যে সলাতে হৃদয় গলে
“যে সলাতে হৃদয় গলে বইটি ঐ সকল নিয়মিত সালাত আদায়কারীদের জন্য রচিত, যাদের মন সলাতে অতিমাত্রায় এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করে এবং অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বেঁচে থাকতে পারেনা”
যে সলাতে হৃদয় গলে
যে সলাতে হৃদয় গলে
রচনায়
আবূ বকর বিন হাবিবুর রহমান
গ্রাম: নগর ভাদগ্রাম (কান্দাপাড়া), পোঃ আটঘুড়ি, থানা: মির্জাপুর,
জেলা: টাঙ্গাইল
মোবাইল: ০১৭৪৬-৯৫৩০৭০, ০১৯১৯-৪৭৯৮০৩
সম্পাদনায়ঃ
সাইফুল ইসলাম বিন হাবিবুর রহমান
কামিল (ডবল); এম, এ (১ম শ্রেণী)
০১৭১২-০৬৪৬৫৪
প্রকাশনায়
তাওহীদ পাবলিকেশন্স
ঢাকা-বাংলাদেশ
যে সলাতে হৃদয় গলে
সূচীপত্র
- ভূমিকা
- কল্পনার জগতে মানুষ বড়ই বেপরোয়া
- সলাতে এত সব মনে কেন জাগে?
- খুশুর সাথে সলাত আদায়ের উপায়
- আযান
- দরূদ
- আযানের দু’আ
- ওযূ
- মাসজিদের পথে
- আপনি এখন আল্লাহর ঘরে
- তাকবীর এ তাহরিমা
- সলাতের শুরুতে পঠিতব্য দু’আ
- ফাতিহা পাঠ
- রুকু
- সিজদাহ
- তাশাহ্হুদ
- দরূদ পাঠ
- অন্যান্য দু’আ পাঠ
- সালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য দু’আ
- যে ভাবনায় হৃদয় গলে
- সলাত যেন ঢাল হয়ে যায়
- গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ
- পরিশিষ্ট
যে সলাতে হৃদয় গলে
সলাত
-মুসাফির আব্দুল্লাহ্
মুসলিম আমি, বিপ্লবী আমি, আমি মুজাহিদ বীর
মহান আল্লাহ্ ছাড়া কারো তবে নত করিনাক শির
তাওহীদ আমার ভালবাসা, শিরক করি ঘৃণা
কুরআন-সুন্নাহ মানি আমি, বিদ’আত মানি না ।
সলাত আমার আত্মার খোরাক, পাপরাশি হয় দূর,
বারে বারে আমার মন কেড়ে নেয় ঐ আযানের সুর।
আযানের সুর কত যে মধুর বুঝানোর নেই ভাষা
আযানের মাঝে খুঁজে পাই আমি বিপ্লবী চেতনার আশা ।
মাসজিদ আমার শান্তি গৃহ, বারে বারে যাই ছুটে
যেথায় কোটি প্রাণ রবের তরে সিজদায় পড়ে লুটে ।
যতবার আমি সিজদায় পড়ি ততই তৃপ্তি পাই
সিজদায় পড়ে কাঁদি আমি, প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
দুনিয়াবী ব্যস্ততা ভুলে সলাতে ডুবে থাকি
রবের সামনে আছি দাঁড়িয়ে তা স্মরণ রাখি
ভয় আর আশা নিয়ে সলাত করি আদা
মন্দ হতে বেঁচে যাই, মন হয়ে যায় সাদা ।
দেহ-মন উজাড় করে ডাকি ওহে রব
ক্ষমা কর, ক্ষমা কর, পাপ আছে যত সব ।
সলাতে আমি হৃদয় মাঝে আত্মতৃপ্তি পাই
যত দুঃখ, যত কষ্ট সব কিছু ভুলে যাই ।
এত শান্তি, এত তৃপ্তি কোন ধর্মেই নাই
ইসলাম আমার ধর্ম, আর মুসলিম আমি তাই ।
যে সলাতে হৃদয় গলে
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য যিনি ছাড়া অন্য কেউ উপাসনার যোগ্য নয়। সালাম ও দরূদ বর্ষিত হোক নাবী মুহাম্মাদ (স) -এর উপর যাঁকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসতে হবে ।
