যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড
যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড
লেখক: আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলাবানী (রহ.)
প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: হাদিস, হাদিস বিষয়ক আলোচনা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৯৩
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
উম্মাতের মাঝে জাল ও যইফ হাদীছ এর কুপ্রভাব দূর করতে মুহাদ্দিসগণের প্ররিশ্রমের অন্ত নেই। আল্লাহর এই ওয়াহী সংরক্ষণ করতে তাঁরা পরিশ্রম করেছেন। তারা ছহীহ ও যঈফ হাদিস গুলোকে আলাদা করে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন যাতে আমরা যঈফ হাদিসের উপর আমল করে বিভ্রান্ত না হই। এছাড়া যেন আমরা ছহীহ হাদীছের উপর আমল করতে পারি। এরকমই একজন গত শতাব্দীর অন্যতম সেরা মুহাদ্দিস শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.)। তিনি যঈফ ও জাল হাদীছ সিরিজ নিয়ে “সিলসিলাতুল যঈফাহ ওয়াল মাউযুআহ’ নামে হাদীছ সিরিজ লিখেছেন। যার বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বইটির বৈশিষ্ট্য:
● যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড বইটির শুরুতেই হাদীছ সংকলন ও সংরক্ষণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে।
● যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড গ্রন্থটির তাহক্বীক বুঝতে হাদীছের পরিভাষা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
● বিভিন্ন বিষয়ের হাদীছগুলো ছড়িয়ে থাকলে সূচিপত্রে তা বিষয়ভিত্তিক আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। সাথে হাদীছটির মানও উল্লেখ করা হয়েছে।
● হাদীছটি কোন গ্রন্থে রয়েছে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
● হাদীছটির বিভিন্ন রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের উক্তি উল্লেখ সাপেক্ষে শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ)-এর তাহক্বীক উল্লেখ করা হয়েছে।
● কোন হাদীছের অংশবিশেষ ছহীহ হলে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি সিলসিলাহ সহীহাহতে থাকলে তার নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে।
● কোন হাদীছের তাহক্বীক আলবানী (রহ) পরবর্তীতে পরিবর্তন করলে তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড
এবং
উম্মাতের মাঝে তার কুপ্রভাব
দ্বিতীয় খণ্ড
হাদীছ ৫০১-১০০০
মূলঃ
আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)
অনুবাদঃ
আবূ শিফা মুহাম্মাদ আকমাল হুসাইন বিন বাদীউযযামান
লীসাপ মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।
এম, এ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
সম্পাদনাঃ
শাইখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম
লীলাপ- মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।
এম এ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
শাইখ আমানুল্লাহ বিন ইসমা’ঈল
লীসান্স মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।
ইসলাম মানুষের জন্য আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ও শাশ্বত জীবন বিধান। এতে মানব কল্যাণের যাবতীয় দিক বর্ণিত হয়েছে। ইসলামী জীবনাদর্শের মূল উৎস হ’ল আল্লাহর ‘অহি’ তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। আল্লাহ তা’আলা নিজেই যিক্র তথা অহি-কে হেফাযত করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আমরা বিক্র নাযিল করেছি এবং আমরাই তার হেফাযত করব (হিজর ৯)। এই ঘোষণা পূর্বেকার কোন এলাহী কিতাব সম্পর্কে তিনি দেননি। ফলে সেগুলির কোন অস্তিত্ব এখন পৃথিবীতে নেই। অনেকের ধারণা ‘যিকর’ বলে আল্লাহ কেবল কুরআনের হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন, হাদীছের নেননি। একথা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেন, ‘আমরা আপনার নিকটে ‘যি’ নাযিল করেছি, যাতে আপনি লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিলকৃত বিষয়গুলি তাদের নিকটে ব্যাখ্যা করে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে” (নাহল-৪৪)। আর কুরআনের ব্যাখ্যাই হ’ল ‘হাদীছ’। যা রাসূল নিজ ইচ্ছা মোতাবেক বলতেন না, যতক্ষণ না তাঁর নিকটে ‘অহি’ নাযিল হ’ত। যেমন আল্লাহ বলেন,’রাসুল তাঁর ইচ্ছামত কিছু বলেন না, যতক্ষণ না তাঁর নিকটে ‘অহি’ নাযিল হ’ত’ (নাজম ৩-৪)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘জেনে রেখ। আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি ও তার ন্যায় আরেকটি বস্তু’ (আবুদাউদ, মিশকাত হা/১৬৩)। সে বস্তুটি নিঃসন্দেহে ‘হাদীছ’, যার অনুসরণ ব্যতীত কেউ মুমিন হ’তে পারবে না। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রভুর শপথ। তারা কখনোই মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়সমূহে তোমাকেই একমাত্র সমাধানকারী হিসাবে গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালা সম্পর্কে তাদের মনে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ বোধ করবে না এবং অবনত চিত্তে তা গ্রহণ করবে।
