সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

৳ 174

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী
লেখক : আব্দুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী
প্রকাশনী : তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয় : ইসলামি আদর্শ  ও মতবাদ
পৃষ্ঠা :৪৫৫, কভার : পেপার ব্যাক

Description

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী
লেখক : আব্দুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী
প্রকাশনী : তাওহীদ পাবলিকেশন্স
বিষয় : ইসলামি আদর্শ  ও মতবাদ
পৃষ্ঠা :৪৫৫, কভার : পেপার ব্যাক
বইটি কিনতে কিল্ক করুন: সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী
আরো জানতে কিল্ক করুন: তাওহীদ পাবলকিশেন্স

চরিত্র মানব-জীবনের অবিচ্ছেদ্য বিষয়। কেউ হয়। কুচরিত্রবান, আবার কেউ হয় সুচরিত্রবান। যে কোন মানুষই সুচরিত্রবান হতে পারে। কিন্তু মুসলিম সচ্চরিত্রতার একটি অতিরিক্ত ও পৃথক বৈশিষ্ট্য হল মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমান ও তাঁর নিষ্ঠাময় আনুগত্য।

অন্যের নিকট এমন অনেক কর্ম সুচরিত্রবানের আচরণ হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একজন মুসলিমের জন্য তা সচ্চরিত্রতার নিদর্শন নাও হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা থেকে আগত আলোর উজ্জ্বল রূপরেখা।

মুসলিম জীবনের কর্মাবলীকে ভাগ করলে দেখা যাবে, তাতে রয়েছে মহান প্রতিপালকের ইবাদত বা উপাসনা, রয়েছে ব্যবহারিক জীবনে তাঁর আনুগত্য ও নিষ্ঠা এবং রয়েছে সকলের সাথে প্রয়োগযোগ্য সুন্দর চরিত্র। তবে নিঃসন্দেহে বলতে পারা যায় যে, ইসলামের সকল আমল ও ইবাদতের মাঝেই নিহিত রয়েছে। সচ্চরিত্রতার প্রশিক্ষণ ও সদাচারিতার বহিঃপ্রকাশ।

বক্ষ্যমাণ পুস্তকে চরিত্রের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামী চরিত্রের একটি রূপরেখা পেশ করা হয়েছে।


সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী

বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ইসলামী গবেষক, লেখক, মুহাক্কিক আলিম ও দাঈ

প্রকাশনায়

তাওহীদ পাবলিকেশন্স

ঢাকা-বাংলাদেশ

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী


সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

অবতরণিকা

الحمد لله رب العالمين ، والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين ، نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين ، ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، أما بعد :

চরিত্র মানব-জীবনের অবিচ্ছেদ্য বিষয়। কেউ হয় কুচরিত্রবান, আবার কেউ হয় সুচরিত্রবান। যে কোন মানুষই সুচরিত্রবান হতে পারে। কিন্তু মুসলিম সচ্চরিত্রতার একটি অতিরিক্ত ও পৃথক বৈশিষ্ট্য হল মহান স্রষ্টার প্রতি সঠিক ঈমান ও তাঁর নিষ্ঠাময় আনুগত্য।

অন্যের নিকট এমন অনেক কর্ম সুচরিত্রবানের আচরণ হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একজন মুসলিমের জন্য তা সচ্চরিত্রতার নিদর্শন নাও হতে পারে। যেহেতু মুসলিমের সচ্চরিত্রতা তার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, তার সচ্চরিত্রতা ¯য়ং সৃষ্টিকর্তা থেকে আগত আলোর উজ্জ্বল রূপরেখা।

