হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা
লেখক : শাইখ আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল মাদানী
সম্পাদনা : ওমর ফারুক আব্দুল্লাহ
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৪৮
প্রকাশনায় : দারুল কারার পাবলিকেশন্স
পরিবেশনায় : তাওহীদ পাবলিকেশন্স
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারী ২০১৪, রবিউল আওয়াল ১৪৩৫
সূচিপত্র
বিষয় পৃষ্ঠা
লেখকের আবেদন ৫
প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা ৭
স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা ১০
মা-বাবা ও সমত্মানের ভালোবাসা ১১
নবী g-কে ভালোবাসা ১৫
আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাসা ১৮
আল্লাহকে ভালোবাসার ক্ষক্ষত্রে মানুষ ১৯
আল্লাহর ভালোবাসার প্রকার ২০
আল্লাহকে ভালোবাসার কিছু আলামত ২১
আল্লাহর খাঁটি ভালোবাসার দাবি ২৪
আল্লাহর ওয়াসেত্ম ভালোবাসা ও ঘৃণার গুরুত্ব ২৬
আল্লাহর ওয়াসেত্ম ভালোবাসা ও ঘৃণার ক্ষক্ষত্রে মানুষ ২৯
আল্লাহর জন্য ভালোবাসার কিছু দাবি ৩২
আল্লাহর ওয়াসেত্ম ঘৃণার জন্য যা জরুরী ৩৩
বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন! ৩৪
আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য ৩৫
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কিছু লক্ষণ ৪২
আল্লাহর ভালোবাসার উপকারিতা ৪৩
উপসংহার ৪৫
লেখকের বইসমূহ ৪৬
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা
লেখকের আবেদন
প্রশংসা মাত্রই আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের প্রতি বর্ষিত হোক।
আল্লাহর প্রিয় ও মাহবুব বান্দা হওয়া কী সম্ভব? আল্লাহ কি তাঁর কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন? হ্যাঁ, সম্ভব এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিছু বান্দাকে ভালোবাসেন।
আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, এর চেয়ে উত্তম ও আনন্দের ভালোবাসা আর কিছুই হতে পারে না। এ ভালোবাসার উপরে আর কোনো ভালোবাসার স্থান নেই।
যদি কেউ আল্লাহকে ভালোবাসে বা আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করে, তবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন তা বলা অসম্ভব। অসংখ্য মানুষ আল্লাহর ভালোবাসার দাবীদার। কিন্তু সত্যিকারে আল্লাহ তা‘আলা কাকে ভালোবাসেন এবং কাকে ভালোবাসেন না তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।
এ ভালোবাসা খুব কম সংখ্যক মানুষের ভাগ্যে জুটে। এটা এমন এক ভালোবাসা যার প্রতিযোগিতা করে প্রতিযোগীরা। যাঁরা নিজেকে সর্বদা ব্যস্ত রাখে এ মহান ভালোবাসা অর্জনের জন্য। এরই সৌরভে বিচরণ করে একমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদতকারীগণ। এ ভালোবাসা অন্তরের জন্য খাদ্য এবং আত্মার জন্য পুষ্টি ও চোখের জন্য প্রশামিত্ম যোগায়।
যে ব্যক্তি আল্লাহর ভালোবাসা হতে বঞ্চিত তার জীবন মৃত্যু সমতুল্য। এটা আলো স্বরূপ, যে এটি থেকে বঞ্চিত হলো সে গহীন অন্ধকারে হাবুডুবু খেল। এটা মহাঔষধ যে পেল না তার অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত। এটা এমন মজার জিনিস, যে অর্জন করতে অক্ষম তার সমস্ত জীবন দুশ্চিমত্মাগ্রস্ত ও ব্যথাতুর।
এ ভালোবাসা ঈমান ও ‘আমল….. ইত্যাদির আতমা। এটা ব্যতীত সবকিছুই আত্মাশূন্য শরীরের মতো।
আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীস এবং সালাফে সালেহীনদের নির্ভরযোগ্য বাণীসমূহ দ্বারা ‘‘ হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা !’’ বিষয়ে আপনাদেরকে এ ছোট বইটি উপহার দিচ্ছি।
বইটি প্রথমবার প্রকাশ করতে পারায় আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
পাঠক মহোদয় এটা থেকে উপকৃত হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। যাঁরা এ মহৎ কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সকলকে আমাদের সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জানাই।
পরিশেষে আমাদের নিবেদন এই যে, সংশোধনের কাজ কোনো দিনও চূড়ান্ত করা যায় না। অতএব, বইটি পড়ার সময় কোনো ভুল-ত্রম্নটি বা ভ্রম কারো দৃষ্টিতে পড়লে অথবা কোনো নতুন প্রসত্মাব থাকলে তা আমাদেরকে অবহিত করলে সাদরে গৃহীত হবে। আর পরবর্তী সংস্করণে যথাযথ বিবেচনা করা হবে ইন্শা-আল্লা-হ।
আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর মাহবুব ও প্রিয় বান্দা হিসেবে গ্রহণ করেন।
হে আল্লাহ! আমাদের এই মহতী উদ্যোগ ও ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবূল করুন। আমীন!
আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল
আল-আহসা ইসলামিক সেন্টার, বাংলা বিভাগ, সৌদী আরব
২৫/০৩/১৪৩৫ হি., ২৬/০১/২০১৪ ইং
সবচেয়ে মজার ও উঁচুমানের ভালোবাসা কী জানেন? এ এমন এক ভালোবাসা যার উপরে আর কোনো ভালোবাসা হতে পারে না।
প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা
ভাবছেন এ ভালোবাসা প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা!
বর্ণিত আছে যে, একজন দরবেশ সবকিছু ছেড়ে শুধুমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদতে মশগুল থাকত। একদিন এক অপূর্ব সুন্দরী খ্রীস্টান মহিলাকে দেখে প্রেমে মত্ত হয়ে পড়ে। বিবাহের প্রসত্মাব দিলে সুন্দরী প্রত্যাখ্যান করে বলে : যদি তুমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ কর, তবে তোমার আশা পূরণ হতে পারে। তাই সে দরবেশ সুন্দরীকে পাওয়ার জন্য ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু সুন্দরীর সাথে সাক্ষাতের পূর্বেই কুফ্রী অবস্থায় মারা যায়। না‘ঊযু বিল্লা-হি মিন যা-লিক!
ঐদিকে সেই সুন্দরী দরবেশের মৃত্যুর কথা জানতে পেরে তার প্রেমিককে জান্নাতে একসাথে পাওয়ার আশায় ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে এবং মুসলিম অবস্থায় মারা যায়।
আরো বর্ণিত আছে যে, এক প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকার পর যখন সে তার সামনে হাজির হল, তখন সে তার ভালোবাসা প্রকাশের জন্য প্রেমিকার দুই পায়ের মাঝে মাটিতে সিজদায় পড়ে গেল। আর এ অবস্থায় মৃত্যুর ফেরেশতা তার জান কবজ করে নিল। ফলে সে মুশরিক হয়ে মৃত্যুবরণ করল। না‘ঊযু বিল্লা-হি মিন যা-লিক!
