যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
যাদু অত্যন্ত বড় কবীরা গুনাহ যা মানুষকে শিরকের দিকে ধাবিত করে এবং ঈমান ধ্বংস করে দেয়। বর্তমান যুগে রোগ-ব্যাধি ও পাপ ব্যাপকতা যেমন লাভ করেছে তেমনি এগুলোর সাথে সাথে জাদুর ব্যাপকতা লাভ করেছে। সমাজের আনাচে কানাচে এর ব্যবহার অত্যন্ত মারাত্বকভাবে প্রসার লাভ করেছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম বালীর রচিত ‘যাদু ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী’ বইটিতে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছেঃ
- যাদুর পরিচয়।
- যাদুর প্রমান।
- যাদুর প্রকারভেদ।
- যাদুকরের জ্বিন হাজির করার পদ্ধতি।
- ইসলামে যাদুর হুকুম।
- কেরামত, মু’জেযা ও যাদুর মধ্যে পার্থক্য।
- একটি সংশয় ও তার নিরাসন।
- কোন কোন পদ্ধতিতে যাদু করা হয়।
- যাদু দিয়ে মানুষের কি কি ক্ষতি করা যায়।
- যাদুর প্রতিকার বিবরণ সহ
আরো অনেক বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। যাদু, জ্যোতিষি ও গনকগিরি শয়তানী কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত। ঈমান-আকীদা নষ্টকারী বিষয়। কেননা এগুলো শিরক ও কুফুরীর মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। এজন্য শরীয়ত শিরকের সাথে সাথে যাদু থেকেও সতর্ক করে। এই গুরুত্ত্বপুর্ণ বিষয়টি জানতে বইটি ডাউনলোড করুন, পড়ুন এবং আপনার বন্ধু/আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করুন।
যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী
মূল:
ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম বালী
অনুবাদ:
আবদুর রব আফফান
প্রকাশনায়:
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা, বাংলাদেশ।
যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী
সূচিপত্র
বিষয়:
- অনুবাদকের আরয
- প্রকাশকের কথা
- লেখকের দশম প্রকাশের ভূমিকা
- প্রথম অধ্যায়
- যাদুর পরিচয়
- দ্বিতীয় অধ্যায়
- কুরআন ও হাদীসের আলোকে যাদু
- প্রথমঃ কুরআন দ্বারা প্রমাণ
- দ্বিতীয়তঃ হাদীস দ্বারা প্রমাণ
- যাদুর অস্তিত্বের প্রমাণসমূহ
- একটি সংশয় ওতার নিরসন
- যাদুর অস্তিত্ব সম্পর্কে মনীষীদের উক্তি ও মতামত
- তৃতীয় অধ্যায়
- যাদুর প্রকারভেদ
- যাদুর প্রকারভেদ কেন্দ্রিক একটি প্রতিপাদন
- চতুর্থ অধ্যায়
- যাদুকরের জ্বিন হাজির করার পদ্ধতি
- যাদুকর কিভাবে জ্বিন হাজির করে?
- যাদুকরের জ্বিন হাজির করার পদ্ধতি
- যাদুকর চেনার উপায় ও আলামত
- পঞ্চম অধ্যায়
- ইসলামে যাদুর হুকুম
- ইসলামী শরীয়তে যাদুকরের হুকুম
- আহলে কিতাব অমুসলিম যাদুকরের বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশ
- যাদু দিয়ে যাদু দমন করা কি বৈধ?
- যাদু শিক্ষা করা কি বৈধ?