মুসলিম জীবনের কর্মাবলীকে ভাগ করলে দেখা যাবে, তাতে রয়েছে মহান প্রতিপালকের ইবাদত বা উপাসনা, রয়েছে ব্যবহারিক জীবনে তাঁর আনুগত্য ও নিষ্ঠা এবং রয়েছে সকলের সাথে প্রয়োগযোগ্য সুন্দর চরিত্র। তবে নিঃসন্দেহে বলতে পারা যায় যে, ইসলামের সকল আমল ও ইবাদতের মাঝেই নিহিত রয়েছে সচ্চরিত্রতার প্রশিক্ষণ ও সদাচারিতার বহিঃপ্রকাশ। এই জন্য একজন নিষ্ঠাবান প্রকৃত মুসলিম হয় চরিত্রবান শিশু, চরিত্রবান কিশোর-কিশোরী, চরিত্রবান তরুণ-তরুণী বা যুবক-যুবতী, চরিত্রবান ¯্বামী-স্ত্রী, চরিত্রবান পিতামাতা এবং চরিত্রবান সন্তান-সন্ততি।

মুসলিম হয় চরিত্রবান শিক্ষক, চরিত্রবান ছাত্র, চরিত্রবান চাষী, চরিত্রবান চাকুরে, চরিত্রবান ব্যবসায়ী, চরিত্রবান ডাক্তার, চরিত্রবান ইঞ্জিনিয়ার, চরিত্রবান নেতা, চরিত্রবান জনগণ, এক কথায় চরিত্রবান মানুষ।

নারী হয়ে চরিত্রবতী হয়, সতী-সাধ্বী হয়, সুন্দর ব্যবহারের অধিকারিণী হয়।

বক্ষ্যমাণ পুস্তকে চরিত্রের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামী চরিত্রের একটি রূপরেখা পেশ করা হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে আশা, আমাদের প্রবীণ-প্রবীণা ও নবীন-নবীনারা এখান থেকে আলোর ঝিলিক পাবেন।

তাঁর নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে চরিত্রবান বানান। আমীন।

বিনীত—
আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী
আল-মাজমাআহ, সঊদী আরব


সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

সূচিপত্র

  • চরিত্র নিয়ে আলোচনা কেন? ১১
  • সচ্চরিত্রতার অর্থ ১৮
  • সচ্চরিত্রতার মাহাত্ম্য ১৯
  • প্রকৃতি ও চরিত্র ২৮
  • মানুষের চরিত্রের কি পরিবর্তন হতে পারে? ৩৩
  • সুচরিত্র হল দ্বীনের আত্মা ৩৬
  • সুচরিত্র ও ঈমান ৩৯
  • চরিত্র গঠনে ইবাদতের ভূমিকা ৪৩
  • মহানবী (ﷺ)-এর চরিত্র ৪৯
  • সলফদের সুচরিত্রের কতিপয় নমুনা ৫৩
  • সচ্চরিত্রতা প্রার্থনার দুআ ৫৬
  • সচ্চরিত্রতার মূলসূত্র ৫৮
  • সদাচরণাবলী ৬১
  • ১. তাক্বওয়া ৬১
  • ২. বিনয় ৬২
  • ৩. উদারতা ৭৩
  • ৪. সহিষ্ণুতা ৮৪
  • ৫. ধৈর্যশীলতা ৮৭
  • ৬. ক্ষমাশীলতা ৯৪
  • ৭. লজ্জাশীলতা ১০৩
  • ৮. দয়ার্দ্রতা ১০৯
  • ৯. নম্রতা ১১১
  • ১০. বদান্যতা ১১৫
  • ১১. কৃতজ্ঞতা ১১৮
  • ১২. অধিকার আদায় ১৩০
  • ১৩. আন্তরিকতা ১৩০
  • ১৪. সমালোচককে উপেক্ষা ১৩৩

