শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

৳ 890

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ
লেখক :  শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ)
প্রকাশনী : তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয় : ঈমান ও আকীদা
অনুবাদক : আবূ হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী, ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
পৃষ্ঠা :৮৪৪, কভার : হার্ড কভার,

Out of stock

Description

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ
প্রকাশনী: তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয়: ঈমান ও আকীদা
অনুবাদক: আবূ হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী, ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
পৃষ্ঠা:৮৪৪, কভার: হার্ড কভার,
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: শারহু লুমআতিল ইতিকাদ 
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলকিশেন্স

                                                                                                               

 

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ বই এর বাংলায় আরাবী উচ্চারণ পদ্ধতি

বাংলা ভাষায় আরবী হারফগুলো মাখরাজসহ বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করা অত্যন্ত দুরূহ। আরবীকে বাংলায় উচ্চারণ করতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিকৃত করা হয়েছে, যা আরবী ভাষার জন্য অতিমাত্রায় দূষণীয়। কেননা, অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারণ বিকৃতির কারণে অর্থগত ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায়।

আরবী হারফগুলোর বাংলা উচ্চারণ বিশুদ্ধভাবে করার প্রচেষ্টা নানাভাবে করা হয়েছে। কিন্তু আরবী ২৮টি বর্ণমালার প্রতিবর্ণ এ পর্যন্ত কেউ-ই পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করেন নি। আলহামদুলিল্লাহ! সম্ভবত আমরাই সর্বপ্রথম ২৮টি বর্ণমালাকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হলাম। একটু চেষ্টা ও খেয়াল করলেই অনভ্যস্থ পাঠক-পাঠিকাও এ উচ্চারণ রীতিমালা আয়ত্ব করে মোটামুটি শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারবেন বলেই আমাদের একান্ত বিশ্বাস।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

আইন অক্ষরের পরে ইয়া সাকিন হলে সেক্ষেত্র ঈ লিখা হবে। ফাতহাহ বা যাবারের বাম পাশে ইয়া সাকিন হলে ‘য়’ ব্যবহৃত হবে। যেমন লায়স لَيْث। ওয়াও এর উচ্চারণ ব এর মতো হলে সেক্ষেত্রে উক্ত ব এর উপর বিন্দু অর্থাৎ ব হবে। ফাতহাহ বা যাবারের বাম পাশে হামযাহতে যের হলে সেক্ষেত্রে য়ি ব্যবহৃত হবে। আইন (ع) অক্ষরে সাকিন হলে সেক্ষেত্রে (‘) ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন (أعمش) আ‘মাশ। হামযাহ সাকিনের ক্ষেত্রে (’) ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন (مؤمن) মু’মিন। অনুরূপভাবে শেষাক্ষরে হামযাহ থাকলেও ওয়াকফের কারণে (’) ব্যবহার করা হয়েছে। খাড়া যাবার বা মাদ্দে আসলরি ক্ষেত্রে (আকার) এর উপরে খাড়া যাবার-ই ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে আমরা অত্র গ্রন্থে অধকিাংশ ক্ষেত্রেই এ বানান পদ্ধতি ব্যবহার করেছি পাঠকদের অভ্যস্থ হওয়ার জন্য আশা করছি ধীরে ধীরে সুপ্রিয় পাঠক এটি আত্মস্থ করতে সক্ষম হবেন ইনশা আল্লাহ।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

 

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ এর সংক্ষিপ্ত সূচিপত্র

নং বিষয় পৃষ্ঠা
1. প্রকাশকের বাণী ২৩
2. সম্পাদক পরিচিতি ২৭
3. সম্পাদকের ভূমিকা ৩৩
4. ইবন কুদামাহ আল-মাকদিসীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ৩৭
5. শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ৪১
6. ব্যাখ্যাকারী মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ) এর ভূমিকা ৪৭
7. ব্যাখ্যাকার আবূ হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী হাফিযাহুল্লাহ এর ভূমিকা ৪৯
8. লুমআতুল ই‘তিকাদ ৬৩
9. লেখকের ভূমিকা ৬৫
10. আল্লাহ্‌র সিফাত সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীসসমূহের প্রতি আত্মসমর্পন ও কবুল করা ৬৮
11. সালাফ ইমামদের আল্লাহ্‌র সিফাত সম্পর্কিত বক্তব্য ৭০
12. সুন্নাতের প্রতি উৎসাহ ও বিদআহ হতে সতর্কতা ৭৩
13. সুন্নাহর প্রতি উৎসাহ ও বিদআত থেকে সতর্ক করে বর্ণিত আসারসমূহ ৭৪
14. সিফাত বা গুণ বিষয়ে প্রাপ্ত কিছু আয়াতের উল্লেখ ৭৭
15. সিফাত সংক্রান্ত কিছু হাদীসের বর্ণনা ৮০
16. অধ্যায়: আল্লাহ্‌ তাআলার কালাম ৮৫
17. অধ্যায় : আল কুরআন আল্লাহ্‌র কালাম ৮৯
18. কিয়ামাতের দিন মু’মিন কর্তৃক আল্লাহ্‌র রু’ইয়াহ তথা দর্শন লাভ ৯৬
19. আল কাদা’ তথা ফয়সালা ও আল কাদ্‌র তথা নির্ধারিত ভাগ্য ৯৮
20. অধ্যায়: আল ঈমান হচ্ছে কথা ও কাজ ১০৩
21. অধ্যায়: রাসূল (সা) যা কিছু জানিয়েছেন সেসব বিষয়ে ঈমান আনা ১০৫
22. অধ্যায়: নাবী (সা) ও তাঁর সাহাবীগণের হক ১১১
23. শার্‌হু লুমআতিল ই‘তিকাদ ১২৩

 

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ এর মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) এর ব্যাখ্যাগ্রন্থের সূচিপত্র

1. আল্লাহ্‌র নাম ও গুণাবলী বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিসমূহ ১৫৯
2. প্রথম মূলনীতি: আল-কুরআন ও আস সুন্নাতের ভাষ্যের ক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে এর উদ্দেশ্যকে যাহির তথা প্রকাশ্য অর্থেই রাখা। ১৫৯
3. দ্বিতীয় মূলনীতিসমূহ: আল্লাহ্‌ তাআলার নামসমূহ সম্পর্কিত নীতিমালা ১৬৪
4. প্রথম শাখা-নীতি: আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতিটি নাম সুন্দরতম ১৬৪
5. ২য় শাখা-নীতি: আল্লাহ্‌ তাআলার নামসমূহ কোন সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। ১৬৬
6. ৩য় শাখা-নীতি: আল্লাহ্‌র নামসমূহ আক্‌ল দ্বারা সাব্যস্ত হয়না, বরং অবশ্যই তা শারীআত দ্বারা সাব্যস্ত হয়। ১৬৮
7. চতুর্থ শাখা-নীতি: আল্লাহ্‌ তাআলার সকল নাম তার যাত তথা সত্ত্বা, এ সংশ্লিষ্ট সিফাত তথা গুণ এবং যদি এ নামটি মুতাআদ্দি তথা সকর্মক হয় তবে সে ক্ষেত্রে তার প্রভাবও সাব্যস্ত করে। ১৬৯
8. গাইরু মুতাআদ্দি তথা অকর্মক ১৬৯
9. মুতাআদ্দি তথা সকর্মক ১৬৯
10. তৃতীয় মূলনীতিসমূহ: আল্লাহ্‌ তাআলার সিফাতগুলো সম্পর্কিত নীতিমালা ১৭০
11. প্রথম শাখা-নীতি: আল্লাহ্‌র সকল সিফাত কামাল তথা পরিপূর্ণতা ও প্রশংসাযোগ্যতায় সর্ব্বোচ্চ। এতে কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই কোন প্রকার নাক্‌স বা অসম্পূর্ণতা নেই। ১৭০
12. দ্বিতীয় শাখা-নীতি: আল্লাহ্‌র সিফাতগুলো দু’ভাগে বিভক্ত ১৭৪
13. সুবূতিয়্যাহ তথা সাব্যস্তকৃত ১৭৪
14. সালবিয়্যাহ তথা নাকচকৃত ১৭৫
15. তৃতীয় শাখা-নীতি: সুবূতিয়্যাহ বা সাব্যস্ত সিফাতগুলো দু’ভাগে বিভক্ত ১৭৬
16. সিফাত যাতিয়্যাহ তথা সত্বাবাচক সিফাত ১৭৭
17. ফি‘লিয়্যাহ তথা কর্মবাচক সিফাত ১৮১
18. চতুর্থ শাখা-নীতি: আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতিটি সিফাতের উপর তিনটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয় ১৮১
19. চতুর্থ নীতিমালা: যা দিয়ে আমরা আল্লাহ্‌র নাম বা সিফাত বিষয়ে মুআত্তিলা তথা নিষ্ক্রিয় বা নাকচকারীদের দাবীকে খণ্ডন করব ১৮৭
20. লেখকের ভূমিকা ১৮৯
21. কিতাবের ভূমিকা যে বিষয়গুলোকে অন্তর্ভূক্ত করেছে ২১১
22. আল্লাহ্‌র সিফাত সংক্রান্ত আয়াত ও হাদীসসমূহের প্রতি আত্মসমর্পন ও কবূল করা ২১৭
23. আল্লাহ্‌র সিফাত সংক্রান্ত ভাষ্যসমূহের প্রকারভেদ ও এ ব্যাপারে লোকের নীতি ২১৯
24. ওয়াদেহ জালী তথা স্পষ্ট-পরিষ্কার ২১৯
25. মুশকিল খাফী বা দুর্বোধ্য-লুক্কায়িত ২১৯
26. মুশকিল ভাষ্য বিষয়ে মানুষের পথ দু’ভাগে বিভক্ত ২২২
27. ওয়াদেহ ও মুশকিল ভাষ্যের ক্ষেত্রে আলোচনার স্পষ্টীকরণ ২২৩
28. রাদ্দ তথা প্রত্যাখ্যান করা, তা’বীল তথা মনগড়া ব্যাখ্যা করা, তাশবীহ তথা সাদৃশ্য স্থাপন করা, তামসীল তথা দৃষ্টান্ত পেশ করা ও এগুলোর বিধান ২৩৭
29. রাদ্দ তথা প্রত্যাখ্যান করা ২৩৭
30. তা’বীল তথা অপব্যাখ্যা করা ২৩৭
31. তা’বীলের হুকুম তিন প্রকার ২৩৮
32. ইজতিহাদ ও সুন্দর নিয়্যাতের আলোকে প্রতীয়মান ২৩৮
33. হাওয়া তথা প্রবৃত্তি ও তাআসসুব তথা গোড়ামী থেকে উদ্ভূত এবং ব্যাখ্যার পক্ষে আরবী ভাষায় কোন বিশেষ দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন ২৩৮
34. হাওয়া ও তাআসসুব থেকে উদ্ভূত এবং ব্যাখ্যার পক্ষে আরবী ভাষায় কোন বিশেষ দৃষ্টিকোণবিহীন: ২৩৮
35. তাশবীহ ও তামসীল ২৩৯
36. সালাফদের ইমামদের আল্লাহ্‌র সিফাত সম্পর্কিত বক্তব্য ২৪৩
37. আল্লাহ্‌র নুযূল তথা অবতরণ ও তৎসম্পর্কিত বিষয়ে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহ)-এর বক্তব্যে যা রয়েছে ২৪৫
38. আল্লাহ্‌র সিফাত সম্পর্কে ইমাম শাফিঈ (রহ) এর বক্তব্যে যা রয়েছে ২৪৯
39. আল্লাহ্‌ তাআলার সিফাতের বিষয়ে সালাফদের অনুসৃত পন্থা ২৫৫
40. সুন্নাহ ও বিদআত পর্ব ২৫৯
41. আস-সুন্নাহ ২৫৯
42. বিদআত ২৬৩
43. বিদআতের বিরুদ্ধে আল কুরআনের দলীল ২৬৪
44. বিদআতের বিরুদ্ধে আস সুন্নাহ্‌র দলীল ২৬৮
45. বিদআত রাদ্দকারী হাদীসটির কিছু ফায়িদাহ ২৭১
46. যে কোন আমলের জন্য শরীআহ্‌র যে ছয়টি বিষয়ের একাত্ম হওয়া বাধ্যতামূলক ২৭২
47. সাবাব তথা কারণ ২৭২
48. জিনস তথা মূল প্রকার ২৭২
49. কাদ্‌র তথা পরিমাণ ২৭৩
50. কাইফিয়্যাহ তথা ধরণ ২৭৩
51. যামান তথা কাল ২৭৩
52. মাকান তথা স্থান ২৭৪
53. ইবাদাত ব্যতীত অন্য বিষয়ের মূলনীতি ২৭৭
54. আল আ‘য়ান তথা দৃষ্টিগ্রাহ্য উদাহরণ ২৭৭
55. আল মুআমালাত তথা আমালগত উদাহরণ ২৭৭
56. ইবাদাত ও বৈষয়িক বিষয়ের নীতিমালার সারসংক্ষেপ ২৭৮
57. সুন্নাতের প্রতি উৎসাহ ও বিদআহ হতে সতর্কতা ২৭৯
58. সুন্নাহ ও বিদআত পরিচিতি ও এদের প্রত্যেকের হুকুম ২৮১
59. সুন্নাহ ২৮১
60. বিদআত ২৮২
61. সুন্নাহর প্রতি উৎসাহ ও বিদআত থেকে সতর্ক করে বর্ণিত আসারসমূহ ২৮৫
62. সাহাবীদের বক্তব্য ২৮৭
63. তাবেয়ীদের বক্তব্য ২৮৮
64. তাবে-তাবেঈনদের বক্তব্য ২৯২
65. খালীফাহর দরবারে আদরামী (রহ) ও এক বিদআতীর মাঝে বিতর্ক ২৯৭
66. সিফাত বা গুণ বিষয়ে প্রাপ্ত কিছু আয়াতের উল্লেখ ২৯৯
67. গ্রন্থকার আল্লাহ্‌ তাআলার যেসব সিফাতকে উল্লেখ করেছেন ৩০১
68. ওয়াজহ তথা চেহারা ৩০১
69. ইয়াদানি তথা দুই হাত ৩০৭
70. আল্লাহ্‌ তাআলার সিফাত দুই হাতের ব্যাপারে যে বিভিন্ন দিক বর্ণিত হয়েছে এবং এসবে আমরা কিভাবে সামঞ্জস্য আনতে পারি ৩১৪
71. নাফস তথা সত্বা ৩২১
72. মাজি’ তথা আগমন ৩২৫
73. রিদা তথা সন্তুষ্টি ৩২৯
74. মাহাব্বাহ তথা ভালবাসা ৩৩৩
75. গাদাব তথা রাগ ৩৩৭
76. সুখ্‌ত তথা ক্রোধ ৩৪৩
77. কারাহাত তথা অপছন্দ ৩৪৭
78. সিফাত সংক্রান্ত কিছু হাদীসের বর্ণনা ৩৪৯
79. নুযূল তথা অবতরণ ৩৫১
80. আজাব তথা বিস্ময় ৩৫৭
81. আজাব তথা ‘বিস্ময়’ দু’ প্রকার ৩৬০
82. দাহক তথা অট্টহাস্য ৩৬৫
83. আল ইসতিওয়া’ আলাল আরশ তথা আরশের উপরে উঠা’ ৩৬৯
84. উলূ তথা উপরে থাকা ৩৮৫
85. আল্লাহ্‌ তাআলার উলূ সিফাত দু’ভাগে বিভক্ত ৩৮৬
86. সিফাত তথা গুণগত উলূ ৩৮৬
87. যাত তথা সত্বাগত উলূ ৩৮৬
88. আল্লাহ্‌র فِي السَّمَاء তথা আকাশে কাওন তথা অবস্থানের অর্থ ৩৯০
89. ইমাম মালিকের জবাব ৩৯৭
90. অধ্যায়: আল্লাহ্‌ তাআলার কালাম ৩৯৯
91. কালাম তথা কথা ৪০৩
92. আল্লাহ্‌র কালাম বিষয়ে আহলুস সুন্নাহের বিরোধীরা ৪০৮
93. জাহমিয়্যাহ ৪০৮
94. আশআরিয়াহ ৪০৯
95. কালাম অধ্যায়ে লেখকের আলোচনা সংক্রান্ত টীকা ৪১২
96. অধ্যায়: আল-কুরআন আল্লাহ্‌র কালাম ৪২১
97. আল-কুরআন সংক্রান্ত আলোচনা ৪২৫
98. আল-কুরআন হারফ তথা অক্ষর ও কালিমাহ তথা শব্দ সম্পন্ন ৪৩৭
99. আল-কুরআনুল কারীমের গুণবাচক নামসমূহ ৪৪০
100. কিয়ামাতের দিন মু’মিন কর্তৃক আল্লাহ্‌র রু’ইয়াহ তথা দর্শন লাভ ৪৫১
101. আখিরাতে আল্লাহ্‌র রু’ইয়াহ তথা দর্শন লাভ ৪৫৩