- কেরামত মু’জেযা ও যাদুর মধ্যে পার্থক্য
- ষষ্ঠ অধ্যায়
- যাদুর প্রতিকার
- যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি
- যাদুকে দমন করার পদ্ধতি
- স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছে ঘটানোর যাদু
- দু’ ব্যক্তির মাঝে বিচ্ছেদের জন্য যাদু যেভাবে করা হয়
- যাদু দ্বারা বিচ্ছেদ ঘটানোর শিক্ষামূলক কতিপয় বাস্তব উদাহরণ
- যাদুর দ্বিতীয় প্রকারঃ আসক্ত করার যাদু
- যাদুর তৃতীয় প্রকারঃ নজরবন্দী বা ভেল্কিবাজির যাদু
- চতুর্থ প্রকার যাদুঃ পাগল করা যাদু
- পঞ্চম প্রকারঃ একাকিত্ব ও নির্জনতা পছন্দের যাদু
- ষষ্ঠ প্রকারঃ অজানা আওয়াজ শুনতে পাওয়া
- সপ্তম প্রকারঃ কাউকে যাদুর মাধ্যমে শারীরিকভাবে রোগী বানিয়ে দেয়া
- অষ্টম প্রকারঃ ইস্তেহাযা অর্থাৎ জরায়ু থেকে অনিয়মিত দীর্ঘ মেয়াদী স্রাবের যাদু
- নবম প্রকারঃ বিয়ে ভাঙ্গার যাদু
- যাদুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ
- সপ্তম অধ্যায়
- স্ত্রী সহবাসে হঠাৎ অপারগ হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা
- যৌনক্ষমতা লোপ, যৌন দুর্বলতা এবং পুরুষত্বহীনতার পার্থক্য
- নিঃসন্তান হওয়ার বা বন্ধ্যাত্বের প্রকারভেদ
- দ্রুত বীর্যপাতত হওয়া
- যাদুর প্রতিরোধের উপায়
- যৌন ক্ষমতা নষ্টকারী যাদুর এক বাস্তব উদাহরণ
- অষ্টম অধ্যায়
- বদ নজর লাগা
- বদ নজর ও হিংসার মধ্যে পার্থক্য
- জ্বিনের বদ নজর মানুষকে লাগতে পারে
- বদ নজরের চিকিৎসা
- বদ নজরের চিকিৎসার কতিপয় বাস্তব উদাহরণ
যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী
অনুবাদকের আরয
إنَّ الحَمْدُ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ، وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورٍ أَنْفُسِنَا مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ، وَرَسُولُهُ، (يَأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقْتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُّسْلِمُونَ (١٢)
অর্থঃ “হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা প্রকৃত ভীতিসহকারে আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান হওয়া ব্যতীত মৃত্যুবরণ করো না।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১০২)
يَأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ج وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِه وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (۱)
অর্থঃ “হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তদীয় সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং সে আল্লাহকে ভয় কর যাঁর নামের দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরকে তাগাদা কর এবং আত্মীয়তাকেও ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের তত্ত্বাবধানকারী ( সুরা আন-নিসা )
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا لا (٢٠) يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ
وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ، وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا (۷۱)
অর্থঃ “হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের কর্মকে ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” (সূরা আহযাব ৩৩ঃ৭০-৭১)
وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى سَيّدِنَا مَحَمَّدٍ عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، الَّذِي أَرْسَلَهُ رَبُّهُ
بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيَظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ.
যাদু, জ্যোতিষী ও গণকগিরি ও শয়তানী কর্মের অন্তর্ভুক্ত । ঈমান আকীদা নষ্টকারী বিষয়। কেননা এগুলো শিরক ও কুফুরীর মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হয়ে থকে। শিরক ও পাপাত্মা ব্যতীত যাদু করা সম্ভব নয়। এজন্য শরীয়তে শিরকের সাথে সথে যাদ থেকেও সতর্ক করে। যেমন নবী (সা.) বলেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشَّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرَّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ
وَالتَّوَلَّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذَفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ
আবূ হুরাইয়া (র:) হতে বর্ণিত নবী করীম (স) বলেনঃ তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু হতে বেঁচে থাক। সাহাবাগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলালাহ! সেগুলো কী? তিনি উত্তরে বলেনঃ (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) যাদু করা, (৩) হক পন্থা ব্যাতীত কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা, (৪) সুদ খাওয়া, (৫) ইয়াতীমের মাল খাওয়া, (৬) যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা ও (৭) স্বতী-স্বাধ্বী সরল মু’মিন নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া।
যাদু দু’কারণে শিরকের অন্তর্ভুক্তঃ
প্রথমতঃ এতে রয়েছে আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, তার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং সে যেন যাদুকরের কথামত কাজ করে এজন্য যে, সে যা চায় তাই বাস্তবায়ন করা। সুতরাং যাদু হলো শয়তানেরই শিক্ষা ও আমল । যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ
অর্থঃ “অনন্তর যাতে স্বামী ও তদীয় স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করতো।” (সূরা বাকারা ২ঃ১০২)
দ্বিতীয়তঃ যাদুতে সাধারণতঃ ইলমে গায়েব দাবী করা হয় ও তাতে আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব বুঝায়; তাই এটি শিরক ও গোমরাহী। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَريهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ
অর্থঃ অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, তার জন্যে পরকালে কোনই অংশ নেই, যদি তারা তা জানতো! (সূরা বাকারা ২ঃ১০২)
অতএব এ থেকে সাব্যস্ত হয় যে, যাদু নিশ্চয় শিরক ও কুফুরী এবং ঈমান ও আকীদা বিনষ্টকারী ও পরিপন্থী। অনেকে মনে করে যাদুকর, জ্যোতিষী ও গণকের নিকট গেলে উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়, উপকার লাভ করা যায়। উপকার পাওয়া গেলেও লক্ষ্য করতে হবে যে, সে পদ্ধতি ও মাধ্যম জায়েজ কিনা? এরূপ অনেক জিনিসেই উপকার পাওয়া সম্ভব কিন্তু তা হারাম সাব্যস্ত হওয়ার কারণে তা দ্বারা উপকার নেয়াও হারাম। যেমনঃ আল্লাহ নিজেই মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারের কথা উল্লেখ করে বলেন:
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ، قُلْ فِيْهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنْفِعُ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَّفْعِهِمَا.