অনেকের ধারণা কেবল লেখনীর মাধ্যমেই হেফাযত হয়, স্মৃতির মাধ্যমে নয়। তাদের একথা ঠিক নয়। কেননা প্রাচীন পৃথিবীতে যখন কাগজ ছিল না, তখন শিলালিপি ইত্যাদি ছাড়াও প্রধান মাধ্যম ছিল মানুষের ‘স্মৃতি’। জাহেলী যুগে আরবদের স্মৃতিশক্তির প্রখরতা ছিল কিংবদন্তীর মত। যা আজকালকের মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। শেষনবীকে আরবে প্রেরণের পিছনে সেটাও অন্যতম কারণ হতে পারে। এরপরেও রাসূলের প্রত্যক্ষ নির্দেশে ও ব্যবস্থাপনায় ‘কুরআন’ লিপিবদ্ধ ও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। হাদীছ লিখনের কাজও তাঁর নির্দেশে শুরু করা হয়। যদিও ব্যাপকহারে সবাইকে তিনি এ নির্দেশ দেননি। কেননা তাতে কুরআনের সঙ্গে হাদীছ মিলে যাবার সম্ভাবনা থেকে যেত। রাসূলের মৃত্যুর পরে উক্ত সম্ভাবনা তিরোহিত হবার পর ছাহাবীগণ হাদীছ সংগ্রহ ও সংকলনে মনোনিবেশ করেন। খুলাফায়ে রাশেদীন হাদীছ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। খলীফা ওমর বিন আবদুল আযীয় (৯৯-১০১ হিঃ) সর্বপ্রথম ব্যাপকহারে হাদীছ সংগ্রহ, সংকলন ও প্রচার-প্রসারের নিমিত্ত রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করেন ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেন
কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলে বারেজী-শী’আ, কাদারিয়া-মুরজিয়া ইত্যাদি বিদ’আতী ও ভ্রান্ত ফের্কা সমূহের উদ্ভব ঘটলে তাদের মধ্যে নিজেদের দলীয় স্বার্থে হাদীছকে ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা দেয়। ৩৭ হিজরীর পরের যুগে তখনই প্রথম হাদীছ বর্ণনাকারীর দলীয় পরিচয় ও স্বভাব-চরিত্র যাচাইয়ের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীণ (৩৩-১১০ হিঃ) বলেন, এসময় যদি দেখা যেত যে, বর্ণনাকারী ব্যক্তি ‘আহলে সুন্নাত” দলভুক্ত, তাহ’লে তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করা হ’ত। আর যদি দেখা যেত বিদ’আতী দলভুক্ত, তাহ’লে তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করা হ’ত না (মুকাদ্দামা মুসলিম পৃঃ ১৫)। বলা বাহুল্য, মুসলিম সমাজে প্রচলিত শিরকী আক্বীদা ও বিদ’আতী রসম-রেওয়াজ সমূহের অধিকাংশেরই মূল উৎস হ’ল জাল ও যঈফ হাদীছ সমূহ।
আল্লাহ পাক মানবজাতির কল্যাণে প্রেরিত স্বীয় যি’ তথা সর্বশেষ ‘অহি’ পবিত্র কুরআন ও হাদীছ সমূহকে হেফাযত করার জন্য যুগে যুগে অনন্য প্রতিভাসমূহ সৃষ্টি করেছেন। ছাহাবী ও তাবেঈগণের যুগ শেষে বিস্ময়কর মেধা ও প্রতিভার অধিকারী ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম প্রমুখ কুতুবে সিত্তাহর মুহাদ্দিছগণ ছাড়াও যুগে যুগে হাদীছের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমতে তাঁর বাছাইকৃত কিছু বিদ্বান চিরকাল হাদীছের খিদমত করে গিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর অতুলনীয় প্রতিভা মুহাম্মাদ নাছেরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) তাঁদের অন্যতম। তিনি ছহীহ ও যঈফ হাদীছের উপর পৃথক গ্রন্থসমূহ সংকলন করেছেন। যার অন্যতম হ’ল যার প্রতি খণ্ডে ৫০০ যঈফ ও মওযূ হাদীছ সংকলিত হয়েছে। এযাবৎ প্রাপ্ত এর ১৪টি খণ্ডের মধ্যে ১ম খণ্ডের বঙ্গানুবাদ করেছে স্নেহাস্পদ আকমাল হুসাইন বিন বাদী উদ্যামান।
বাংলাভাষী মুসলমানদের জন্য এটা ছিল অতীব যরূরী কাজ। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পাদন করে সে জাতির এক মহান খিদমত আঞ্জাম দিয়েছে। আল্লাহ তার এই ফ্লিমত কবুল করুন। আমরা আশা করব সে বাকী গুগুলির অনুবাদের কাজও করবে ও আল্লাহর রহমতে তা প্রকাশিত হবে। ইনশাআল্লাহ এ গ্রন্থের মাধ্যমে মানুষ যঈফ ও জাল হাদীছের অপপ্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে হাদীছের অনুসারী হবে।
তার এ অনুবাদ সুন্দর, সাবলীল ও সহজবোধ্য হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে পাঠকদের উপকারে আসবে। যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড গ্রন্থটি সকলের সংগ্রহে রাখার মত। আমি যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি। আমীন।
রাজশাহী ৭ই মার্চ ২০০৪
প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সাবেক চেয়ারম্যান, আরবী বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথম সংস্করণের ভূমিকা
প্রশংসা মাত্রই মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি তাঁর অশেষ মেহেরবানী আমাদেরকে নর অধিকারী মানব জাতি হিসেবে সম্মানিত করেছেন। তিনি বলেছেন “নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি, আমি তাদেরকে জলে ও স্থলে চলাচলের বাহন দান করেছি, তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি” (সূরা আল-ইসরা : ৭০)।