 

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ এর সংযোজিত পর্বের সূচিপত্র

1. তাওহীদ পর্ব ১২৫
2. তাওহীদের পরিচয় ১২৫
3. তাওহীদের প্রকারভেদ ১২৬
4. তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ ১২৭
5. খালক তথা সৃষ্টিগুণের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র একত্ব নিরূপণ ১২৭
6. মিলক তথা মালিকানায় আল্লাহ্‌র একত্ব নিরূপণ ১২৯
7. তাদবীর তথা পরিচালনায় আল্লাহ্‌র একত্ব নিরূপণ ১৩১
8. আল্লাহ্‌র রুবূবিয়্যাহকে তা‘তীল তথা আল্লাহ্‌র অস্তিত্বকে নাকচ করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অস্বীকারকারীরা ১৩৩
9. আল্লাহ্‌র রুবূবিয়্যাহকে তাশরীক তথা অংশীদারিত্ব স্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অস্বীকারকারীরা ১৩৫
10. সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিকর্তা একজন হওয়ার ব্যাপারে বুদ্ধিভিত্তিক দলীল ১৩৬
11. তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ ১৩৭
12. ইবাদাহ শব্দটি দ্বারা দু’টি বিষয় বুঝানো হয় ১৩৮
13. তাআব্বুদ তথা উপাসনা ১৩৮
14. মুতাআব্বাদ বিহী তথা যার দ্বারা উপাসনা করা হয় ১৪১
15. তাওহীদুল আল-আসমা’ ওয়াস সিফাত ১৪৫
16. তাওহীদুল আসমা’ ওয়াস সিফাতে দুটো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ১৪৫
17. ইসবাত তথা সাব্যস্ত করা ১৪৫
18. নাফয়ুল মুমাসালাহ তথা সমদৃষ্টান্ত প্রদান নাকচ করা ১৪৫
19. আসমা’ ওয়াস সিফাতে পথভ্রষ্ট দলসমূহ ১৪৭

 

 

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ এর সংযোজিত ব্যাখ্যায় উল্লেখযোগ্য বিষয়ের সূচিপত্র

1. মাহাব্বাহ ও তা‘যীমের প্রকৃত অর্থ ১৩৮
2. আল্লাহ্‌র সিফাতের কাইফিয়্যাহ তথা ধরণকে প্রাপ্ত হওয়ার আশাকে কর্তন করা ১৪৬
3. আল্লাহ্‌র নাম ও গুণাবলীকে যাহির অর্থে নেওয়ার প্রকৃত অর্থ ১৬০
4. সিফাত কামাল ও সিফাত নাক্‌স সংক্রান্ত ব্যাখ্যা ১৭০
5. সিফাত সুবূতিয়্যাহ ও সিফাত সালবিয়্যাহ সংক্রান্ত বিষয়ের স্পষ্টীকরণ ১৭৫
6. আল্লাহ্‌র সাথে ইদাফাহ তথা সম্পর্কযুক্ত বিষয় সংক্রান্ত আলোচনা ১৭৭
7. মা‘না তথা অর্থ ১৭৭
8. যাত তথা সত্বা ১৭৮
9. কায়িম বিনাফসিহি  তথা নিজ সত্বাগতভাবে কায়েম ১৭৮
10. গাইরু কায়িম বিনাফসিহি তথা যা নিজ সত্বাগতভাবে কায়েম হয়না ১৭৯
11. সূরা শূরার ১১ নাম্বার আয়াতের ك হারফ সংক্রান্ত আলোচনা ১৮৩
12. সালাফ সংক্রান্ত আলোচনা ১৯৩
13. আকীদাহ ও মানহাজ সংক্রান্ত আলোচনা ১৯৪
14. আকীদাহ তথা দৃঢ় বিশ্বাস ১৯৪
15. আকীদাতুস সাহীহাহ তথা সঠিক আকীদাহ ১৯৪
16. মানহাজ তথা পন্থা ১৯৪
17. মানহাজুস সালাফ আস-সালিহ তথা পূণ্যবান সালাফদের পন্থা ১৯৪
18. সালাফী তথা পুণ্যবান সালাফদের মানহাজের অনুসারী ১৯৫
19. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত তথা সুন্নাহপন্থী ঐক্যবদ্ধ দল ১৯৬
20. তায়িফাহ মানসূরাহ তথা সাহায্যপ্রাপ্ত দল ১৯৬
21. আল ফিরকাতুন নাজিয়াহ তথা নাজাতপ্রাপ্ত দল ১৯৬
22. আহলুল হাদীস তথা হাদীস অনুসারীর দল ১৯৬
23. আহলুস সুন্নাহ একটি নির্দিষ্ট দল, সকল দলের সমন্বয় নয় ১৯৭
24. আমরা আহলুস সুন্নাহকে চিনতে ও এতে অন্তর্ভুক্ত হতে বাধ্য ২০৫
25. আল্লাহ্‌র আল-গানী নামের প্রকৃত অর্থ ২১২
26. মুশকিল অর্থের ক্ষেত্রে ইবন কুদামাহ কর্তৃক তাফবীদের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত আলোচনা ২১৯
27. মুশকিল অর্থের ক্ষেত্রে তাআররুদকে তরক করা ২২১
28. মুহকাম ও মুতাশাবিহ সংক্রান্ত আলোচনা ২২৫
29. তাফবীদ ও তার প্রকারভেদ ২৩১
30. তাফবীদুল কাইফিয়্যাহ তথা ধরণের ক্ষেত্রে তাফবীদ ২৩১
31. তাফবীদুল মা‘না তথা অর্থের ক্ষেত্রে তাফবীদ ২৩২
32. মুফাব্বিদাহদের প্রকারভেদ ২৩২
33. মুফাব্বিদাতুল কাইফিয়্যাহ তথা ধরণের দায়িত্ব সমর্পনকারী ২৩২
34. মুফাব্বিদাতুল মা‘না তথা অর্থের দায়িত্ব সমর্পনকারী ২৩২
35. মুতাশাবিহ ও তা’বীলের প্রকারভেদ ২৩৩
36. মুতাশাবিহ মুতলাক তথা নিঃশর্তভাবে মুতাশাবিহ ২৩৩
37. মুতাশাবিহ নিসবী (তথা আপেক্ষিক মুতাশাবিহ ২৩৩
38. ওয়াহীর কিছু বিষয়ের তা’বীল কেবল আল্লাহ্‌র জানার ব্যাখ্যা ২৩৩
39. আল-কুরআনের তা’বীলের প্রকারভেদ ২৩৪
40. কোন কিছুর হাকীকাহ তথা বাস্তবতা অর্থে তা’বীল ২৩৪
41. তাফসীর অর্থে তা’বীল ২৩৫
42. তামসীল ও তাশবীহের মধ্যকার পার্থক্য ২৪০
43. আশ শাফিয়ীর আল্লাহ্‌র বা তাঁর রাসূলের “উদ্দেশ্য অনুযায়ী” বক্তব্যের বাস্তবতা ২৪৯
44. আল্লাহ্‌ তাআলার সিফাতের বিষয়ে যাহির অর্থ গ্রহণ করাই সঠিক পন্থা ২৫৫
45. ইবাদাতের পুরোটাই তাওকীফিয়্যাহ ২৭৫
46. উমার বিন আব্‌দিল আযীযের উপদেশ সংক্রান্ত আলোচনা ২৮৯
47. আল্লাহ্‌র চেহারা সংক্রান্ত আলোচনা ৩০২
48. আল্লাহ্‌র হাত, কদম, চোখ ইত্যাদি কি আল্লাহ্‌র অঙ্গ? ৩০৭
49. আল্লাহ্‌র হাতের সংখ্যা সংক্রান্ত আলোচনা ৩১৬
50. মুআত্তিলা তথা তা’তীলকারী সম্প্রদায়ের তা’বীল করার কারণ ৩৩৯
51. আল্লাহ্‌র নুযূল সংক্রান্ত তা’বীলের জবাব ৩৬২
52. সূরা আস-সাফফাত এর দ্বাদশ আয়াতের দাম্মাসহ কিরাআহ সংক্রান্ত আলোচনা ৩৫৭
53. আল্লাহ্‌ সম্পর্কিত খেয়ালখুশির ধারণার বিরুদ্ধে সতর্কতা ৩৭১
54. ইসতিওয়া সংক্রান্ত আলোচনা ৩৭২
55. আল্লাহ্ কি আর্‌শের উপর বসে আছেন? ৩৭৬
56. আল্লাহ্‌ তাআলার উলূ এর প্রকারভেদ ৩৮৬
57. আল্লাহ্‌ আকাশে কাওন তথা অবস্থানের অর্থ সংক্রান্ত অতিরিক্ত আলোচনা ৩৯১
58. আল্লাহ্‌র কালাম সংক্রান্ত আলোচনা ৪০৩
59.  সূরা আন নিসা’র ১৬৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্‌র কালাম সংক্রান্ত একটি সন্দেহের নিরসন ৪০৬
60. কাদীমুন নাউ‘ ও হাদিসুল আহাদ সংক্রান্ত বিষয়ের স্পষ্টীকরণ ৪১২
61. আল কুরআন আল্লাহ্‌র কালাম, গাইরু মাখলুক ৪৪৩
62. আল কুরআনের তিনটি স্তর ৪৪৫
63. মারতাবাতুল কিতাবাহ  তথা লেখনীর স্তর ৪৪৫
64. মারতাবাতুল ইনযালিল ইজমালী  তথা সাধারণ অবতীর্ণ হওয়ার স্তর ৪৪৬
65. মারতাবাতুল কালাম ওয়াত তাকাল্লুম বিহী তথা কালাম এর দ্বারা কথা বলার স্তর ৪৪৬
66. আল কুরআন আল্লাহ্‌র কালাম হওয়ার বিষয়ে নানা মাযহাব ও বক্তব্যের রাদ্দ ৪৪৭
67. আখিরাতে আল্লাহ্‌র রু’ইয়াহ সংক্রান্ত আলোচনা ৪৫৫
68. আল্লাহ্‌র রু’ইয়াহকে অপেক্ষা বলা মাযহাবের রাদ্দ ৪৫৮
69. আল্লাহ্‌র রু’ইয়াহ বিষয়ে আশআরী, মাতুরিদী ও মুতা‘যিলীদের মত ও তাদের রাদ্দ ৪৫৯