অতঃপর সলাত এমন একটি ‘ইবাদাত বিচারের দিন যার হিসাব সর্ব প্রথম গ্রহণ করা হবে। সলাত সংক্রান্ত বইয়ের কপির সংখ্যা অনুপাতে সলাত আদায়কারীর সংখ্যা খুব বেশি হবে বলে আমার মনে হয়না। তারপরও বাজারে বিদ্যমান সলাত সংক্রান্ত অনেক সহীহ, গইরি সহীহ বইয়ের ভীড়ে আরো একটি বই ঠেলে দেয়ার আশা পোষণ করছিলাম ২০০৮ সালে রামাযানের শেষ দশকে ‘ইতিকাফে বসার সময় থেকে । কিন্তু মাঝে কয়েক বছর বে-খেয়াল রয়ে যাই। অবশেষে ২০১১ ইং সালের মাঝামাঝিতে হাত দিয়েছিলাম যে সলাতে হৃদয় গলে বইটির কাজে। নিয়মিত সলাত ত্যাগকারী কাফির না ফাসিক সে মাসয়ালা বিশ্লেষণ করা, সলাতের নিয়ম-কানুন বর্ণনা করা কিংবা সলাতের ফাযীলাত তুলে ধরা এ যে সলাতে হৃদয় গলে বইটির উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ এখানে এমন কোন নাসিহাত সংযোজন করা হয়নি যা গ্রহণে কোন সলাত ত্যাগকারী সলাতের দিকে ফিরে আসবে। আর কোন মুসল্লী যদি সলাতের সঠিক নিয়ম-কানুন সন্ধান করে তাহলে সে এতে কোন উপকারী তথ্য পাবেনা। এ যে সলাতে হৃদয় গলে বইটি পড়লে জানা যাবে না হাত বুকের উপর বাঁধতে হবে, নাকি নাভির নিচে। এ বইখানি শুধু ঐ সকল মুসল্লীদের জন্য রচনা করা হয়েছে যারা নিয়মিত সলাত আদায় করেন, সলাতের নিয়ম-পদ্ধতিও জানেন; কিন্তু সলাতের সময় মনটা অতিমাত্রায় এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করে, মনকে ধরে রাখার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন। ফলে সলাতকে মনে হয় মৃত, তৃপ্তি আসে না । এখানে ঐ সকল মুসল্লীদের প্রসঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে যাদের সলাত তাদেরকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে দূরে সরিয়ে রাখে না। সলাতে পরিপূর্ণ একাগ্রতার জন্য তাকওয়া অবলম্বনই প্রকৃত উপায় জানার পরও তাক্বওয়া সম্পর্কে কলম ধরার সাহস পাইনি । এখানে এমন একটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি যা তাক্বওয়া অর্জনের জন্য প্রাথমিক এবং মৌলিক উপাদান হিসেবে কাজ করবে এবং সলাতের সময় বান্দা ও তার রব এর মধ্যকার সম্পর্ক আরো গভীরে নিয়ে যাবে। আল্লাহ চাহেনতো সলাতে আসবে বিনয়াবনত ভাব ও একাগ্রতা । আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ তাওফিকদাতা। যে সলাতে হৃদয় গলে বইটির ব্যাপারে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন কিছু অন্তরে উদয় হওয়া থেকে তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। বস্তুত আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়দাতা নেই। দ্রুততা ও জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন ভুল-ত্রুটি,অকল্যাণ বইটিতে একত্রিত হলে তা থেকে আমার রব্ব-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। মুদ্রণজনিত ভুল-ত্রুটি অথবা কোন ধরণের অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে তা জানানোর জন্য সুহৃদ পাঠক মহলকে সবিনয় অনুরোধ করছি। আর আপনাদের গঠনমূলক পরামর্শ ও সহযোগিতা পরবর্তী সংস্করণে যে সলাতে হৃদয় গলে বইটিকে আরো সৌন্দর্য্যমণ্ডিত ও হৃদয়গ্রাহী করবে বলে আমার বিশ্বাস । হে আল্লাহ! এ যে সলাতে হৃদয় গলে বইটির সাথে জড়িত সকলের জন্যই এমন প্রতিদান লিপিবদ্ধ করুন যা শুধু আপনার নেক বান্দাদের ব্যাপারে পছন্দ করেন। হে প্রভু! আমাকেই যে সলাতে হৃদয় গলে বইটির প্রথম পাঠক এবং আত্মসংশোধনকারী হিসেবে কবুল করুন। আমাকে ছদকা-এ জারিয়াহ থেকে মাহরুম করবেন না । আমীন!