অতঃপর দুরূদ পাঠ করছি শেষ নাবী ও রসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর যার মাধ্যমেই আমরা আলোকিত জীবন লাভ করেছি এবং নিজেদেরকে অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাহেলী সমাজ ব্যবস্থা হতে মুক্ত করে পরস্পরে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ এবং মানুষের মনগড়া সমাজ ব্যবস্থার বেড়াজাল হতে নিজেদেরকে যুক্ত করার সুযোগ পেয়েছি। তথাপিও পুনরায় আমাদেরকে সেই অনৈতিক জাহেলী কর্মকাণ্ড এমন ভাবে ইসলামের দোহাই দিয়ে ঘিরে ধরেছে যা আমাদেরকে পৌত্তলিকতার যুগের কাছাকাছি ফিরিয়ে নিতে যাচ্ছে।
অন্ধভক্তি আৰু অতিরঞ্জিত ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে নাবী (সাঃ)-এর সহীহ সুন্নাহকে ছেড়ে নিয়ে তাই অাভিষিক্ত করছি জাল-যাক সূত্র দ্বারা প্রমাণিত তথাকথিত হানলগুলোকে। এটিই মনের অধিকারী মানব জাতির দাবী? আমরা বহু ক্ষেত্রে ভুলতে বসেছে সহীত সুন্দরকে আর ধরতে বসেটি জাল-যঈফের দ্বারা সাব্যস্ত বিদ’আতকে ভাগ করেছি বিদআতে হাসানা (ভাল বিদ’আত) এবং বিদ’আতে সাইয়েরাই (মন্দ বিদআত) দুর্ভাগে অথচ নাবী (সাঃ) বলেছেন : ‘এসবই ভ্রষ্টতা আর এসবই জাহান্নামে নিয়ে যাবে। আমরা একবারও ভেবে দেখছিনা শয়তান আমাদেরকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়। যে আমাদের আকীদাহ- বিশ্বাসে ও ঈমানের মধ্যে ত্রুটি বিচ্যুতি ঢুকানোর সুযোগে রয়েছে।
পাঠকবৃন্দ! আমাদেরকে একটি বিষয় ভালভাবে মনে রাখতে হবে নাবী (সাঃ) তাঁর বাণী সমূহের মধ্যে যা কিছু বর্ণনা করেছেন তার কিছুই তিনি নিজের পক্ষ হতে বানিয়ে বলেননি। এর প্রমাণ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নিম্নোক্ত বাণী:
অর্থ : “আর তিনি নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেন না, যতক্ষণ না তাঁর নিকট ওহী নাযিল হয়” (সূরা আন-নাজম : ৩-৫)।
অতএব যা কিছু আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে তার মাঝে জাল বা য’ঈফ সনদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তা দ্বারা অতিরিক্ত কিছু সাব্যস্ত করে নাবী ও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করার মত্ত ঝুঁকি না নিয়ে নিম্নোক্ত আয়াতের উপর আমল করার স্বার্থে সহীহ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করাই হবে প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তির জন্যে সত্যিকার জ্ঞানের পরিচায়ক। কারণ যা কিছু শুধুমাত্র যঈফ সনদ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে সেটিও নাবী (সাঃ)-এর কথা তা বলা যাবে না। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বলেন :
لوْمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَحْدُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا)
অর্থ : “তোমাদের নিকট রসুল যা কিছু নিয়ে এসেছেন তোমরা তা গ্রহণ কর আর তিনি যা কিছু হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক” (সূরা আল-হাশরঃ৭)।
আল্লাহ আরো বলেন :
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِن وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذا قضى اللهُ وَرَسُولَهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الخيرة من أمرهم ومَن يُغص الله وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالا مبينا سورة الأحزاب: ٣٦
অর্থ : “আল্লাহ ও তাঁর রসুল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণের কোন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।
(সূরা আল-আহযাব : ৩৬) যেখানে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ)-এর বাণী এসেছে সেখানে আমাদের স্বাধীনতা নেই। অথচ আমরা ধরে নিচ্ছি ইমাম আমাদের শিরোমণি। এটিই কী আমাদের ঈমানের দাবী? যদি এমনই হয় তবে বিদ’আত বলে সমাজে কিছু থাকবে ৰলে মনে হয় না। মিথ্যা বলে প্রমাণ করবেন মিথ্যা কী নাবীর অমীয় বাণী? “সকল বিদ’আতই ভ্রষ্টতা আর সকল বিদ’আতই নিয়ে যাবে জাহান্নামে।” নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক।
পাঠক ভাই ও বোনেরা! আমরা আমাদের সমাজের ইসলামী কাজ-কর্মগুলোর দিকে যদি একটু দৃষ্টি দেই তাহলে দেখব বহু প্রচলিত ইবাদাত, যা প্রকৃত পক্ষে বিদ’আত তার পিছনে জাল ও যঈফ নামের তথাকথিত হাদীসের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ ধারা ইসলামের স্বর্ণযুগ পরবর্তী দিনগুলো হতে শুরু করে অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে বলা যায় প্রতিটি যুগেই হাদীছ শাস্ত্রের মুহাক্কিক আলেম ও মুহাদ্দিসগণ জাল-যঈফ নামের হাদীছগুলোকে চিহ্নিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