অর্থঃ “মাদক দ্রব্য ও জুয়া খেলা সম্বন্ধে তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তুমি বলঃ এ দুটোর মধ্যে গুরুতর পাপ রয়েছে এবং কোন কোন লোকের (কিছু) উপকার আছে, কিন্তু ও দুটোর লাভ অপেক্ষা পাপই গুরুতর।” (সূরা বাকারা ২ঃ২১৯)
অতএব মদ ও জুয়ায় উপকার থাকা সত্ত্বেও হারাম হওয়ার কারণে তা বর্জন করা অপরিহার্য। সুতরাং যাদু, জ্যোতিষী ও গণকের নিকট গেলে উপকার পাওয়া সত্ত্বেও তা শিরক ও কুফুরী হাওয়ার কারণে তা হতে যে থাকা অপরিহার্য।
অতএব যারা অজ্ঞতা ও ঈমানের দুর্বলতাবশতঃ যাদুর আশ্রয় গ্রহাণ করে যা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্যের সাথে সম্পর্ক রাখা এবং আল্লাহর ও তার রাসূলের হুকুম পরিপন্থী। সুতরাং আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তাদের প্রতি আমার আন্তরিক উপদেশ হলো- হালাল চিকিৎসা গ্রহণ করুণ। নবী (সা.) বলেন, “তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর কিন্তু হারাম চিকিৎসা নিও না” । তিনি আরো বলেনঃ “আল্লাহ এমন কোন রোগ দেননি যার তিনি চিকিৎসা দেননি।” যার জানার সে জেনেছে আর যার না জানা সে জানে না। তাই আপনি ডাক্তারের নিকট যান, সেখানে পরীক্ষা করান, বৈধ উপযুক্ত চিকিৎসা নিন; এটি বৈধ পন্থা। অনুরূপ আপনি কুরআনের আয়াত ও সূরার মাধ্যমে চিকিৎসা করুন। কেননা কুরআন আপনার আত্মিক ও দৈহিক চিকিৎসার গ্যারান্টি। অনুরূপ হাদীস হতে আপনি রাসূলের (স.) চিকিৎসা গ্রহণ করুন। যেমনঃ দু’আ, যিকির, মধু, কালজিরা, যমযম পানি, যায়তুন ইত্যাদি নবী ( সাঃ ) হতে যা প্রমাণিত সেগুলো ব্যবহার করুন।
এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শায়খ ওয়াহীদ আব্দুস সালাম বালী অতি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তাঁর আরবী ভাষার এইঃ আরবী নামক অমূল্য বইটিতে যার বাংলায় নাম দেয়া হয়েছেঃ “যাদু ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী”। যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী বইটির ইতি পূর্বে অনেক ভাষাতে অনুবাদ হয়ে গেছে। প্রায় এক বছর পূর্বে বিশ্বখ্যাত ভারত উপমহাদেশের গৌরব পাকিস্তানের দু’ মহামনীষী আল্লামা ইহসান ইলাহী জহীর ও আল্লামা ডঃ ফজলে ইলাহে জহীরের কনিষ্ঠ ভাই জনাব আবেদ ইলাহী জহীর আমার অফিসে আগমন করে বইটির গুরুত্ব বর্ণনা করতঃ অনুবাদের জন্য জোর তাগিদ করেন। কিন্তু নিজের অসুস্থতা ও ব্যস্ত তার কারণে বইটির অনুবাদে অনেক দেরী হয়। তার পরেও যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী বইটি শেষ করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। তারপর শুকরিয়া আদায় করি যিনি বহু উৎসাহ ও তাগিদ নিয়ে অনুবাদের কাজ সমাপ্ত করিয়ে স্বীয় প্রকাশনা “বায়তুস সালাম” হতে প্রকাশ করেন। আল্লাহ তা’আলা যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী বইটির লেখক অনুবাদক ডিজাইনার ও বর্ণবিন্যাসকারী জানাব আসাদুল্লাহ সহ প্রকাশক ও সংশিষ্ট সকল সহযোগীদেরকে এর উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী বইটি বহুবার প্রকাশ লাভ করে তাতে বিষয়ের ক্ষেত্রে কিছু সংজোযন ও বিয়োজন হয়। অধিক উপকারার্থে একাধিক এডিশনের সমন্বয়ে বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে, যার ফলে কোন নির্ধারিত এডিশনের সাথে সামঞ্জস্য না হওয়াই স্বাভাবিক। আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও ভুল ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক । তাই পাঠক মহলের নিকট অনুরোধ যদি বইটিতে কোন প্রকার ভুল ত্রুটি ধরা পড়ে তবে জানালে আমরা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ ।