আবূ বকর বিন হাবিবুর রহমান
যে সলাতে হৃদয় গলে
কল্পনার জগতে মানুষ বড়ই বেপরোয়া
মন, চিন্তা-ভাবনা, জল্পনা-কল্পনা, অন্তর, মেজাজ, রাগ, প্রফুল্লতা ইত্যাদির সংজ্ঞা ও স্বরূপ জানা না থাকলেও এগুলোর অস্তিত্ব ও বাস্তবতা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকলের নিকট একেবারে সুস্পষ্ট। এমনকি শিশু বা পাগলও এর আওতার বাইরে নয়। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদাভাবে একেকটি চিন্তার জগৎ আছে। সেই জগতে প্রত্যেকেই তার যোগ্যতা ও চাহিদা অনুযায়ী স্থান কাল পাত্র ভেদে কল্পনার পাখায় ভর করে বিচরণ করে বেপরোয়াভাবে। তবে সকলের চিন্তা-চেতনার মধ্যে মৌলগতভাবে সাদৃশ্যতা বিরাজ করে। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, সময় বা পারিপার্শ্বিকতার বাঁধ ডিঙ্গিয়ে মানুষ প্রায় স্বাধীন ভাবেই অনেক কিছু ভেবে থাকে । কখনো বাস্ত বতার মুখোমুখি হয়ে, কখনো বা বাস্তবতাকে অনে অনেক সামনে রেখে, আবার কখনো শুধু নিছক কল্পনার খাতিরেই । যেমন কোন স্বল্প আয়ের লোক কিছু কিনে খাওয়ার চিন্তা করছে এক্ষেত্রে; সে হয়ত ভাববে কোন হোটেলে কী খাবার কী পরিমাণ খেলে খরচটা সাধ্যের মধ্যে রাখা যাবে। এমনকি কিছু না খেয়ে বিকেল নাগাদ বাড়িতে পৌঁছেই খাওয়ার চিন্তাও করতে পারে। যদিও বা কিছু খায় তারপরও সে এ চিন্তা থেকে রেহাই পাবে না। এটা খেলেই তো ১২ টাকা কম লাগতো; আর দশ টাকা হলেইতো ওটা খাওয়া যেত ইত্যাদি। বুঝা গেল, এ রকম একটা জিনিস নিয়েও অনেক কিছু ভাবা যায়। আবার ধরুন, লোকাল বাসে বসে এক ছোকরা উৎপাদনমুখী কোন প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভাবছে। যা বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনীয় মূলধনের এক শতাংশও নেই তার কাছে তারপরও দেখা যাবে সে লোকাল বাস থেকে নামার পূর্বেই মার্সিডিজ গাড়ির মালিক বনে গেছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মানুষ এক মুহূর্তেই অতীতের অনেক ঘটনা স্মরণ করতে পারে, দেখতে পারে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের সফলতার চাবি কাঠি কিংবা অনুভব করতে পারে ব্যর্থতার গ্লানি। সুন্দর ও সুখময় স্মৃতি বা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সফলতার রঙ্গিন স্বপ্ন মানুষকে করে আনন্দিত, উদ্বেলিত আর আলোড়িত। একই সাথে বিষাদময় অতীত বা অজানা আশংকা মানুষকে করে তুলে বেদনাগ্রস্ত, ব্যথাতুর। অন্তরের চিন্তা বাহ্যিক আচরণ ও চেহারার উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। উত্তম চরিত্রের কোন যুবক বিবাহ, মনের মত স্ত্রী, সুখময় সংসারের রোমান্টিক ভাবনায় বিভোর হলে তার চেহারায় প্রফুল্লতার আভা উদ্ভাসিত হবে এটাই স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে গাঁটটি-বোচকা গোছগাছ করে সদ্য বাপের বাড়ি চলে যাওয়া কোন স্ত্রীর স্বামীর বেলায় যে এমনটি হবে না তা সহজেই অনুধাবনীয়। মানুষের অন্তর এতটাই বেপরোয়া যে কোন কিছু ভাববার সময় ভাল-মন্দ বিচার করেনা। অন্তরে অনেক সময় এমন সব বিষয় উদয় হয় যা কখনো বাস্তবে করা তো দূরের কথা, মুখেও উচ্চারণ করা সম্ভব হয় না। আর এমনটি ভাল-মন্দ সকল মানুষের বেলায়ই ঘটতে পারে। আল্লাহর রসূল (সা)-এর সাহাবাগণ অবশ্যই একালের সবচেয়ে ভাল মানুষের চেয়েও অনেক অনেকগুণ ভাল ছিলেন। তার পরও তারা এমন অনেক চিন্তার উদয় হতে রেহাই পাননি।
যে সলাতে হৃদয় গলে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ نَاسُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلُوهُ إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ قَالَ وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ؟ قَالُوا نَعَمْ قَالَ ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ
আবূ হুরায়রাহ (র) বলেন, নাবী (স)-এর কিছু সাহাবী তাঁর সামনে এসে বললেন, আমাদের অন্তরে এমন কিছু খটকার সৃষ্টি হয় যা আমাদের কেউ মুখে উচ্চারণ করাটাও টাও মারাত্মক মনে করে। রসূলুল্লাহ (স) বললেন: সত্যই তোমাদের তা হয়? তারা জবাব দিলেন, জী হাঁ। রসূলুল্লাহ (স) বললেন: এটিই স্পষ্ট ঈমান। (কারণ ঈমান আছে বলেই সে সম্পর্কে ওয়াসওয়াসা ও সংশয়কে মারাত্মক মনে করা হয়)।
মনের উপর শয়তানের প্রভাব বাস্তব সত্য। শয়তান মানুষের মনে নানা ধরনের সংশয় ও প্রশ্নের উদ্রেক করে ।
هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ الله لَا يَزَالُ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يُقَالَ عَنْ أَبِي
هَذَا خَلَقَ اللهُ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ الله؟ فَمَنْ وَجَدَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَلْيَقُلْ آمَنْتُ بِاللَّهِ
আবূ হুরায়রাহ (সা) বলেন যে, রসূলুল্লাহ নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এমন প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয় যে, এ সৃষ্টি বলেন, মানুষের মনে জগত তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তা হলে আল্লাহকে সৃষ্টি করল কে? রসূলুল্লাহ ) বলেন, যার অন্তরে এমন প্রশ্নের উদয় হয় সে যেন বলে, “আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। (সহীহ মুসলিম)
যে সলাতে হৃদয় গলে
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُولَ مَنْ خَلَقَ كَذَا؟ وَكَذَا حَتَّى يَقُولَ لَهُ مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَ ذَلِكَ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ
আবূ হুরায়রাহ (র) বলেন, শয়তান তোমাদের কারো নিকট আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, কে তোমার রবকে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং এ ধরনের ভাবনা থেকে বিরত হও। (সহীহ মুসলিম)
সলাতে এত সব মনে কেন জাগে?
অনেক জটিল হিসাবও সলাত রত অবস্থায় সহজেই মিলে যায়। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যাপারে। স্মরণে এসে যায় অনেক পুরনো ছোট-খাট আজগুবি আর অবান্তর বিষয়। এর মধ্যে অনেক চিন্তা আছে যা মনের খেয়ালে এমনিতে আসে আবার এমনিতেই চলে যায়। আবার এমন কিছু চিন্তা ভাবনাও আছে যা মুসল্লীর প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে ঘটে থাকে। ব্যক্তি ভেদে সলাতের মধ্যে এমনটি হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আমার নিজের দৃষ্টি-ভঙ্গি থেকে কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হলো ।
১. সলাতকে নিছক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা মনে করা: মুখস্থ কিছু সূরাহ ও দু’আ মন্ত্রের মত পড়ে যাওয়া, রুকু করা, এর পর সিজদাহ করা। তাশাহুদ শেষে সালাম ফিরানো সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে মুনাজাত, অতঃপর মুখের উপর হাত বুলানো, (কেউ কেউ আবার চু চু শব্দ করে) শো শো করে মাসজিদ থেকে বের হওয়া, পুরোটাই যেন যান্ত্রিকতা আর আনুষ্ঠানিকতা। সলাতের সাথে অন্তরের যে যোগসাজস আছে তা থেকে অধিকাংশ মুসল্লী বহুদূরেই রয়ে গেছে। সেটা তাদের পানে দৃষ্টিপাত করলেই বুঝা যায় । অন্তরের খবর আল্লাহই ভাল জানেন ।
২. সলাতকে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া: অনেকেই সলাতের প্রকৃত মর্যাদা ও স্বরূপ যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারে না। পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করলেও এটাকে অন্যান্য কাজের মত সাধারণ ও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার মনে করে ।