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

  • ১৫. আত্মসমালোচনা ১৩৮
  • ১৬. আমানত আদায় করা ১৪০
  • ১৭. উপহার বিনিময় ১৪২
  • ১৮. পরার্থপরতা ১৪৩
  • ১৯. অন্ধ পক্ষপাতিত্ব বর্জন ১৪৫
  • ২০. ভালো কাজে সহযোগিতা ১৪৭
  • ২১. সহমর্মিতা ১৪৯
  • ২২. হিতাকাঙ্ক্ষিতা ১৫০
  • ২৩. পরস্পর উপদেশ বিনিময় ১৫৩
  • ২৪. আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসা ও ঘৃণা করা ১৫৫
  • ২৫. সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে বাধাদান ১৫৭
  • ২৬. আল্লাহর দিকে দাওয়াত ১৫৮
  • ২৭. হিকমত অবলম্বন ১৬০
  • ২৮. উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত করা ১৬৪
  • ২৯. দোষ ঢাকা ১৭০
  • ৩০. সাহসিকতা ও বীরত্ব ১৭৩
  • ৩১. সত্যবাদিতা ১৭৭
  • ৩২. কথায় সুচরিত্রতা ১৭৯
  • ৩৩. সুন্দর কথা বলা ১৮৩
  • ৩৪. সন্ধিস্থাপন ১৮৪
  • ৩৫. ন্যায়পরায়ণতা ১৮৭
  • ৩৬. সভ্য পোশাক পরিধান ১৯০
  • ৩৭. ঈর্ষাবত্তা ১৯২
  • ৩৮. দৃষ্টি-সংযম ১৯৫
  • ৩৯. লজ্জাস্থানের হিফাযত ১৯৮
  • ৪০. যৌন সচ্চরিত্রতা ২০২
  • ৪১. আদর্শবত্তা ২০৮
  • ৪২. অল্পে তুষ্টি ২১০
  • ৪৩. পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ২১৪
  • ৪৪. প্রতিশ্রুতি পালন ২১৮

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

  • ৪৫. অনর্থক কথা ও কাজ বর্জন ২২৭
  • ৪৬. আত্মপ্রশংসা ও তোষামদ বর্জন ২৩০
  • ৪৭. বড়দেরকে শ্রদ্ধা ও ছোটদেরকে স্নেহ ২৩৩
  • ৪৮. প্রত্যুত্তরে সদাচার ২৩৪
  • ৪৯. সুধারণা ২৩৮
  • ৫০. রসিকতা ২৪০
  • ৫১. মুচকি হাসি ২৪১
  • ৫২. হাসিমুখে সাক্ষাৎ ২৪২
  • ৫৩. লিল্লাহী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও দ্বীনী ভাইয়ের যিয়ারত ২৪৪
  • ৫৪. মেহমানের সম্মান করা ২৫১
  • ৫৫. আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা ২৫২
  • ৫৬. মনের সুস্থতা ২৬০
  • ৫৭. আল্লাহর পথে নিন্দুকের নিন্দাকে উপেক্ষা ২৬২
  • ৫৮. রাগ দমন ২৬৫
  • ৫৯. কষ্টদানে বিরত থাকা ২৬৮
  • ৬০. অপরের প্রয়োজন পূরণ ২৭৩
  • ৬১. পরোপকারিতা ২৭৬
  • ৬২. দানের প্রতিদান ২৭৯
  • ৬৩. চারিত্রিক সাদকাহ ২৮১
  • ৬৪. কতিপয় সাধারণ সচ্চরিত্রতার কর্ম ২৮৩
  • ৬৫. চরিত্রবানের করণীয় ও বর্জনীয় আরো কিছু কাজ ২৯৩
  • সচ্চরিত্রতার পরিধি ২৯৫
  • ১. নিজের সাথে সচ্চরিত্রতা ২৯৮
  • ২. আল্লাহর সাথে সচ্চরিত্রতা ২৯৮
  • ৩. পিতামাতার সাথে সদাচরণ ২৯৯
  • ৪. সন্তানের সাথে সদাচরণ ৩০৮
  • ৫. স্বামীর সাথে সদ্ব্যবহার ৩১২
  • ৬. স্ত্রীর সাথে সচ্চরিত্রতা ৩২৫
  • ৭. আত্মীয়র সাথে সচ্চরিত্রতা ৩৩৫
  • ৮. প্রতিবেশীর সাথে সচ্চরিত্রতা ৩৩৭

