মুসলিম রমণী
মুসলিম রমণী
মুসলিম রমণী
মূল
আশ্শায়খ আবূ বকর জাবের আল জাযায়িরী
প্রকাশনায়
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা-বাংলাদেশ
মুসলিম রমণী
সূচিপত্র
- ভূমিকা
- আকীদা
- ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান
- ইসলামের দ্বিতীয় ভিত্তি
- অন্তরের পবিত্রতা
- শরীর, পোশাক ও স্থানের পবিত্রতা
- পায়খানা প্রশ্রাব করার নিয়মাবলী
- ওযুর পদ্ধতি
- যে সমস্ত কারণে ওযু ফরয হয়
- যে সমস্ত কারণে গোসল ফরয হয়
- তায়াম্মুম
- হায়েয ও নেফাসের আহ্কাম
- হায়েয ও নেফাসকালে নিষিদ্ধ কার্যসমূহ
- সলাত বা নামায
- সলাতের রোকনসমূহ
- সলাতের আরকান বা ফরযসমূহ
- সলাতের ওয়াজিব বা সুন্নতে মোআকক্কাদাসমূহ
- সলাতের বাইরে কিছু গাইরে মোআক্বাদা সুন্নত
- ছহু সেজদা এবং কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে তা দিতে হবে
- সলাত আদায় করার নিয়মাবলী
- সলাত বিনষ্টকারী আমলসমূহ
- সলাতের মাকরূহ (অপছন্দনীয় কার্যসমূহ)
- সলাতের ওয়াক্তসমূহ
- কাযা সলাত
- সলাতের শ্রেণী বিভাগ
- নফল সলাতের নিষিদ্ধ সময়
- জুমুয়া’র সলাত
- জামাতের সলাত
- কছর ও জমা সলাতা
- রোগীদের সলাত
- মৃত্যুর সময়ের হুকুম আহ্কাম ও জানাযার সলাত
- যাকাত
- অলংকারের যাকাত
- যাকাত ওয়াজবি হওয়ার শর্তসমূহ
মুসলিম রমণী
- কাকে কাকে যাকাত দিতে হবে
- ছদক্বাহ বা দান খয়রাত
- ছওম বা রোযা
- কোন্ কোন্ কারণে রোযা রাখা হারাম বা মাকরূহ্
- রোযার রোকন বা ফরযসমূহ
- রোযার সুন্নতসমূহ
- রোযার মুস্তাহাবসমূহ
- রোযা নষ্টকারী আমলসমূহ
- রোযা অবস্থায় মাকরূহ্সমূহ
- রোযাদারের জন্য কী কী কার্য করা মুবাহ
- যে সমস্ত জিনিস বা কার্যের দ্বারা রোযাদারদের ক্ষতি হয় না
- রোযা ভঙ্গকারীর বিচার
- রমযানে ইতিকাফ করা
- ছদক্বায়ে ফিত্রা
- হজ্জ্ব ও উমরাহ্
- এহরামের ওয়াজিবসমূহ
- ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কার্যসমূহ
- হজ্জ্ব ও উমরার ফযিলত
- হজ্জ্ব ও উমরা করার নিয়ম
- হজ্জ করার নিয়ম
- ওমরাহ করার নিয়ম
- মুসলিম রমণীদের উপর ওয়াজিবসমূহ
- মুসলিম রমণীদের আদব কায়দা
- মুসলিম রমণীদের চারিত্রিক গুণাবলী
- মুসলিম রমণীদের বিশেষত্ব
- যে যে ক্ষেত্রে মেয়েরা পুরুষদের সমান নয়
- মহিলাদের সাধারণ হক্বসমূহ
- স্বামীর উপর মেয়েদের হক্বসমূহ
- মুসলিম রমণীদের জন্য কী কী ক্ষেত্রে পূর্ণতা প্রয়োজন
- আতি¥ক পূর্ণতা লাভের রাস্তাসমূহ
- শারীরিক পূর্ণতার বিবরণ
- বুদ্ধিগত দিকে কী কী পূর্ণতা প্রয়োজন
- চারিত্রিক পূর্ণতা হাসিলের জন্য কী কী গুণ পয়োজন
- মু’মিনাদের জন্য উত্তম আদর্শবতী রমণীদের ঘটনা
- সর্বশেষ এগারটা উপদেশ
মুসলিম রমণী
بسم الله الرحمن الرحيم
ভূমিকা
সাবধান! সাবধান!