আরো বর্ণিত আছে যে, বাগদাদে এক যুবক নিয়মিত আযানের পূর্বে মাসজিদে উপস্থিত হত। যুবকটি মুয়ায্যিনের নিকট আযান দেয়ার সুযোগ গ্রহণের প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করল। নাছোড়বান্দা দেখে পরিশেষে মুয়ায্যিন সাহেব যুবকটিকে আযান দেয়ার অনুমতি দিলেন। কিন্তু বললেন যে, ‘‘হাইয়া ‘আলাস্ সলা-হ্’’ ও ‘‘হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ্’’ বলার সময় ডানে-বামে ঘাড় যেন না ফিরায়।
একদিন যুবকের মাথায় খেলল আযানে ‘‘হাইয়া ‘আলাস্ সলা-হ্’’ ও ‘‘হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ্’’ বলার সময় ডানে-বামে ঘাড় ঘুরানো একটি সুন্নাত, যা ছেড়ে দেয়া মোটেই ঠিক হচ্ছে না। তাই ডানে ঘাড় ঘুরাতেই যুবক পার্শ্বে ছাদের উপর দেখতে পেল এক বাগদাদী সুন্দরী যুবতী। আযান শেষ না করতেই যুবক দৌড়ে মেয়েটির বাড়ীতে গিয়ে বিবাহের পয়গাম দিয়ে বসল। যুবতী বলল : আমার বাবা আছেন তাঁর সাথে কথা বল।
সে মেয়েটির বাবার অপেক্ষায় রইল। মেয়েটির বাবা পৌঁছা মাত্রই মনের বাসনা প্রকাশ করল যুবক।
খ্রীস্টান বাবা বলল : তুমি মুসলিম আর আমার মেয়ে খ্রীস্টান। তাই তোমার সাথে আমার মেয়ের বিবাহ সম্ভব না। যুবক মেয়েটির প্রেমে এমনিই মত্ত হলো যে, সাথে সাথে বলে ফেলল : আমি তাকে ছাড়া বাঁচব না। তাই আমি খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করলাম। এবার আপনার মেয়ের সাথে আমার বিবাহ দেন। না‘ঊযু বিল্লা-হি মিন যা-লিক!
ইউসুফ (আ.) -কে জুলায়খা-এর একপক্ষক্ষর ভালোবাসার কথা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেছেন।
وَرَاوَدَتْهُ الَّتِىْ هُوَ فِي بَيْتِهَا عَنْ نَفْسِه وَغَلَّقَتِ الْأَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ قَالَ مَعَاذَ اللهِ إِنَّه رَبِّىْ أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّه لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُوْنَ
‘‘আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে প্ররোচিত করতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল। সে মহিলা বলল : শুন! তোমাকে বলছি এদিকে আসো! সে বলল : আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমালঙ্ঘন কারীগণ সফল হয় না।’’ (সূরা ইউসুফ ১২ : ২৩)
وَقَالَ نِسْوَةٌ فِي الْمَدِينَةِ امْرَأَتُ الْعَزِيزِ تُرَاوِدُ فَتَاهَا عَنْ نَفْسِه قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا إِنَّا لَنَرَاهَا فِىْ ضَلَالٍ مُبِيْنٍ
‘‘আর নগরে মহিলারা বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আযীয-এর স্ত্রী স্বীয় গোলামকে কুমতলব চরিতার্থ করার জন্য প্ররোচিত করছে। সে তার প্রেমে উন্মত্ত হয়ে গেছে। আমরা তো তাকে প্রকাশ্য ভ্রামিত্মতে দেখতে পাচ্ছি।’’ (সূরা ইউসুফ ১২ : ৩০)
সাবধান! ভালোবাসার ফাঁদে ও প্রেমের ফাঁদে পড়ে কত ছেলে-মেয়েরা তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন নষ্ট করছে। যারা এ ফাঁদে পড়ে গেছেন, তারা এ থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন। আর যারা পড়েননি সতর্ক হোন।
স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা ভাবছেন বুঝি এ ভালোবাসা স্বামী-স্ত্রীর মাঝের ভালোবাসা? নিঃসন্দেহে স্বামী-স্ত্রীর মাঝের ভালোবাসা এক মধুর ও গভীর ভালোবাসা। এ ভালোবাসা আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিগতভাবেই করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কুরআন কারীমে বলেন :
وَمِنْ اٰيَاتِه أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوْا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِىْ ذٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ
‘‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শামিত্মতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিমত্মাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’’ (সূরা আর্ রূম ৩০ : ২১)