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

  • ৯. মেহমানের সাথে সচ্চরিত্রতা ৩৪২
  • ১০. দাস-দাসীর সাথে সচ্চরিত্রতা ৩৫১
  • ১১. শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথে সচ্চরিত্রতা ৩৬৫
  • ১২. ছাত্র-ছাত্রীর সাথে সচ্চরিত্রতা ৩৬৯
  • ১৩. নেতা বা ম্যানেজারের সাথে সদাচরণ ৩৭২
  • ১৪. নেতৃত্বাধীন লোকেদের সাথে সদাচরণ ৩৭৪
  • ১৫. বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সাথে সদাচরণ ৩৭৯
  • ১৬. ছোটদের সাথে সদাচরণ ৩৮৮
  • ১৭. গরীব ও দুর্বলদের সাথে সদাচরণ ৩৯৭
  • ১৮. মহিলাদের সাথে সদাচরণ ৪০৪
  • ১৯. খরিদ্দারের সাথে ব্যবসায়ীর সদাচরণ ৪০৬
  • ২০. আপনার মুখাপেক্ষীদের প্রতি আপনার সদাচরণ ৪১০
  • ২১. অমুসলিমদের সাথে সদাচরণ ৪১৩
  • ২২. পশু-পক্ষীর সাথে সদাচরণ ৪২২
  • ২৩. গাছপালার সাথে সদাচরণ ৪৩৬
  • ২৪. দুশ্চরিত্রের সাথে সচ্চরিত্রতা ৪৩৮
  • ২৫. শত্রুর সাথে সচ্চরিত্রতা ৪৪০
  • ২৬. লেখকের অন্যান্য বই ৪৫৪

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

চরিত্র নিয়ে আলোচনা কেন?

আমরা জানি চরিত্রের ব্যাপারটা দ্বীনের মধ্যেই শামিল, তবুও পৃথকভাবে চরিত্র নিয়ে লেখা বা পড়ার কী প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আছে?

আসলে সচ্চরিত্রতার শেখা ও জানার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। যেহেতু আমরা দেখি, কোন কোন মানুষ দ্বীনদার অথচ চরিত্রবান নয়। কোন কোন মানুষ চরিত্রবান, কিন্তু দ্বীনদার নয়। সুতরাং চরিত্র নিয়ে পড়াশোনার প্রয়োনীয়তা ও গুরুত্ব আমরা চারভঅবে অনুভব করতে পারিঃ-

এক: সচ্চরিত্রতাকে পরিপূর্ণতা দান করার জন্যই মহানবী (ﷺ) -কে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। তিনি এই মহান উদ্দেশ্যেকই সফল করার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।

তিনি বলেছেন,

((إِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ صَالِحَ (مكارم) الْأَخْلَاقِ)).

“আমি মানুষের শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর চরিত্রের পরিপূর্ণতা দানের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।”

যদি বলেন, মহান আল্লাহ তো বলেছেন,

{وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ } (১০৭) سورة الأنبياء

“আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু করুণারূপে প্রেরণ করেছি।” (আম্বিয়া: ১০৭)

আপনি কি মনে করেন, উভয় বক্তব্যের মাঝে পরস্পর বিরোধিতা আছে? না, কক্ষনো না। যেহেতু রহমত ও করূণা প্রতিষ্ঠা জন্য সচ্চরিত্রতা চাই।

যে সমাজের মানুষেরা পরস্পর ধোঁকাবাজি করে, আমানতে খিয়ানত করে, অশ্লীলতা প্রদর্শন করে, সে সমাজে কি রহমত থাকতে পারে?