নামের ১৫-এর অধিক ও বিশিষ্ট এক বিশাল গ্রন্থ রচনা করেছেন। যাতে তিনি পূর্বের সকল মুহাক্কিক মুজতাহিদ মুহাদ্দিস ও বিজ্ঞ আলেমদের মতামতকে সামনে এনে কোন হাদীছটি কেন জাল, কেন য’ঈফ তার সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি খণ্ডে ৫০০ টি করে হাদীসের উপর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তাঁকে উত্তম বদলা দান করুন। আমীন
আমার মনে হয় এসবের দিকে বর্তমান যুগের দ্বীনী আলেমগণই বেশী মুখাপেক্ষী। পাঠক ভাই ও বোনেরা। আমি কেন এ যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড গ্রন্থটি অনুবাদ করার কাজে হাত দিলাম? আপনারা হয়তো এর উত্তর অনেকটা পূর্বোক্ত আলোচনায় পেয়ে গেছেন। তবুও এ বিষয়ে কিছু আলোচনা না করলেই নয়।
প্রথমত: দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিভিন্ন মাধ্যমে বিশেষ করে ভারত উপ মহাদেশে ইসলামী সমাজের নিয়ম-নীতিতে বহু বিজাতীয় মতাদর্শের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যার পিছনে বহুলাংশেই হাত রয়েছে জাল- য’ঈফ হাদীসের। এ কারণে সমাজকে বিদ’আত মুক্ত করণের লক্ষ্যে প্রচলিত বিদ’আতগুলোর উৎপত্তি স্থল সম্পর্কে যদি আমরা সঠিকভাবে অবগত হতে পারি, তাহলে তা পরিত্যাগ করতে আমাদের সহজ হবে। এজন্যেই যঈফ ও জাল হাদীসের সিরিজটির অনুবাদ ও প্রচার আমাদের জন্য অতীব প্রয়োজন।
দ্বিতীয়তঃ আমরা নাবী (সাঃ)-এর বাণীর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাব যে, তিনি আমাদেরকে বিদ’আত এর ব্যাপারে কঠোর ভাষায় সতর্ক করেছেন। যেমন আমরা সকলেই জানি তিনি বলেছেন : “সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর বাণী এবং সর্বোত্তম আদর্শ নাবীর আদর্শ। সর্ব নিকৃষ্ট আমল হচ্ছে নব আবিষ্কৃত আমল আর সকল নব আবিষ্কৃত আমলই বিদ’আত এবং সকল বিদআতই পথ ভ্রষ্টতা আর সকল পথ ভ্রষ্টতার পরিনামই হচ্ছে জাহান্নাম। (অর্থাৎ জাহান্নামের মাধ্যম)।
অতএব জাল-যঈফের উপর নির্ভরশীল বিদ’আত হতে বাঁচার স্বার্থেই আমাদেরকে এরূপ তথাকথিত হাদীছগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
তৃতীয়তঃ বিদ’আত এমন একটি কাজ যার সাথে জড়িত থাকলে তাওবাহ নামক পাপ মোচনের অত্যন্ত মূল্যবান ইবাদাতকে বিতাড়িত করা হয়। এ তাওবাহ এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা আমরা বড় বড় গুনাহগুলো হতে খুব সহজেই (তাওবার শর্তগুলো পূরণ করে তাওবাহ করলে) পবিত্রতা অর্জন করতে পারি। অথচ এ বিদ’আত অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ তাওবার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। যেমন এর প্রমাণ পাচ্ছি নাবী (সাঃ)-এর বাণীতে
إنَّ اللهَ حَجَبَ الدُّوبَة عَنْ كُلِّ صاحب بِدْعَةٍ حَتَّى يَدَعَ بِدْعَبَّهُ
অর্থ : “আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিদ’আতির বিদ’আতকে পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তাওবার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন” হাদীছটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন। দেখুন সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৩০ হা: নং ৫৪) এবং সিলসিলাতুস সাহীহাহ (হাঃ নং ১৬২০)।
চতুর্থতঃ পাঠকবৃন্দ! আপনারা হয়তো শুনে আশ্চর্য হবেন যে, শির্কের চেয়েও বিদ’আত বেশী ঘূর্ণিত পাপ। কারণ শির্কের সাথে জড়িত ব্যক্তি তাওবাহ করলে তার তাওবাহ গৃহীত হয়। কিন্তু অন্য যে কোন বড় গুনাহ হতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য বিদ’আতির তাওবাহ বিদ’আত হতে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত গৃহীত হয় না। যার প্রমাণ উপরোক্ত হাদীছটি।
অতএব যে কোন ধরনের ইবাদাতের ক্ষেত্রে তার উপর আমল শুরু করার পূর্বেই প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী যা করতে উদ্যত হয়েছেন তা সহীহ দলীল দ্বারা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত করা উচিত নয়। অন্যথায় আল্লাহ না করুন জাল য’ঈফ হাদীছকে আমলে এনে নিজেদের জন্য মহা বিপদ ডেকে আনতে পারি। আর সেটি হচ্ছে তাওবার পথকে বন্ধ করে ফেলা। অতএব সাবধানতার কোন বিকল্প নেই।
ফযীলতের ক্ষেত্রে হোক আর অন্য যে কোন ক্ষেত্রে হোক সে সব ক্ষেত্রে সহীহ দলীলের কোন প্রকার কমতি ঘটেনি যে আপনাদেরকে ও আমাদেরকে জাল ও যঈফ হাদীসের উপর আমল করা জরুরী হয়ে পড়েছে এবং আমল না করলেই নয়। এমনটি ভাবা কোন বিবেকবান লোকের ক্ষেত্রে শোভা পায় না। কারণ সহীহ হাদীসে বর্ণিত ফযীলতগুলোর পরিমাণ এতই বেশী যে সে সবগুলোর উপর কোন ব্যক্তির পক্ষেই আমল করে শেষ করা সম্ভব হয় না। তাহলে যঈফের উপর আমল করার মত তার সময় কোথায়? আল্লাহর দেয়া বিবেক দিয়ে একটু ভেবে দেখুন।