মুহাম্মাদ আবদুর রব আফফান
রিয়াদ, সৌদি আরব
যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী
প্রকাশকের কথা
যাদু কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। অনেকের মতে যাদুকরকে হত্যা করা ওয়াজিব। যাদুর শুরু হতে শেষ সম্পূর্ণই অপবিত্র ও শিরক বিজড়িত। আর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “শিরক নিশ্চয়ই বড় যুলুম।” (সূরা লোকমান ৩১ঃ১৩)
যাদুতে রয়েছে যাদুকরের জন্য বহু ধরনের ক্ষতিঃ
১। ঈমান চলে যায়।
২। নিরাপরাধ মানুষকে কষ্ট দেয়ার গুনাহ। হাদীসে এসেছেঃ “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার হাত, পা ও মুখের অনিষ্ট হতে অন্য মু’মিন নিরাপদ না হয় ।”
৩। কুরআনের আয়াত উল্টা লিখা ও নাপাক বস্তু দ্বারা লিখার গুনাহ ।
৪ । দু’মুসলমানের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে দেয়ার গুনাহ ।
৫। হারাম রুজী কামানোর গুনাহ। হাদীসে বর্ণিত, যে ব্যক্তি এক লোকমা হারাম খায় তার ৪০ দিন ইবাদত কবুল হয় না। আর এমতাবস্থায় তাওবা না করে মারা গেলে সে সরাসরি জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
৬। মহা শিরকের গুনাহ ।
বর্তমান যুগে যেখানে অগণিত রোগ ব্যাধি ও পাপ ব্যাপকতা লাভ করেছে অনুরূপ যাদুও অনেক ব্যাপকতা লাভ করছে। আপনি কোথাও সফর করলে সফরকালে বিভিন্ন স্থানে যাদুর বহু দোকান ও সাইন বোর্ড দৃষ্টিগোচর হবে। যাদুর পর্দার আড়ালে সংঘটিত হয় বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও নগ্নতা ।
যাদুকররা বিভিন্নভাবে লোকেদেরকে পথভ্রষ্ট করছে। কেউ ঝাড়-ফুঁক করে, কেউ ভবিষ্যতের অবস্থার খবর দেয়, কেউ হস্তরেখা দেখে ভাগ্যের অবস্থা জানায়। কেউবা কবুতর উড়িয়ে সুলক্ষণ ও কুলক্ষণ নির্ণয় করে ।
নবী (স) বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষীর নিকট গেল এবং তার নিকট কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করল তবে ৪০ রাত পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না ।” (সহীহ মুসলিম)
অন্য এক হাদীসে নবী (স) বলেনঃ ঐ ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় যে ব্যক্তি কুলক্ষণ নির্ণয় করে বা যার জন্য তা নির্ণয় করা হয়, অথবা গায়েবের খবর দেয় বা যার জন্য তা দেয়া হয় অথবা যে যাদু করে বা যার জন্য যাদু করা হয় । আর যে ব্যক্তি গণকের নিকট গেল ও সে যা বলল তা মেনে নিল, তবে সে মুহাম্মাদ (স)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা অস্বীকার করল । (বায্যার সঠিক সূত্র)
কোন মুসলমানের জন্য জায়েয নয়, সে যাদুকরের নির্দেশমত চিকিৎসার অনুসরণ করবে। কেননা এসব গণকের কারসাজী ও প্রতারণা । যে ব্যক্তি তাদের সে বস্তুগুলোর উপর সন্তুষ্ট হবে সে অবশ্যই কুফর ও গোমরাহীর সহায়ক সাব্যস্ত হবে ।