যে পরিবারের সদস্যদের মাঝে পরস্পরের প্রতি ঘৃণা থাকে, হিংসা থাকে, অশ্রদ্ধা থাকে, সে পরিবারে কি রহমত, করূণা, সুখ বা শাস্তি বিরাজ করে? কোনদিনও না।

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

বলা বাহুল্য কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যের মাঝে নিগূঢ় সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু ‘সুন্দর চরিত্র’ ছাড়া ‘করূণা’ প্রতিষ্ঠালাভ করতে পারে না।
যদি বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন,

{وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ} (৫৬) سورة الذاريات

“আমি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” (যারিয়াত: ৫৬)

আর আর রসূলুল্লাহ (ﷺ)–কে পাঠানো হয়েছে সেই ইবাদতের পদ্ধতি শিক্ষা দেয়ার জন্য। সুতরাং চরিত্রের চাইতে ইবাদত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চরিত্রের তুলনায় নামায, যাকাত, রোযা, হজ্জ ইত্যাদির গুরুত্ব বেশি।

আমরা বলি, সচ্চরিত্রতার গুরুত্ব বেশি। যেমন একথা অন্যত্র উল্লিখিত হবে। যেহেতু প্রত্যেক ইবাদতের পশ্চাতে মহান উদ্দেশ্য রয়েছে মানুষের সুচরিত্র গঠন করা। যে নামাযে চরিত্র গঠন হয় না, সে নামায কেবল এক প্রকার ব্যায়াম হয়। যে যাকাতে পবিত্রতা আসে না, সে যাকাতে কেবল ব্যয় করা হয়। যে রোযায় চরিত্র সংশোধন হয় না, তাতে কেবল উপবাস হয় এবং যে হজ্জে হাজীর চরিত্র সুন্দর হয় না, সে হাজীর কেবল দেশ ভ্রমণ হয়।

দুই : চরিত্র ও ইবাদতকে পৃথকভাবে দেখার যে মানসিকতা রয়েছে তা দূর করা। অন্য কথায় দ্বীন ও দুনিয়াকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার যে প্রবণতা রয়েছে তা অপসারণ করা।

আপনি দেখবেন, মুসলিম যখন মসজিদে আসে, তখন কী সুন্দর মানুষ সে! কিন্তু পরক্ষণে মসজিদের বাইরে তাকে অন্য মানুষ লক্ষ্য করবেন। মসজিদে ইবাদতে সে যেন দ্বীনদার মুসলিম। আর তার বাইরে যেন দ্বীনের সাথে তার কোন যোগসূত্রই নেই। তার অবস্থা যেন বলে, ‘ইবাদত ঠিক থাকলেই হল। দ্বীনদারি হল মসজিদের ভিতরে। বাকি দুনিয়াদারিতে যা ইচ্ছে তাই করা যায়।’ আর এমন ধারণা নিশ্চয় মহাভুল।

ইসলাম হল দ্বীন ও দুনিয়া। ইসলামে আছে আকীদা, ইবাদত ও ব্যবহার। সব মিলেই পরিপূর্ণ ইসলাম। ইসলাম হল পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা। জীবনের কোন বিষয়কে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। সুতরাং এমন মুসলিম হওয়া উচিত নয়, যে বড় আবেদ হবে, অথচ তার চরিত্র সুন্দর হবে না। অথবা যার চরিত্র বড় সুন্দর হবে, কিন্তু ইবাদতে হবে ফাঁকিবাজ।

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

সত্যবাদী, ভদ্র ও পরোপকারী, কিন্তু তারা নামায পড়ে না। এরই বিপরীত অনেক নামাযী দেখবেন, তারা চরিত্রগতভাবে অনেক নিচে। অনেকে আকীদায় সহীহ, কিন্তু আখলাকে গোল্লায়। অথচ আবূ হুরাইরাহ রা: বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, “আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।”

সেই মহিলাদের ভেবে দেখা উচিত, যারা কাপড় শুকানো নিয়ে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। পাশাপাশি অথবা উপর তলা-নিচু তলার বাসা হওয়ায় পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি নিয়ে কলহ বাধায়।

ভেবে দেখতে পারেন সেই নামাযীর কথা, যে নিজের গাড়ি এমন জায়গায় পার্কিং করে মসজিদে গেছে, যেখানে অন্য গাড়ি-ওয়ালা বা বাড়ি-ওয়ালার সমস্যা হচ্ছে। সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে গেছে, কিন্তু তাঁর বান্দাকে রাগান্বিত করে। ইবাদতে গেছে, কিন্তু চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে।

কে বেশি উত্তম? যার নফল নামায-রোযা বেশি, কিন্তু চরিত্রে কম সে? নাকি যার নফল নামায-রোযা কম, কিন্তু চরিত্রে উত্তম?

এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা বেশী বেশী (নফল) নামায পড়ে, রোযা রাখে ও দান-খয়রাত করে বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু সে নিজ জিভ দ্বারা (অসভ্য কথা বলে বা গালি দিয়ে) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। (তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?)’ তিনি বললেন, “সে দোযখে যাবে।” লোকটি আবার বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা অল্প (নফল) নামায পড়ে, রোযা রাখে ও দান-খয়রাত করে বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু সে নিজ জিভ দ্বারা (অসভ্য কথা বলে বা গালি দিয়ে) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। (তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?)’ তিনি বললেন, “সে জান্নাতে যাবে।”

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

অনুরূপভাবে আপনি দেখতে পাবেন, মহিলা বোরকা পরে, পর্দা করে, নামাযও পড়ে, কিন্তু চরিত্রহীনা, অসতী, কুলটা ও ভ্রষ্টা। অনেক মহিলার থাকে ‘ঘোমটার ভিতরে খেমটার নাচ!’ পতির সংসারে উপপতির প্রেম। অনুরূপ পুরুষও হয়ে থাকে, দিনের বেলায় মোল্লাগিরি, রাতের বেলায় কলাই চুরি!
এখানে উদ্দেশ্য ইবাদতের গুরুত্ব কম করা নয়। উদ্দেশ্য হল, চরিত্রকে ঈমান ও ইবাদত থেকে পৃথক করা যাবে না। অথবা চরিত্রের গুরুত্বকে ছোট করে দেখা যাবে না।

লজ্জাশীলতা একটি সদাচরণের গুণ। সেটা ঈমানের একটি অংশ। মহানবী (ﷺ) বলেছেন,

্ الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ 

“ঈমান সত্তর বা ষাটের অধিক শাখাবিশিষ্ট; যার উত্তম (ও প্রধান) শাখা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই) বলা এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্র শাখা পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের অন্যতম শাখা।”

কুরআন পাঠের সময় আপনি বুঝতে পারবেন, ইবাদত ও আখলাককে বহু স্থলে একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন,

{قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ (১) الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاتِهِمْ خَاشِعُونَ (২) وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ (৩) وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ (৪) وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (৫) إِلاَّ عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ (৬) فَمَنْ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْعَادُونَ (৭) وَالَّذِينَ هُمْ لأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ (৮) وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ (৯) أُوْلَئِكَ هُمْ الْوَارِثُونَ (১০) الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ } (১১)

“অবশ্যই মু’মিনগণ সফলকাম হয়েছে। যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র। যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে। যারা যাকাত দানে সক্রিয়। যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে সীমালংঘনকারী। এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। আর যারা নিজেদের নামাযে যত্নবান থাকে। তারাই হবে উত্তরাধিকারী। উত্তরাধিকারী হবে ফিরদাউসের; যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।” (মু’মিনূন: ১-১১)

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

মহান আল্লাহ তাঁর দাস ‘ইবাদুর রহমান’-এর গুণ বর্ণনা করে বলেছেন,

{وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الأَرْضِ هَوْناً وَإِذَا خَاطَبَهُمْ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلاماً (৬৩) وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّداً وَقِيَاماً (৬৪) وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَاماً (৬৫) إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرّاً وَمُقَاماً (৬৬) وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَاماً (৬৭) وَالَّذِينَ لَايَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهاً آخَرَ وَلا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَاماً }

“তারাই পরম দয়াময়ের দাস, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা স¤্বােধন করে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’। এবং যারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দণ্ডায়মান থেকে রাত্রি অতিবাহিত করে। এবং যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি নিবৃত্ত কর; জাহান্নামের শাস্তি তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংসাত¥ক; নিশ্চয় তা আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে অতীব নিকৃষ্ট!’ এবং যারা ব্যয় করলে অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে। এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করে না, আল্লাহ যাকে যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে হত্যা নিষেধ করেছেন, তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এগুলো করে, তারা শাস্তি ভোগ করবে।” (ফুরক্বান: ৬৩-৬৮)