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ لَمْ نَرَ لِلْمُتَحَابَّيْنِ مِثْلَ النِّكَاحِ
ইব্নে ‘আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘‘আমি স্বামী-স্ত্রীর মাঝের ভালোবাসার মতো আর কোনো ভালোবাসা দেখিনি।’’ (ইবনে মাজাহ হা. ১৮৪৭; শাইখ আলবানী r হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
রসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত প্রথম স্ত্রী খাদীজা (রা.)-কে কখনো ভুলতে পারেননি। বরং প্রতিটি প্রসঙ্গে খাদীজার কথা স্মরণ করতেন।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে জয় করতে চাইলে প্রয়োজন ভালোবাসা। এ ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা একে অপরকে জয় করা অসম্ভব।
মা-বাবা ও সন্তানের ভালোবাসা
ভাবছেন এ ভালোবাসা মা-বাবা ও সমত্মানদের মাঝের ভালোবাসা? সমত্মান ইউসুফ (আ.)-কে বাবা ইয়া‘কূব (আ.)-এর ভালোবাসার ঘটনা সবার জানা। কুরআনে এ ঘটনা বিসত্মারিত বর্ণনা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী : وَتَوَلّٰى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا أَسَفٰى عَلٰى يُوسُفَ وَابْيَضَّتْ عَيْنَاهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ كَظِيْمٌ
‘‘এবং তাদের দিক থেকে তিনি (ইয়া‘কূব (আ.) মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন : হায় আফসোস ইউসুফ-এর জন্যে! এবং দুঃখে তাঁর চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গেল। আর অসহনীয় মনসত্মাপে তিনি ছিলেন ক্লিষ্ট।’’ (সূরা ইউসুফ ১২ : ৮৪)
আবূ কিলাব উমাইয়াহ্ ইবনে আসকার (রা.) তার সমত্মান কিলাবকে ভালোবাসার ঘটনা প্রসিদ্ধ।
ইমাম যুহরী ‘উরওয়াহ্ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন : কিলাব ইবনে উমাইয়াহ্ (রা.) ‘উমার ফারূক (রা.)-এর খেলাফাতকালে মদিনায় হিজরত করেন। এখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। একদিন ত্বালহাহ্ ইবনে ‘উবাইদুল্লাহ ও জুবাইর ইবনে ‘আও্ওয়াম (রা.)-এর সাথে সাক্ষাত করেন। তাঁদের দু’জনকে ইসলামে সর্বোত্তম ‘আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন : ইসলামে সর্বোত্তম ‘আমল হচ্ছে আল্লাহর রাসত্মায় জিহাদ করা।
এরপর ‘উমার ফারূক (রা.)-এর সাথে পরামর্শ করলে তিনি তাকে জিহাদে প্রেরণ করেন।
অন্যদিকে তার বাবা-মা বয়োবৃদ্ধ ও অতি দুর্বল মানুষ ছিলেন। সমত্মানের অনুপস্থিতি দীর্ঘ দিন হলে আবূ কিলাব (রা.) কবিতা লিখে তাঁর দুঃখের কথা প্রকাশ করেন এবং মদীনার অলিগলি আবৃতি করে বেড়ান। এমনকি তার কবিতা ‘উমার ফারূক-এর নিকট পৌঁছান। কিন্তু ‘উমার (রা.) সমত্মান কিলাব-কে ফেরত নিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি আরো ভেঙ্গে পড়েন।
অবস্থা কঠিন আকার ধারণ করলে আবূ কিলাব একদিন ‘উমার (রা.)-এর নিকট আসেন। এ সময় তিনি মাসজিদে নববীতে ছিলেন আর তাঁর আশ-পাশ ছিলেন মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণ (রা.)। আবূ কিলাব ‘উমার (রা.)-এর সামনে দাঁড়িয়ে তার দুঃখ ও কষ্টের কথা কবিতা আকারে পড়তে শুরু করেন।
কবিতা শুনে ‘উমার ফারূক (রা.) প্রচ-ভাবে কাঁদেন এবং কুফার ‘আমীর সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.)-কে পত্র লিখেন যে, দ্রম্নত কিলাব ইবনে উমাইয়াহ্-কে মদীনায় পৌঁছানোর জন্যে ব্যবস্থা করে।
কেলাব মদীনায় পৌঁছলে ‘উমার (রা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার বাবার সাথে কি ধরনের সদ্ব্যবহার করতে তুমি? কিলাব তার সদ্ব্যবহারের বর্ণনা দেয়।
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা ‘উমার (রা.) বাবা উমাইয়াহ্-কে হাজির করার জন্য লোক পাঠান। তিনি কাঁপতে কাঁপতে এসে উপস্থিত হন। তার চক্ষুদ্বয় দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং পিঠ বেঁকে গেছে। ‘উমার (রা.) বললেন : আবূ কিলাব! কেমন আছেন? উত্তরে বললেন : যেমন দেখছেন আমীরুল মু’মিনীন!