যে সলাতে হৃদয় গলে
৩. পাপ কাজে ডুবে থাকা: নিয়মিত সলাত আদায় করা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে ও নিয়মিত পাপ কাজে জড়িয়ে থাকা মুসল্লীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এই পাপ কাজ তাকে সলাতে অন্যমনষ্ক করে দেয়। এছাড়া হঠাৎ কোন পাপ কাজ করে ফেলার পর তা হতে খালিসভাবে তাওবা না করলে সলাতের মধ্যে তা এমনভাবে স্মরণে আসতে পারে যে সে ভাবনা থেকে ফিরে আসা অসাধ্য হয়ে পড়ে। যে মুসুল্লী টিভি দেখেন সলাতরত অবস্থায় তার চোখের সামনে কোন অভিনেতা অভিনেত্রীর চেহারা বা কোন বিশেষ দৃশ্য ভেসে উঠবেনা এটা অস্বাভাবিক । তখন আমার বিস্ময়ের সীমা থাকে না যখন দেখি কোন মুসল্লী সিনেমা দেখার ফাঁকে (অ্যাড, সংবাদ, আযান, ইত্যাদির জন্য বিরতির সময়) দ্রুত তার সলাত শেষ করে নেয়। নিয়মিত গান শোনে ও গুনগুনিয়ে গায় এমন মুসুল্লীদের সলাতের মধ্যে মনে মনে গান গাওয়াটাও অস্বাভবিক নয়। এমনকি কুরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে মুখে গানও চলে আসতে পারে। আর এরকম একটি সমস্যার কথা জানিয়ে কোন এক মেয়ে বহুল প্রচলিত একটি মাসিক পত্রিকায় প্রশ্ন করেছিলেন ।
৪. অর্থ না বুঝা: সলাত আদায় করতে হয় পুরোটাই আরবী ভাষায়, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা হওয়ায় অধিকাংশ লোক বুঝতে পারেনা সে মহান রব্বের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরই সাথে কী গোপন কথপোকথন করছে সে ক্বিয়ামে, রুকু-সিজদাতে এবং তাশাহুদের বৈঠকে কিভাবে আল্লাহর নিকট নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করছে, কী চাচ্ছে আল্লাহর নিকট তার কিছুই বুঝতে পারে না। যদিও বা কেউ অর্থ জানে তার পরও সে অলস অন্তরে মুখে মন্ত্রের মত উচ্চারণ করে যার ফলে তার অবস্থাও ঐ সকল লোকের মতই হয় যারা মোটেই সলাতের অর্থ জানে না ।
৫. আখিরাতের তুলনায় দুনইয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া: আজকাল অধিকাংশ মানুষ দুনইয়া নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে প্রতিফল দিবস নিয়ে ভাববার অবসরটুকুও পায় না। কী করলে কী হবে, কী করা উচিত ছিল, কী করা দরকার, কিভাবে এটা হাসিল করা যায় এবং এজন্য কাকে কিভাবে ফাঁকি দিতে হবে ইত্যাদি চিন্তা মানুষকে সদা ব্যস্ত রাখে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য, বাড়ি-গাড়ি সুন্দরী নারী, অর্থ-সম্পদ আর দুনইয়ার জৌলুস অর্জনের জন্য মানুষ কতই না পরিশ্রম করে আর সর্বদা চিন্তামগ্ন থাকে। এমতাবস্থায় সে যখন মাসজিদে যায় তখন মহান রব্বের সান্নিধ্যের চেয়ে তার ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মতৎপরতার চিন্তা-ফিকিরই বেশি প্রাধান্য পায়। কারণ কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নীরবে দাঁড়িয়ে বুদ্ধি আঁটা কতইনা সহজ এবং ফলপ্রসূ তার উপর আবার শয়তানের সহযোগিতা।
যে সলাতে হৃদয় গলে
৬. জায়নামাজ ও মাসজিদে নকসা-কারুকার্য: মাসজিদের মিহরাবের দু’দিকে মাক্কাহ-মাদিনার ছবিসহ বিভিন্ন ধরণের নক্সা দ্বারা মনোরম করে সাজানো হয় যা সলাতের একাগ্রতা নষ্ট করে। এছাড়াও সামনের দেয়ালে ঘড়ি, সলাতের সময়-সূচি, বিভিন্ন মাসজিদের ছবি সম্বলিত ক্যালেন্ডার, বুক সেলফ ইত্যাদি সলাতে বিঘ্ন ঘটায়। সামনের বুক সেলফ কাঁচে আচ্ছাদিত থাকলে তাতে মুসল্লীদের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে যদি কোন পর্দা না দেয়া হয়। জায়নামাজের মধ্যে অংকিত বিভিন্ন ধরনের নক্সা দৃষ্টি কেড়ে নেয় এবং প্রশ্নের উদ্রেক করে। এ সমস্যা এতটাই প্রকট যে এর একমাত্র সমাধান হলো এগুলোর অপসারণ ।