 

 

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

প্রকাশকের বাণী

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

إن الحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه، أما بعد:

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ যাবতীয় গুণগান সেই মহান রাব্বুল ইয্‌যাতের যিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে কতিপয় বান্দাকে নির্বাচন করেন তাঁর দীনের এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্য যে কাজগুলো যুগের পর যুগ ধরে মুসলিম উম্মাহর পথচলার ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আল্লাহ তাআলা এমনই মহতী কাজের সঙ্গে আমার মত ক্ষুদ্র নাচিজকে যুক্ত করেছেন। ফালিল্লাহিল হাম্‌দ।

একজন প্রকাশক হিসেবে একটি ভাল সময় ধরেই যদিও প্রকাশনার ক্ষেত্রে শিক্ষানবীস হিসেবেই কাজ করছি। এর মধ্যে নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা, পাঠকবৃন্দের যুগোপযোগী চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদেরকেও নান্দনিকতা, অঙ্গসজ্জা ও উপস্থাপনা এবং চিন্তাচেতনায় ব্যাপক রদবদল হয়েই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে আসছে। তেমনি কিছু ভিন্ন চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটিয়ে অত্র গ্রন্থটি প্রকাশিত হলো আল-হামদু লিল্লাহ। শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

প্রথমতঃ পাঠকবৃন্দের মনে হতে পারে যে, এটি হয়তো সালিহ আল-উসাইমীনের সেই সাড়া জাগানো গ্রন্থটিরই ভাষান্তর মাত্র। কিন্তু না, এটি শুধু লুমআতুল ই‘তিকাদ গ্রন্থের ব্যাখ্যাগ্রন্থের অনুবাদ নয়, বরং এটি সেই ব্যাখ্যাগ্রন্থেরও ব্যাখ্যা। যেটির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সাজিয়েছেন মুহতারাম শায়খ আবূ হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী হাফিযাহুল্লাহ। প্রথমেই তাঁর সম্পর্কে অল্প কিছু কথা না বললেই নয়। তিনি একেবারে নিঃস্বার্থভাবে মুসলিম উম্মাহকে কিছু ক্লাসিকাল প্রকাশনা উপহার দেয়ার মানসে তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর আলোকধারার পরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেনে। জাযাহুমুল্লাহু আহসানাল জাযা। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর তত্ত্বাবধানে আলোকধারা থেকে কিছু মহামূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশের কাজে মনোনিবেশ করেন। এ কাজটি যখন শুরু করা হয়, তখন মূলতঃ সালিহ আল-উসাইমীনের লুমআতিল ইতিকাদ ভাষ্যগ্রন্থেরেই ভাষান্তর প্রকাশ করার কথা। কিন্তু কাজ যত এগুতো থাকে ততই উঁচুমানের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির জটিলতা ধরা পড়তে থাকে যার পাঠোদ্ধার পাঠকবৃন্দের জন্য কষ্টসাধ্যই ছিল। কিন্তু তিনি পাঠকদের নিকট এ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির প্রতিপাদ্য বিষয়গুলোকে অতি সহজে পাঠকবৃন্ধের সামনে উপস্থাপন করতে গিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ মন্থন করে আরো কিছু ব্যাখ্যা লিখতে আরম্ভ করেন। আর আস্তে আস্তে এ পুস্তকটি ক্রমে ক্রমে বিশাল গ্রন্থে রূপান্তরিত হয়। তিনি প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে আগত অধ্যায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়ার লক্ষে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা উপস্থাপন করেন। ফলে পাঠকবৃন্দের জন্য চলমান বিষয়বস্তু অনুধাবন অত্যন্ত সহজ হয়ে গিয়েছে। শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ বহু স্থানে তিনি সালিহ আল-উসাইমীনের ব্যাখ্যার সাথে সাথে আরও প্রয়োজনীয় দলীলাদী সংযোজন করেছেন। পাশাপাশি গ্রন্থটির মূল আলোচনা, সালেহ আল-উসাইমীনের ব্যাখ্যা ও শায়খ আবূ হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী হাফিযাহুল্লাহর ব্যাখ্যা যে মিশে একাকার না হয়ে যায়, সে জন্য প্রত্যেকটিকে তিনি আলাদা করেই দেখিয়েছেন। যার ফলে গ্রন্থটির কলেবর খানিকটা বৃদ্ধি হয়েছে বটে, কিন্তু তা অবশ্যই পাঠকবৃন্দের জন্য সুখপাঠ্য হিসেবেই বিবেচিত হবে বৈকি। শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ ইসলামের সাধারণ বিষয়সম্বলিত গ্রন্থের পর্যাপ্ততা সত্ত্বেও আকীদা মানহায সম্পর্কিত গ্রন্থের তীব্র সংকট আমাদের প্রকাশনা সংস্থাগুলোতে চোখে পড়ার মত। অধিকাংশই যদিও এ বিষয়টিকে জটীল মনে করে থাকে, তবে এ বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে বোঝার মত আলেমের সংকট, লেখার মত যোগ্য ব্যক্তিদের অভাব, সর্বোপরি বিষয়গুলো সম্পর্কে কম আলোচনার কারণে এ বিষয়গুলো পাঠকবৃন্দের নিকট জটীলই রয়ে গিয়েছে। তদূপরি সহজ ও সাবলীল ভাবে উপস্থাপন না হওয়ার দরুন প্রকাশক পাঠক সকলের নিকটই অনাগ্রহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ইদানীং কিছু সৃজনশীল ও সুবিবেচেক পাঠকদের তীব্র আকাঙ্ক্ষাও আমাদেরকে এ জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করেছে। শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ এরপর আরও যাঁর নাম না নিলেই নয়, তিনি হলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় আকীদার শিক্ষক ডক্টর আবুবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহ, যিনি তাঁর শত ব্যস্ততার মাঝেও কষ্ট করে ধৈর্যসহকারে এ গ্রন্থটির সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে তিনি হাজ্জব্রত পালনের মত সফরের কঠিন সময়েও তিনি এ গ্রন্থটির মূল্যবান সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। এবং বেশ কিছু জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনী প্রদান করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকেও উত্তম জাযা দিন। শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ গ্রন্থটিকে আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এর মানোন্নয়ন ও সার্বিক বিষয়ে সুপরামর্শ দিয়ে আরও যাঁরা আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন, তার মধ্য মুহাম্মাদ আশরাফুল ইসলাম ভাইয়ের নাম না নিলেই নয়। এছাড়া এ গ্রন্থটি প্রকাশের ব্যাপারে তাওহীদ পাবলিকেশন্স পরিবারের সদস্যদেরও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যাঁরা এতে তাদের শ্রম ও মেধার মনোনিবেশ ঘটিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের সকলকেই উত্তম জাযা দিন। শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ সবচেয়ে জটিল বিষয় ছিল বইটির সূচীপত্র তৈরি করা। কারণ, এ গ্রন্থটিতে একদিকে যেমন শায়খ উসাইমীনের ব্যাখ্যা রয়েছে, ঠিক তেমনি প্রতিটি পৃষ্ঠায় শায়খ আবূ হাযমের ব্যাখ্যাও রয়েছে। তদূপরি বেশ কয়েকটি অধ্যায়ের শুরুতে শায়খ আবূ হাযম এর সংযোজিত পর্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের ব্যাখ্যাকৃত বিষয়কে আলাদা করতে এ গ্রন্থটিতে মোট চারটি সূচীপত্র তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে সংক্ষিপ্ত সূচীপত্র, এরপর শায়খ উসাইমীনের ব্যাখ্যার সূচীপত্র, এরপর শায়খ আবূ হাযমের সংযোজিত পর্বের সূচীপত্র এবং সর্বশেষে শায়খ আবূ হাযমের ব্যাখ্যার উল্লেখযোগ্য বিষয়ের সূচীপত্র উল্লেখ করা হয়েছে।  এতে করে পাঠকবৃন্ধ খুব সহজেই প্রত্যেকের ব্যাখ্যার বিষয়গুলোকে আলাদা আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারবেন।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বইটিকে ভুলত্রুটিমুক্ত রাখার। তবে মানবগুনের কারণে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আশাকরি তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন। ইনশা আল্লাহ আমাদের অবগত করলে পরবর্তী সংস্করণের জন্য তা অগ্রাধিকারভিত্তিকে গৃহীত হবে।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ পরিশেষে পাঠকবৃন্দের প্রতি অনুরোধ বাংলা ভাষায় যে নতূন দিগন্তের সূচনা হলো, তা যেন আলোকধারা অব্যাহত রাখতে পারে সে জন্য দুআ করবেন। এবং এ গুরুত্বপূর্ণ বইটি সম্পর্কে আপনার আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অবহিত করে প্রচার কাজে অংশ নিয়ে দাওয়াতের কাজকে আরও বেগবান করবেন ইনশা আল্লাহ।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ আল্লাহ তাআলা আমাদের এই খেদমতকে কবূল করে পরকালে নাজাতের ওয়াসীলা বানিয়ে দিন। আমীন! ইয়া রাব্বাল আলামীন।

প্রকাশক

মোঃ ওয়ালীউল্লাহ

 