উক্ত সূরার বাকী অংশটুকু পড়েও আপনি দেখতে পারেন, মহান আল্লাহর বান্দাগণের গুণাবলী কী? গুণাবলীতে রয়েছে আকীদা, ইবাদত ও সচ্চরিত্রতা।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

{فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ (৪) الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلاتِهِمْ سَاهُونَ (৫) الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ (৬) وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ } (৭)

“সুতরাং পরিতাপ সেই নামায আদায়কারীদের জন্য; যারা তাদের নামাযে অমনোযোগী। যারা লোক প্রদর্শন (করে তা) করে এবং যারা গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় ছোটখাট সাহায্য দানে বিরত থাকে।” (মাঊন: ৪-৭)
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন? ‘যারা তাদের নামাযে অমনোযোগী’ এ কথার সাথে ‘যারা গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় ছোটখাট সাহায্য দানে বিরত থাকে’—এ কথার কী সম্পর্ক আছে?

সম্পর্ক হল, ইবাদত ও চরিত্র পরস্পর একে অন্যের সম্পূরক। একটা ছাড়া অন্যটা পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না অথবা উপকারে আসে না।
তিন: আমাদের অনেকে আছে, যারা মুখে নৈতিকতার কথা বলে, কিন্তু কাজে করে না। অপরকে উপদেশ দেয়, নিজে মানে না।
অনেকে আছে, যারা অনেক নীতি কথা শোনে। প্রায় সকল শায়খদের দর্সে উপস্থিত হয়, তাঁদের অডিও-সিডি বিতরণ করে, ইসলামী বই সংগ্রহ করে, পড়ে ও বিতরণ করে, তাকে দাওয়াতের ময়দানে দক্ষ অশ্বারোহী রূপে দেখা যায়, কিন্তু আমলের ময়দানে তাদের টিকি দেখা যায় না।
অনেকে পেশা বা চাকরি নিয়ে দাওয়াতের ময়দানে কাজ করে, দাওয়াতী ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে বড় দক্ষতার সাথে দুনিয়া শিকার করে, কিন্তু আমল ও চরিত্র গঠনের ময়দানে তাদের পা চলে না। অযোগ্য হয়েও ঘুস অথবা সুপারিশের বলে যোগ্য জায়গা পেয়ে দ্বীনের দাঈ হয়ে বসে আছে, কিন্তু তার দায়িত্ব পালনে কোন আগ্রহ নেই। দাওয়াতের অন্যতম শর্ত হল, ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও।’ কিন্তু তারা পরকে শেখায়, নিজেরা শিক্ষা নেয় না, পরকে তরবিয়ত দেয়, নিজের পরিবারকে দেয় না বা দিতে চায় না।

বহু শিক্ষক আদর্শবান নন, তাঁরা চাকরি করেন, কিন্তু শিক্ষাদান করেন না। বরং অনেক সময় শিক্ষার বিপরীত চরিত্রহীনতার কাজে জড়িয়ে পড়েন।
‘রক্ষক যদি ভক্ষক হয় কে করিবে রক্ষা,
ধার্মিক যদি চুরি করে, কে দেবে তারে শিক্ষা?’

এই জন্য পৃথক করে সচ্চরিত্রতার আলোচনা। যাতে আমরা পৃথকভাবে গুরুত্ব দিয়ে ও নিয়ে চরিত্রবান হতে পারি, আদর্শ ও নীতিবান হতে পেরে নিজেদেরকে আগে সুশিক্ষিত ও ‘মানুষ’ রূপে গড়ে তুলতে পারি।

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী

Reviews (0)

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “সচ্চরিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলী”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping cart
Facebook Twitter Instagram YouTube WhatsApp WhatsApp

Sign in

No account yet?