতে হয় ।
বড় বড় আলেম-উলামা চলে গেলেন, আত্মীয়-স্বজন মারা যাচ্ছে, অনেক সঙ্গী- সাথীরাও সঙ্গ ছেড়ে বিদায় নিচ্ছে। আপনাকে-আমাকেও সকলের নিকট থেকে বিদায় নিতে হবে ।
জীবনের এমন মুহূর্তও আসে, যখন আর বাঁচতে ইচ্ছা হয় না। জানাযা, দুর্ঘটনা, দুর্যোগ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ দেখেও জীবনের মূল্যহীনতা প্ৰকাশ পায় ৷
রক্ত-পিপাসু দুশমনও থাকতে পারে আমার অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে। মরণের পাতা ফাঁদে যে কোন সময় পা ফেঁসে যেতে পারে ।
কখনো কখনো নির্জনে জীবনের কথা বসে ভাবি, পরকালের পাথেয় কি সংগ্রহ করলাম? কবরের ঘর কি সঠিকভাবে বানাতে পেরেছি? মনের আবেগে চোখে পানি আসে । মহান প্রতিপালকের উপর ভরসাই একমাত্র সম্বল ।
মরণকে স্মরণ ক’রে বক্তৃতা করি, কিছু লিখেও ফেললাম। যদি এর দ্বারা আপনিও উপকৃত হন। আল্লাহ যেন সেই তওফীক দেন এবং মরণ-পথের পাথেয় সংগ্রহ করার প্রয়াস দান করেন । আমীন ।
ইতি—
আব্দুল হামীদ মাদানী
আল-মাজমাআহ
রমযান ১৪৩০হিঃ, সেপ্টেম্বর ২০০৯
মরণকে স্মরণ
পার্থিব জীবনের উপমা
মানুষ জন্ম নিয়ে পৃথিবীর সংসারে আসে। বড় আদরে মা-বাপ ও আত্মীয়- স্বজনের কোলে প্রতিপালিত হয়। শিশু একদিন কিশোর হয়, যুবক হয়। তারও ছেলে-মেয়ে হয়। তারপর প্রৌঢ় হয় এবং পরিশেষে বার্ধক্যে উপনীত হয়। অতঃপর এক সময় মৃত্যুবরণ ক’রে এ দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যায় ।
অবশ্য অনেকেই বার্ধক্য পাওয়ার আগেই কোন রোগ অথবা দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে দুনিয়া ত্যাগ করে ।
দুনিয়ার যিন্দেগীর এই উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ, সবলতা-দুর্বলতার যে পালা-বদল হয় এবং সবশেষে যে মানুষকে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়, তার বিভিন্ন উপমা বর্ণিত আছে। সে সকল উপমা নিয়ে একটু গবেষণা করলে এ জীবনের প্রকৃতত্ব প্রকট হয়ে উঠে ।
মহান আল্লাহ আমাদের এই জীবনটাকে ছলনাময় বলে আখ্যায়িত করেছেন । তিনি বলেছেন,
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيمَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ
النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيُوةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ)
অর্থাৎ, জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। সুতরাং যাকে আগুন (দোযখ) থেকে দূরে রাখা হবে এবং (যে) বেহেশতে প্রবেশলাভ করবে, সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয় । (সূরা আলে ইমরান ৩ঃ ১৮৫ আয়াত)
পার্থিব জীবন হল ধোঁকার সম্পদ। এ জীবন মানুষকে ধোঁকা দেয়। মানুষ তাকে সুন্দরী প্রেমিকা ভেবে গভীরভাবে ভালবাসে । বহু কিছু তার পশ্চাতে ব্যয় করে। তাকে ধন দেয়, মন দেয়, জীবনও দেয়। কিন্তু পরিশেষে সে প্রেমিকা ধোঁকা দিয়ে তাকে বর্জন করে! সে প্রেমিকাকে বিশ্বাস করে, কিন্তু সে তাকে ধোঁকা দেয় ।
মায়ার এ দুনিয়া সুসজ্জিতা ও সুরভিতা বিষকন্যা। রূপের যাদু নিয়ে রূপ নগরের রাজকন্যা। কত শতরূপা সুন্দরী সে! কত অপরূপা রূপসী সে! মানুষ হালাল-হারাম না বেছে অর্থ উপার্জন ক’রে তার সন্তুষ্টির পথে ঢেলে দেয় । তার মিলন পাওয়ার আশায় কত শত বাধা উল্লংঘন করে, বিপত্তির ঝুঁকি নেয়। কত কৰ্তব্য উপেক্ষা করে, কত উপদেষ্টার উপদেশকে কত অবজ্ঞা করে, প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু দুনিয়ার লায়লী পরিশেষে তাকে ধোঁকা দেয় ।