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা ‘উমার (রা.) বললেন : আপনার কোনো প্রয়োজন আছে কী? বললেন : হ্যাঁ, একবার প্রিয় সমত্মান কেলাবকে দেখতে চাই। মৃত্যুর পূর্বে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার শরীরের গন্ধ নিতে চাই। এ কথা শুনে ‘উমার (রা.) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন : আল্লাহ চাহে আপনার আশা পূরণ হবে।
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা অতঃপর ‘উমার (রা.) কিলাবকে তার বাবার জন্যে যেভাবে দুধ দোহন করত সেরূপ এক গস্নাস দুধ দোহন করতে আদেশ করলেন। সে তাই করলে দুধের পেয়ালা ‘উমার (রা.) নিয়ে আবূ কিলাব-এর হাতে দিয়ে বললেন, ধরুন হে আবূ কিলাব (রা.)।
আবূ কিলাব পেয়ালা হাতে নিয়ে মুখের নিকট নিতেই ‘উমার (রা.)-কে বলে উঠলেন : হে আমীরুল মু’মিনীন! আমি এ পেয়ালাতে কিলাবের দু’হাতের গন্ধ পাচ্ছি। এ শুনে ‘উমার (রা.) ক্রন্দন করতে লাগলেন এবং বললেন : এই যে কিলাব আপনার নিকটে হাজির। তাকে আমি উপস্থিত করেছি। শুনামাত্র সমত্মানের দিকে লাফ দিয়ে উঠেন এবং বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চুমা দিতে থাকেন। এ দেখে আবার ‘উমার (রা.) এবং উপস্থিত সকলে কাঁদতে লাগলেন।
অতঃপর ‘উমার (রা.) কিলাব-কে তার বাবা-মার খেদমত করার নির্দেশ করে বললেন : যতদিন তাঁরা বেঁচে থাকেন ততদিন তাঁদের দু’জনের খেদমত করেই জিহাদ কর। এরপর তোমার যা হবার তা হবে। অন্য দিকে ‘উমার ফারূক (রা.) কিলাব-এর সরকারী ভাতা চালু রাখার নির্দেশ দিলেন। কিলাব (রা.) তাঁর বাবা-মার মৃত্যু পর্যন্ত তাঁদের সাথেই অবস্থান করেন। (খাজ্জানাতুল আদাব : ২/২৭৩)
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَدِمَ عَلَى النَّبِيِّ سَبْيٌ فَإِذَا امْرَأَةٌ مِنْ السَّبْيِ قَدْ تَحْلُبُ ثَدْيَهَا تَسْقِي إِذَا وَجَدَتْ صَبِيًّا فِي السَّبْيِ أَخَذَتْهُ فَأَلْصَقَتْهُ بِبَطْنِهَا وَأَرْضَعَتْهُ فَقَالَ لَنَا النَّبِيُّ أَتُرَوْنَ هٰذِه طَارِحَةً وَلَدَهَا فِي النَّارِ قُلْنَا لَا وَهِيَ تَقْدِرُ عَلٰى أَنْ لَا تَطْرَحَه# فَقَالَ لَلّٰهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِه مِنْ هٰذِه# بِوَلَدِهَا
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা ‘উমার ইবনে খাত্ত্বাব (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর কাছে যুদ্ধবন্দীদের মধ্য হতে একজন মহিলা আসে। সমত্মানকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে সকলের সামনে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে লাগল। এ অবস্থা দেখে নবী (সা.) সাহাবীদেরকে বললেন : আচ্ছা এ মহিলাটি কী তার এ সমত্মানকে আগুনে নিক্ষক্ষপ করতে পারে? সাহাবীগণ উত্তর দিলেন : পারতপক্ষক্ষ কক্ষনো মা তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারেন না। তিনি (সা.) বললেন : এ মা তার সমত্মানকে যতটুকু দয়া করে তার চাইতেও আল্লাহ তার বান্দার প্রতি বেশি দয়াবান। (সহীহুল বুখারী হা. ৫৯৯৯, সহীহ মুসলিম হা. ২২, ২৭৫৪)