যঈফ ও জাল হাদীসের অত্যন্ত ঘূর্ণিত ও মন্দ দিক হচ্ছে এই যে, যা বান্দাদের উপর ওয়াজিব নয় তা ওয়াজিব করে দেয়। এর প্রমাণ বইটি পড়লেই পাঠকদের নিকট স্পষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ, এ লক্ষ্যে যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড বইটিতে সহজ পাঠক ভাই ও বোনেরা! সবার জন্য সহজে সরল ভাষায় প্রতিটি বিষয়কে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, কহি সক্ষম হয়েছি তা আপনাদের বিচারেই প্রমাণিত হবে। এছাড়া যথাসাধ করেছি নির্ভুল ভাবে তথ্যাদিগুলোকে উপস্থাপন করতে। তার পরেও ভুল যে কয়নি তা বলা মুশকিল। অতএব যে কোন ধরনের ভুলের জন্য আমাকে অবহিত করলে বড়াই উপকৃত হবো এবং কৃতজ্ঞ থাকবো।
আশা করি আপনারা শুনে খুশি হবেন। আল্লাহর রহমতে দ্বিতীয় খণ্ডের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে এবং অনেকটা শেষের পথে। আল্লাহ চাহেত জতিসত্তর সেটিও প্রকাশ করতে সক্ষম হবো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমার এ প্রচেষ্টাকে কবুল করেন এবং এ খিদমাত অব্যাহত রাখার তাওফীক দান করেন।
অতঃপর আমি কৃতজ্ঞ সেই সব সম্মানিত দ্বীনি ভাইদের নিকট যারা সম্পাদনার কাজে অংশগ্রহণ করে তাঁদের সুচিন্তিত পরামর্শ দিয়ে গ্রন্থটির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে
- শাইখ আব্দুস সামাদ সালাফী, রাজশাহী (সউদী মাটিস)।
- শাইখ আ, ন, ম রাশীদ আহমাদ (ধর্ম বিষয়ক অফিস সউদী দূতাবাস) ।
- শাইখ মুশাররাফ হুসাইন আকন্দ (দা’ঈ আর, আই, এইচ, এস)।
- শাইখ এনামুল হক (প্রভাষক, উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা ইনস্টিটিউট, উত্তরা-ঢাকা)।
- শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মাসউদ (কর্মকর্তা দাও: বিভাগ আর আই, এইচ, এস)।
- মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম এম. এ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড গ্রন্থটি প্রকাশ করতে আরো যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের সকলকে উত্তম বদলা দান করুন।
দ্বিতীয় খণ্ডের বিশেষ বৈশিষ্ট্য সমূহ
এ খণ্ডের ভূমিকায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১। মুহাম্মাদ (স:) মাটি দ্বারা সৃষ্ট নূর দ্বারা সৃষ্ট নন।
২। বিদ’আতকে ভাল ও মন্দ দু’ভাগে ভাগ করা বিষয়ক সংশয় নিরসন।
৩। বিদ’আতের অর্থ ও তার কুপ্রভাব ।
- অধ্যায় ভিত্তিক সূচীপত্র।
- হাদীছ বর্ণনাকারীদের গুণাবলী বা দোষ-ত্রুটি বর্ণনাকারী এবং হাদীছকে সহীহ বা যঈফ আখ্যাদানকারী কতিপয় বিশেষজ্ঞ আলেমের সজীবনী আলোচনা করা হয়েছে। (যা এখন হতে পরবর্তী প্রতিটি খণ্ডে অব্যাহত থাকবে ইন্শাআল্লাহ)।
‘ফযীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে এ সংক্রান্ত সংশয় নিরসন
হাফিয সাখাবী “আল-কাগুলিল বাদী ফী ফাযলিস সালাতে আলাল হাবীবিশ শাফী” গ্রন্থে (পৃ: ১৯৫ হিন্দি ছাপা) ইমাম নাবাবী (রহঃ)-এর উদ্ধৃতিতে বলেছেন : মুহাদ্দিস এবং ফাকিহগণের মধ্য হতে কতিপয় আলেম বলেন :
ফযীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা জায়েয এবং মুস্তাহাব যদি হাদীছটি জাল না হয়। কিন্তু আহকামের ক্ষেত্রে যেমন হালাল, হারাম, বেচা-কেনা, বিবাহ, তালাক ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে না।
ইবনুল আরাবী মালেকী বলেন দুর্বল হাদীসের উপর কোন অবস্থাতেই আমन করা যাবে না। ইমাম শাওকানীও একই মত দিয়েছেন। আর এটিই সঠিক।
হাফিয ইবনু হাজার-এর নিকট দুর্বল হাদীছ-এর উপর আমল করার শর্তাবলী: হাফিয সাখাবী বলেনঃ আমি আমার শাইখকে বার বার বলতে শুনেছি দুর্বল হাদীসের উপর তিনটি শর্ত সাপেক্ষে আমল করা যাবে :
১। হাদীছটি যেন বেশী দুর্বল না হয়। অতএব মিথ্যুক, মিথ্যার দোষে দোষী এবং অস্বাভাবিক ভুলকারীদের একক বর্ণনা গৃহীত হবে না এবং এরূপ বর্ণনাকারীর হাদীসের উপর আমল করাও যাবে না।
২। যে আমলটির ফযীলত এসেছে সে আমলটির মূল সাব্যস্ত হতে হবে। অতএব যে আমলটির আসলেই কোন ভিত্তি নেই: এরূপ আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল ফদীস দ্বারা] ক্যীলত বর্ণিত হয়ে থাকলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না।
৩। কম দুর্বল হাদীছটির উপর আমল করার সময় এমন বিশ্বাস রাখা যাবে না যে, সেটি শরীয়তে সাব্যস্ত হয়েছে। কারণ সাব্যস্ত হয়েছে এরূপ বিশ্বাস রাখলে, তা রসূল (সাঃ)-এর উদ্ধৃতিতে বলতে হবে। অর্থাৎ এমন বিশ্বাস রাখা যাবে না যে, রসূল (সাঃ) তার উপর আমল করার জন্য বলেছেন।
শর্তগুলোর ব্যাখ্যাঃ
প্রথম শর্তে বলা হয়েছে ফবীলতের ক্ষেত্রে কম দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে। এ ফযীলত অর্জনের বিষয়টি কোন আমল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হতে পরে আবার কোন আমল ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও হতে পারে। তবে দুর্বল হুদীছগুলোর মধ্য হতে কোনটি কম দুর্বল আর কোনটি বেশী দুর্বল তা আগে নির্ণয় করতে হবে। অতঃপর যেটি কম দুর্বল সেটির উপর আমল করা যেতে পারে। কিন্তু কোনটি সহীহ, কোনটি দুর্বল, কোনটি কম দুর্বল এবং কোনটি বেশী দুর্বল তা