সম্পাদক পরিচিতি

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

জন্মপরিচয়: তিনি শাইখ প্রফেসর ডক্টর আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া মজুমদার। ১৯৬৯ সালে কুমিল্লা জিলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ধনুসাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মাদ ছিদ্দিকুর রহমান মজুমদার। শাইখ আবু বকর তাঁর পিতার দ্বিতীয় পুত্র।

 

বাংলাদেশে শিক্ষা: পিতার কাছেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। নিজ গ্রামের ফাদিল মাদরাসা থেকে দাখিল, আলিম ও ফাদিল কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি তৎকালীন ইসলামী শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ মাদরাসা-ই-আলীয়া ঢাকায় হাদীস বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত কামিল পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  

বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য শিক্ষকেরা :

১-  প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ ফখরুদ্দীন ⌑।

২- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ উবাইদুল হক (খতীব সাহেব হুজুর) ⌑।

৩- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ হুসাইন সাহেব ⌑।

৪- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ ওয়াজীহুদ্দীন ⌑।

৫- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ মাহবূবুল হক (হেড মাওলানা) ⌑।

৬- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ আব্‌দুল লতীফ ⌑।

৭- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ আব্‌দুর রহীম (ইমাম সাহেব হুজুর) ⌑।

৮- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ খাইরুল বাশার ⌑।

৯- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ সাদেকুল্লাহ সাহেব ⌑।

১০- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ মোতাহার হোসেন ⌑।

১১- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ সালাহউদ্দীন (বর্তমান খতীব সাহেব) ।

১২- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ আশরাফ আলী সাহেবে ।

১৩- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ মুকাদ্দাস আলী সাহেব ⌑।

১৪- প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মাদ ইউনুস শিকদার ⌑।

মাদীনায় শিক্ষা: তারপর শাইখ আবু বকর মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাষ্টার্স, এম.ফিল ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে প্রতিটি পর্যায়েই আল্লাহর অনুগ্রহে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

সৌদি আরবের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকেরা :

১- শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন ⌑।

২- শাইখ আতিয়্যাহ মুহাম্মাদ সালেম ⌑।

৩- শাইখ আবু বকর জাবের আল-জাযায়েরী ⌑।

৪- শাইখ আমান আল-জামী ⌑।

৫- শাইখ আব্‌দুল আযীয আশ-শিবল ⌑।

৬- শাইখ ড. আব্‌দুর রহমান আব্‌দুল আযীয আশ-শিবল ⌑।

৭- শাইখ উমার ফুল্লাতাহ ⌑।

৮- শাইখ ড. আহমাদ আতিয়্যাহ আল-গামেদী ⌑।

৯- শাইখ ড. মুহাম্মাদ মুস্তাফা আব্বুহ আশ-শানক্বীত্বী ⌑।

১০- শাইখ ড. গালেব আল-‘আওয়াজী ⌑।

১১- শাইখ আব্‌দুল্লাহ মুহাম্মাদ আল-গুনাইমান ।

১২- শাইখ ড. আলী ইবন আব্‌দুর রহমান আল-হুযাইফী ।

১৩- শাইখ ড. মুহাম্মাদ ইবন রবী আল-মাদখালী ।

১৪- শাইখ ড. সাউদ ইবন আব্‌দুল আযীয আল-খালাফ ।

১৫- শাইখ ড. আব্‌দুল আযীয ইবন আব্‌দুল ফাত্তাহ আল-ক্বারী ।

১৬- শাইখ ড. সালেহ ইবন সা‘দ আস-সুহাইমী ।

১৭- শাইখ ড. আব্‌দুল মুহসিন আল-আব্বাদ ।

১৮- শাইখ ড. আব্‌দুর রাযযাক ইবন আব্‌দুল মুহসিন আল-আব্বাদ ।

১৯- শাইখ ড. সা‘উদ আদ-দা‘জান ।

২০- শাইখ ড. আব্‌দুল আযীয আল-হামীদী ।

২১- শাইখ ড. আব্‌দুল মুহসিন আল-মুনীফ ।

২২- শাইখ ড. উমার আব্‌দুল আযীয আল-ইরাকী ।

২৩- শাইখ মুহসিন আলে ঈসা ।

২৪- শাইখ মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ আল-মুখতার আশ-শানকীতী ।

২৫- শাইখ মুকবিল ইউসুফ আর-রুফাই‘য়ী ।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

এম-ফিল: তাঁর এম-ফিল থিসিসের শিরোনাম ছিল “الشرك في القديم والحديث আশ-শির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস”[1] (আধুনিক ও প্রাচীন শির্ক)। যার সুপারভাইজর ছিলেন, শাইখ আব্‌দুল্লাহ গুনাইমান ও শাইখ আহমাদ আতিয়্যাহ আল-গামেদী, আর তা সাঊদী আরবস্থ মাকতাবাতুর রুশদ হতে তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। যা আরব বিশ্বে অধিক প্রচারিত।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

পিএইচডি: তাঁর পিএইচডি অভিসন্ধর্ভ ছিল “الهندوسية وتاثر بعض الفرق الاسلامية بها আল-হিন্দুসিয়্যাহ ওয়া তাআসসুরু বা‘দিল ফিরাকিল ইসলামিয়্যাতি বিহা” (হিন্দু ধর্ম ও তার দ্বারা প্রভাবিত ইসলামী উপদলসমূহ)। আরবী ভাষায় হিন্দু ধর্মের উপর এটিই প্রথম পিএইচডি থিসিস, যার সুপারভাইজর ছিলেন, শাইখ ড. সাঊদ ইবন আবদুল আযীয আল-খালাফ, আর তা সৌদী আরবস্থ ‘মাকতাবাতু দারুল আওরাক আস-সাক্বাফিয়্যাহ থেকে তিন খণ্ডে প্রকাশিত ও আরব বিশ্বে বহুল প্রসারিত।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ:

১। الجذور الفكرية لظاهرة التكفير عند المسلمين

২। الإهتمام بالسيرة النبوية باللغة البنغالية[2]

৩। المحدث عبد الحق الدهلوي ورسالته في أصول الحديث دراسة تأصيلية

৪। الطريقة التقليدية لدراسة الصرف في بنغلاديش: عرض وتقويم

৫। بائية أبي تمام في فتح عمورية: دراسة أدبية فنية

৬। الإلمام ببعض كتب أدلة الأحكام

৭। الصحابة ومنزلتهم في الدين

৮। আল-কুরআনুল কারীমের র্অথানুবাদ ও সংক্ষপ্তি তাফসীর (বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং প্রেস, সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত হয়ে বাংলা ভাষাভাষী সকল মুসলিম ভাইদের জন্য সৌদী সরকারের পক্ষ হতে প্রদত্ত হচ্ছে)

৯। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমানের মৌলিক বিষয়সমূহ

১০। কুরআন-সুন্নাহ’র যিকির সংবলিত হিসনুল মুসলিম।

১১। আকীদাহ্ সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলাহ্

১২। আল আকীদা আত-তাহাবিয়া

১৩। তিনটি মূলনীতি ও তার প্রমাণপঞ্জি

১৪। ইসলামী আইন না মানার বিধান

১৫। কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?

১৬। রহমান আরশের উপর উঠেছেন

এছাড়াও তিনি অনেক বই অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন।[3]

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

বর্তমান কর্মস্থল: ২০০৫ সাল থেকে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে কর্মজীবনে আছেন। ২০১৮ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ইতোমধ্যে তিনি আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সেমিনারে অংশগ্রহণ গ্রহণের পাশাপাশি বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও অনেক মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং অনেক গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করেছেন ও বহু অনুবাদ সম্পাদনা করেছেন। তাঁর কিছু আর্টিকেল আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছে।[4] বর্তমানে তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি এমফিল ও পিএইচডি গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবেও কাজ করে যাচ্ছেন।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

মিডিয়াতে উপস্থিতি: তিনি “পিসটিভি বাংলা” এর বিভিন্ন প্রোগ্রামে বক্তা, উপস্থাপক ও আলোচক হিসাবে বক্তব্য দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি তৎকালীন ইসলামিক টিভির লাইভ প্রোগ্রাম “জেনে নিন” এ ২০০৬ থেকে বন্ধ হওয়ার দিন পর্যন্ত ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তদ্রূপ এনটিভি আরটিভি এটিএন, নাগরিক ইত্যাদি টিভিতেও প্রশ্নোত্তর ও অন্যন্য ইসলামী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। নিয়মিত বিভিন্ন গ্রন্থের উপর সাপ্তাহিক ও মাসিক আলোচনা ও ব্যাখ্যা করেন। ইসলামিক শারীআহ্‌, আকীদা ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর কাজ করতে তিনি সাচ্ছন্দ বোধ করেন।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ এর

সম্পাদকের ভূমিকা

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর শত শত হামদ প্রকাশ করছি, তিনি আমাকে তাঁর দীনের ওপর রেখেছেন, তাঁর দীনের পথে কাজ করার তৌফিক দিয়েছেন, দীনের প্রথম কাজ আকীদাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য কবুল করেছেন। সালাত ও সালাম পেশ করছি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) এর ওপর, যিনি সৃষ্টিকুলের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। যার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদেরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করছি সাহাবায়ে কিরামের জন্য, যারা ছিলেন উম্মতের পরীক্ষিত মানুষ; জীবনের সবকিছু দিয়ে এ দীনকে সারা দুনিয়ার প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করে গেছেন।

অতঃপর,

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে দীনে হক্ব নিয়ে পাঠিয়েছেন, ঈমান, ইসলাম ও ইহসানের মাধ্যমে দীনের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তন্মধ্যে প্রথমেই আকীদাকে বিশুদ্ধ করা ও জগতজুড়ে সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন। সাহাবায়ে কিরামের কাছে এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। সাহাবায়ে কিরামের তাদের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে এ মিশনকে বাস্তবায়িত করে গেছেন। এ আকীদা বিরোধী কিছু দেখা গেলে তারা কঠিনভাবে সেটার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেছেন। তারপর তাবে‘ঈগণ এ বিশাল দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তারা একদিকে আকীদা বর্ণনা করেছেন অপরদিকে বিশুদ্ধ আকীদা বিরোধীদের মতবাদ খণ্ডন করেছেন। এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন বিখ্যাত ইমামগণ, তারপর এ ঝাণ্ডা কাঁধে নিয়েছেন মুহাদ্দিসগণ, তারা তাদের গ্রন্থসমূহে বিশুদ্ধ আকীদা লিপিবদ্ধ করেছেন। কুরআন ও সুন্নাহ থেকে আকীদার বিষয়গুলো আলাদা করেছেন, সাহাবায়ে কিরামের বক্তব্য সংকলন করেছেন। তাবে‘ঈনে ইযামের মতামতকে সংরক্ষিত করেছেন। কেউ হাদীসের গ্রন্থে তা লিখেছেন। আবার কেউ আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। অনেকেই আকীদার গ্রন্থের নাম দিয়েছেন আস-সুন্নাহ, কেউ কেউ নাম দিয়েছেন আল-ঈমান, কেউ কেউ নাম দিয়েছেন আত-তাওহীদ, কেউ নাম দিয়েছেন আল-আকীদা বা ই‘তিকাদ, কেউ নাম দিয়েছেন আল-ফিকহুল আকবার, কেউ নাম দিয়েছেন উসূলুদ্দিন, কেউ নাম দিয়েছেন আশ-শারী‘আহ্‌। এভাবে শত শত আকীদার গ্রন্থ রচিত হয়েছে। কেউ আবার সেগুলোকে জমা করে বিশাল গ্রন্থ রচনা করেছেন।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ পরবর্তী ইমামদের মধ্যে যারা কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কিরাম, তাবে‘ঈনে ইযাম ও আহলুস সুন্নাহর ইমামদের বক্তব্য নিয়ে আকীদার সারগ্রন্থ রচনা করেছেন তাদের মধ্যে আমাদের ইমাম মুওয়াফফাকুদ্দীন আবদুল্লাহ ইবন আহমাদ ইবন কুদামাহ আল-মাকদেসী ⌑ (জন্ম হিজরী, ৫৪১-মৃত্যু ৬২০ হিজরী) অন্যতম। গ্রন্থটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, তবে আকীদার মৌলিক বিষয়সমৃদ্ধ। বইটির ব্যাখ্যা করেছেন আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আলেমে দীন, শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ এ গ্রন্থটিকে বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য সাবলীল করে তুলে ধরেছেন তরুন, উদ্দমী, বিশুদ্ধ আকীদা ও মানহাজের অনুসারী, সালাফে সালেহীনের পথের পথিক, প্রিয় ব্যক্তিত্ব জনাব আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী। আমার কাছে তার অনুবাদের কয়েকটি দিক খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। প্রথমত, তিনি গ্রন্থটির ভূমিকায় তাওহীদের পরিচয় তুলে ধরেছেন শাইখের অপর গ্রন্থ ‘আল-কাওলুল মুফীদ’ থেকে। যা বইটি বুঝতে ও সহীহ আকীদাকে ধারণ করতে খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। দ্বিতীয়ত, ইবন কুদামার কথাকে বুঝাতে গিয়ে কোথাও কোথাও অন্য ইমামদের কথা নিয়ে এসেছেন। তৃতীয়ত, ব্যাখ্যায় শাইখ ইবন উসাইমীনের কথাকে সুন্দর করে বুঝাতে গিয়ে শাইখের অন্য গ্রন্থ থেকে অনেক প্রয়োজনীয় উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। চতুর্থত, শুধু শাইখের গ্রন্থ থেকে নয় বরং অনেক সময় শাইখ সালেহ আলুশ শাইখসহ আরো অনেক সালাফী আলেমের গ্রন্থ থেকে প্রয়োজনীয় অংশ চয়ন করেছেন। এ যেন অনুবাদ, ব্যাখ্যা আর ব্যাখ্যার ব্যাখ্যা।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  এমনিতেই বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে আকীদা বিষয়ক গবেষণা করা বা এ বিষয়ে আগ্রহী হওয়া লোকদের খুবই অভাব পরিলক্ষিত। আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে সহীহ  আকীদা খুবই অবহেলিত। আকীদাকে বিশুদ্ধ করার ওপর যাদের চিন্তা চেতনা কাজ করে তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। তাদের মাঝে অনেকের আবেগ আছে কিন্তু ইলম নেই। এমতাবস্থায় এ শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য লেখালেখির জগতে প্রবেশকারী এ লেখককে আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করুন, তার উদ্দমকে অব্যাহত রাখুন, তার প্রচেষ্টাকে কবুল করুন, তার দ্বারা দীন ও মিল্লাতের সঠিক খিদমত আঞ্জাম দেয়ার তৌফিক দিন। আমীন।