সমস্ত প্রশংসা তা‘আলার জন্য। হে মুসলিম রমণী! আপনি নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করুন, আর স্মরণ রাখবেন, আপনি কখনও রসূল স:-এর আদরের কন্যা ফাতেমা (র:) থেকে উত্তম নন (তাঁদের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার শান্তি বর্ষিত হোক)। তাঁকে তাঁর আব্বাজান একদা বলেনঃ “হে ফাতেমা! নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর, দুনিয়াতে আমার নিকট যা চাওয়ার চেয়ে নাও, আখেরাতে আমি তোমাকে আল্লাহ্র বিচার হতে রক্ষা করতে পারব না, তাই নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাতে চেষ্টা কর” (মুসলিম)। হে মুসলিম রমণী! আমি আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি এবং ভয় দেখাচ্ছি। খুব সাবধান! কারণ রসূল স:-এর সামনে জাহান্নামকে দেখানো হয়েছিল, আর তিনি দেখেছেন যে, তার অধিকাংশ অধিবাসীই হচ্ছে নারী। বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে, রাসূল স: বলেন ঃ
وَرَاَيْتُ النَّارَ فَلَمْ أَرَ مَنْظَرًا كَالْيَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ قَالُوا بِمَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ بِكُفْرِهِنَّ قِيلَ يَكْفُرْنَ بِاللهِ قَالَ يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ (الزَّوْجُ) وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ كُلَّهُ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ.
“আমি জাহান্নামকে দেখতে পাই, তা অপেক্ষা ভয়ঙ্কর দৃশ্য জীবনে আর কখনও দেখিনি এবং এর বেশির ভাগ অধিবাসী হচ্ছে নারী।” ছাহাবীগণ প্রশ্ন করেন কিসের জন্য ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তিনি উত্তরে বলেন ঃ “তাদের কুফরির কারণে।” বলা হল, “তারা কি আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে কুফ্রি করে?” উত্তরে তিনি বলেন, “না, বরং তারা স্বামীর শুক্রিয়া আদায় করে না এবং তাদের প্রতি যে দয়া করা হয়, তাও অস্বীকার করে বসে। যদি এদের মধ্যে কাউকেও সমস্ত বৎসরব্যাপী দয়া করা হয়, ভাল ব্যবহার করা হয় তারপরও যদি তোমার নিকট হতে কখনও কোন খারাপ ব্যবহার পায়, তবে সাথে সাথে বলে উঠে, জীবনে কখনও তোমার নিকট হতে ভাল ব্যবহার পেলাম না।” (বুখারী ১০৫২, ৫১৯৭, মুসলিম ৯০৭)
আমি আপনাকে আরও ভয় দেখিয়ে বলছি এজন্য যে, রসূল স: মেয়েদের সম্বন্ধে বলেছেন এবং আপনিও তাদের একজন। দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান! মেয়েদের ব্যাপারে সবাধান! কারণ বনি ইসরাইলের মধ্যে প্রথম যে ফেতনা দেখা দেয় তার কারণ হল স্ত্রীলোক। (মুসলিম)
মুসলিম রমণী
দয়া করে আমার একটা ঘটনা শুনুন তাতেই বুঝতে পারবেন তারা কত বড় ফেতনার কারণ হতে পারে। আমাকে (লেখককে) বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী এক ব্যক্তি বলেছেন যে, (সৌদি আরবের) এক মহিলা তার স্বামীকে বাধ্য করেছে ১৮,০০০ রিয়াল (১,৮০,০০০/- টাকা) দিয়ে একটা কামিজ ক্রয় করে দিতে। হে আল্লাহর বান্দী! খুব ভালভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখুন, এটা কত বড় ফেত্না। জেনে রাখুন, আপনাকে আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হতে হবে। তাই নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনি কখনও জাহান্নামের আগুনকে সহ্য করতে পারবেন না। যদি বড় বড় পাথরের পাহাড়কেও ঐ আগুনের মধ্যে প্রবেশ করান হয়, তবে সাথে সাথে তা গলে যাবে। কোথায় আপনি আর কোথায় ঐ শক্ত কঠিন পাথরের পাহাড়! তাই হে মুসলিম রমণী! নিজেকে ঐ আগুন হতে বাঁচাতে তৎপর হোন দুনিয়ার সুখ ভোগ অতি সামান্য সময়ের জন্য। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে তার জন্য আখেরাত অতি উত্তম। তাই নিজেকে সম্পদ বা সৌন্দর্য্যরে, সন্তান ও বন্ধু বান্ধবের ধোঁকায় ফেলবেন না, কারণ এদের কেউই আপনাকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাতে পারবে না। তাই নিজকে ঐ ভয়ঙ্কর আগুন হতে বাঁচাতে যত্নবান হোন।
জেনে রাখুন, এই “মুসলিম রমণী” বইটি-তে বর্ণনা করা হয়েছে আপনার আত¥রক্ষার উপায় এবং সুখী হওয়ার পন্থা। তাই তাকে উত্তমরূপে পড়ূন এবং তার মধ্যে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা গুদয়ঙ্গম করতে চেষ্টা করুন এবং তার উপর আমল করতে সচেষ্ট হোন। ইন্শা আল্লাহ তবেই আপনি জাহান্নাম হতে নিস্কৃতি লাভ করতে পারবেন। আর যদি তা না করেন তবে আমার পক্ষ হতে আপনাকে সতর্ক করা হল এবং ভয় প্রদর্শনও করা হল। তাই পরকালে অন্যকে দোষ না দিয়ে নিজের উপরই দোষারোপ করবেন।
এই মুসলিম রমণী পুস্তিকায় ঐ সমস্ত বিষয়ও পাওয়া যাবে যে সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন অর্থাৎ আকীদা, ইবাদত, আদব এবং আখলাক। আর ঐ সমস্ত জিনিসও পাওয়া যাবে যা করতে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে নিষেধ করেছেন, যেমন শিরক এবং সকল প্রকারের হারাম কার্য (আকীদা) কথা ও আমলের মধ্যে। তাই আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়ে শিখতে থাকুন এবং আমল করতে থাকুন। আর আকীদা, ইবাদত, চরিত্র, আদব সর্ব বিষয়ে নিজের মধ্যে পূর্ণতা আনয়নের জন্য ছবর করতে থাকুন। তবেই আপনি জান্নাতের অধিবাসী হতে পারবেন ও জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়ে যাবেন। আল্লাহ আমাকে আপনাকে এবং সকলকেই সটিক পথে চলার তওফীক দান করুন। আমীন!
মুসলিম রমণী
হে মু’মিনা আপনার আকীদা
মেহেরবানী করে নিম্নের বিষয়সমূহের উপর ঈমান আনুন এবং তাদের উপর বিশ্বাস করুন এবং সাথে সাথে অন্তরে এটাও দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করুন যে তা সত্য (হক) এবং তাতে কোন ধোঁকা নেই। এটাতে ঈমান আনুন এবং বিশ্বাস করুন এবং এই আকীদা পোষণ করুন যে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই সম্পূর্ণ বিশ্ব জগতকেও সৃষ্টি করেছেন- উপরের এবং নীচের জগৎ, পৃথিবীর ক্ষুদ্র ধূলিকণা হতে আকাশের ছায়াপথসমূহ এবং এদের মধ্যে যা কিছু আছে মানুষ, পশু-পক্ষী, উদ্ভিদ তরুলতা এবং নির্জীব পদার্থসমূহ, তিনি আপনার সত্যিকারের প্রতিপালক এবং আপনার চতুষ্পার্শ্বে যে সমস্ত পদার্থসমূহ আছে এদের সকল কিছুরই প্রতিপালক তিনিই। আপনার উপরের এবং নিচের জগৎকে এবং যা কিছু জানেন না বা বুঝতে পারেন না সকল কিছুরই প্রতিপালক তিনি। তিনি আপনার এবং সমগ্র বিশ্ব জগতেরও প্রভু। তাঁর নাম “আল্লাহ’’। আর আল্লাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে “তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই যিনি সত্যিকারভাবে