অনেকে মনে করেন, দুনিয়া সুসজ্জিতা বৃদ্ধার মত। আবুল আ’লা বলেন, আমি স্বপ্নে এক অতি বৃদ্ধাকে দেখলাম, সে সর্বপ্রকার অলঙ্কারে অলঙ্কৃতা ও সুসজ্জিতা ছিল। আর অসংখ্য লোক তার চারিপাশে দাঁড়িয়ে লোভাতুর নজরে তাকিয়ে ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কে তুমি?’ সে জবাব দিল, ‘আমি দুনিয়া!’ আমি বললাম, ‘তোমার মন্দ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি।’ সে বলল, ‘আমার মন্দ থেকে মুক্তি পেতে হলে অর্থকে ঘৃণা কর ।’
এ দুনিয়া হল একটি খেলার মাঠ, ফুটবল-গ্রাউণ্ড, ক্রীড়া-মহল, খেলাঘর। নারী-পুরুষ সকলেই এক-একটি খেলোয়াড়, প্লেয়ার। রেফারি বাঁশি ফুঁকে দিলে সে ভবের খেলা সাঙ্গ হয়ে যায় । মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত কিছু নয়, যারা সংযত হয় তাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি তা বোঝ না? (সূরা আনআম ৬ঃ ৩২ আয়াত)
অর্থাৎ, এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পারলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন । (সূরা আনকাবৃত ২৯: ৬৪ আয়াত)
অর্থাৎ, পার্থিব জীবন তো শুধু খেল-তামাশা মাত্র। যদি তোমরা বিশ্বাস কর ও আল্লাহ-ভীরুতা অবলম্বন কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে পুরস্কার দেবেন। আর তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ চান না। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ঃ ৩৬ আয়াত)
র্থাৎ, তোমরা জেনে রেখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্ব প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টি; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরা-টুকরা (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (সূরা হাদীদ ৫৭ঃ ২০ আয়াত)
মরণকে স্মরণ
এ খেলার কথা খুব সহজভাবে বুঝতে হলে পাড়াগ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ধুলোবালি নিয়ে খেলার কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। কবি তা ভেবে লিখেছেন,
‘যে মত শিশুর দল পথের উপর,
খেলাধুলা করে তারা বানাইয়া ঘর।
হেন কালে স্নেহময়ী মাতা ডাক দিলে,
ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে যায় মাতৃকোলে ।
সেই মত এই পৃথিবীর সংসার-জীবন,
মহাকালের এলে ডাক র’ব না তখন ।’
জীবনের বিশাল সমুদ্রে ভেলা-খেলা শেষ হলে যথাসময়ে সকলে ফিরে যাবে মরণ-সাগর-তীরে । কবি বলেছেন,
‘চল-পথে তারে কে দিল বলিয়া আবার আসিও ফিরে,
বেলা অবসানে খেলা শেষ হলে মরণ-সাগর-তীরে ।
ধরণীর যত কল্লোল গান
যত দান যত প্রতিদান
তুমি জনমের মত মুছিয়া আসিও দুপায়ে দলিয়া ধীরে।। ফুল-ঝরা ঐ মাঘের প্রদোষে ভাসে ফাগুনের সুর–
দূর সে যে বহু দূর,
চল হে পথিক আপনার জনে ভাসায়ে নয়ন-নীরে।
খেলা শেষ হল ধীরে চল ঐ মরণ-সাগর-তীরে।’
মরণকে স্মরণ
এ জীবনের উপমা যেন একটি ফুলবাগানের মত, একটি ফল- ফসলে ভরা শস্যক্ষেতের মত; যা একদিন সবুজ-শ্যামল নয়নাভিরাম থাকে। অতঃপর একদিন খড়-কুটায় পরিণত হয়; যেমন পূর্বোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন। তিনি আরো বলেন,
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَوةِ الدُّنْيَا كَمَاء أَنْزَلْنَهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّى إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَأَزَيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قدِرُونَ عَلَيْهَا أَتُهَا أَمْرُنَا لَيْلًا اَوْنَهَارًا فَجَعَلْنَهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থাৎ, বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়ে, যা হতে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পূর্ণ অধিকারী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন ক’রে দিই, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরূপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা ক’রে থাকি । (সূরা ইউনুস ১০: ২৪ আয়াত)