 

প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

আযীযিয়্যাহ, মাক্কাতুল মুকাররামাহ

৮/১২/১৪৪৩ হিজরী।

ইবন কুদামাহ আলমাকদিসীর সংক্ষিপ্ত জীবনী

 

নাম ও বংশ:

তিনি ছিলেন মুওয়াফফাক উদ্দীন আবূ মুহাম্মাদ আব্‌দুল্লাহ ইবন আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন কুদামাহ ইবন মিকদাম ইবন নাসর ইবন আব্‌দুল্লাহ আল-মাকদিসী, পরবর্তীতে আদ-দামিশকী আস-সালিহী।

 

জন্ম:

হিজরী ৫৪১ সালের শাবান মাসে ফিলিস্তীনের জাম্মা’ঈল নামক একটি ক্ষুদ্র শহরে তাঁর জন্ম।

 

তাঁর জীবনের প্রথমার্ধ ও সফর:

যখন তাঁর বয়স দশ, তখন তিনি তাঁর পরিবারসহ দামেশক শহরে আসেন। তিনি সেখানে আল কুরআন পাঠ করেন ও মুখতাসার আল খিরাকী (হাম্বালী ফিকহের কিতাব) মুখস্থ করেন।

 

তিনি ও তাঁর খালাতো ভাই হাফিয আব্দুল গানী আল মাকদিসী ৫৬১ হিজরীতে বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সেখানে তাঁরা সেখানকার অনেক আলেম থেকে দীনের ইলম অর্জন করেন।

 

তাঁর অসাধারণ জ্ঞান প্রতিভার কারণে তিনি শেষমেশ তাঁর সমসাময়িকদের ছাড়িয়ে অনেকদূর এগিয়ে যান। অবশেষে হাম্বালি মাযহাবের জ্ঞান ও এর উসূলের দায়িত্ব তাঁর ওপরেই ন্যস্ত করা হয়।

তাঁর দীনদারিতা ও পরহেযগারিতা:

তিনি ছিলেন দীনদার, পরহেযগার, আল্লাহভীরু, শ্রদ্ধাভাজন ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। নম্রতা, সহনশীলতা ছিল তাঁর ভূষণ। তিনি তাঁর জীবনের পুরো সময় জ্ঞানার্জন ও তার প্রচার-প্রসারে ব্যয় করেন। তিনি অযথা তর্কের জবাব দলিল দ্বারা দিতেন। তিনি আপত্তি বা রাগ করতেন না। অপরপক্ষে তার সাথে বিতর্ককারীরা চিৎকার ও রাগে অন্ধ হয়ে যেত।

 তাঁর প্রখ্যাত উস্তাদগণ:

শাইখ ইবন কুদামাহ অসংখ্য শাইখের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন তাকী উদ-দীন আবু মুহাম্মাদ আব্‌দুল গানী আল মাকদিসী (মৃত্যু ৬১২ হিজরী) এবং ইরাকের ফাকীহ নাসেহুল ইসলাম আবুল ফাতহ নাসর ইবন ফিতইয়ান, যিনি ইবনুল মান্নী নামে বিখ্যাত ছিলেন।

তাঁর প্রসিদ্ধ ছাত্ররা:

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  তাঁর অনেক ছাত্র ছিলো, তন্মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন শিহাবুদ্দীন আবু শামাহ আল-মাকদিসী (মৃত্যু ৬৬৫ হিজরী) এবং হাফিয যাকী উদ-দীন আবু মুহাম্মাদ আল মুনযিরী (মৃত্যু ৬৫৬ হিজরী) প্রমুখ।

তাঁর সম্পর্কে আলেমদের অভিমত:

ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, “শামে আল আওযা‘য়ীর পর শাইখ আল মুওয়াফফাক এর মত দীনের জ্ঞানসম্পন্ন আর কেউ আসেননি”

আল মুনযিরী বলেন, “তিনি ছিলেন ফাকীহ, ইমাম। তিনি দামেশকে হাদীস রেওয়ায়েত করেন, ফতোয়া দেন ও শিক্ষা প্রদান করেন। তিনি ফিকহ ও অন্যান্য বিষয়ে ছোট বড় অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন।”

আয যাহাবী বলেন, “তিনি ছিলেন বিশিষ্ট ইমামদের একজন ও বহু পুস্তক প্রণেতা”।

ইবন কাসীর বলেন, “তিনি ছিলেন শাইখুল ইসলাম, ইমাম, আলেম, দক্ষ। তাঁর চেয়ে বেশী ফিকহ সম্পন্ন কাউকে না তাঁর যুগে পাওয়া গিয়েছে না তাঁর পূর্বে অনেক দিন যাবত পাওয়া গিয়েছিলো।”

তাঁর লেখনী:

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  ইমাম আল মুওয়াফফাকের ছিল অসংখ্য লেখনী। এসব তাঁকে আলেমদের মাঝে উঁচু স্তরে উন্নীত করে দেয়। ইবন রাজাব বলেন, “শাইখ আল মুওয়াফফাক হাম্বালি মাযহাবে অসংখ্য উৎকৃষ্ট কিতাবের রচনাকারী। উসূল (মূলনীতি) ও ফুরু’ (শাখাপ্রশাখাগত জ্ঞান, যেমন ফিকহ), হাদীস, আরবী ভাষা, যুহুদ ও রাকায়িক (হৃদয় নরমকারি বিষয়) – সকল বিষয়ে। উসূলুদ দীন বিষয়ে তাঁর কিতাবগুলো অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের। এসব গ্রন্থের বেশিরভাগই হাদীসশাস্ত্রের আলেমদের মত করে লেখা। সেজন্য এসব গ্রন্থকে আপনি হাদীস, আসার ও সনদ দিয়ে বর্ণিত বর্ণনায় পূর্ণ দেখতে পাবেন। বস্তুত এটিই ছিলো ইমাম আহমাদ ও অন্যন্য হাদীসশাস্ত্রের আলেমদের পথ।”

এসব কিতাবাদির মধ্যে রয়েছে:

ফিকহ          :   আল-মুগনী, আল-কাফী, আল-উদ্দাহ, আল-উমদাহ, আল-মুকনি’

আকীদাহ        :    লুমআতুল ই‘তিকাদ, আল কাদার, যাম্মুত তা’বীল

উসূলুল ফিকহ    :    রাওদাতুন নাযের ও জুন্নাতুল মুনাযির

রাকাইক ও যুহুদ :    আর রিক্কাহ ওয়াল বুকা, আত-তাউওয়াবীন।

হাদিস           :    মুখতাসার ‘ইলালিল হাদীস লিল খাল্লাল

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  এছাড়াও তাঁর রয়েছে আরও অনেক গ্রন্থ; যার কিছু প্রকাশিত হয়েছে অপর কিছু পাণ্ডুলিপি আকারে রয়েছে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা যেন খুব শীঘ্রই আমাদেরকে এ নূরগুলো দেখার তৌফিক প্রদান করেন।

মৃত্যু:

শাইখ ⌑ ৬২০ হিজরীতে মারা যান।

শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) এর

              সংক্ষিপ্ত জীবনী

নাম ও বংশ পরিচয়

আবূ আব্‌দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ ইবন মুহাম্মাদ ইবন উসাইমীন আল-উহাইবী আত-তামীমী।

 জন্ম

২৭ রমাদান, ১৩৪৭ হিজরীতে (২৯ মার্চ, ১৯২৯ সালে) তিনি উনাইযাহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষা-দীক্ষা

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ   তিনি তাঁর নানা আব্‌দুর রহমান ইবন সুলাইমান আলে-দামিগ (রহ) এর নিকট কুরআন মাজীদ পড়তে শিখেন এবং হিফ্‌য সম্পন্ন করেন। অতঃপর তিনি হস্তলিপি, গণিত এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানার্জন করেন। তখনকার সময়ের প্রখ্যাত আলিমে দীন শাইখ আব্‌দুর রহমান আস-সা‘দী (রহ) ছোট ছোট ছাত্রদের পড়ানোর জন্য দু’জন শিক্ষার্থীকে সবসময় তাঁর কাছে রেখে দিয়েছিলেন। তাদের একজনের নাম ছিল শাইখ আলী আস-সালিহী (রহ) আর অপরজনের নাম ছিল শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্‌দুল আযীয আল-মুতাউওয়া (রহ)। শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আব্‌দিল আযীয আল-মুতাউওয়ার নিকট তিনি শাইখ আব্‌দুর রহমান আস-সা‘দী লিখিত আকীদাহ্‌ বিষয়ক পুস্তিকা ‘মুখতাসারুল আকীদাহ্‌ আল-ওয়াসিতিয়্যাহ’ এবং ফিক্‌হ বিষয়ক পুস্তক ‘মিনহাজুস সালিকীন’ পাঠ করেন। এছাড়া তিনি শাইখ মুহাম্মাদ আল-মুতাউওয়া এর নিকট আরবী ব্যাকরণ বিষয়ক পুস্তক ‘আল-আজরুমিয়্যাহ’ এবং ‘আল-আলফিয়্যাহ’ পাঠ করেন। শাইখ আব্‌দুর রহমান ইবন আলী ইবন আওদান এর নিকট তিনি ফারায়েদ (উত্তরাধিকার আইন) এবং ফিক্‌হ (ইসলামী ব্যবহারিক জ্ঞান) বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করেন।

