যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান

৳ 180

যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান
লেখক : আব্দুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী
প্রকাশনী : তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয় : ফিকহ ও ফাতাওয়া-মাসায়েল
পৃষ্ঠা : ২৮৮, কভার : হার্ড কাভার

Description

যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান

যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান
লেখক : আব্দুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী
প্রকাশনী : তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয় : ফিকহ ও ফাতাওয়া-মাসায়েল
পৃষ্ঠা : ২৮৮, কভার : হার্ড কাভার
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলকিশেন্স

একজন মানুষের যুবক বয়সের যে মান, মর্যাদা ও মূল্য আছে তা অন্য কোন বয়সের নেই। ইউমাল কিয়ামাহর কঠিন দিনে যখন আল্লাহর আরশ ব্যতীত আর কোন ছায়া থকবে না তখন আল্লাহ পাক যে সাত শ্রেণীর মানুষকে তার আরশের ছায়া দিবেন তার মধ্যে এক শ্রেণী হল সেসব মানুষ যারা যৌবনকাল আল্লাহর আনুগত্যে অতিবাহিত করেছে। অথচ আমাদের চিরায়ত ধারণা যৌবন কাল হল আনন্দ-ফুর্তি করার সময়, দুনিয়াকে উপভোগ করার সময়। সব বয়সের মানুষেরই সমস্যা থাকে, তেমনি যুবক যুবতীদেরও রয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান এবং ইচ্ছা শক্তি থাকলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব। যুবক যুবতীদের এই পথ থেকে ফেরানো এবং তাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের সঠিক সমাধান দেওয়াই এই যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান কিতাবের উদ্দশ্য।


যুব সমস্যা তার শরঈ সমাধান

প্ৰণয়নে

শায়খ আবদুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী

বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ইসলামী গবেষক, লেখক, মুহাক্কিক আলিম ও দাঈ

প্রকাশনায়

তাওহীদ পাবলিকেশন্স

ঢাকা, বাংলাদেশ।


যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান

সূচীপত্র

বিষয়:

  • ভূমিকা প্রারম্ভিক কথা
  • যুবক ও বেকারত্ব
  • বেকারত্ব প্রসূত দুঃখ-জ্বালা
  • যুবক এবং ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও প্রগতি যুবক ও পরিবেশ
  • যুবক ও প্রচার মাধ্যম
  • যুবক ও শিক্ষা-ব্যবস্থা
  • যুবক ও অনুকরণ-প্রবণতা
  • যুবক ও বন্ধুত্ব
  • যুবক ও খেলাধূলা
  • যুবক ও গান-বাজনা যুবক ও যৌবন নজরবাজি
  • যুবক ও নারী-প্রেম
  • প্রেমরোগের চিকিৎসা
  • পবিত্র প্রেম ব্যভিচার
  • ব্যভিচারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ভয়ঙ্কক পরিণতি
  • সমকাম
  • পশুগমন
  • হস্তমৈথুন
  • স্বপ্নদোষ
  • যুবক ও বিবাহ-সমস্যা
  • যুবক ও মনের আঁধার
  • তকদীরে হয়রান
  • যুবক ও অন্ধ-গোঁড়ামি
  • পরিশিষ্ট

যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান

ভূমিকা

প্রত্যেক জাতির জন্য তার যুব-সমাজ হল সকল প্রগতি ও উন্নয়নের প্রধান স্তম্ভ। যুবসমাজই হল জাতির মেরুদণ্ড, জাতির ভবিষ্যৎ এবং আগামী দিনের আশার আলো ।

যুব-সমাজ হল জাতি ও উম্মাহর গর্ব। যে যুবক আল্লাহর দ্বীনের আলোকে আলোকপ্রাপ্ত, কিতাব ও সুন্নাহ-ভিত্তিক ইসলামী চরিত্রে চরিত্রবান, পার্থিব জ্ঞান- বিজ্ঞানে প্রগতিশীল । এমন উন্নত যুবককে নিয়েই উম্মাহ গর্ব করে ।

জীবনে সব শ্রেণীর মানুষেরই সমস্যা আছে। সমস্যা আছে যুবক ও তরুণ- সমাজের। সে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অনেক যুবকই ঘায়েল হয়ে পড়ে। অথচ সমস্যা যতই জটিল হোক না কেন, চেষ্টা ও পথ জানা থাকলে তার সমাধান সহজ হয়ে যায়। ইসলাম হল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলার নিকট থেকে আসা মানুষের জন্য এক পূর্ণ জীবন-বিধান; যাতে আছে জীবনের সব ধরনের সমস্যার সমাধান।

কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, অজ্ঞানতা অথবা খেয়াল-খুশীবশে বহু যুবক মনে মনে এই ধারণা পোষণ করে যে, জীবনের এটাই হল আনন্দের মুহূর্ত। এ সময়টাই হল স্বাচ্ছন্দ্য ও সুখ লুটার সময়। এরপরে বার্ধক্য এসে পড়লে জীবনের আর কোন স্বাদ ও সাধ অবশিষ্ট থাকবে না। অতএব এ সময় আমোদ- আনন্দ করে নিয়ে বৃদ্ধ হলে আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য করা যাবে এবং যৌবনকালের সকল বিষয়ের ক্ষতিপূরণ করে দেওয়া যাবে ।

অথচ এমন চিন্তাধারা প্রকৃতত্ব থেকে বহু ক্রোশ দূরে। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যময় জীবনেই প্রকৃত আনন্দ নিহিত আছে। কেউ তা মানুক, চাহে না মানুক ।

দ্বিতীয়তঃ এ জীবনের কোন বিকল্প নেই, কোন পরিবর্ত নেই। এ সময় যে আবার ফিরে আসবে তা কোন ক্রমেই সম্ভব নয় ।

‘যৌবন বসন্ত-সম সুখময় বটে

দিনে দিনে উভয়ের পরিণাম ঘটে।

কিন্তু পুনঃ বসন্তের হয় আগমন,

ফিরে না ফিরে না কভু, ফিরে না যৌবন।’

এ বয়সের যে মূল্য, মান ও মর্যাদা আছে, তা জীবনের অন্য কোন বয়সে নেই। এ জন্যই কিয়ামতের মাঠে লোকেদের অবস্থা যখন সঙ্গিন হবে এবং প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরের সূর্য মাথার উপরে মাত্র এক মাইল দূরে এসে উপস্থিত হবে, তখন মহান আল্লাহ কয়েক শ্রেণীর মানুষকে সম্মানের সাথে তাঁর আরশের নীচে ছায়া দান করবেন। এদের মধ্যে এক শ্রেণীর মানুষ হবে সেই যুবকদল, যারা তাদের যৌবনকাল আল্লাহর আনুগত্যে অতিবাহিত করেছে। (বুখারী ৬৬০, মুসলিম ১০৩১ নং) সুতরাং ইলাহী এ পুরস্কারের কাছে পার্থিব যে কোনও সুখ ও সম্পদ অতুলনীয় ।

তৃতীয়তঃ মানুষ কাল কিয়ামত কোর্টে তার আয়ু ও যৌবনকাল কোথায় কিভাবে অতিবাহিত করেছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। তাহলে যে ব্যক্তি তার যৌবনকালকে আল্লাহর অবাধ্য থেকে রঙ্গরসে কাটিয়ে দেবে, সে ব্যক্তি ঐ জিজ্ঞাসার উত্তরে কি বলবে?

চতুর্থতঃ মানুষের যৌবনকাল হল শক্তি, সামর্থ্য, সজীবতা, উদ্যম ও কর্মোদ্যোগের সময়কাল। এই সময়কাল অতিবাহিত হলে মানুষ ধীরে ধীরে দুর্বলতার দিকে ঢলে পড়ে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে দুর্বলরূপে সৃষ্টি করেন, দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দেন, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।” (সূরা রূম ৫৪ আয়াত)

সুতরাং এ কথা কোন জ্ঞানী বলতে পারে না যে, শক্তি ও সজীবতার অবস্থায় অবহেলা করে দুর্বল ও বৃদ্ধ অবস্থায় সে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করবে।

পঞ্চমতঃ এ কথার নিশ্চয়তা কোথায় যে, যুবক অবশ্যই বৃদ্ধকাল পর্যন্ত সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে। কারণ, এমনও তো হতে পারে যে, সে যুবক অবস্থাতেই কোন ব্যাধি অথবা দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে ইহজগৎ চিরদিনের মত ত্যাগ করে যাবে।