ইবাদত পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।” সমস্ত সৃষ্টিই তাঁর ইবাদত করছে, তাঁর হুকুম মত চলছে। তাঁর আধিপত্য স্বীকার করে নিয়েছে, তাঁকে পাওয়ার আশায় অথবা তাঁরই ভয়ে। যদি কখনও কোন অবচেতন মুহূর্তে আপনার অন্তর আপনাকে ধোঁকা দিয়ে বলে অথবা মানুষ বা জ্বীনদের কোন শয়তান ধোঁকা দিয়ে বলে যে, কিভাবে ঐ আল্লাহকে স্বীকার কর যাকে জীবনে কখনও দেখনি? তখন তাকে বলুন, কোন জিনিসকে বিশ্বাস করার জন্য দেখাটাই একমাত্র শর্ত হতে পারে না। কারণ, মানুষ যুগ যুগ ধরে এমন সমস্ত জিনিসের উপর বিশ্বাস এনেছে এবং তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেছে এবং সত্য বলে দৃঢ় ধারণা পোষণ করেছে যাদের তারা কখনও দেখেনি, এমনকি যারা তাদেরকে দেখছে তাদের পর্যন্তও দেখেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কেউ তার আব্বার দাদার দাদাকে বা আম্মার দাদার দাদাকে কখনই দেখেনি, তবু এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে তার পরদাদা অবশ্যই ছিল, আম্মার দিক হতে এবং আব্বার দিক হতেও। দ্বিতীয়তঃ আপনার শরীরে এখন যে তৈরি পোশাক আছে, তাকে যে বানিয়েছে তাকে কি কখনও দেখেছেন? অবশ্যই উত্তরে বলবেন: না। কিন্তু এটাতো অবশ্যই বিশ্বাস করেন যে, কেউ না কেউ তা অবশ্যই তৈরি করেছেন এবং পরে তারা ওটাকে বাজারে বিক্রি করেছেন এবং আপনি তা ক্রয় করেছেন। তৃতীয়তঃ আপনি কি কখন জাপানের রাজধানী টোকিও-কে দেখেছেন? অথবা এমন কাউকে কি দেখেছেন যিনি তা দেখেছেন? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর আসবে, না। কিন্তু আপনি তো এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এই শহরের অস্তিত্ব আছে। আর ঐ বিশ্বাস এসেছে এই ভিত্তিতে যে, মানুষ তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সর্বদা বলে থাকে। চতুর্থতঃ যদি কোন পিতা তার কন্যাকে বলে যে, আহমদ নামে তার এক ভাই আমেরিকাতে আছে, যাকে সে কখনও দেখেনি। কারণ সে তার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং তার জন্মের পূর্বেই পড়াশুনা করার জন্য সে আমেরিকা চলে গেছে, তবে কি সে তার পিতাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং তার পিতার কথাকে এই কারণে অস্বীকার করবে যেহেতু সে কখনও তাকে দেখেনি? অবশ্যই তার উত্তর না-বাচক হবে না। বরং সে তার পিতার কথাকে স্বীকার করবে এবং তার পিতার ঐ কথাকে বিশ্বাস করবে যে, আহমদ নামে তার এক ভাই আছে।
তারপর যদি আবার তার ভাই-এর তরফ হতে তার নিকট কোন পত্র আসে এবং তার ভাই আমেরিকা হতে তার জন্য কোন সুন্দর চুড়ি উপহার হিসেবে পাঠায়, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই সমস্ত জিনিস তার ঈমানকে বাড়াতে বাড়াতে একিনের পর্যায়ে পৌঁছে দেবে। ফলে এরপর যদি কেউ বলে যে, আহমদ নামে তার কোন ভাই নেই, তবে সে অবশ্যই তাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে এবং সাথে সাথে এটাও ধারণা পোষণ করবে যে, লোকটা আহাম্মক, বুদ্ধি বলে কোন পদার্থ তার মধ্যে নেই।