শাইখ আব্‌দুর রহমান আস-সি‘দী কে তাঁর প্রথম শিক্ষক বলে গণ্য করা হয়। কারণ তিনি দীর্ঘদিন তাঁর সান্নিধ্যে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর নিকট তিনি তাওহীদ, তাফসীর, ফিক্‌হ, উসূলে ফিক্‌হ, ফারায়েয, মুসতালাহুল হাদীস এবং নাহু ও সর্‌ফ শিক্ষালাভ করেন। শিক্ষক শাইখ আব্‌দুর রহমান আস-সি’দী এর নিকট তাঁর মর্যাদা ও গুরুত্ব ছিল অপরিসীম তিনি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র ছিলেন। শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) এর পিতা কর্মজীবনে যখন উনাইযাহ শহর থেকে রিয়াদে স্থানান্তরিত হলেন, তখন তিনি তার পুত্রকে তার সাথে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। এরই প্রেক্ষিতে শাইখ আব্‌দুর রহমান আস-সি‘’দী (রাহ) তাকে লিখে পাঠান, এটা সম্ভব নয়। আমরা চাই মুহাম্মাদ এখানে থাকুক, যাতে সে উপকৃত হতে পারে’।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) তাঁর শিক্ষক আব্‌দুর রহমান আস-সি‘দী সম্পর্কে বলেছেন, শিক্ষাদান পদ্ধতি, যে কোন জ্ঞানগর্ভ বিষয় উপস্থাপন এবং উপমা-অলঙ্কার দিয়ে তা ছাত্রদের নিকট সহজবোধ্য করে দেওয়ার পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে আমি তাঁর দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয়েছি। এমনিভাবে চারিত্রিক দিক থেকেও আমি তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। কেননা তাঁর মাঝে ছিল উন্নত চরিত্রের এক বিরাট সমাহার। তিনি ছিলেন অগাধ জ্ঞানের অধিকারী এবং অত্যন্ত আল্লাহ্‌ভীরু ও ইবাদাত গুজার। ছোটদের সাথে তিনি মজা করতেন এবং বড়দের নিকট তিনি হাসিমুখে থাকতেন। আমি যাদের দেখেছি তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী’।

তিনি সম্মানিত শাইখ আব্‌দুল আযীয ইবন বায (রহ) এর নিকটও পড়াশোনা করেছেন। তাই শাইখ আব্‌দুল আযীয ইবন বায (রহ) কে তাঁর শিক্ষাজীবনের দ্বিতীয় শিক্ষক বলে গণ্য করা হয়। সাহীহ বুখারী, শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহ) এর কয়েকটি রিসালা এবং ফিক্‌হের কয়েকটি কিতাব প্রথমে তিনি শাইখ আব্‌দুল আযীয ইবন বায (রহ) এর নিকট পড়া শুরু করেন। তিনি বলেন, হাদীসের যথাযথ মূল্যায়ন ও গুরুত্ব প্রদানের ব্যাপারে আমি শাইখ আব্‌দুল আযীয ইবন বায (রহ) এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। এমনিভাবে তাঁর আখলাক এবং মানুষের জন্য তিনি নিজেকে যেভাবে উজাড় করে দিতেন তা আমাকে প্রভাবিত করেছে’৤

১৩৭১ হিজরী সালে তিনি জামে‘ মসজিদে শিক্ষাদানে ব্রতী হন। অতঃপর ১৩৭২ হিজরীতে রিয়াদে শিক্ষা ইনস্টিটিউট খোলা হলে তিনি সেখানে ভর্তি হন। এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, শাইখ আলী আস-সলিহী এর পরামর্শে এবং শাইখ আব্‌দুর রহমান আস-সি‘দী এর অনুমতি নিয়ে আমি মা‘হাদে ইলমী এর দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হই। সেসময় এই ইনস্টিটিউটের দুটি বিভাগ ছিল। একটি বিশেষ বিভাগ, অন্যটি সাধারণ বিভাগ। আমি ভর্তি হই বিশেষ বিভাগে। সে সময় শিক্ষা ইনস্টিটিউটের নিয়ম ছিল এই যে, কেউ চাইলে ছুটিকালীন সময়ে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের পাঠক্রম সম্পন্ন করতে পারতো এবং পরবর্তী বর্ষের শুরুতেই তার পরীক্ষা নেওয়া হতো। তাতে কৃতকার্য হলে সে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে উন্নীত হতে পারতো। আর এভাবে আমি কম সময়ে আমার কোর্স সম্পন্ন করি’৤

 

কর্মজীবন

দুই বছর শিক্ষার্জনের পর তিনি উনাইযাহ শহরের একটি শিক্ষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি শরীয়াহ কলেজে পড়াশোনা করেন এবং আব্‌দুর রহমান আস-সা’দী এর নিকট ইলম অর্জনের কাজ চালিয়ে যান।

শাইখ আব্‌দুর রহমান আস-সি‘দী এর মৃত্যুর পর তিনি উনাইযাহ শহরের প্রধান মসজিদে ইমামতির দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ইমামতির মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি উনাইযাহ জাতীয় গ্রন্থাগারে এবং শিক্ষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতার কাজ চালিয়ে যান। অতঃপর তিনি মুহাম্মাদ ইবন সাঊদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কাসীম শাখার ‘কুল্লিয়্যাতুশ শারীআহ’ এবং ‘কুল্লিয়্যাতু উসূলিদ দীন’ এই দু’টিতেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হয়ে সেখানে চলে যান এবং এই বইটি লেখা পর্যন্ত তিনি উল্লেখিত দুইটি অনুষদে শিক্ষকতা করছেন। একই সময়ে তিনি সাউদী সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। মহান আল্লাহ্‌র দিকে আহ্বান এবং বিশ্বব্যাপী দ্বীনী দাওয়াতের কাজে নিবেদিত দাঈগণকে সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) এর রয়েছে এক অসামান্য অবদান। এসব ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রম।

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সম্মানিত শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম (রহ) শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) কে বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রথমে অনুরোধ এবং পরে খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) কে আল-আহসা শহরের শরীআহ আদালতের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রীয় ফরমানও জারি করেছিলেন। কিন্তু শাইখ মুহাম্মাদ (রহ) তাঁকে এই দায়িত্ব অর্পণ না করার জন্য এবং এতে তাঁকে না জড়ানোর জন্য সবিনয় অনুরোধ জানান। অনেক অনুরোধ ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের পর শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম (রহ) তাঁর এ আবেদন মঞ্জুর করেন এবং বিচারকের পদের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে তাঁকে নিষ্কৃতি দেন।

 

রচনা ও সংকলন

তাঁর রচিত কিতাব ও পুস্তিকার সংখ্যা অনেক। তন্মধ্যে রয়েছে:

১. শারহুল আকীদাহ্‌ আল-ওয়াসিতিয়্যাহ

২. ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম

৩. আল-উসূল মিন ইলিমিল উসূল

৪. শারহুল আরবাঈন আন-নাবুবিয়্যাহ

৫. আল-কাওয়াইদুল মুসলা

৬. শারহু সালাসাতিল উসূল

৭. আশ-শারহুল মুমতি’ ইত্যাদি।

এছাড়াও রয়েছে তাঁর অসংখ্য ক্যাসেট ও ছোট ছোট পুস্তিকা। বর্তমানে তাঁর ইলমী খিদমাত http://binothaimeen.net/ ওয়েব সাইটে পাওয়া যায়।

 

পরলোক গমন

বিশ্ববরেণ্য এ আলিম দীর্ঘদিন ইসলামের খিদমাত করার পর ১৪২১ হিজরী সালের ১৫ শাওওয়াল (১১ জানুয়ারী, ২০০১ সালে) মাগরিবের সলাতের সামান্য পূর্বে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে সুউদী আরবের বাদশাহ সহ রাজ পরিবারের সকল সদস্য, দেশের সকল আলিম এবং সর্বস্তরের জনগণ শোকাহত হন৤ বিশ্ব অনুভব করে এক অপূরণীয় ক্ষতি।

মহান আল্লাহ্‌র নিকট দুআ’ করি, তিনি যেন শাইখের সমস্ত খিদমাত কবুল করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আমীন!

 

ব্যাখ্যাকারী মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ) এর ভূমিকা

 

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি, তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করি, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁরই কাছে তাওবাহ করি। আল্লাহর কাছে আমরা আমাদের অন্তরের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমাদের আমলের অনিষ্টতা থেকে। আল্লাহ তাআলা যাকে হেদায়াত দান করেন, তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কেউ পথপ্রদর্শনকারী নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাআলা অসংখ্য সালাত ও সালাম পেশ করুন তাঁর প্রতি এবং তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবী ও যারা তাঁর অনুসরণ করেন সকলের প্রতি ।

 

অতঃপর, এটি লুমআতুল ই‘তিকাদ কিতাবের উপর লিখিত একটি সংক্ষিপ্ত টীকাগ্রন্থ। যা (লুম‘আতুল ইতিকাদ) মুহাম্মাদ আব্‌দুল্লাহ ইবন আহমাদ ইবন কুদামাহ আল-মাকদেসী ⌑ রচনা করেছেন। ৫৪১ হিজরী সনের শা‘বান মাসে ফিলিস্তীন নগরীর একটি গ্রামে তাঁর জন্ম এবং ৬২০ হিজরী সনের ঈদুল ফিতরের দিন দামেস্ক শহরে মারা যান।

 

এই কিতাবের মধ্যে সম্মানিত লেখক আকীদাহ্‌র সারকথা একত্র করেছেন। একারণে (সৌদী আরবের) শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের প্রথম বর্ষের শুরুতেই এই গ্রন্থটি নির্ধারণ করেছেন, যাতে এটি তাদের জন্য এ স্তরে একটি নির্ভরযোগ্য খুঁটি স্বরূপ হয়।

 

এই কিতাবটির আলোচ্য বিষয় ও মানহাজের গুরুত্বের দিকে লক্ষ্য করে এবং এর কোনো ব্যাখ্যাগ্রন্থ না থাকার কারণে আমি আল্লাহর সাহায্য এবং ইচ্ছা ও ‘আমলের সঠিকতার জন্য তাঁর সহজতা কামনা করে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম হয়েছি যে, এ কিতাবের ওপর সামান্য কিছু কথা লিখব, যা এই কিতাবের দুর্বোধ্যতাকে দূর করবে, এর উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করবে এবং এর অন্তর্নিহিত উপকারিতা প্রকাশ করবে।

 

আমি আল্লাহর নিকটে আশা রাখি, তিনি এক পলকের জন্যেও আমাকে আমার নাফসের দিকে সমর্পন করবেন না এবং তিনি এই কাজটি সম্পাদন করতে আমাকে সহযোগিতা করবেন। তিনি আমার আমলকে বরকত ও উপকারী করবেন, নিশ্চয় তিনি পরমদাতা ও করুণাময়।

মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল উসাইমীন

০১/১০/১৩৯২ হিজরী

ব্যাখ্যাকার

আবূ হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী  এর

ভূমিকা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তার সাহায্য প্রার্থনা করি, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও আমাদের কাজের নিকৃষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন তাকে কেউ পথভ্ৰষ্ট করতে পারে না এবং যাকে পথভ্ৰষ্ট করেন তার কোন পথপ্ৰদৰ্শক নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক এবং তাঁর কোন শরীক নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল। হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক দাবী কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারেও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।  [সূরা আন্‌-নিসা (৪): ১] হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর যেমনভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত। তোমরা মুসলিম না হয়ে কক্ষনো মরো না। [সূরা আলে ইমরান (৩): ১০২] হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সরল সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে। [সূরা আল-আহযাব (৩৩): ৭০-৭১] আম্মা বা‘দ। আকীদাহ ও মানহাজের দা‘ওয়াতের দিক থেকে আমাদের দেশের সালাফি দাওয়াত আজ পর্যন্ত অনেক নবীন অবস্থায় রয়েছে বলা যায়। এসব বিষয়ের উপর বাংলা ভাষায় বই প্রায় অপ্রতুল বললেই চলে। কিছু ক্ষুদ্র পুস্তিকা নানা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেলেও আলেমদের ইস্তিলাহী উদ্দেশ্য সঠিক রেখে বাংলা ভাষায় সঠিক ও নির্ভুল তরজমায় আকীদাহ্‌ ও মানহাজের উল্লেখযোগ্য ক্লাসিকাল গ্রন্থ অথবা তাদের ব্যাখ্যাসমূহ প্রায় নেই বললেই চলে। লুমআতুল ই‘তিকাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ গ্রন্থটি আশাকরি সেই শূন্যস্থান পূরণে সহায়তা করবে ইনশা আল্লাহ্‌। এ গ্রন্থটির একটি ক্ষুদ্র ইতিহাস রয়েছে। ক্লাসিকাল বইয়ের ক্লাসের অনুপস্থিতি দেখে আমি কিছুটা সাহস করে আল্লাহ্‌র উপর ভরসা রেখে অনলাইনে ক্লাস করানো শুরু করি। সে সময়ে দুই বাংলার শাইখুল আকীদাহ আশ শাইখ প্রফেসর ডঃ আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়াহ হাফিযাহুল্লাহ তাঁর দয়া ও স্নেহের চাঁদরে আমাকে ঢেকে দেন ও আমাকে বুকে সাহস নিয়ে দাওয়াত চালিয়ে যাওয়ার উপদেশ দেন। আমি আমার সালাসাতুল উসূল ক্লাসের তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত অংশে কিভাবে পড়াব সে বিষয়ে শাইখের পরামর্শ নিই। তিনি আমাকে বলেন আমি যেন অবশ্যই আসমা ওয়াস সিফাতের কাওয়াইদ পড়াই। সে সময়ে আমার পড়ানো পর্যবেক্ষণ করতে তিনি আমার ক্লাসে নিজে হাজির হন এবং নীরব দর্শকের ভূমিকায় প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা অবস্থান করেন। অতঃপর আমাদের অনুরোধে মাইক্রোফোন নেন এবং আমাদের অনেক উৎসাহ দেন। একই সাথে এরূপ ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। নিন্দুকের নিন্দা ও হিংসুটের হিংসায় আমরা যেন কোন অবস্থাতেই ক্লাস বন্ধ না করি সে আদেশ করেন। আল্লাহ্‌ বলেন, হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাকে ভালবাসবে; তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে; তারা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না; এটা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছে তাকে তিনি তা দান করেন এবং আল্লাহ্‌ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। [সূরা আল-মায়িদাহ (৫): ৫৪] আল-হামদুলিল্লাহ আমার সেই ক্লাসে আমরা তাওহীদ-শিরক নিয়ে অত্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করি এবং একই সাথে আসমা’ ওয়াস সিফাতের কাওয়াইদসমূহ নিয়ে লম্বা আলোচনা করে কোমলমতি ভাই বোনেদের তাওহীদের আসল বাণী শিখিয়ে দিই। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে প্রায় সত্তর জন ছাত্র ছাত্রী সে ক্লাসে নিয়মিত অংশ নেয়। তাদেরকে আমি লম্বা সময় নিয়ে পুনঃ পুনঃ আলোচনা করে পুরো বিষয় আত্মস্থ করানোর ব্যবস্থা করি। তবে সে সময় আমার ছাত্র ছাত্রীরা আমার এতো ব্যাখ্যার সব কথা লিখতে অনেক বেগ পেত। অনেকেই আমাকে বিনীত অনুরোধ করেছিলো এসব ক্লাসের সংক্ষিপ্ত নোট তাদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়ে। কিন্তু ইংরেজিতে আমরা যেভাবে বলি নাইন টু ফাইভ কাজ করার পর আমার নিজের পড়ালেখার ফাঁকে নোট লেখার সময় কিছুতেই বের করতে পারছিলাম না। সে সময় আমার মনে হলো, কেননা লুমআতুল ই‘তিকাদ আমি যেভাবে পড়াতে চাই তাকে কিছুটা শিক্ষকের ম্যানুয়ালরূপে একটা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণগ্রন্থ লিখে ফেলি, যা আমার ছাত্রছাত্রীরাও নোট আকারে ব্যবহার করতে পারবে, যেহেতু আমি তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। আবার অন্য শিক্ষকেরাও এ গ্রন্থ দেখে অন্য ছাত্র ছাত্রীদের শিখাতে পারবে ইনশা আল্লাহ্‌। বিষয়টা নিয়ে আমাদের শ্রদ্ধেয় অভিভাবক আশ শাইখ প্রফেসর ডঃ আবু বকর মোহাম্মাদ যাকারিয়াহর সাথে পরামর্শ করি ও তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ দেন। সে সময় আমরা আমাদের প্রকাশনীর তরফ হতে আমাদের নবীন টীমকে শাইখ ইবনু উসাইমীনের লুমআতুল ই‘তিকাদের ব্যাখ্যার তরজমার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। অনূদিত তরজমাটি আমার হাতে আসার পর আমি বুঝতে পারি বইটি আমাদের নবীন টীমের জন্য প্রচুর কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে সিরাতের ও অন্যান্য স্থানে ইস্তিলাহী বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন সামান্য কিছু অংশ রেখে বাকি বইয়ের ব্যাখ্যাটি পুনরানুবাদের সিদ্ধান্ত নিই। আল্লাহ্‌ আমাদের নবীণ টীমকে উত্তম জাযা দিন। বইয়ের বিদআতীদের থেকে বয়কট করা বিষয়ের ব্যাখ্যার শাইখ রাবী‘ বিন হাদী আল মাদখালীর অংশটি আমাদের শ্রদ্ধেয় ভাই শাইখ আসাদুল্লাহ বিন মুযাম্মিল হক কর্তৃক অনূদিত ও প্রকাশিতব্য ‘শারহু উসুলিস সুন্নাহ’ গ্রন্থ থেকে শাইখ আসাদুল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে নেওয়া হয়েছে। আল্লাহ্‌ তাঁকেও উত্তম জাযা দিন। এরপর মার্চ ২০২২ সালের দ্বিতীয় সপ্তাহে শাইখ যাকারিয়্যাহর পরামর্শমত ইবনু উসাইমীনের ব্যাখ্যার উপর আমার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বসানো শুরু করি ও দীর্ঘ বিনিদ্র রজনী যাপনের পর মার্চ মাসের শেষদিকেই তা সম্পন্ন করি। আল-হামদুলিল্লাহ। শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মানহাজ

এখানে আমার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। আমি সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে এখানে উল্লেখ করছি ইনশা আল্লাহ্:

আল কুরআন ও হাদীসের অনুবাদ: আল্লাহ্‌র ওয়াহীর অনুবাদ বাংলায় প্রকাশিত স্বনামধন্য অনুবাদকদের থেকে নেওয়া হলেও প্রচুর সংখ্যক আয়াত ও হাদীসের অর্থ শুধরে দিয়েছি। যেসব গ্রন্থের অনুবাদ এখনো বাংলায় বের হয়নি, সেসব ক্ষেত্রে নিজেই হাদীসের অনুবাদ করে দিয়েছি।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

আল কুরআনের আয়াতের রেফারেন্স: ইবনু উসাইমীন ও আমার সংযোজিত ব্যাখ্যার কিছু স্থানে আল কুরআনের আয়াতের রেফারেন্স আমি ঠিক করে দিয়েছি।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

হাদীসের তাখরীজ: ইবনু উসাইমীনের ব্যাখ্যা গ্রন্থটিতে আশরাফ বিন আব্দিল মাকসূদের তাখরীজের পুরোটাই রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে মূল বইয়ের তাখরীজে বেশ কিছু রেফারেন্স ভুল পাওয়ায় আমি সেসব শুধরে দিয়েছি। এছাড়া বেশ কিছু নতুন রেফারেন্স জুড়ে দিয়েছি। তবে এসব ক্ষেত্রে আমার নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করিনি। মাঝে মাঝে কিছু হাদীস পাবেন, যার তাখরীজ উল্লেখ করা নেই। এর কারণ হচ্ছে সে হাদীসটির তাখরীজ গ্রন্থের কোথাও পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।

হাদীসের তাহকীক: শারহু লুমআতিল ইতিকাদ ইবনু উসাইমীনের ব্যাখ্যা গ্রন্থটিতে আশরাফ বিন আব্‌দিল মাকসূদের তাহকীকের মূল হুকুমগুলো উল্লেখ করলেও পুস্তকের কলেবর রক্ষার্থে আমি রিজাল বিষয়ক কিছু আলোচনা ছোট করে মূল নাতীজাহ দিয়ে দিয়েছি। একই সাথে কোন কোন ক্ষেত্রে তাঁর তাহক্বীকের সাথে একমত হইনি বলে নিজস্ব সংক্ষিপ্ত তাহকীক যোগ করে দিয়েছি এবং সেসব ক্ষেত্রে নিজের নাম উল্লেখ করে দিয়েছি। তবে বিস্তারিত তাহকীক পুস্তকের কলেবর রক্ষার্থে উল্লেখ করিনি। এছাড়া আমার দেওয়া ব্যাখ্যার সমস্ত রেফারেন্সের হাদীসগুলোর তাহকীক চেক করে দিয়েছি। আমার দেওয়া ব্যাখ্যাসমূহের সমস্ত হাদীস আমি চেক করে দিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি আমার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সমস্ত হাদীস কুতুব সিত্তাহ বিশেষ করে সাহীহাইন থেকে দিতে। আল-হামদুলিল্লাহ। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হলেও সেক্ষেত্রে হাদীসটি সাহীহ হওয়া নিশ্চিত করে তবেই দিয়েছি।

ইবনু উসাইমীনের ব্যাখ্যা গ্রন্থেই থাকা অতিরিক্ত ব্যাখ্যা: শারহু লুমআতিল ইতিকাদ মূল ব্যাখ্যাগ্রন্থে আশরাফ বিন আব্দিল মাকসূদের নিজস্ব ব্যাখ্যা আমি সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়েছি। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি অন্যান্য আলেমদের গ্রন্থ থেকে যেসব ফাইদাহ উল্লেখ করেছেন, সেগুলো পছন্দমত রেখে দিয়েছি।

হেডলাইন ও জরুরী ইস্তিলাহী নাম সংযোজন: ইবনু উসাইমীন ও আমার দেওয়া ব্যাখ্যায় যাঁদের কথা আমি উল্লেখ করেছি, সেখানে যদি আমি তাঁদের সাধারণ ব্যাখ্যা পেয়ে থাকি, সেক্ষেত্রে আমি নানা প্রকার হেডলাইন ও জরুরী ইস্তিলাহী নাম জুড়ে দিয়েছি, যাতে ছাত্র ছাত্রীরা বুঝতে পারে তাঁরা কি বিষয়ে আলোচনা করছেন। এছাড়া আমার নিজের ব্যাখ্যায় আমি প্রয়োজনমত হেডলাইন ও ইস্তিলাহী নাম দিয়েছি।

অধ্যায়ের ভূমিকা সংযোজন: প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের শুরুতে আমি পর্বাকারে আমার ব্যাখ্যায় একটি করে অধ্যায় জুড়ে দিয়েছি, যাতে পাঠক এ অধ্যায় সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য জানতে পারেন।

অন্যদের ব্যাখ্যার দায়ীফ হাদীস: শারহু লুমআতিল ইতিকাদ ইবনু উসাইমীনের অথবা আমার ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা কোন আলেম যদি দায়ীফ হাদীস দিয়ে কোন দলীল দেন, তবে সে হাদীসের মান আমি উল্লেখ করে দিয়েছি। একই সাথে সে তথ্যটির মূল বক্তব্য সঠিক হলে আমি ওয়াহীর দলীল ও উপযুক্ত ব্যাখ্যায় তার প্রমাণ দিয়েছি।

মানহাজ বিষয়ক সংযোজন: শারহু লুমআতিল ইতিকাদ ইবনু উসাইমীনের মূল গ্রন্থে মানহাজের আলোচনা অনেক কম থাকলেও আমি এখানে প্রচুর পরিমাণে মানহাজের বিষয় নিয়ে এসেছি। ফলে এখানে আকীদাহ ও মানহাজ উভয় বিষয়ে বিস্তারিত অনেক কথা সংযোজিত হয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ।