عَن عَائِشَةَ قَالَتْ جَاءَتْنِي امْرَأَةٌ مَعَهَا ابْنَتَانِ تَسْأَلُنِي فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِي غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ فَدَخَلَ النَّبِيُّ فَحَدَّثْتُه فَقَالَ: مَنْ يَلِي (بُلِي) مِنْ هٰذِهِ الْبَنَاتِ شَيْئًا (بِشَيْءٍ) فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ كُنَّ لَه سِتْرًا مِنَ النَّارِ
আয়েশা (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন : তাঁর নিকটে একজন মহিলা দু’টি মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়ে আমার নিকট চায়। আমার কাছে একটি খেজুর ছিল যা তাকে আমি দেই। অতঃপর সে খেজুরটি ভাগ করে তার দুই মেয়েকে ভাগ করে দেয়। এরপর চলে যায়। আয়েশা (রা.) বলেন : ঘটনাটি আমি নবী (সা.)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি এসব মেয়েদের দ্বারা পরীক্ষায় পড়বে, অতঃপর তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে, তারা তার জন্য জাহান্নাম হতে বাঁচার পর্দা হয়ে যাবে। (সহীহুল বুখারী হা. ৫৯৯৫, সহীহ মুসলিম হা. ১৪৭-(২৬২৯)
নবী (সা.)-কে ভালোবাসা
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা
ভাবছেন এ ভালোবাসা নবী (সা.)-কে ভালোবাসা? নবী (সা.)-কে নিজের জানমাল, পরিবার-পরিজন, বাবা-মা ও সমত্মান-সন্ততি দুনিয়ার সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভালোবাসতে হবে। (এ বিষয়ে বিসত্মারিত জানতে চাইলে আমাদের লেখা ‘‘যে ভালোবাসা কাঁদালো’’ বইটি পড়ুন।)
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنَ هِشَامٍ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ وَهُوَ اٰخِذٌ بِيَدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ لَه عُمَرُ : يَا رَسُولَ اللّٰهِ لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا مِنْ نَفْسِي، فَقَالَ النَّبِيُّ لَا وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِه# حَتّٰى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ. فَقَالَ لَه عُمَرُ : فَإِنَّهُ الْاٰنَ وَاللّٰهِ لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي فَقَالَ النَّبِيُّ الْاٰنَ يَا عُمَرُ
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা
‘আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় তিনি (সা.) ‘উমার (রা.)-এর হাত ধরে ছিলেন। ‘উমার ফারূক (রা.) নবী (সা.)-কে বললেন : হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার নফ্স (আত্মা) ব্যতীত সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমার নিকট প্রিয়।
হতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা
নবী (সা.) বললেন : ‘‘যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর ক্বস্ম! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার আত্মার চেয়েও অধিক প্রিয় না হব ততক্ষণ না।’’ তখন ‘উমার (রা.) বললেন : আল্লাহর ক্বস্ম! এখন আপনি আমার আত্মার চেয়েও বেশি প্রিয়। নবী (সা.) বললেন : ‘‘এখন হে ‘উমার (জানলে ও যা ওয়াজিব তা বললে)। (সহীহুল বুখারী হা. ৬৬৩২, ফাতহুল বারী : ১১/৫৩২)
Reviews
There are no reviews yet.