এরপর যদি অন্য একটা পত্র এসে পড়ে যাতে তার ভাই তার নিজের সম্বন্ধে এই বর্ণনা দেন যে, সে ফর্সা রংয়ের এবং মুখটা দেখতে চমৎকার এবং সে মাঝারি গঠনের, না অধিক লম্বা, না বেঁটে। সে উত্তম চরিত্রের বিভূষিত, উত্তম ও নেক কার্যকে পছন্দ করে এবং তা করতে যত্নবান হয় তবে কি এ সমস্ত বর্ণনা মেয়েটার জানার পরিধিকে বাড়িয়ে তুলবে না? ভাইয়ের অস্তিত্ব সম্বন্ধে তার ঈমান, একিন কি আরো বেড়ে যাবে না? অবশ্যই, এতদসত্ত্বেও যে, সে কখনও তার ভাইকে দেখেনি। প্রথমতঃ আপনার মাথায় কি এমন বুদ্ধি আছে যার দ্বারা আপনি আলাদা করে দেখাতে পারেন, কালো কয়লা এবং সাদা চর্বিকে।
মুসলিম রমণী
অন্ধকার এবং আলোকে-আলাদা বুঝাতে পারেন? আর রৌদ্র ও ছায়াকে আলাদা করে বুঝাতে পারেন? এবং খেজুর ও আগুনের টুকরাকে আলাদা করে দেখাতে পারেন? অবশ্যই বলবেন- হাঁ। তারপর যদি বলা হয় কোথায় আপনার আক্কেল বা বুদ্ধি? তা কি কখনও দেখেছেন? তখন অবশ্যই বলবেন যে, আমি জানি না, আমি কখনও তা দেখিনি। তবে কেন ঐ জিনিসকে বিশ্বাস করেন যাকে কখনও দেখেনি? এর উত্তর হচ্ছে, আপনার যে আকল আছে তার অস্তিত্বে আপনি বিশ্বাসী। কারণ, আপনি তার প্রভাব দেখেছেন। আর তা হল জ্ঞান। পরিচিত যে কোন জিনিসকে আলাদা করে চেনার ক্ষমতা এবং চক্ষু, কর্ণ, স্পর্শ ইত্যাদি দ্বারা যে সমস্ত জিনিসকে বুঝতে পারেন এবং বুদ্ধি দিয়ে যে সমস্ত জিনিসকে বুঝা যায় তাও বুঝতে পারেন। এর ফলে কোন প্রকারেই আপনি আপনার আক্কেল (বুদ্ধি)-এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারেন না।
আল্লাহ্ তা‘আলার অস্তিত্বও ঠিক তদ্রূপ। যদিও আমরা তাঁকে দেখতে পাই না এবং যারা তাঁকে দেখেছেন তাঁদেরকেও দেখতে পাই না, তথাপি আমরা একিনের সাথেই তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাসী। কারণ, চতুর্দিকের সমস্ত সৃষ্টি তাঁর অস্তিত্বের, তাঁর কুদ্রতের এবং তাঁর জ্ঞানের, তাঁর হেকমতের, তাঁর বাৎসল্যের, তাঁর দয়ার পরিচয় বহন করে চলেছে।
যে কোন জিনিসের অস্তিত্ব বুঝতে হলে তার থেকে যে প্রভাব প্রতিফলিত হয় তাকে সুন্দরভাবে পর্যালোচনা করতে হয়। ধরুন একটা সেলাইকৃত জামা অথবা একটা দেওয়াল অথবা রোপণকৃত একটা বৃক্ষ। নিশ্চয়ই সেলাইকৃত জামা এটা প্রমাণ দেয় যে, কোন ব্যক্তি মেশিনের সাহায্যে একে সেলাই করেছে। সেই রকম ঐ দেয়ালকে অবশ্যই কোন রাজমিস্ত্রী তৈরি করেছে। সেই রকম রোপণকৃত গাছকেও নিশ্চয়ই কেউ রোপণ করেছে। এজন্য এটার প্রয়োজন হয় না যে তাদের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করার জন্য দর্জিকে দেখতে হবে বা রাজমিস্ত্রীকে দেখতে হবে বা রোপণকারীকে দেখতে হবে। আমরা তাদের জ্ঞান, তাদের কুদরতকে বিশ্বাস করি, তাদের কাজের প্রভাবের দ্বারা যা তাদের অস্তিত্ব, এল্ম এবং কুদরতকে প্রকাশ করে।
অনুরুপভাবে আমাদের রব, আমাদের প্রতিপালকের অস্তিত্ব এবং তাঁর কুদরত, তাঁর এল্ম, তাঁর হেকমত- এর প্রভাব ও প্রতিফলন আমরা পাই এই বিশ্ব জগতের আসমান ও জমিনের প্রতিটি সৃষ্টির মাঝেই এবং এ সমস্ত মহান সৃষ্টি ও তাদের অদ্ভূূত কার্যাবলির মধ্যেও।
আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্বের, এলমের, কুদরতের এবং হেকমতের সর্বোচ্চ নিদর্শন হল তাঁর কিতাব; যা রাসূল স:-এর উপর নাজিল (অবতীর্ণ) করেছেন। তা হচ্ছে কুরআন মাজিদ, যাতে রয়েছে নানাবিধ জ্ঞান ও মারেফাতের পরিচয়। সেগুলো নিয়ে চিন্তা করলে মানুষের বুদ্ধি পর্যন্ত অচল হয়ে যাবে এ ভেবে যে, তা কখনই আল্লাহ্ ছাড়া, তাঁর কুদরত, এল্ম ও হেকমত ছাড়া আসতে পারে না। এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা এ ধরনের একটি সূরা রচনা করতে আরববাসীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। কিন্তু তারা অপরাগ হয়েছিল। তাই কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি কি এটা বিশ্বাস করবে যে এ ধরনের একটা কিতাব, যাতে আছে সমস্ত ধরনের এল্ম, শরীয়তের বিধি-বিধান, আদব-কায়দা, হুকুম-আহ্কাম, ইতিহাস, হেদায়েত এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংশোধনের চাবিকাঠি যা নাকি অবতীর্ণ হয়েছে এমন কারো নিকট হতে যার কোন অস্তিত্বই নেই। আর না সে সর্বোচ্চ জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, কুদরতওয়ালা এবং না সে সর্বোচ্চ শ্রবণকারী আর দর্শক। আল্লাহর কসম, এটা কখনই হতে পারে না।
যেমন টেবিলের উপরের পানির গ্লাসটি, ঐ স্থানে তা আসতে পারে না নিজে নিজেই যদি না কেউ তাকে রাখে ঐ স্থানে, তবে কিভাবে এই বিশ্ব জগৎ? আসমান, জমীন, সাগর এবং এদের উপরের এবং ভিতরের প্রতিটি সৃষ্টিই আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। এরা সকলেই সাক্ষ্য দিচ্ছে তাঁর কুদরতের, এল্মের এবং হেকমতের।
তারপর যদি আমরা আল্লাহর কিতাবকে খুব ভালভাবে বুঝে এবং বিশ্লেষণ করে পড়ি, তবে অবশ্যই দেখতে পাবো যে, তিনি তাতে তাঁর অস্তিত্ব, কুদরত, এল্ম, হেকমত এবং পরিপূর্ণতার স্বাক্ষর রেখে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ فِيْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ
অর্থাৎ (নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন ঐ আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করে তারপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন) (সূরা আরাফ, আয়াত নং-৫৪)
অন্যত্র বলেন ঃ
قُلْ مَنْ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অর্থাৎ (হে নবী আপনি) বলুন, কে সাত আসমান এবং মহান আরশের অধিকারী)? (সূরা মু’মিনূন, আয়াত নং-৮৬)
মুসলিম রমণী
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন ঃ
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْأَمْرَ
অর্থাৎ (হে নবী, আপনি তাদের) বলুন ঃ তোমরা আমাকে বল, কে আসমান ও জমিন হতে তোমাদেরকে রিজিক সরবরাহ করেন? আর কে-ই বা তোমাদের কর্ণের ও চক্ষের অধিকারী (যাদের দ্বারা তোমরা শ্রবণ কর ও দর্শন কর) আর কে-ই বা জীবিতকে বের করেন মৃত হতে এবং মৃতকে জীবিত হতে? আর কে-ই বা এই সমস্ত বিশ্বের কার্যসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করেন? (সূরা ইউনুস, আয়াত নং-৩১)
এরপর আমরা ঐ সমস্ত আয়াতের কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করব যা তাঁর কুদরত, এল্ম, রহমত (দয়া) এবং হেকমত প্রকাশ করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وَمِنْ اٰيَاتِهٰٓ أَنْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ إِذَآ أَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ (২০)
অর্থাৎ (এবং তাঁর কুদরতের নিদর্শনের মধ্যে আছে, তিনি তোমাদের (প্রথম) সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে [আদম আ:]। তারপর স্তরে স্তরে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন (মায়ের পেটে) এবং ধীরে ধীরে তোমরা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছ। (সূরা রূম, আয়াত নং-২০)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন ঃ