সম্মানিত শাইখ ওয়হিদ আব্দুস সালাম বালী (হাফেজাহুল্লাহ) এর যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী বইটিতে তিনি যাদুর পরিচয় হতে শুরু করে যাদুর চিকিৎসা বিস্তারিতভাবে অনুরূপ যাদু নষ্টের উপায়গুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাকে এই পরিশ্রমের ইহকালও পরকিালে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুণ। যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী বইটির সুন্দর সাবলিল ও সরল ভাষায় বঙ্গানুবাদ করেন মুহাম্মাদ আব্দুর রব্ব আফ্ফান। আল্লাহ তাঁকে এর উত্তম বিনিময় দান করুন। এছাড়াও যারা বিভিন্নভাবে যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী বইটি প্রাকাশে সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ তাদেরকেও উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। যার ফলে আমি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আল্লাহ আমাদের উত্তম কাজগুলো কবুল করুন! আমীন!
আপনাদের দ্বীনি ভাই
হাফেজ আবেদ ইলাহী
ডাইরেক্টর
বায়তুস সালাম
যাদু ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
লেখকের দশম প্রকাশের ভূমিকা
الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَي وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ
وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ.
আল্লাহ তা’আলা তার নবীর (সা) পর যুগে যুগে হক্কানী উলামায়ে কিরাম, গবেষক, ইমাম, হুকুম-আহকামের সুসংরক্ষক, ফিকাহ শাস্ত্রবিদ, সুন্নাতের পতাকাধারী মুহাদ্দিসগণ হিদায়েতের পথ নির্দেশক দায়ীগণ তারা প্রত্যেকেই এই দ্বীনের পতাকা বহনকারী ও নবীদের মহা উত্তরসূরী।
আমি সাক্ষী দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা’বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর সমস্ত প্রশংসা, তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ (সাপাহার) আল্লাহর বান্দা তাঁর রাসূল ।
হে আল্লাহ! তোমার নবীর প্রতি যেমন ঈমান এনেছি কিন্তু তাঁকে দেখিনি। তবে তুমি জান্নাতে তাঁর দর্শণ থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করো না। হে আল্লাহ যেমনভাবে তাকে অণুসরণ করেছি তার বিনিময়ে তাঁর হাউসে কাউসারের পানি তুমি পান করার তাওফীক দান কর যা পান করলে তারপর আর পিপাসিত হবো না। হে আল্লাহ! আমার এক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু তোমার জন্য খালেশ করে দাও। এর মধ্যে কারো কোন অংশ (তোমার সাথে অংশীদার হিসাবে) রেখ না।এর দ্বারা আমাকে তুমি ঐদিনে উপকৃত কর, যে দিন আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ অন্তর ওয়ালা ব্যতীত কারো জন্য তার ধন-সম্পদ, সন্তান সন্ততি কোন উপকারে আসবে না। যখন আমার কিতাব , (জ্বিন ও শয়তানের থেকে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা) নামক কিতাবটি প্রকাশিত হল যার পরিসমাপ্তিতে এই যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী কিতাবটির প্রকাশনার জন্যে অঙ্গীকার করেছি। তখন থেকে মুসলিম বিশ্ব থেকে যাদু সম্পৰ্কীয় এই যাদু ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী কিতাবটি বের করার জন্যে অসংখ্য ব্যক্তিবর্গ আমাকে উদ্বুদ্ধ করছিল, আমি তখন ফিকাহ শাস্ত্রের অধ্যাপনায় রত ছিলাম ।