অতএব জ্ঞানী যুবকের উচিত হল, মহানবী এর এই উপদেশ ঘাড় পেতে মেনে নেওয়া। তিনি বলেন, “পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে গনীমত (অমূল্য সম্পদ) জেনে কদর করো; তোমার মরণের পূর্বে তোমার জীবনকে, তোমার অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, তোমার ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসর সময়কে এবং তোমার দারিদ্রের পূর্বে তোমার ধনবত্তাকে।” (আহমাদ, কিতাবুয যুহদ্, হাকেম, বাইহাকীর শুআবুল ঈমান, সহীহুল জামে ১০৭৭ নং)

ইসলাম ও মুসলিমদের দুশমনরা বিভিন্ন প্রচার-মাধ্যম ও চিত্তবিনোদনমূলক কেন্দ্র ও যন্ত্রের মাধ্যমে যুব-সমাজকে এমন মাতিয়ে রেখেছে যে, উক্ত কদর করার মত ফুরসৎ তাদের নেই। নেই কিছু ভেবে ও বিবেক করে দেখার মত এতটুকু অবসর। ঐ সবের মাধ্যমে ওরা তাদেরকে পুনঃ পুনঃ এমন আফিং খাইয়ে ফেলছে যে, চৈতন্যপ্রাপ্ত হওয়ার সুযোগটুকুও নেই। এই সংকট-মুহূর্তে প্রয়োজন আছে প্রতিকার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার। তাদের জীবন ও যৌবনে সৃষ্ট নানা সমস্যার শরয়ী সমাধান দানের।

আমাদের উলামা ও চিন্তাবিদ্‌গণ যে এ প্রয়োজন দূর করার কাজে পিছিয়ে আছেন তা নয়। এ মর্মে তাঁরা বহু কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সেই সাগরের দিকে বেগবান্ আমার চেষ্টার এ এক ক্ষুদ্র নদী। আল্লাহর কাছে আশা এই যে, তিনি যেন এ নদীর পানি দ্বারা যুব-সমাজের পিপাসিত হৃদয়সমূহকে পরিতৃপ্ত করেন এবং তাদের জীবনের সকল সমস্যাকে দূর করে দিয়ে নিজের পথে টেনে নেন । আমীন ।

বিনীত

আব্দুল হামীদ ফাইযী

আল-মাজমাআহ সউদী আরব


যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান

প্রারম্ভিক কথা

মানুষ তার প্রকৃতিগত সৃষ্টি বৈচিত্রে পর্যায়ক্রমে যে সব জীবন লাভ করে। থাকে তন্মধ্যে শৈশব ও কৈশর জীবনটাই সব চাইতে নির্মল ও বিঘ্নহীন। শিশুকিশোর মনে পিতা-মাতার স্নেহাশিস্ সুখের ঢেউ তোলে। পিতামাতার সর্বপ্রকার সুখ ও সমৃদ্ধিই তার হৃদয়-কুসুমকে দোলা দেয়। এ সময়কার সকল ভূত-ভবিষ্যৎ ন্যস্ত থাকে অভিভাবকের উপর।

অবশ্য এর পরবর্তী জীবনই হল বড় মধুর, বড় তিক্ত, বড় সুখময়, বড় জ্বালাময়। বড় কোমল, বড় কঠিন। বড় চাঞ্চল্যময়, বড় চিন্তাময় । এ পর্যায়ে এসে তরুণ মন সকল প্রকার, শৃঙ্খল এড়াতে চায়। ছিন্ন করতে চায় সকল বন্ধন। যৌবনের উন্মাদনার ঐ পাগলা ঘোড়া উল্লংঘন করতে চায় সকল বাধা- বিপত্তিকে। ছন্নছাড়া বাঁধন হারা হয়ে বিচরণ করতে চায়। লাগামহীন প্রবৃত্তির প্রবণতা। হাওয়ার তালে তালে দুলে ওঠা সমুদ্রের তরঙ্গমালার মত, ঝড়ো হাওয়ার ক্ষিপ্র গতির মত, বাদলা মেঘের পাগলা বারিপাতের মত, সুউচ্চ পর্বতের বাধাহীন জলপ্রপাতের মত বুকে এসে প্রতিহত হয় তারুণ্যের মনোবল, যৌবনের যৌনজ্বালা, তাজা শক্তির শৌর্য ও বীর্য।

‘তুমি কে? তুমি মদোন্মত্ত মানবের যৌবন,

তুমি বারিদের ধারা জল মহাগিরির প্রস্রবণ।’