পার্থক্য করার দায়িত্ব কার? সন্দেহ নেই; নিশ্চয় এ বিষয়ের যারা পণ্ডিত ও বিজ্ঞ তাদেরকেই তা করতে হবে দু’টি কারণে :
১। পৃথক না করলে য’ঈফকে সহীহ হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে মনে করে তার উপর আমল করলে রসূল (সাঃ)-এর উপর মিথ্যারোপের ন্যায় বিপদেও পড়তে হতে পারে।
২। অনুরূপভাবে কম দুর্বলকে বেশী দুর্বল হতে পৃথক করতে হবে, যাতে কোন ব্যক্তি ফযীলতের ক্ষেত্রেও বেশী দুর্বল হাদীসের উপর আমল করে উল্লেখিত একই বিপদে না পড়ে। কিন্তু এরূপ পার্থক্যকারী বিজ্ঞ আলেমদের সংখ্যা অতীবगा।
দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়েছে যে, যে কর্মটির ফযীলত বর্ণিত হয়েছে সে কর্মটির মূল থাকতে হবে। অর্থাৎ কর্মটি সহীহ দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হতে হবে। অন্যথায় মূলহীন আমলের জন্য কযীলতের ক্ষেত্রে কম দুর্বল হাদীসের উপরও আমল করা যাবে না।
উল্লেখ্য দুর্বল হাদীছ দ্বারা আলেমদের ঐক্যমতে কোন আমলই সাব্যস্ত হয় না। যদিও সেটি মুস্তাহাব হয়। অতএব আমলই যদি সাব্যস্ত না হয়ে থাকে, তাহলে আমল এবং ফযীলত উভয়টি যে হাদীসের মধ্যে একই সাথে বর্ণিত হয়েছে, সে হাদীছ দ্বারা কোন অবস্থাতেই ফযীলত সাব্যস্ত হতে পারে না। যদিও হাদীছটি কম দুর্বল হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে মূলটি সহীহ দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে না।
তৃতীয় শর্তে বলা হয়েছে: কম দুর্বল হাদীসের উপর ফযীলতের ক্ষেত্রে আমল করা যাবে, তবে এ বিশ্বাস রাখা যাবে না যে, রসূল (সাঃ) হতে সাব্যস্ত হয়েছে। কারণ হতে পারে তিনি দুর্বল কথাটি বলেননি। ফলে তাঁর উপর আমল করতে গিয়ে মিথ্যারোপ করার মত বিপদে পড়তে হতে পারে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! যখন নাবী (সাঃ)-এর হাদীছ ভেবে কম দুর্বল হাদীসের উপরও আমল করা যাবে না, তখন তার উপর কোন স্বার্থে আমল করবেন? এটি কী ভেবে দেখার বিষয় নয়? এছাড়া সহীহ হাদীসের মধ্যে বর্ণিত ফযীলত সংক্রান্ত হাদীছগুলোর একচতুর্থাংশ হাদীসের উপর কী আমরা আমল করতে সক্ষম হয়েছি? সবিনয়ে এ প্রশ্নটি আপনাদের সমীপে রাখছি।
পাঠক ভাই ও বোনেরা। পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমান সমাজে বহুলোক জাল হাদীসের উপর আমল করছেন। অথচ যখন তাদেরকে বলা হচ্ছে, এসব হাদীসের উপর আমল করা না জায়েয। কারণ এগুলো জাল (বানোয়াট) তখন তারা উত্তরে বলছেন যে, ফবীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়। অজ্ঞতা আমাদেরকে এমনভাবে ছেয়ে ফেলেছে যে, দুর্বল, খুবই দুর্বল ও জাল- এসবের মাঝে আমরা কোনরূপ পার্থক্য করতেই রাখী নই। জাল হাদীছ যে-হাদীছই নয় বরং তা রসূল (সাঃ)-এর উপর মিথ্যারোপ তাও আমরা বুঝার চেষ্টা করি না।
অনেকে আবার বলেন যে, রসূল (সাঃ)-এর হাদীছ আবার কীভাবে জাল হয়? পাঠকবৃন্দ তারা ঠিকই বলেছেন। যেটি রসূল (সাঃ)-এর হাদীছ সেটি জাল হতে পারে না। যে কথাটি আপনাদের ও আমাদের মত মানুষে তৈরি করে বলে দিচ্ছি যে, এটি রসূল (সাঃ) বলেছেন, সেটিই জাল এবং সেটিই জাল হাদীছ হিসাবে আমাদের সমাজে পরিচিতি লাভ করেছে। এরূপ জালগুলোকেই আমরা পরিত্যাগ করে সহীহ সুন্নাহের দিকে আহ্বান করছি। আরো একটু ভেবে দেখুন! মিথ্যা (ভও) নাবী সাজা যদি সম্ভব হয় এবং বাস্তবে তার প্রমাণ মিলে, তাহলে নাবী (সাঃ)-এর উদ্ধৃতিতে মিথ্যা হাদীছ তৈরি করা কী এর চেয়ে বেশী সহজ নয়?
এরূপ জাল হাদীসের প্রচলন বহু যুগ পূর্ব হতেই চলে আসছে। ফলে বিজ্ঞ- বিচক্ষণ আলেমগণ সেই সব জাল-বানোয়াট এবং দুর্বল হাদীছগুলোকে একত্রিত করে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। সাথে সাথে কেন জাল, কেন বেশী দুর্বল এবং কেন কম দুর্বল? এসবের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
অতএব আমাদেরকে একটু ভেবে দেখতে হবে দুর্বল হাদীসের উপর আদৌ আমল করা যাবে কিনা? যদিও কোন কোন আলেম দুর্বল হাদীসের উপর শুধুমাত্র কবীলতের ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে আমল করা যাবে মর্মে মত পেশ করেছেন।
পাঠকবৃন্দ! আপনারা যদি দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে মর্মে বর্ণিত তিনটি শর্ত একটু ভেবে দেখেন, তাহলে হয়তো আপনাদের নিকট ‘কম দুর্বল হাদীসের উপর আমল না করাই যুক্তিযুক্ত’ এ মতটিই স্পষ্ট হবে।
আরো একটি সমস্যা বর্তমান সমাজে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেটি হচ্ছে ফযীলত সম্পন্ন আর ফযীলত বিহীন সর্বক্ষেত্রেই একই মন্ত্র পাঠ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়। ক্যীলত কথাটি মুছে ফেলা হচ্ছে অথচ ফযীলত ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে কম দুর্বল হাদীছও আমলযোগ্য নয়।
এছাড়া রসুল (সাঃ)-এর উপর যে মিথ্যারোপ করা হবে তার প্রমাণ বহন করছে স্বয়ং রসূল (সাঃ)-এর বাণী
١. (مَنْ كَذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار).