وَمِنْ اٰيٰتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ط لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلهِ السجدة الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ (৩৭)
অর্থাৎ (এবং তাঁর কুদরতের নিদর্শন হচ্ছে রাত্র ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করবে না, আর না চন্দ্রকে। বরং ঐ আল্লাহকে সেজদা (ইবাদত) কর যিনি এ সমস্ত সৃষ্টি করেছেন, যদি সত্যিকারভাবেই তোমরা তাঁর ইবাদত করতে চাও)। (সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত ঃ ৩৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন ঃ
وَمِنْ اٰيَاتِهٰٓ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْآ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةً ط إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ (২১)
অর্থাৎ (এবং তাঁর কুদরতের নিদর্শনের মধ্যে আছে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া (স্ত্রী) সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন ভালবাসা ও রহমতের সম্পর্ক)। (সূরা রূম, আয়াত নং-২১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন ঃ
وَمِنْ اٰيٰتِهٰ خَلْقُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ ط إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ لِّلْعٰلِمِيْنَ (২২)
অর্থাৎ (এবং তাঁর কুদরতের নিদর্শনের মধ্যে আছে, আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের মধ্যে নানা ধরনের ভাষা ও রংয়ের পার্থক্য)। (সূরা রূম, আয়াত নং-২২)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন ঃ
وَمِنْ اٰيٰتِهٰ يُرِيْكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَيُحْيٰ بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ط إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ (২৪)
অর্থাৎ (এবং তাঁর কুদরতের নিদর্শনের মধ্যে আছে, তিনি তোমাদের আকাশের বিদ্যুৎ চমকানো দেখান যাতে ভয়ও আছে আর আশাও আছে (বৃষ্টি ও মৃত্যুর) এবং তিনি আসমান হতে পানি বর্ষণ করে মৃত জমিনকে পুনর্জীবিত করেন)। (সূরা রূম, আয়াত নং-২৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন ঃ
وَمِنْ اٰيٰتِهٰٓ أَنْ تَقُوْمَ السَّمَآءُ وَالْأَرْضُ بِأَمْرِهٰ ط ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمْ دَعْوَةً ق ﺻﻠﮯ مِّنَ الْأَرْضِ إِذَآ أَنْتُمْ تَخْرُجُوْنَ (২৫)
অর্থাৎ (এবং তাঁর কুদরতের নিদর্শনের মধ্যে এও আছে যে, তাঁর হুকুমেই আসমান ও জমিন খাড়া আছে, তারপর যখন তিনি তোমাদের জমিন হতে ডাক দেবেন, তখন তোমরা তা হতে বের হয়ে পড়বে।) (সূরা রূম, আয়াত নং-২৫)
হে মু’মিনা! আপনি যখন আল্লাহকে জানতে পারলেন তাঁর কুদরতের এবং তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে তখন জেনে রাখুন আল্লাহ তা‘আলার ৯৯টা নাম রয়েছে ঐ নামের অসিলায় তাঁর নিকট দোয়া করবেন এবং তাঁকে ডাকবেন ঐ নামের যে কোন একটা ধরে এবং এ সমস্ত নামের প্রতিটিই পবিত্র ও সুন্দর এবং উচ্চগুণে বিভূষিত।

মুসলিম রমণী
Reviews
There are no reviews yet.