জীবনের এই পর্যায়ে বল্গাহীন পাগলা ঘোড়ার লাগাম জরুরী। এমন কুলকুল তান নদীর দুকুলে বাঁধ হওয়া আবশ্যিক। যৌবনের এ চাঞ্চল্যময় ক্ষিপ্ৰ গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই দরকার। তা না হলে বিপদ অনিবার্য। পরিণামবড় মন্দ ।

মানুষের মন বড় মন্দপ্রবণ হলেও বৃদ্ধের তুলনায় যুবকের মন বড়ই সরল । বৃদ্ধের মনে যে কট্টর মনোভাব ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থাকে তা দূর করা ততটা সহজ নয়, যতটা সহজ একজন যুবকের মন থেকে তা দূর করা। সুতরাং জীবনের এ পর্যায়ে যুবক যে তরবিয়তী বিশেষ তালীম পাওয়ার যোগ্য তা বলাই বাহুল্য । যদিও এ উচ্ছৃঙ্খলতার যুগে এ কাজ ততটা সহজ নয় । মেনে নেওয়া ও মানানো উভয় কাজের ক্ষেত্রেই পরিবেশ আমাদের প্রতিকূলে। তবুও মানতে হবে, মানাতে চেষ্টা করতে হবে। হেদায়াত আল্লাহর হাতে। আর সহজ নয় বলেই কিয়ামতের সে ছায়াহীন প্রখর রৌদ্রতপ্ত প্রান্তরে এমন যুবক আল্লাহর ছায়ায় আশ্রয় পাবে, যে তার ঐ যৌবনকালকে আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে অতিবাহিত করে। সত্যই তো, যে রাজপথে চলে সে তার মত নয়, যে ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার’ লংঘন করে উদ্দিষ্ট পথে অগ্রসর হয়।

অবশ্য সংস্কার ও সংশোধনের পথে যেমন যুবগোষ্ঠীর নিজস্ব মন ও ঐকান্তিক আগ্রহ থাকা দরকার, ঠিক তেমনি আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা দরকার বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ সমাজের। নচেৎ মসজিদের ইমাম যুবক হলে যদি বৃদ্ধরা দূরে দূরে থাকে এবং বৃদ্ধ হলে যুবকদল তাঁর কাছ না ঘেসে, তাহলে অভীষ্ট ফল যে লাভ হবে না তা বলাই বাহুল্য। সমাজে বিভিন্নমুখী অবনতি ও অজ্ঞানতার অন্যতম মৌলিক কারণ হল, যুবক ও বৃদ্ধদের মাঝে ব্যবধান ও বিচ্ছিন্নতা। এই বিচ্ছিন্নতার ফলে এককে অপরের মজলিসে বসতে দেখা যায় না। বয়োজ্যেষ্ঠরা যুবকদের পাপাচরণ দেখেও যেন হতবাক ও অক্ষম সেজে তাদেরকে তাতে বাধা দিতে সাহস করে না। তরুণদের সদাচরণ ও সংশোধনের ব্যাপারে তারা নৈরাশ্য প্রকাশ করে। যার ফলশ্রুতিতে বৃদ্ধের মাঝে যুবকদের প্রতি কেমন এক প্রকার বিদ্বেষ, বিরাগ ও বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয় এবং যুবক চাহে ভালো হোক অথবা মন্দ তার প্রতি কোনও ভ্রূক্ষেপও করে না। কখনো বা একটি যুবকের অসদাচরণ দেখে সমগ্র যুব-সমাজের উপর একই কুধারণা রেখে থাকে। ফলে প্রত্যেক যুবক ও তরুণের প্রতি তার মন ভেঙ্গে যায় । যার কারণে সমাজ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যুবক ও বৃদ্ধ একে অপরকে অবজ্ঞা, ঘৃণা, অশ্রদ্ধা ও অস্নেহ দৃষ্টিতে দেখতে থাকে । আর এই মহা আপদ তখন গোটা সমাজকে গ্রাস করে ফেলে ।

কিন্তু এই ব্যাধির প্রতিকার করতে যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলকেই সেই চেষ্টা রাখা উচিত, যাতে তাদের আপোসের উক্ত ব্যবধান ও বিচ্ছিন্নতা দূরীভূত হয় । আর সকলেই যেন এই বিশ্বাস রাখে যে, যুবক ও বৃদ্ধের মিলিত প্রচেষ্টায় গঠিত সমাজ একটি মাত্র দেহের ন্যায়; যার কোন এক অঙ্গ বিকল হলে সারা দেহ বিকল হয়ে যেতে পারে ।