(১) “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে তার স্থান বানিয়ে নিবে”। (বুখারী ও মুসলিম)।
من حدت عَلي بِحَدِيثِ يُرى أنه كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الكَاذِبِينَ)
(২) “যে ব্যক্তি আমার উদ্ধৃতিতে এমন ধরনের হাদীছ বর্ণনা করল, ধারণা করা যাচ্ছে যে, সেটি মিথ্যা। সে ব্যক্তি মিথ্যুকদের একজন বা দু’ মিথ্যুকের একজন” (মুসলিম)।
. إن كنيا على لَيْسَ كَكَذب على أَحَدٍ، فَمَنْ كَتَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبُوا
مقعده من النار)
(৩) “আমার উপর মিথ্যারোপ করা তোমাদের পরস্পরের মাঝে মিথ্যারোপের মত নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল” (মুসলিম)।
مَنْ قَالَ عَلَى مَا لَمْ أقل فليتبوأ مقعده من النار).
(৪) “যে ব্যক্তি আমার উপর (নামে) এমন কথা বলল যা আমি বলিনি, সে তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল’ (ইবনু হিব্বান, হাদীছটি হাসান পর্যায়ের)।
২ নম্বর এবং ৪ নম্বর হাদীছটি প্রমাণ করছে যে, ইচ্ছাকৃত মিথ্যারোপ না করলেও হয় সে মিথ্যুক না হয় তার স্থান জাহান্নামে।
অতএব যে ব্যক্তি বলবেন যে, রসূল (সাঃ)-এর হাদীস আবার কীভাবে জাল হয়। তার উত্তর উক্ত বাণীগুলোর মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। মিথ্যা হাদীস যদি তার উপর বানানোই না হতো তাহলে তিনি হাদীসগুলো উল্লেখ করে কঠিন শাস্তির কথা বলে সতর্ক করে দিতেন না। মিথ্যুকদের দ্বারা তাঁর উদ্ধৃতিতে মিথ্যা হাদীস বর্ণিত হবে জেনেই তিনি উক্ত শান্তির কথা বলেছেন। অন্যথায় তাঁর বাণীগুলো অর্থহীন হয়ে যেত। অথচ তাঁর বাণী অর্থহীন হতে পারে না।
এছাড়া যা কিছু শুনবেন আর তাই বর্ণনা করবেন এরূপ কাজও সহীহ হাদীস বিরোধী। কারণ রসূল (সাঃ) বলেছেন
كفى بالمرء كنيا أن يُحدث بكل ما سَمِعَ)
“মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শুনবে তাই হাদীস হিসাবে বর্ণনা করবে”। (ইমাম মুসলিমসহ আরো অনেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)।
শাইখ আলবানী উক্ত বিষয়ে “সহীহ জামে ‘ইস সাগীর ওয়া যিয়াদাতুহ” গ্রন্থের ভূমিকাতে যে বিবরণ দিয়েছেন তার সার সংক্ষেপ সহ আরো কিছু বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করা হলো।
অনেকে এরূপ ধারণা পোষণ করেন যে, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে এ মর্মে কোন মতভেদ নেই। বাস্তবিক পক্ষে তা সঠিক নয় বরং এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। যা মুস্তালাহুল হাদীসের উপর রচিত গ্রন্থ সমূহে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। যেমন শাইখ জামালুদ্দীন কাসেমী (রহঃ) তার “কাওয়ায়েদুল হাদীস” (পৃঃ ১১৩) গ্রন্থের মধ্যে একদল ইমামের মতামত উল্লেখ করেছেন, যারা কোন অবস্থাতেই দুর্বল হাদীসের উপর আমল করাকে বৈধ মনে করেননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইবনু মাঈন, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, আবু বাক্ আল-আরাবী ও আরো অনেকে। তাদের দলে ইবনু হাযমও রয়েছেন।
হাফিয ইবনু রাজাব “শারহুত-তিরমিযী” (ক্বাফ ২/১১২) গ্রন্থে বলেন:
ইমাম মুসলিম কর্তৃক তার সহীহ গ্রন্থের ভূমিকাতে উল্লেখকৃত বাণীগুলোর বাহ্যিকতা প্রমাণ করছে যে, যাদের থেকে আহকামের হাদীসগুলো বর্ণনা করা হয়ে থাকে তাদের ন্যায় ব্যক্তিদের নিকট ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে তারগীব (উৎসাহমূলক) এবং তারহীবের (ভীতিমূলক) হাদীসগুলোও বর্ণনা করা যাবে না।
আমি (আলবানী) বলছি: আমি লোকদেরকে যে দিকে আহ্বান করছি তা হচ্ছে এই যে, দুর্বল হাদীসের উপর কোন অবস্থাতেই আমল করা যাবে না, চাই- ফাযায়েলের ক্ষেত্রে হোক বা মুস্তাহাবগুলোর ক্ষেত্রে হোক কিংবা অন্যকিছুর ক্ষেত্রে হোক।
কারণ বিনা মতভেদে আলেমদের নিকট দুর্বল-হাদীস দুর্বল ধারণা অথবা অনুমানের অর্থ বহন করে। যেখানে আল্লাহ তা’আলা একাধিক আয়াতে অনুমানের উপর ভিত্তি করে আমল করাকে অপছন্দ করেছেন সেখানে কীভাবে বলা যায় দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে
وَمَالَهُمْ بِهِ مِن عِلم إِن يَتَّبِعُونَ إلا الظن وإن الظن لا يُعْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا)
অর্থ : “এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানের উপর চলে। অথচ সত্যের ব্যাপারে অনুমান মোটেই ফলপ্রসু নয়’ (সূরা আন-নাজমঃ ২৭- ২৮)।