অতঃপর লোকজনের এই যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী কিতাবের প্রতি বেশি আকর্ষণ থাকায় আমি খুব সংক্ষেপে গ্রন্থটি রচনা করলাম। যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী কিতাবটি প্রকাশনার পর ত্রিশ হাজার কপি শেষ হয়ে যায় প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই। তাতে ভাবলাম আমি আমার কিছু দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর সৌদি আরবসহ মিসর, সুদান, উপসাগিরীয় দেশসমূহ সিরিয়া, লিবিয়া, তিউনিস, আলজেরিয়া, মরক্কো এবং অন্যান্য দেশ থেকে বহু পত্র আসতে থাকে। যাত তারা আমাকে সুসংবাদও দিয়েছেন যে, তারা কিতাবে উল্লেখিত শরীয়তসম্মত পন্থায় চিকিৎসা করে আল্লাহর মেহেরবানীতে আরোগ্য লাভ করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ অনেক পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী কিতাবের বিষয়াবলী দ্বারা যাদুর প্রকৃত রূপ বুঝা যায় । এমনকি এই সব লোক যারা যাদু টোনা দিয়ে চিকিৎসা করে দাবী করে যে, তারা কুরআনের মাধ্যমে চিকিৎসা করে তাদের গোপন তথ্য বের হয়ে আসে। যখন লোকজন এই যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী কিতাবে উল্লেখিত বিষয় “যাদুকরকে চিনার মাধ্যমসমূহ” পড়ে তখন তারা প্রথম মুহুর্তেই তাকে চিনতে পারে । আলহামদুলিল্লাহ ।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণঃ
১। মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার উপদেশ, যারা চিকিৎসা করেন, তাঁর যেন শরীয়তসম্মত চিকিৎসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। এর পরিধীর বাইরে গিয়ে যেন হারাম পতিত না হন ।
২। আমি শুনেছি যে, এ বিষয়ের অনেক কবিরাজ ও চিকিৎসক মহিলাদের চিকিৎসার ব্যাপারে শিথিলতা করে থাকেন। যেমনঃ মহিলাকে তার নিকট বেপর্দায় আসার অনুমতি দেয়া, মহিলার বিনা মাহরাম বা নিজস্ব পুরুষের অবর্তমনে চিকিৎসা করা। অতএব চিকিৎসকদের উচিত, তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে। নিজেকে রক্ষা করে ও তার স্রষ্টাকে স্মরণ রাখে।
৩। শুনেছি কোন কোন চিকিৎসক এ চিকিৎসায় নির্ধারিত বিনিময়ের শর্তারোপ করে থাকে ও দলীল হিসেবে আবূ সাঈদ ( (সা) এর হাদীস পেশ করে থাকে, যে হাদীসটি বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনায় আশ্রয়স্থলের লোকেরা যে ব্যবহার করেছে তার প্রতিশোধস্বরূপ তাদের প্রতি চিকিৎসার বিনিময় নির্ধারণ করেন, তবুও তা আরোগ্য লাভের পর।
৪। রুগীরা যেন বড় বেশধারী হুজুর, পীর বা চিকিৎসকের আকার- আকৃতি দেখে ধোঁকায় না পড়ে। বরং সে আল্লাহভীরু কুরআনের চিকিৎসক তালাশ করে ।
৫। মহিলা রুগীর নিজস্ব পুরুষদের উচিত তারা যেন চিকিৎসকের নিকট মহিলাকে একাকি না ছেড়ে দেয় যদিও তাদের নিকট চিকিৎসাককে সবচেয়ে বড় আল্লাহ ভক্ত মনে হয়। কেননা তা হারাম নাজায়েয। নাবী করীম (সা.) পর নারীর সাথে নির্জনতা ও একাকিত্বকে নিষেধ করেছেন।
পরিশেষে নিবেদন করি যে, আমাদের লক্ষ হলো হক প্রকাশ করা ও তা বর্ণনা করা, আকাঙ্ক্ষা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি, আমাদের তরীকা বা পন্থা হলো— সাহাবা ও তাবেয়ীদের বুঝার আলোকে কুরআন ও হাদীসের তরীকা । সুতরাং যে ব্যক্তি এ গ্রন্থে যা বর্ণনা ও দাবী করলাম তার বিপরীত পাবে তার জন্য জরুরী হলো আমাদেরকে উপদেশ দেয়া। আল্লাহ সেই বান্দার সাহায্যে আছে যে বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে আছে। হে আল্লাহ আমাদের পথ ভ্রষ্টতা, ভুল-ভ্রান্তি হতে রক্ষা কর, সৎ আমলের তাওফীক দাও শন্তির পথ প্রদর্শন কর, মুহাম্মাদ এবং তার বংশধর সাহাবা ও তাবেয়ীদের প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষণ কর ।
লেখক
ওয়াহীদ

যাদুকর ও জ্যোতিষের গলায় ধারালো তরবারী
Reviews
There are no reviews yet.