যেমন বৃদ্ধদের উচিত, যুবকদের ব্যাপারে তাদের কর্তব্য ও স্কন্ধে অর্পিত ভার সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং যুবকদের সদাচরণের ব্যাপারে তাদের হৃদয়ে ঘনীভূত নৈরাশ্যকে দূর করা। যেহেতু আল্লাহ তাআলা সকল বস্তুর উপর সর্বশক্তিমান। কত পথভ্রষ্টকে তিনি সুপথপ্রাপ্ত করেছেন। যারা অপরের জন্য সুপথের দিশারী ও সমাজ সংস্কারক রূপে পরিচিত হয়েছে। যুবকদেরও কর্তব্য, যেন তারা তাদের বৃদ্ধ ও বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি রাখে। তাদের মতামতকে সম্মানের চোখে দেখে, তাদের নির্দেশনা সাদরে গ্রহণ করে। যেহেতু বৃদ্ধরা দীর্ঘ জীবনের বহু ঘটনাঘটনের মাধ্যমে অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে; যা যুবকরা করতে পারেনা। অতএব যদি নবীনদের উদ্যম ও শক্তির সাথে প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও হিকমত সংযুক্ত ও মিলিত হয় তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় সমাজ সাফল্য ও মর্যাদা লাভ করবে। (মিন মুশকিলাতিশ শাবাব, ইবনে উসাইমীন ১৬-১৭পৃঃ)

তরুণ ও যুবকদল সমাজের শক্তি ও বাহুবল। তরুণের উপরেই সন্নিবিষ্ট থাকে সমাজের বহু আশা, আকাঙ্খা ও ভরসা। যে কোন জাতিই তার যুবগোষ্ঠীকে নিয়েই গর্ব করে থাকে। জাতির অমূল্য সম্পদ তার যুবশক্তি। অতএব এমন সম্পদের অপচয় হতে দেওয়া কোন জাতিরই উচিত নয়। তাই বিশেষ করে এ অমূল্য সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্তায় দ্বীনের আহ্বায়ক ও সংস্কারকদের উপরে। উলামা সমাজ যুবশক্তির ব্যাপারে যত্নবান না হলে, সে শক্তির যে অপচয় ও অপব্যবহার হয়, বর্তমান জাতির অবস্থাই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সমাজ গঠনের প্রাথমিক স্তর থেকেই যুবগোষ্ঠী ও তার চিন্তাধারার উপর সমীক্ষা করা এবং তার মঙ্গলময় দিককে সমৃদ্ধি দান করা ও অমঙ্গলময় দিকের সংশোধন ও পরিবর্তনের চেষ্টা করা সমাজ সংস্কারকের সমুচিত কর্তব্য। যেহেতু আজকের কাঁচা যুবক আগামী কালের পুরুষ ও সমাজ। যুব সমাজ এমন এক ভিত্তি, যার উপর উম্মতের ভবিষ্যত প্রতিষ্ঠিত হয়।

তাইতো শরীয়ত যুবগোষ্ঠীর প্রতি যত্নবান হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। যুবকের যুৱাবস্থা সময়কালকে বড় মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে। যেহেতু যুব সমাজ যদি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়; যার উপর উম্মতের ভবিষ্যত প্রতিষ্ঠিত, তাহলে সমাজের প্রভূত কল্যাণের আশা করা যাবে। ধর্মনিষ্ঠা ও সুন্দর চরিত্রে উম্মতের জ্যোতির্ময় ভবিষ্যত উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং ঐ যুব সমাজের বর্তমানের প্রকৃত ও মুসলিম ও ওলামা সমাজের উপযুক্ত ওয়ারেস ও প্রতিনিধি হবে তারাই।

বর্তমান যুবসমাজের প্রতি যদি সমীক্ষ্য দৃষ্টিতে দেখা যায় তাহলে সাধারণভাবে পরিদৃষ্ট হবে যে, ঐ সমাজে তিন প্রকার যুবক রয়েছে, সত্যানুসারী ও ধর্মনিষ্ঠ, সত্য ও ধর্মত্যাগী, এবং এই দুয়ের মাঝে দোটানায় দোদুল্যমান যুবক।