إن يتبعون إلا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الأنف
অর্থ ঃ “তারা কেবল মাত্র অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে” (সূরা আন- নাজম : ২৩)।
আর রসূল (সাঃ) বলেন “তোমরা অনুমান করা হতে নিজেদের রক্ষা কর, কারণ অনুমানই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা মিথ্যা (হাদীস) কথা” (হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন)।
জেনে রাখুন! যারা দুর্বল হাদীসের উপর ফাযায়েলের ক্ষেত্রে আমল করা যাবে এরূপ কথা বলেছেন তাদের পক্ষে কুরআন ও হাদীস হতে কোনই দলীল নেই। দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য এমন ধরনের একটি দলীলও তাদের কোন আলেমের পক্ষে দেয়া সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র একে অপর হতে কতিপয় উক্তি বা মত উল্লেখ করেছেন। যা তর্কের স্থলে গ্রহণযোগ্য নয়। তা সত্ত্বেও তাদের ভাষ্যের মধ্যেও মতদ্বন্দ লক্ষণীয়, যেমন ইবনুল হুমাম বলেছেন “দুর্বল হাদীস দ্বারা মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয়, জাল হাদীস দ্বারা নয়। অতঃপর তিনি মুহাক্কেক জালালুদ্দীন আল-দাওয়ানী হতে নকল করেছেন তিনি ‘আলেমগণ একমত পোষণ করেছেন যে, দুর্বল হাদীস দ্বারা শরীয়াতের পাঁচটি আহকাম (ফরয, মুস্তাহাব, মুবাহ, মাকরূহ ও হারাম) সাব্যস্ত হয় না, যে পাঁচটির মধ্যের একটি হচ্ছে মুস্তাহাব।
লক্ষ্য করুন। ইবনুল হুমাম বলেন দুর্বল হাদীস দ্বারা মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয়, অথচ তিনি নিজেই বর্ণনা করছেন যে, সকলের ঐক্যমতে পাঁচটি আহকামের কোনটিই সাব্যস্ত হয় না। যার মধ্যে মুস্তাহাবও রয়েছে। অতএব তার কথায় ছন্দ স্পষ্ট। তিনি আদ-দাওয়ানী হতে যে বক্তব্য বর্ণনা করেছেন তাই সঠিক। কারণ ধারণা বা অনুমানের দ্বারা কোন আমল করা হতে শরীয়তে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে যেটি সম্পর্কে আপনারা অবগত হয়েছেন। যারা দুর্বল হাদীসের উপর ফাযীলতের ক্ষেত্রে আমল করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন তারা ধারনার বশবর্তী হয়েই তার উপর শর্ত সাপেক্ষে আমল করা যাবে বলে মত প্রদান করেছেন। যা সম্পূর্ণ আল্লাহর নির্দেশনা বিরোধী হয়ে যাচ্ছে।
ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিঃ) “আল-কায়েদাতুল জালীলাহ ফিত তাওয়াসুলে ওয়াল ওয়াসীলা” (পৃ ৮২) গ্রন্থে বলেছেন :
“শরীয়তের মধ্যে যঈফ হাদীসগুলোর উপর নির্ভর করা জায়েয হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সেগুলো সহীহ বা হাসান পর্যায়ভুক্ত এরূপ প্রমাণিত না হবে। তবে ইমাম আহমাদ ও আরো কতিপয় আলেম ফাযীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসকে বর্ণনা করা জায়েয বলেছেন যদি মূল আমলটি শার’ঈ সহীহ দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে প্রমাণিত হয় এবং উক্ত সাব্যস্ত হওয়া আমলটির ফযীলতে বর্ণিত দুর্বল হাদীসটি মিথ্যা নয় বলে জানা যায়। আর এরূপ হলে হয়তো সওয়াবটি সত্য বলা জায়েয হতে পারে। কোন ইমামই বলেননি যে, যঈফ হাদীস দ্বারা কোন বস্তুকে ওয়াজিব বা মুস্তাহাব হিসাবে সাব্যস্ত করা জায়েয, যে ব্যক্তি এরূপ বলবেন তিনি ইজমার বিপরীত কথা বলবেন। অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেনঃ ইমাম আহমাদ এবং তার ন্যায় কোন ইমাম শরীয়াতের মধ্যে এ ধরনের হাদীসের উপর নির্ভর করেননি। যে ব্যক্তি ইমাম আহমাদ হতে এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি দুর্বল হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন (যেটি সহীহও নয় আবার হাসান পর্যায়ভুক্তও নয়) তিনি ভুল করেছেন।এছাড়া কোন আমলের ফযীলত বর্ণিত হলে, সে ফীলতটিও মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) কর্মের পর্যায়ভুক্ত। আর আপনারা জেনেছেন যে, সকল ইমামের ঐক্যমতে কোন মুস্তাহাব যঈফ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয় না। অতএব কোন কোন ইমামের নিকট শর্তসাপেক্ষে ফবীলতভুক্ত যঈফ হাদীসের উপর আমল করা যাবে, এরূপ মতকে গ্রহণ করা মোটেই বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে না।

যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খণ্ড
Reviews
There are no reviews yet.