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلَ الْحَيَوةِ الدُّنْيَا كَمَاء أَنْزَلْنَهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ
الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذَرُوهُ الرِّيحُ وَكَانَ اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا
অর্থাৎ, তাদের কাছে পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের; এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার দ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়। অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান ।
এ জীবন হল সাময়িক ভোগ-বিলাসের বিলাসভবন। ক্ষণস্থায়ী (সূরা কাফ ১৮: ৪৫ আয়াত) সুখভোগের অস্থায়ী রঙমহল। ফিরআউন সম্প্রদায়ের এক মু’মিন ব্যক্তি তাঁর সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য ক’রে বলেছিলেন,
يُقَوْمِ إِنَّمَا هُذِهِ الْحَيُوةُ الدُّنْيَا مَتَاعُ وَإِنَّ الْأَخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ
অর্থাৎ, এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং পরকাল হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মু’মিন ৪০: ৩৯ আয়াত)
দুনিয়াকে সেই ভোগসম্ভার দিয়ে সজ্জিত ক’রে মহান আল্লাহ আদমকে সেখানে পাঠানোর সময় বলেছিলেন,
اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَى حِينٍ
অর্থাৎ,‘তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নেমে যাও এবং কিছু কালের জন্য পৃথিবীতে তোমাদের বসবাস ও উপভোগ রইল।’ (সূরা আ’রাফ ৭ঃ ২৪ আয়াত) দুনিয়াতে এসে মানুষ ভোগ-বিলাসে মেতে গেল । মন্ত্রমুগ্ধ হল ভোগের মায়ায় । মহান আল্লাহ বলেন,
اللهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ وَفَرِحُوا بِالْحَيُوةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيُوةُ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ
অর্থাৎ, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন, তার জীবনোপকরণ বর্ধিত করেন এবং সংকুচিত করেন। কিন্তু তারা পার্থিব জীবন নিয়েই উল্লসিত; অথচ ইহজীবন তো পরজীবনের তুলনায় নগণ্য ভোগ মাত্র। (সূরা রা’দ ১৩ঃ ২৬ আয়াত) মহান আল্লাহ সেই ভোগ-বিলাস থেকে মুসলিমদেরকে সতর্ক ক’রে বলেন,
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللهِ اتَا قَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ
اَرَضِيتُمْ بِالْحَيَوةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَوةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيل
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের কি হলো যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে (জিহাদে) বের হতে বলা হয়, তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়। তবে কি তোমরা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস তো পরকালের তুলনায় অতি সামান্য। (সূরা তাওবাহ ৯ঃ ৩৮ আয়াত)
মরণকে স্মরণ
কি সে উপভোগ্য বস্তু? প্রধান প্রধান বস্তুসমূহ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَابِ
অর্থাৎ, নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভাণ্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান ৩ঃ ১৪ আয়াত)
‘নারী-বাড়ি-গাড়ি’ হল বর্তমান পৃথিবীর উপভোগ্য বস্তু। আর পুরুষ হল নারীর উপভোগ্য বস্তু। দম্পতির সুখের বস্তু হল ধন-মাল, গাড়ি-বাড়ি ও সন্তান-সন্ততি।
দুনিয়া তো এক সরাইখানা। দুনিয়া একটি মুসাফিরখানা, একটি পান্থনিবাস, একটি প্রতীক্ষালয়। ক্ষণিকের জন্য ব