ধর্মনিষ্ঠ ও সত্যানুসারী যুবক, যে কলেমা তওহীদের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে, তার দাবী অনুসারে কাজ করে, ধর্মে প্রগাঢ় বিশ্বাসী ভক্তি ও প্রেমের সহিত আত্মসমর্পণকারী, ধর্মীয় অনুশাসনে সন্তুষ্ট, স্বধর্ম নিয়ে গর্বিত, ইসলামের অনুসরণকে যে চির কল্যাণ ও মুক্তিদাতা ভাবে এবং এই ধর্ম থেকে বহির্গত হওয়াকে যে চির ক্ষতিকর ও সর্বনাশী মনে করে।

যে যুবক আল্লাহকে বিশ্বাস করে; যিনি তার ও সমগ্র আকাশ পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যেহেতু সে আল্লাহর বহু নিদর্শন লক্ষ্য করে; যাতে তার নিকট আল্লাহর অস্তিত্বে কোন সন্দেহ ও দ্বৈধের অবকাশ থাকে না। সুতরাং সে এই বিস্ময়কর বিশাল জগতের সৃষ্টি-বৈচিত্র এবং তার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা-ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করলে তার স্রষ্টার অস্তিত্বের, তাঁর পরিপূর্ণ বিজ্ঞান ও শক্তির এবং তাঁর মহা প্রকৌশলের স্পষ্ট দলীল ও প্রমাণ খুঁজে পায়। কারণ, এই বিশ্ব-জাহান অযাচিতভাবে আপনা-আপনিই সৃষ্টি হয়ে যায়নি। এই বিশাল বিশ্ব এক সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার অনুবর্তী। যে শৃঙ্খলাবদ্ধ নিয়মের কোন পরিবর্তন ও বিবর্তন নেই। সারা বিশ্ব ঠিক সেই নিয়মেই চলছে, যে নিয়মে চলতে সৃষ্টিকর্তা তাকে আদেশ করেছেন ।

فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللهِ تَبْدِيلاً وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللهِ تَحويلاً

“কিন্তু তুমি আল্লাহর নিয়মের কোন পরিবর্তন পাবে না এবং আল্লাহর বিধানে কোন ব্যতিক্রমও দেখবে না।” (কুঃ ৩৫/৪৩)

الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقاً مَا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِنْ

تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِنْ فُطُورٍ (۳) ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ

يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِنَا وَهُوَ حَسِيرُ

“দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবেনা; সুতরাং আবার তাকিয়ে দেখ কোন ত্রুটি দেখতে পাও কিনা? অতঃপর তুমি বার বার তাকাও তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ এবং ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে।” (কুরআনুল কারীম : ৬৭/৩-৪)

সুতরাং যদি এ বিশ্বচরাচর সুশৃঙ্খল ও সুনিপুণ ব্যবস্থাযুক্ত হয় তাহলে তা কোনক্রমেই অযাচিতভাবে সৃষ্টি হতে পারে না। যেহেতু অযাচিতভাবে সৃষ্ট বস্ত্রর ব্যবস্থা-বিধানও অযাচিত হয়। যার ফলে যে কোন মুহূর্তে তাতে বিবর্তন ও বিশৃঙ্খলা ঘটে ।

যে যুবক আল্লাহর সমূদয় ফিরিশতাকুলের উপর ঈমান রাখে। যেহেতু কুরআন ও সুন্নায় তাঁদের বিভিন্ন গুণাবলী, ইবাদত ও কর্তব্যাদি সম্পর্কে বহু বিবরণ এসেছে। অতএব তাঁদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না।

যে যুবক আল্লাহর সমূদয় রসূলের উপর এবং তাঁর অবতীর্ণ সমূহ আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখে। যেহেতু তা হল মানুষের সরল পথের দিশারী এবং এ ছাড়া মানুষ জ্ঞান, ইবাদত, অধিকার ও ব্যবহারের যাবতীয় বিস্তারিত বিষয়াবলীকে জানতে অক্ষম ছিল।

যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান

যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান

Reviews (0)

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “যুব সমস্যা ও তার শরয়ী সমাধান”

Your email address will not be published.

Shopping cart
Facebook Twitter Instagram YouTube WhatsApp WhatsApp

Sign in

No account yet?