এ গ্রন্থে আরবী শব্দের সংখ্যাধিক্যের কারণ: শারহু লুমআতিল ইতিকাদ গ্রন্থে দুই প্রকার আরবী শব্দ, তার উচ্চারণ এ ইচ্ছা করে রেখে দেওয়া হয়েছে। এক প্রকার শব্দ হচ্ছে ইস্তিলাহী তথা পারিভাষিক শব্দ, যা আকীদাহ্‌র বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পূর্ণ অনুধাবন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় আরেক প্রকারের শব্দ ইচ্ছা করে রেখে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে সেসব শব্দ যেগুলো দিয়ে আহলুল বিদআতেরা আহলুস সুন্নাতের সাথে বিরোধিতা করেছে। এসব শব্দের শুধু ভাবানুবাদ করলে মূল তর্ক বিতর্ক বুঝতে মানুষ অক্ষম হয় বা এ সংক্রান্ত বুঝ অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে মনে করি। বিষয়টি শুরুর দিকে কিছুটা কষ্টকর হলেও পাঠক এ ধরণের বই এভাবে পড়তে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন বলে আমি আশা করি ইনশা আল্লাহ্‌।

ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আলোচনা: শারহু লুমআতিল ইতিকাদ গ্রন্থটি মূলতঃ ইবনু উসাইমীনের ব্যাখ্যার উপর আমার পূনর্ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। আমি এ কাজে নানা আলেমের ব্যাখ্যা এবং সেসব পরিষ্কার করতে আমার নিজের ব্যাখ্যা যোগ করেছি। কখনো কখনো বিভিন্ন আলেমের বক্তব্যের ফাঁকেই পরিষ্কার করতে íবন্ধনীরý মধ্যে আমার বক্তব্য দিয়েছি। কোথাও কোথাও সম্পাদকের বক্তব্যের ক্ষেত্রেও একই íবন্ধনীý ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কখনো নিজের বক্তব্য সরাসরি দলিলসহ উল্লেখ করেছি। বাংলাদেশী তালেবুল ইলমদের জন্য যাতে খুঁজে পেতে সোজা হয়, সে উদ্দেশ্যে নিজেকে দুষ্প্রাপ্য বই থেকে রেফারেন্স দেওয়া থেকে বিরত রেখেছি। লুমআতুল ই‘তিক্বাদের বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা সামনে রাখার পরও বারবার নজর শাইখ সালেহ বিন আব্দিল আযীয আলুশ শাইখের ব্যাখ্যার দিকে চলে যাচ্ছিলো। এর কারণ হচ্ছে অনেক বিষয়েই অন্যান্য ব্যাখ্যার তুলনায় আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে শাইখের ব্যাখ্যাগুলোকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিই যে শাইখের ব্যাখ্যার থেকে বড় একটা অংশ নেব। এ ব্যাখ্যাগ্রন্থে তাঁর মূল ব্যাখ্যাটির দু একটা বিষয় ব্যাতীত প্রায় পুরোটাই আছে। আলহামদুলিল্লাহ। এছাড়া সিরাত জাতীয় কোন কোন ক্ষেত্রে ইবনু উসাইমীনের ব্যাখ্যা যথেষ্ট বোধ করায় ফুটনোটে আলাদা ব্যাখ্যা সংযোজন করিনি। এ গ্রন্থটি ইবনু উসাইমীনের মূল বইয়ের ব্যাখ্যার পূনর্ব্যাখ্যা বলে অনেক ক্ষেত্রে তাঁরই অন্য কোন বই থেকে ব্যাখ্যা যোগাড় করে দিয়েছি এবং প্রয়োজনে পরিষ্কার করে দিয়েছি। আবার এতেও আমার মন সন্তুষ্ট না হলে অন্য বই থেকে ও সর্বশেষে নিজের থেকেও ব্যাখ্যা দিয়েছি। অন্যদের ব্যাখ্যা সংযোজনের বেলায় যদি লক্ষ্য করি যে তাঁরা কোন হাদীসের মূল কথাটি হাদীসটিকে উল্লেখ না করে নিজের ভাষায় দিচ্ছেন, তবে মূল হাদীসটিই তুলে দিয়েছি ও ভাবার্থের বর্ণনাকে প্রতিস্থাপন করে দিয়েছি।

শব্দকোষ সংক্রান্ত নির্দেশনা: গ্রন্থের শেষে পাঠকের সুবিধার্থে শব্দকোষ যোগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাষাগত অর্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে প্রয়োজনবোধে শারয়ী সংজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের কারণ হচ্ছে পুরো শারয়ী অর্থ শব্দকোষের মত স্থানে দিতে হলে মূল ব্যাখ্যার সাথে এতে টক্কর হওয়া ছাড়াও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিবে।

রেফারেন্সিং: শাইখ আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়াহ এর পরামর্শে এ গ্রন্থে মূলতঃ হার্ভার্ড রেফারেন্সিংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ও অধিকাংশে এর যথাসাধ্য প্রয়োগ করা হয়েছে।

শারয়ী সম্পাদনা: এ বইটির শারয়ী সম্পাদনার জন্য এ কাজে আমাদের ভাষার সবচাইতে উপযুক্ত ব্যক্তি দুই বাংলার শাইখুল আকীদাহ্‌ প্রফেসর ড. আবুবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া কে দেওয়া হয়েছিলো। তার কিছুদিন পরেই তিনি আল্লাহ্‌র রাস্তায় হাজ্জে গমন করেন। এ সময় তিনি অত্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্য্য সহকারে বইটি পড়েন, হজ্বের উদ্দেশ্যে ভ্রমণরত অবস্থায় ৪ঠা জুলাই, ২০২২ তারিখে তাঁর সম্পাদনার কাজ সমাপ্ত করেন এবং আমাদের কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেন। আমরা শাইখের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবর্তন করে আপনাদের সম্মুখে গ্রন্থটি উপস্থিত করলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ্‌ আমাদের শাইখকে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব করুন এবং তাঁর হাত দিয়ে এ দেশের আকীদাহ মানহাজের শিক্ষার এ দারুণ পথ আরো প্রশস্ত করে দিন।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

গ্রন্থটি পাঠ করার উপায় সংক্রান্ত উপদেশ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ গ্রন্থটিকে ‘গল্পের বই’ হিসেবে নিয়ে গড়গড়িয়ে পাঠ করার বিরুদ্ধে উপদেশ দেওয়া হলো। এটি মূলতঃ পাঠ্যপুস্তকের ন্যায় একাডেমিক গ্রন্থ। আমরা একে কোন চৌকশ শিক্ষকের সাথে পাঠ করার উপদেশ দিলাম। এ গ্রন্থটি কিছুটা সময় নিয়ে পড়তে হবে ও ধীর গতিতে এর দলিল ও যুক্তি অনুধাবন করতে হবে।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  আল্লাহ্‌র কাছে অশেষ শুকরিয়া আমাকে এ কাজটি করার তাওফীক দেওয়ার জন্য। এ কাজের পর আমাকে নানা বিষয়ে যারা সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের কথা না উল্লেখ করলেই নয়। এ বইটি লেখার সময় আমি সমস্ত ক্লাস নেওয়া বেশ কয়েক মাসের জন্য স্থগিত রেখে পুরোটা সময় এতেই প্রদান করি। তাই আমার ছাত্র ছাত্রীদের এখানে একটি কুরবানী রয়েছে। একই সময়ে আমার পরিবারকে লম্বা একটা সময় মাহরূম করেছি। আল্লাহ্‌র চেহারার উদ্দেশ্যে তারা সবর করেছে। আল্লাহ্‌ তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ   গ্রন্থটির প্রুফরিডিং এর দায়িত্ব পালন করেছেন গ্রন্থটির প্রকাশক ও তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর স্বত্বাধিকারী মোঃ ওয়ালীউল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ নিজেই। এ কাজে তিনি বেশ অনেক রাত জেগে আমাকে সময় দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তাঁকে উত্তম জাযা দিন। বইটির মেকআপ ও প্রচ্ছদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন ঢাকার মোহাম্মাদ আশরাফুল ইসলাম ভাই। আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁকেও উত্তম জাযা দিন।

 

পরিশেষ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ   পরিশেষে বলতে চাই, আমি এ কাজটি করেছি সম্পূর্ণ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির আশায়। আমার জীবন, আমার মরণ, আমার শরীরে প্রবাহিত রক্ত থেকে আমার সবকিছু আল্লাহ্‌র জন্য নিবেদিত। আমরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় নানা কাজ করে কেবল তাঁর সন্তুষ্টিই অর্জন করতে চাই।

আল্লাহ্‌ বলেন,

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নৈকট্য অন্বেষণ কর আর তাঁর পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

[সূরহ আল-মায়িদাহ (৫):৩৫]

 

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  আমার জানামতে আমার দেওয়া ব্যাখ্যায় আমি সমস্ত বিষয় ওয়াহী দিয়ে ও সঠিক যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করেছি। আমি বিশ্বাস করি আমরা সালাফিরা দলীলনির্ভর সঠিক যুক্তিতে বিশ্বাসী। দলীলই হোক আমাদের সব দাবীর প্রমাণ ইনশা আল্লাহ্‌।

 

আল্লাহ্‌ বলেন,

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর জীবিত থাকে।

[সূরা আল-আনফাল (৮):৪২]

 

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ  সুতরাং সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিল সব ওয়াহী ও সঠিক যুক্তি দ্বারাই নির্ধারিত হোক। সত্যের আলোকচ্ছটায় দূরীভূত হোক সকল সংশয়। উদ্ভাসিত হোক সত্য আকীদাহ, সত্য মানহাজ। আল্লাহ্‌র নাম উঠে যাক সবার উপরে। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক।

 

আবূ হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী

ব্যাখ্যাকার ও পরিচালক, আলোকধারা

লন্ডন, যুক্তরাজ্য ১৬/৭/২০২২

লুমআতুল ইতিকাদ

مُقَدِّمَةُ الْمُؤَلِّفِ

লেখকের ভূমিকা

আশ শায়খ, আল ইমাম, আল-আল্লামাহ মুওয়াফফাকুদ দীন আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ ইবনু কুদামাহ আল-মাকদিসী বলেন,

بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

১. সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র, যিনি সকল ভাষায় প্রশংসিত। সকল যুগে উপাস্য। তাঁর জ্ঞান হতে কোন স্থান মুক্ত নয়। কোন একটি বিষয় তাঁকে অপর বিষয় হতে ব্যস্ত রাখেনা। কেউ তাঁর সাদৃশ্য বা সমকক্ষ হওয়া থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। তিনি মুক্ত কোন নারী সঙ্গী ও সন্তান হতে। তাঁর হুকুম সকল বান্দার উপরেই কার্যকর। কোন বোধশক্তি চিন্তায় তাঁর কোন সাদৃশ্য স্থাপন করতে পারেনা। অন্তর কখনো কল্পনাতেও তাঁকে চিত্রায়িত করতে পারেনা।

কোন কিছুই তাঁর দৃষ্টান্তসম নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

[সূরা আশ-শূরা (৪২):১১]

তাঁর রয়েছে সর্বোৎকৃষ্ট নামসমূহ ও সুউচ্চ সিফাতসমূহ।

দয়াময় (আল্লাহ্‌) আর্‌শের উপর উঠেছেন।

যা আছে আসমানসমূহে ও যমীনে এবং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে তা তাঁরই।

আর যদি আপনি উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন, তবে তিনি তো যা গোপন ও অতি গোপন সবই জানেন।

আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, সুন্দর নামসমূহ তাঁরই।

[সূরা তাহা (২০):৫-৮]

জ্ঞান দ্বারা তিনি সকল কিছু পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। ইযযাহ (عِزَّة) তথা সম্মান, পরাভব ও রাজত্ব এবং হুকুম দ্বারা তিনি প্রত্যেক সৃষ্টিকে করেছেন বশীভূত বা পরাভূত। রহমত ও জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি সকল কিছুর উপর প্রসারিত ও ব্যাপ্ত।

তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত, কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না।

[সূরা তাহা (২০):১১০]

তিনি গুণান্বিত কেবল নিজে যা দ্বারা নিজেকে গুণান্বিত করেছেন তাতে। যা রয়েছে তাঁর মহান কিতাবে অথবা তাঁর নাবী কারীমের বাণীতে।

https://fb.watch/f20Ty_S0t1/

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

শারহু লুমআতিল ইতিকাদ

Reviews (0)

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “শারহু লুমআতিল ইতিকাদ”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping cart
Facebook Twitter Instagram YouTube WhatsApp WhatsApp

Sign in

No account yet?