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَلَّى فِي خَمِيصَةٍ لَهَا أَعْلَامُ وَقَالَ شَغَلَتْنِي أَعْلَامُ
هَذِهِ فَاذْهَبُوا بِهَا إِلَى أَبِي جَهْمٍ وَأَتُونِي بِأَنْبِجَانِيَهِ
‘আয়িশাহ তা থেকে বর্ণিত। একদিন নাবী (স) একখানা নক্সা অংকিত কাপড়ের মধ্যে সলাত আদায় করলেন এবং (সলাত শেষে ) বললেন, এই কাপড়ের নক্সা ও কারুকার্য আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে নিয়েছে। এটা নিয়ে আবূ জাহমের কাছে যাও এবং তার সাদামাটা মোটা চাদরখানা আমাকে এনে দাও ।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِي خَمِيصَةٍ ذَاتِ أَعْلَامٍ فَنَظَرَ إِلَى عَلَمِها فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ قَالَ اذْهَبُوا بِهَذِهِ الْخَمِيصَةِ إِلَى أَبي جَهْمِ بْنِ
حُذَيْفَةَ وَأَتُونِي بِأَنْبِجَانِيَهِ فَإِنَّهَا أَلْهَتْنِي آنِفًا فِي صَلَاتِي
‘আয়িশাহ তানিয়া না থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একখানা কারুকার্য করা চাদরে রসূলুল্লাহ(স) সলাত আদায় করতে দাঁড়ালেন। (অর্থাৎ সলাতের মধ্যে তিনি এর নক্সার প্রতি দেখতে থাকলেন কাপড়খানার নকশা ও কারুকার্য সলাতে তার একাগ্রতা নষ্ট করে দিলো।) তাই সলাত শেষে তিনি বললেন: এ চাদরখানা নিয়ে আবূ জা ইবনু হুযাইফাহ’র কাছে যাও। আর আমাকে তার কম্বলখানা এনে দাও। কারণ এ চাদরখানা এখন সলাতের মধ্যে আমাকে অন্যমনস্ক করে ফেলছে।
৭. সলাতের হুকুম আহকাম ঠিকমত পালন না করা ।
যে সলাতে হৃদয় গলে
৮. শয়তানের প্রভাব: সলাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ইবাদাত আর শয়তান মানুষের প্রকাশ্য ও বড় শত্রু। বান্দার সলাতের মধ্যে গণ্ডগোল সৃষ্টি করা শয়তানের নীতিগত দায়িত্ব এবং এ কাজের জন্য নির্দিষ্ট শয়তান নিয়োজিত থাকে ।
أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ أَبِي الْعَاصِ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الشَّيْطَانَ
قَدْ حَالَ بَيْنِي وَبَيْنَ صَلَاتِي وَقِرَاءَتِي يَلْبِسُهَا عَلَيَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاكَ شَيْطَانُ يُقَالُ لَهُ خَنْزَبُ فَإِذَا أَحْسَسْتَهُ فَتَعَوَّذُ بِاللَّهِ مِنْهُ وَاتْفِلْ عَلَى يَسَارِكَ ثَلَاثًا قَالَ فَفَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَذْهَبَهُ اللَّهُ عَنِي
‘উসমান বিন আবূল ‘আস (র:) নাবী (স) কে বললেন: হে আল্লাহর রসূল! শয়তান আমার মধ্যে এবং আমার সলাত ও কিরা‘আতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে আমার কিরাআতে জটিলতা সৃষ্টি করে। রসূলুল্লাহ বললেন, এ হচ্ছে শয়তান, যাকে ‘খানযাব’ বলা হয়। তুমি তার আগমন অনুভব করলে আল্লাহর নিকট তিন বার আশ্রয় কামনা করবে এবং বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলবে। তিনি (‘উসমান) বলেন: এরপর থেকে আমি এমনটি করি ফলে আল্লাহ তাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ الله عَنْ الِالْتِفَاتِ فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ هُوَ اخْتِلَاسُ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ
‘আয়িশাহ (র:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (স) কে সলাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন: এটা এক ধরনের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সলাত হতে অংশ বিশেষ কেড়ে নেয়।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِي قَالَ إِنَّ الشَّيْطَانَ إِذَا سَمِعَ الرِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ أَحَالَ لَهُ ضُرَاطُ حَتَّى لَا يَسْمَعَ صَوْتَهُ فَإِذَا سَكَتَ رَجَعَ فَوَسْوَسَ فَإِذَا سَمِعَ الْإِقَامَةَ ذَهَبَ حَتَّى لَا يَسْمَعَ صَوْتَهُ فَإِذَا سَكَتَ رَجَعَ فَوَسْوَسَ
আবূ হুরায়রাহ হতে বর্ণিত: নাবী (স) বলেন শয়তান যখন সলাতের আযান শুনতে পায় তখন বায়ূ ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে।
যে সলাতে হৃদয় গলে
যেন আযানের শব্দ তার কানে পৌছতে না পারে। মুয়াযযিন যখন আযান শেষ করে তখন সে ফিরে এসে (সলাত আদায়কারীর মনে) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। সে পুনরায় যখন ইকামাত শুনতে পায়- আবার পলায়ন করে যেন এর শব্দ তার কানে না যেতে পারে। যখন ইকামাত শেষ হয় তখন সে ফিরে এসে (সলাত আদায়কারীদের সংশয় সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهُ ضُرَاطُ حَتَّى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِينَ فَإِذَا قَضَى اليَدَاءَ أَقْبَلَ حَتَّى إِذَا ثُوبَ بِالصَّلَاةِ أَدْبَرَ حَتَّى إِذَا قَضَى التَّثْوِيبَ أَقْبَلَ حَتَّى يَخْطِرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهِ يَقُولُ اذْكُرْ
كَذَا اذْكُرْ كَذَا لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذكُرُ حَتَّى يَظَلَّ الرَّجُلُ لَا يَدْرِي كَمْ صَلَّى
আবূ হুরায়রাহ্ (র:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (স) বলেছেন : যখন সলাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে । যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সলাতের জন্য ইকামাত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইক্বামাত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে মনে করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, সে কয় রাক’আত সলাত আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ يُصَلِّي جَائَهُ الشَّيْطَانُ فَلَبَسَ عَلَيْهِ حَتَّى لَا يَدْرِيَ كَمْ صَلَّى فَإِذَا وَجَدَ ذَلِكَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْجُدُ سَجْدَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ
আবূ হুরায়রাহ (র:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ( বলেছেন,: তোমরা কেউ যখন সলাতে দাঁড়াও তখন শায়তান তার কাছে এসে তাকে সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দেয়। এমনকি সে কয় রাক‘আত সলাত আদায় করলো তাও স্মরণ করতে পারে না। তোমরা কেউ এরূপ অবস্থা হতে দেখলে সে যেন বসে বসেই দু’টি সাজদাহ করে নেয়।
শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। এজন্য আ’ঊযুবিল্লাহ…. পাঠ করবে এবং বলবে আমি আল্লাহর উপর এবং রসূলগণের উপর ঈমান এনেছি- (মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি)। হাদীসে উল্লেখ আছে তাহলে শয়তান নিরাশ হয়ে চলে যায়। কেননা, তার প্রতারণায় কোন ক্ষতি হল না। যদি কারো মনে সন্দেহ আসে তবে তার আরও একটি চিকিৎসা আছে, তা হলো শয়তানকে বলবে আল্লাহ সকলের সৃষ্টিকর্তা। তাঁর সৃষ্টিকর্তা কেউ হতে পারে না । অতএব, তোমার এ ধরনের প্রশ্ন বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। (সংক্ষিপ্ত নাববী)
° অর্থাৎ শয়তানের কুমন্ত্রণায় কোন ধারণা আসলে, তাকে দূর করে অন্য কাজে মনোযোগ দিবে এবং মনে করবে যে, এটা শয়তানের কুমন্ত্রণা, সে পথভ্রষ্ট করতে চায় (নাববী)।

যে সলাতে হৃদয় গলে
Reviews
There are no reviews yet.